Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

স্বদেশী সহপাঠীকে খুনের দায় এড়াতে অসুস্থতার ভান ভারতীয় শিক্ষার্থীর

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১০ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্বদেশী সহপাঠীকে খুনের দায় এড়াতে অসুস্থতার ভান করেছিলেন চট্টগ্রামের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউএসটিসির ভারতীয় শিক্ষার্থী উইনসন সিং। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আতিফ শেখের খুনের ঘটনায় গ্রেফতারের পর দুই দফা রিমান্ডে এনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রতিবারই সবকিছু ভুলে গেছে বলে দাবি করেন। পুলিশকে জানায়, সবকিছু ভুলে যাওয়ার রোগ হয়েছে তার। পুলিশও নাছোড়বান্দা, উইনসন সিং আসলে অসুস্থ কিনা কিংবা সবকিছু ভুলে যাওয়ার মতো কোন রোগের অস্তিত্ব আদৌ আছে কিনা তা নিশ্চিত হতে আদালতের শরণাপন্ন হন মামলার আইও। আদালত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দিয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। ওই কমিটি সবকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে নিশ্চিত হন মানসিক এবং শারীরিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ উইনসন সিং। এ তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পর ফের রিমান্ডের আবেদন করে তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই।
পিবিআই পরিদর্শক ও মামলার আইও সন্তোষ কুমার চাকমা গতকাল (বৃহস্পতিবার) এ আবেদন করেন। মহানগর হাকিম আলী ইমরান খান আগামী রোববার রিমান্ড শুনানীর দিন ধার্য্য করেছেন। আইও জানান, আদালতের নির্দেশে গঠিত মেডিকেল বোর্ড তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, উইনসং সিং মানসিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ। চিকিৎসকদের প্রতিবেদন হাতে পেয়ে উইনসং সিংকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবারও পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, তাকে ঘিরেই আমাদের যে সন্দেহ ছিল তার এ আচরণে সে সন্দেহ আরও ঘনীভূত হলো। আমরা নিশ্চিত এখন জিজ্ঞাসাবাদে আসল রহস্য বের হয়ে আসবে।
গত ১৪ জুলাই গভীর রাতে আকবর শাহ থানার আব্দুল হামিদ সড়কের ছয় তলা একটি ভবনের পঞ্চম তলা থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় আতিফ শেখ ও উইনসন সিং নামে ভারতীয় দুই শিক্ষার্থীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এদের মধ্যে আতিফ ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুন হয়। আর উইনসন ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। আতিফ শেখ খুনের ঘটনায় তিন দিন পর তার বাবা আব্দুল খালেক বাদি হয়ে আকবর শাহ থানায় মামলাটি করেন। মামলায় সুনির্দিষ্ট কাউকে অভিযুক্ত করা না হলেও ছেলে খুনের ঘটনায় আটজনকে ‘সন্দেহের’ তালিকায় রেখেছেন খালেক।
এর পর পুলিশ তার স্বদেশী সহপাঠী নিরাজ গুরুকে গ্রেফতার করে। আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে নিরাজ ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না এবং রক্তাক্ত অবস্থায় আতিফকে ও আহতাবস্থায় উইনসন সিংকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা জানান। ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যার চেষ্টাকারী উইনসন সিং চিকিৎসাধীন অবস্থায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পর তাকে গ্রেফতার দেখায় পিবিআই।
তদন্ত কর্মকর্তা সন্তোষ চাকমা বলেন, ঘটনার পারিপাশ্বিকতা বিচার করে উইনসই আমাদের কাছে হত্যাকান্ডের প্রধান সন্দেহভাজন। কিন্তু সে তার কাছে কিছুই মনে নেই বলে অজুহাত তৈরি করছে। মনে না থাকার বিষয়টি আদৌ সম্ভব কিনা তা যাচাই করতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা বোর্ড গঠন করে মতামত নেয়ার জন্য আদালতে আবেদন করেছিলাম। সে প্রেক্ষিতে গত ১৭ আগস্ট আদালত বিশেষজ্ঞ মেডিকেল বোর্ড গঠন করে তাদের মতামত প্রদানের জন্য নির্দেশ দেয়।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছিল, উইনসন তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে হত্যাকান্ডের দিন বাসায় বন্ধুরা মিলে মদ খাওয়া, পরে লিংকিন পার্কের ‘হেভি’ গানটি গীটারে সুর তুলে শোনানোর কথাও জানিয়েছেন। তবে এর পরে কি হয়েছে তা আর বলতে পারছেন না উইনসন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ