পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সউদী আরবে শনিবার থেকে এক তোলপাড় অবস্থা চলছে। সেখানকার পরিস্থিতি মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির হুমকি সৃষ্টি করেছে। সউদী আরবে এ মুহূর্তে কী ঘটছে তা অনুধাবন করা অভিজ্ঞ ক‚টনীতিকদের জন্যও এক চ্যালেঞ্জ। এসব গোলযোগের কারণ কী? যখন সব সমস্যা মিটে যাবে তখন কী ঘটতে পারে? এই তোলপাড় অবস্থার সাথে মার্কিন স্বার্থের সম্পর্ক কী? জানা গেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের দুর্নীতি দমন পদক্ষেপের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। সার্বিক অবস্থাকে প্রশ্ন ও জবাবের ভিত্তিতে জানা ও বোঝার চেষ্টা করা যেতে পারে।
যা কিছু ঘটছে তার প্রেক্ষিতে ৩০ সেকেন্ড ভাষ্য কী?
ঃ অধিকাংশ পর্যবেক্ষকই একমত যে সউদী আরবে বর্তমান অশান্তির কারণ হচ্ছে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেয়া কিছু নাটকীয় পদক্ষেপ। যুবরাজ সউদী সিংহাসনে আরোহণের পথে তার ক্ষমতা সংহত করার চেষ্টা করছেন। তার বয়স ৩২ বছর এবং তিনি উচ্চাকাক্সক্ষী। গত কয়েকমাস ধরেই তিনি সউদী সরকারের মধ্যে দুর্নীতির অবসান ঘটানোর হুমকি দিয়ে আসছিলেন। তিনি মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব হ্রাসের চেষ্টা করছেন। সে সাথে তিনি তেলের উপর থেকে সউদী আরবের অর্থনৈতিক নির্ভরতা কমিয়ে রাজস্ব আয়ের জন্য বহুমুখী পন্থা গ্রহণ করছেন। তারা বলেন, শনিবার সউদী টিভি থেকে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরির পদত্যাগের ঘোষণা দেয়ার মধ্য দিয়ে অশান্ত পরিস্থিতির সূচনা ঘটে।
*লেবাননের প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের সাথে সউদী আরবের সম্পর্ক কী?
ঃ সউদী আরবের সাথে হারিরি পরিবারের ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েেেছ। লেবাননের সবচেয়ে প্রভাবশালী সুন্নী রাজনীতিক হারিরি সউদী আরবের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র। তিনি লেবাননের একটি ঐক্য সরকারের সভাপতি ছিলেন। ইরান সমর্থিত লেবাননের শিয়া হেজবুল্লাহ গ্রæপ তার সরকারের শরিক ছিল। লেবাননের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সউদী আরব ও ইরানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ছায়াযুদ্ধ চলছে। হারিরিকে লেবানন সরকারের মধ্যে সউদী আরবের এজেন্ট বলে মনে করা হয়।
সউদী আরব সুন্নী প্রধান দেশ, অন্যদিকে ইরান হচ্ছে শিয়া প্রধান রাষ্ট্র। বিশ^জুড়ে সুন্নীরা ব্যাপকভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ। ইরানকে অধিকাংশ সুন্নীদেশই অশুভ রাষ্ট্র হিসেবে গণ্য করে। ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাক্সক্ষা যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরাইলের জন্য হুমকি হতে পারে, তবে তার প্রধান উদ্দেশ্য পারমাণবিক শক্তি হয়ে সুন্নী মুসলিম বিশে^র সাথে ভারসাম্য অর্জন করা।
রিয়াদে বসে হারিরির পদত্যাগ এ ধারণাকে শক্ত করেছে যে, তিনি সউদী সরকারের পুতুল। তিনি পদত্যাগের ঘোষণায় নাটকীয়ভাবে দাবি করেছেন যে, তিনি অনেকগুলো হত্যা ষড়যন্ত্রের টার্গেট ছিলেন। তিনি লেবাননে ইরানের প্রভাব অবসানের দাবি জানান।
লেবাননের সংবাদমাধ্যম বলেছে যে, হারিরি বর্তমানে রিয়াদে গৃহবন্দী রয়েছেন। তবে হারিরি ও তার সহযোগীরা তা অস্বীকার করেছেন। লেবাননের ঐক্য সরকারে হেজবুল্লাহ প্রতিনিধি প্রেসিডেন্ট মাইকেল আউন ঘোষণা করেছেন যে, তিনি হারিরি লেবাননে ফিরে না আসা পর্যন্ত তিনি তার পদত্যাগ গ্রহণ করবেন না। বলা দরকার যে, লেবাননের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল নয়।
হারিরি যে গৃহবন্দী নন তা প্রমাণের জন্য রবিবার লেবাননে নবনিযুক্ত সউদী রাষ্ট্রদূতের সাথে তার বৈঠকের একটি ছবি টুইটারে পোস্ট করেন। গত মঙ্গলবার তিনি আরব আমীরাত সফর করেছেন বলে জানা গেছে।
* তাহলে পরবর্তীতে কী ঘটতে পারে?
ঃ শনিবার সন্ধ্যায় সউদী আরব ঘোষণা করে যে, তারা রিয়াদকে লক্ষ্য করে নিক্ষিপ্ত একটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করেছে। ইয়েমেনের শিয়া হুতিরা এ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের দাবি করে। সউদী সামরিক বাহিনী রিয়াদের উত্তরে জনবসতিহীন এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্রটি ভ‚পাতিত করে। ক্ষেপণাস্ত্রের ভগ্নাংশ থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, তা ইরানের তৈরি। হুতিরা তা সউদী আরবের বিরুদ্ধে ব্যবহার করবে জেনেও ইরানিরা তাদের কাছে তা পাচার করেছে। সউদী প্রেস এজেন্সি সোমবার ঘোষণা করে যে, সউদী আরব এটাকে ইরান কর্তৃক ‘যুদ্ধের কাজ’ হিসেবে গণ্য করেছে এবং পাল্টা ব্যবস্থার হুমকি দিয়েছে। সউদী সরকার সোমবার ঘোষণা করে যে, হেজবুল্লাহর আগ্রাসী কাজের কারণে লেবানন সউদী আরবের ব্যাপারে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।
*এ সবের সাথে মোহাম্মদ বিন সালমানের কী সম্পর্ক?
ঃ যুবরাজ হওয়া ছাড়াও মোহাম্মদ বিন সালমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী। মধ্যপ্রাচ্য পর্যবেক্ষকরা ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানকে তারই মস্তিষ্কপ্রসূত বলে উল্লেখ করেছেন। যুবরাজ এ অঞ্চলে ইরানের প্রভাব বিস্তারের কট্টর সমালোচক। সউদী সরকারে তার মিত্ররাও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ক্রমাগত ইরান বিরোধী কথা বলে চলেছেন।
* রিজ কার্লটন হোটেলে গ্রেফতার সউদীদের ব্যাপারে কী করা হবে?
ঃ এ ঘটনার একটি অযৌক্তিক দিক হচ্ছে রিয়াদের রিজ কার্লটন হোটেলটি মোহাম্মদ বিন সালমানের প্রতিদ্ব›দ্বীদের জন্যএকটি পাঁচ তারকা কারাগারে পরিণত হয়েছে। সউদী কর্মকর্তারা সপ্তাহান্তে কথিত দুর্নীতিবাজ কয়েক ডজন সরকারী কর্মকতাকে আটক করেছেন এবং তাদের ৪৯২ কক্ষবিশিষ্ট রিজ কার্লটন হোটেলে রেখেছেন। সউদী সরকার মনে হয় হোটেলটিকে বিশে^র সেরা বিলাসবহুল কারাগার বানাতে চাইছেন।
যেসব ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে তারা সবাই সউদী সরকারের অত্যন্ত উঁচু পদে অধিষ্ঠিত এবং তাদের মধ্যে বিশে^র অন্যতম ধনী দু’একজনও রয়েছেন। যেমন শাহজাদা আল ওয়ালিদ বিন তালাল। একজন সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা নিউ ইয়র্কারকে বলেন, ‘এটা ওয়ারেন বাফেটকেও জাগিয়ে তোলা এবং এবিসি, সিবিএস ও এনবিসির প্রধানদের গ্রেফতারের মত ঘটনা। এর মধ্যে ক্যুদেতার সব কিছু উপস্থিত। সউদী আরব কখনোই এত অস্থিতিশীল ছিল না।’ এ গ্রেফতার অভিযান সউদী আরব ও গোটা মধ্যপ্রাচ্যে যে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে তা বলাইবাহুল্য।
রিজ কার্লটন হোটেল কর্মকর্তারা ঘোষণা করেছেন যে, ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত হোটেল নতুন কোনো রিজার্ভেশন নেবে না। হোটেলে যেসব অতিথি ছিলেন সউদী কর্মকর্তারা তাদের শনিবার রাতের বেলা হোটেলের লবিতে মালপত্রসহ জড়ো করা হয় এবং সেখান থেকে তাদের গাড়ি করে রিয়াদের বিভিন্ন হোটেলে পাঠানো হয়। মনে হচ্ছে, সব সরকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়নি। গ্রেফতারকৃত কয়েকজন অত্যন্ত বিশিষ্ট সউদী নাগরিককে বাইরের সাথে যোগাযোগ করতে দেয়া হয়নি। গার্ডিয়ান জানায়, একজন সউদী কর্মকর্তা বলেন, এত লোককে একটি কারাগারে রাখা নিরাপদ মনে হয় না, এক্ষেত্রে রিজ কার্লটন সবচেয়ে সম্মানজনক সমাধান। গ্রেফতার অভিযানে কমপক্ষে ২ জন শাহজাদা নিহত হয়েছেন। এছাড়া আরেকজন প্রিন্সকে গ্রেফতারের সময় বন্দুকযুদ্ধে তিনি নিহত হন।
*এ সবের অর্থ কী? মধ্যপ্রাচ্যে কি আসল সংস্কারের আশা আছে?
ঃ সমালোচনার দৃষ্টিতে দেখলে মোহাম্মদ বিন সালমানের কাজকর্মকে রাজনৈতিক ক্ষমতা সংহত করা, সিংহাসনের পথে তার প্রতিদ্ব›দ্বীদের অপসারণ এবং ইরানের আগ্রাসী আচরণকে ব্যবহার করে দেশে রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে বলেই মনে হবে। তবে সন্দেহপ্রবণ বহু পররাষ্ট্রনীতি পর্যবেক্ষকই আশাবাদ প্রকাশ করেছেন যে, মোহাম্মদ বিন সালমানের সংস্কার পদক্ষেপে কোনো ভেজাল নেই এবং যদি তিনি সফল হন, তাহলে তিনি সংস্কারক হিসেবে পরিচিত হবেন যিনি গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে আধুনিক রাজনৈতিক জগতে টেনে এনেছেন। এখনো বলার সময় আসেনি যে, মোহাম্মদ বিন সালমানের লক্ষ্য কতদূর প্রসারিত।
*সউদী আরব ও ইরানের মধ্যে কি আসলেই যুদ্ধ হবে?
ঃ অধিকতর জরুরি প্রশ্ন হচ্ছে যে, মোহাম্মদ বিন সালমানের পদক্ষেপসমূহ ইরানের সাথে তাকে প্রকৃতই যুদ্ধে জড়িত হওয়ার উস্কানি দেবে কি না- তা সে সরাসরি যুদ্ধই হোক আর ছায়াযুদ্ধই হোক। অধিকাংশ পর্যবেক্ষকই একমত যে, দু’দেশের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কা এখন পর্যন্ত নেই। সামরিক শক্তি প্রদর্শন মধ্যপ্রাচ্যের বহু পুরনো প্রথা। তবে যুদ্ধের সম্ভাবনা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। ইরান ও সউদী আরবের মধ্য্যে ছায়াযুদ্ধের মাধ্যমে শত্রুতা প্রদর্শনের দীর্ঘদিনের রীতি শিগগিরই আরো বিস্তার লাভ করতে পারে। কোথায় তার শেষ হবে তা বলা সম্ভব নয়। সংস্কারের ব্যাপারে মোহাম্মদ বিন সালমান যেহেতু আন্তরিক, সে কারণে কিছু বলা আগাম হয়ে যাবে।
*এসব ব্যাপারে ট্রাম্প প্রশাসনের কিছু বলার আছে কি?
ঃ মোহাম্মদ বিন সালমান ও তার পদক্ষেপের প্রতি ট্রাম্পের ব্যাপক সমর্থন আছে। ট্রাম্প সোমবার সকালে যুবরাজের দুর্নীতি দমন পদক্ষেপের প্রতি সমর্থন জানিয়ে টুইট করেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।