চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
চরমোনাই মাহফিলে আখেরি মুনাজাত
সম্প্রতি চরমোনাই পীর আলহাজ হযরত মাওলানা মুফতি সৈয়দ মোঃ রেজাউল করীম এর পরিচালনায় আখেরী মোনাজাতের মধ্যদিয়ে তিন দিনব্যাপী ফালগুনের বাৎসরিক মাহফিল শেষ হয়েছে। মাহফিলে আখেরি বয়ানকালে পীর সাহেব বাংলাদেশের সকল হক্কানী ওলামায়ে কেরামকে এক প্লাটফর্মে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আগত লক্ষ লক্ষ মুসল্লি সমাগত হয়। প্রচ- ঝড়বৃষ্টি-কাদা হলেও মাহফিলের প্যান্ডেলের ভিতর আগত মুসল্লিরা বয়ান শোনেন এবং আখেরি মোনাজাত শেষ করে বাড়ি ফিরেন। মাহফিলে আগত মুসল্লিদের অধিকাংশ নতুন লোক চিশতিয়া সাবেরিয়া তরীকায় বয়াত গ্রহণ করেন এবং পীর সাহেব তরীকার নিয়ম নীতি মুরিদানদের বাতলে দেন। যারা আল্লাহ ও রাসূলের নীতি অনুসরন করে না তারা কেয়ামতের দিনে নবীজীর সুপারিশ পাবে না। যারা বয়াত গ্রহণ করবেন তারা তরীকার পাঁচ ওষুধ ও ছবক ঠিক মতন আদায় করবেন। পরিপূর্ণ ও সহী শুদ্ধভাবে নামাজের জন্য কেরাত শিক্ষা করা ফরজ। যারা আত্মাকে পবিত্র করতে পারবে তারা বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। পীর সাহেব ইমানের উপরে পরিপূর্ণভাবে মজবুত থাকার জন্য নির্দেশ দেন। আল্লাহ পাকের জিকির বেশি বেশি করলে কলবের ময়লা দূর হয়। কলব পরিষ্কার হওয়ার একমাত্র পথ হল জিকির। পীর সাহেব বলেন সুবিধাবাদী নামধারী মুসলমানরাই ইসলাম, মুসলমান, আল্লাহর রাসূল (সঃ), কুরআন-হাদীস, মসজিদ-মাদরাসা, দাড়ি-টুপিসহ ইসলামী পোশাক-পরিচ্ছদের দুশমন। ইসলামের বিরুদ্ধে যারা অপপ্রচার চালাচ্ছেন এ ব্যাপারে সকলকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান। আখেরি মোনাজাতে পীর সাহেব বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করেন এবং বাংলার জমিনে ইসলামী হুকুমত কায়েমের জন্য সকলের সহযোগিতা ও দোয়া কামনা করেন। আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে গোটা এলাকাজুড়ে নদীর আশপাশে বিস্তীর্ণ এলাকা বাগানবাড়ির আঙ্গীনাসহ কোন স্থানেই তিল পরিমাণ ঠাঁই ছিল না। ২৫ ফেব্রুয়ারি চরমোনাই পীর সাহেবের আমন্ত্রণে বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও হেলিকপ্টারযোগে সৌদি আরবের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ডঃ ইব্রাহিম আব্দুল আজিজ আল জায়েদ, সৌদী রাষ্ট্রদূত ও অন্যান্য কর্মকর্তাগণ আসেন। বেলা ১২টায় চরমোনাই ময়দানে আগমণ করলে পীর সাহেব মুফতি সৈয়দ মো: রেজাউল করীম, নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মো: ফয়জুল করীম ও আলিয়ার অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মো: মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী তাদেরকে স্বাগত জানিয়ে লাল গালিচা সংবর্ধনা প্রদান করেন। পরে তারা জামিয়ার অধ্যক্ষের কার্যালয় ও মাহফিলের প্যান্ডেলসহ বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে বাদ জোহর মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ড. ইব্রাহিম আব্দুল আজিজ মুসলিম দেশগুলোর সাথে বন্ধুত্ব রাখার সুবাদেই চরমোনাই পীরের আমন্ত্রণে এ মহাসম্মেলনে আসতে পেরে তিনি নিজেকে ধন্য মনে করেন এবং সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে সকলকে মোবারকবাদ জানান। তিনি আরো উল্লেখ করেন নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মো: ফয়জুল করীম সৌদি আরবে সফরকালীন অবস্থায় যে অনাকাক্সক্ষীত ঘটনা ঘটেছে তা ছিল নিছক ভুল বোঝাবুঝি। এতে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এ ঘটনায় আপনাদের সাথে আমাদের বন্ধুত্ব আরও মজবুত হয়েছে। আগামী দিনে সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন। তিনি আরও বলেন, হক্বের আশায় যেহেতু এত মানুষের সমাগম এবং মানুষ এখানে এসে ভাল হচ্ছে অতএব এটি সহিহ মারকায। সৌদি আরবে আহমদ ইবনে হাম্বলকে ইমাম হিসেবে বেশি অনুসরণ করা হলেও ৪ ইমাম ও তাদের মাযহাবকে আমরা হক হিসেবে জানি এবং সকল ইমামের বিষয় ভার্সিটিতে পড়ানো হয় ও হারামাইন শরীফে সকল ইমামদের কিতাবের বিপুল সমাহার রয়েছে। তারা চরমোনাইকে বাংলাদেশ ও সারা বিশ্বের দাওয়াতী মারকায হিসেবে অভিহিত করেন। সৌদি বাদশাহ সালমান ইবনে আব্দুল আজিজের পক্ষ থেকে তারা উপস্থিত সকলের প্রতি সালাম পৌঁছান। বিদায়ের পূর্বে দ্বীনি মিশনের স্বীকৃতি হিসেবে সৌদি বাদশাহর পাঠানো নানা প্রকার সম্মানজনক উপহার সামগ্রী পীর সাহেব মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম, মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, অধ্যক্ষ সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীসহ পরিবারের সকল সদস্যের হাতে তুলে দেন। মাহফিলে আগত চার মুসল্লীর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়। তাদের জানাজা শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।