২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
আপনি কি উচ্চরক্তচাপের রোগী? ডায়াবেটিস আছে? ধূমপান করেন? তাহলে এখনই সাবধান হোন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের দেশে ক্রমাগত বাড়তে থাকা স্ট্রোকের জন্য এ সমস্ত কারণই সমান দায়ী। আর এই স্ট্রোক হওয়ার কোনো বয়সসীমা নেই। যে-কোনো বয়সেই হতে পারে। ¯œায়ুরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন বাংলাদেশে স্ট্রোকে আক্রান্তদের ২০ শতাংশের বয়স ৪০ বছরের নিচে। স্ট্রোক বলতে কী বোঝায়? হার্ট বা হৃৎপিন্ড সব সময় শরীরের সমস্ত কোষে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে আমাদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। এই রক্ত পৌঁছানোর কাজ করে বিভিন্ন ধমনি। কারও যদি রক্তচাপ বেশি থাকে কিংবা মাত্রাতিরিক্ত কোলেস্টেরল থাকে তাহলে তা ধমনির ভেতর জমে গিয়ে রক্ত চলাচলের পথ সরু বা একেবারে বন্ধ করে দিতে পারে। আর অক্সিজেন ঠিকমতো পৌঁছাতে না-পারলে মস্তিস্কের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত বা অকেজো হয়ে যেতে পারে। তখন রোগী সাময়িকভাবে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। শারীরিক এই সমস্যাকেই স্ট্রোক বলা হয়। একে আবার সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাটাক বা ব্রেন অ্যাটাক নামেও চিহ্নিত করা হয়।
এই স্ট্রোকের আবার প্রকারভেদ আছে। মস্তিস্কের ধমনিতে যদি কোনও বøাড ক্লট বা রক্ত জমাট বেঁধে যায় এবং স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে এই অবস্থাকে বলা হয় থ্রম্বোটিক স্ট্রোক। রক্তের চাকা মস্তিস্কের সূ² আর্টারিতে আটকে গেলে এম্বোলিক স্ট্রোক বা এম্বোলাস আর দুর্বল ধমনি যদি রক্তচাপ সামলাতে না-পারে বা রক্তের চাকা আটকে গিয়ে ধমনি ফেটে গিয়ে রক্তপাত শুরু হলে তাকে হেমারেজিক স্ট্রোক নামে চিহ্নিত করা হয়।
এই সমস্যা কাদের বেশি হওয়ার প্রবণতা থাকে? বেশ কিছু কারণ দায়ী স্ট্রোকের জন্য। এর মধ্যে প্রধান কারণ হল অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ। অনেকেই হাইপ্রেশার আছে জানা সত্তে¡ও চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ খান না। তাঁদের যুক্তি, এই ওষুধ একবার শুরু করলে আর বন্ধ করা যাবে না। ফলে ভেতরে ভেতরে রক্তচাপ বাড়তেই থাকে। আর এর ফলস্বরূপ তাঁরা স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়। এছাড়াও যে যে কারণে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে তা হল, রক্তে অতিমাত্রায় কোলেস্টেরল থাকা, ডায়াবেটিস, মেদবহুলতা, অবস্ট্রাকটিভ ¯িøপ অ্যাপনিয়া বা নাক ডাকার সমস্যা, ধূমপান, মদ্যপান কিংবা কোকেনের নেশা, শরীরচর্চা না-করা, হৃদরোগ। এছাড়া, ৫৫ বছরের বেশি বয়স হলে এর আশঙ্কা বেড়ে যায়।
স্ট্রোকের লক্ষণগুলো কী কী? অজ্ঞান হয়ে যাওয়া তো আছেই। তবে অনেক সময় জ্ঞান থাকলেও স্ট্রোক হতে পারে। কাজেই যেসব লক্ষণ দেখলে সতর্ক হতে হবে তা হল- জ্জ কথা জড়িয়ে যাওয়া। ফলে কথা বুঝতে অসুবিধা হয়। জ্জ মনে একটা সংশয় দেখা দেওয়া। জ্জ মুখ, জিভের কিছু অংশ, হাত-পা অবশ হয়ে যাওয়। শরীরের একটা দিক অবশ হয়ে যাওয়া, পা নাড়াতে না-পারা। জ্জ দু’চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা। জ্জ কখনও আবার ডুয়াল ভিশন বা একটা জিনিসকে দুটো দেখার সমস্যা হয়। মাথা যন্ত্রণা। বমিভাব বা বমি হতে পারে। দাঁড়িয়ে থাকার সময় এ-ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে বসে পড়তে হবে। কাজেই স্ট্রোকের উপসর্গ দেখা দিলেই দ্রæত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আগে মনে করা হত, ছেলেদেরই এ সমস্যা বেশি হয়। যদিও মহিলাদেরও এই অসুখে আক্রান্ত হওয়ার চান্স যথেষ্ট।
স্ট্রোট প্রতিরোধের উপায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা। হাই বøাডপ্রেশার থাকলে এরহার দ্বিগুণ এমনকি তিনগুণও বেড়ে যেতে পারে। কাজেই অসুখ ধরা পড়লে নিয়মিত ওষুধ খেতে হবে এবং মনিটরিং করতে হবে প্রেশার ঠিক আছে কি না জানার জন্য। এ ছাড়া লবণ খাওয়া কমাতে হবে, খাওয়া চলবে না চিজ, বার্গার, আইসক্রিম। ধূমপান ছাড়তে হবে এবং নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে। ওজন কম রাখা। বাড়তি ওজন মানেই বøাডপ্রেশার, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি থাকা। আর এইডস ডেকে আনে ব্রেন স্ট্রোকের মতো দুর্ঘটনা। কাজেই ডায়েটিং করে, এক্সারসাইজ করে ওজন রাখতে হবে স্বাভাবিক। ডায়াবেটিসের চিকিৎসা করানো। রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে গেলে বøাডভেসেল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্ট্রোকের চান্স বাড়ে। ছাড়তে হবে ধূমপানের অভ্যাস। অনেকে আবার স্ট্রোকের লক্ষণ দেখলেও গুরুত্ব দেন না। এতে সমস্যা জটিল হয়ে যায়। স্ট্রোক হওয়ার পর প্রতিটিা মিনিটই খুব গুরুত্বপূর্ণ। কেন না, প্রতি মিনিটেই রোগীর অবস্থা খারাপের দিকে এগোতে থাকে।
ষ আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক-কলামিস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।