Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সউদী আরবে দুর্নীতি দমন অভিযানে আরও গ্রেফতার ও ব্যাংক একাউন্ট জব্দ

রয়টারস | প্রকাশের সময় : ১০ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:১১ এএম, ১০ নভেম্বর, ২০১৭



সউদী কর্তৃপক্ষ দুর্নীতি দমনের সম্প্রসারিত অভিযানে দেশের রাজনৈতিক ব্যবসায়ী এলিটদের আরও কয়েকজনকে  গ্রেফতার করেছে ও আরও কিছু ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে। বুধবার ওয়াকিবহাল সূত্রে এ কথা জানা গেছে।
গত শনিবার দুর্নীতি দমন অভিযানে কয়েক ডজন শাহী পরিবারের সদস্য, কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে অর্থ লুটপাট, ঘুষ গ্রহণ ও ব্যক্তিগত লাভের জন্য সরকারী অফিসকে ব্যবহারের অভিযোগ আনা হয়েছে।
সূত্ররা জানান, সম্প্রসারিত দমন অভিযানে অপরাধের জন্য সন্দেহভাজন অন্য ব্যক্তিদেরও গ্রেফতার করা হয়েছে। একে সিংহাসনের ক্ষমতাশালী উত্তরাধিকারী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের উদ্যোগ হিসেবেই ব্যাপকভাবে দেখা হচ্ছে।
আরো যারা নজরদারিতে আছেন তদন্তকারীরা টেলিফোনে কথা বলে তাদের অর্থসম্পদ সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছেন। তবে তাদের আটক করা হয়নি। সূত্ররা জানান, যাদের দমন অভিযানের টার্গেট করা হয়েছে তাদের সংখ্যা কয়েকশ’ হবে। দুর্নীতি দমন অভিযানে ১৭শ’টি ব্যাংক হিসাব আটক করা হয়েছে এবং এ সংখ্যা আরা বাড়ছে বলে ব্যাংকিং সূত্রগুলো জানান।
তারা বলেন, সর্বসাম্প্রতিক যাদের আটক করা হয়েছে তাদের সাথে ২০১১ সালে মৃত যুবরাজ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী সুলতান বিন আবদুল আজিজের পরিবারের সম্পর্ক ছিল। একটি সূত্র জানান, অন্যরা নিম্ন পর্যায়ের ম্যানেজার ও কর্মকর্তা ছিলেন।
বহু সউদীই এ গ্রেফতার অভিযানকে ধনীদের রাষ্ট্রীয় তহবিল চুরির উপর আঘাত বিবেচনা করে আনন্দ প্রকাশ করেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ ব্যাপারে টুইটে তার মন্তব্যে বলেন, যারা গ্রেফতার হয়েছে তারা বহু বছর ধরে দেশের দুধ দুইয়ে নিচ্ছিল।
বুধবারেও দুর্নীতি দমন অভিযানের অর্থনৈতিক প্রভাব বিষয়ে উদ্বেগের কারণে বুধবার সকালে সউদী আরবের শেয়ার বাজারে দরপতন ঘটে। ট্রেড শুরু হওয়ার আধঘন্টার মধ্যেই সউদী ইনডেক্স টিএএসআই’র দাম এক শতাংশ হ্রাস পায়। যেসব শেয়ার কোম্পানি আটক ব্যক্তিদের সাথে সম্পৃক্ত সেগুলোর শেয়ারের দামও নেমে আসে।
দুর্নীতি দমন কর্তৃপক্ষ শাহজাদা মোহাম্মদ বিন নায়েফের (এমবিএন) ব্যাংক একাউন্ট আটক করেছে। তিনি ক্ষমতাসীন আল সউদ পরিবারের অন্যতম জ্যেষ্ঠ সদস্য। গত জুনে যুবরাজ পদ থেকে তাকে অপসারণ করা হয়।  যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নির্দেশে এরইমধ্যে ব্যক্তিগত ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ১২ হাজারেরও বেশি অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। এ তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন সাবেক যুবরাজ মোহাম্মদ বিন নায়েফ ও তার পরিবারের সদস্যরা।
এমবিএনকে ক্ষমতা থেকে অপসারিত হওয়ার পর মঙ্গলবার প্রথম তাকে শাহজাদা মনসুর বিন মুকরিন-এর দাফন অনুষ্ঠানে দেখা যায়। শাহজাদা মনসুর এক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় রবিবার নিহত হন।
ব্যবসা নির্বাহীদের মধ্যে যাদেরকে এ পর্যন্ত আটক করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন কিংডম হোল্ডিং বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান বিলিওনেয়ার আলওয়ালিদ বিন তালাল, আল-তায়ার ট্রাভেলের প্রতিষ্ঠাতা নাসির বিন আকিল আল তায়ার ও রেড সি ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান আমর আল দাবাগ।  
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তারা মঙ্গলবার বলেন, আটক ব্যক্তিরা যাতে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ পন্থায় বিচার পান তার জন্য সউদী আরবকে অনুরোধ করা হয়েছে।  
ক্ষমতা সুসংহত করতেই সৌদী আরবে ধরপাকড়
সউদী আরবে রাতের অন্ধকারে হঠাৎ করে দুর্নীতি বিরোধী একটি সংস্থা গঠন করা হয়েছে। এর সঙ্গে সঙ্গে একদল প্রিন্স, বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রী, পদস্থ কর্মকর্তা এবং খ্যাতনামা ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে। ক্ষমতা সুসংহত করতেই তাদের বিরুদ্ধে এমন ধরপাকড় চালানো হচ্ছে। এ ঘটনা দেশটির মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এমনটাই মনে করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডবিøউ)। সংস্থাটির মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক পরিচালক সারা লিন উইটসন বুধবার নিউ ইয়র্কে এইচআরডবিøউ-এর এ মূল্যায়ন তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, সউদী সরকারকে অবিলম্বে আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নেওয়া আইনগত ব্যবস্থা প্রকাশ্যে ঘোষণা করতে হবে। তারা যাতে সব রকম আইনি সহায়তা পায় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
সারা লিন উইটসন বলেন, তারা সত্যি সত্যি দুর্নীতি করে থাকলেও তদন্ত ও গ্রেফতার বিচার বিভাগের পক্ষ থেকে হওয়া উচিত। সউদী সংবাদমাধ্যমে বিষয়টিকে যেভাবে যুবরাজের দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপ হিসেবে প্রচার করছে; তাতে দৃশ্যত এই গণগ্রেফতারকে রাজপরিবারের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার খেলা বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। সম্প্রতি সউদী বাদশাহ সালমান নিজের ছেলে যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমানকে দুর্নীতি দমন কমিটির প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন।




 

Show all comments
  • মো. মহিউদ্দিন ১০ নভেম্বর, ২০১৭, ৩:৪৫ এএম says : 0
    এগুলো যেন দেশের কল্যাণেই হয়।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সউদী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ