পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সউদী আরবে দুর্নীতি দমনের নতুন অভিযানে গত শনিবার ১১ জন শাহজাদা ও বর্তমান ৪ মন্ত্রীসহ কয়েক ডজন সাবেক মন্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর ফলে দেশটিতে বাদশাহ সালমান ও তার পুত্র যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নিয়ন্ত্রণ আরো দৃঢ় হল।
সউদী ন্যাশনাল গার্ডের দায়িত্বে নিয়োজিত একজন বিশিষ্ট শাহজাদাকে অপসারণের পাশাপাশি শনিবার দিনের শেষভাগে এ গ্রেফতারের ঘটনা ঘটে। আটককৃতদের নাম এবং তাদেরকে আটক করার কারণ সম্পর্কে এখনো কিছুই স্পষ্ট করা হয়নি। জানা যাচ্ছে, আটক ব্যক্তিদের মধ্যে সউদী বিলিয়নিয়ার প্রিন্স আল ওয়াালিদ বিন তালাল রয়েছেন। তবে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এমনকি প্রিন্সের সঙ্গে কোনো যোগাযোগও করা যায়নি। তবে, ইতিমধ্যেই তার মালিকানাধীন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান কিংডম হোল্ডিংসের শেয়ারের মূল্য দশ শতাংশ পড়ে গেছে।
সউদী আরবের রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থার একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, অভিযানের ভয়ে ব্যক্তিগত বিমান নিয়ে পালানোর সময় জেদ্দায় কয়েকটি জেটের উড্ডয়ন আটকে দিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। ধারণা করা হচ্ছে, ওই জেটগুলোতে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা পালিয়ে যাচ্ছিলেন।
গতকাল রোববার সকালে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, আটককৃতদের মধ্যে বর্তমান ৪ জন মন্ত্রী, সাবেক কয়েক ডজন মন্ত্রী এবং দেশের অত্যন্ত ক্ষমতাশালী কয়েকজন ব্যবসায়ীও রয়েছেন। একজন সউদী সরকারী মুখপাত্রকে এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে বলা হলেও তিনি তাৎক্ষণিকভাবে কিছু বলেননি। খবরে জানা যায় যে, আটক ব্যক্তিদের রিয়াদে রিৎজ কার্লটন-এ রাখা হয়েছে। গতকাল রোববার সকালে হোটেলের টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়।
সউদী আরবে নতুন দুর্নীতি বিরোধী তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে যার প্রধান ক্ষমতাধর যুবরাজ মোহাম্মদ। শনিবার সউদী বাদশাহ নিজে এ দুর্নীতি দমন কমিটি গঠন করেন। নতুন এই কমিটি গঠন করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এ সব গ্রেফতার করার ঘটনা ঘটলো।
সউদী আরবের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত বার্তা সংস্থা এসপিএ জানিয়েছে, যুবরাজকে প্রধান করে যে, কমিটি গঠন করা হয়েছে সেখানে যুবরাজ চাইলে যে কাউকে গ্রেফতার করার এবং যে কারো উপরে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেবার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে, এই কমিটির লক্ষ্য জনগণের জানমালের সুরক্ষা দেয়া এবং দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের শাস্তি দেয়া।
সরকারী ফরমানে বলা হয়, কিছু লোকের দুর্নীতি, জনগণের স্বার্থের উপর নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থ প্রতিষ্ঠা এবং সরকার তহবিল চুরির প্রবণতার কারণে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। সউদী নাগরিকরা বহুদিন ধরে ক্ষমতায় থাকা লোকদের সরকারী অর্থ লুটপাট ও অপব্যবহারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন।
সউদী মালিকানাধীন আল-আরাবিয়া স্যাটেলাইট নিউজ চ্যানেলে এ গ্রেফতারের খবর প্রচার করে। আল-আরাবিয়া জানায়, দুর্নীতি দমন কমিটি ২০০৯ সালে জেদ্দা নগরীর অংশ বিশেষ প্লাবিত করা মারাত্মক বন্যা এবং মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (এমইআরএস) ভাইরাসের ব্যাপারে সরকারী পদক্ষেপের বিষয়ে নতুন করে তদন্ত শুরু করেছে। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত কয়েক বছরে কয়েকশ’ ব্যক্তির প্রাণহানি ঘটে।
বিবিসি ও অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়, সউদী ন্যাশনাল গার্ড এবং নৌবাহিনী প্রধানের পদেও রদবদল আনা হয়েছে। ন্যাশনাল গার্ড প্রধান প্রিন্স মিতেব বিন আব্দুল্লাহকে এবং নেভি কমান্ডার এডমিরাল আব্দুল্লাহ বিন সুলতান বিন মোহাম্মদ আল সুলতানকে বরখাস্ত করা হয়েেেছ। তবে, তাদের কেন পদচ্যুত করা হয়েছে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কারণ ব্যাখ্যা করা হয়নি। প্রিন্স খালিদ বিন আয়াফ আল-মুকরিনকে প্রিন্স মিতেব বিন আব্দুল্লাহর জায়গায় নিয়োগ করা হয়েছে। প্রিন্স খালিদ গার্ডের উচ্চপদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
প্রিন্স মিতেব-এর পিতা ছিলেন মরহুম বাদশাহ আবদুল্লাহ। তিনিও ন্যাশনাল গার্ডের প্রধান ছিলেন। তিনি ন্যাশনাল গার্ডকে ক্ষমতাশালী ও মর্যাদাসম্পন্ন বাহিনীতে পরিণত করেন। এ বাহিনী মক্কা ও মদিনার পবিত্র স্থানসমূহ এবং তেল ও গ্যাস ক্ষেত্রসহ রক্ষাসহ সউদী রাজ পরিবারের রক্ষায়ও নিয়োজিত।
প্রিন্স মিতেবকে এক সময় সিংহাসনের একজন দাবিদার বলে গণ্য করা হত। ন্যাশনাল গার্ডের প্রধানের পথ থেকে তাকে অপসারণ হচ্ছে বর্তমান যুবরাজের এক প্রবল প্রতিদ্ব›দ্বীকে সরিয়ে দেয়া।
তিনমাস আগে সিংহাসনের আরেক উত্তরাধিকারী প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। তিনি সউদী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা দেখতেন। তাকে গৃহবন্দী রাখা হয়েছে বলে পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমে বলা হলেও সউদী কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করেছে।
এদিকে এই ধরপাকড়ের প্রতি সউদী আরবের ধর্মীয় নেতারা সমর্থন জানিয়েছেন। দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতাদের কাউন্সিল এক টুইট বার্তায় বলেছে, দুর্নীতি দমন অভিযান সউদী আরবের সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের মতই গুরুত্বপূর্ণ।
সউদী আরবের চারপাশে চলমান আঞ্চলিক সংঘাতের প্রেক্ষাপটে এ পদক্ষেপ সউদী আরব ও বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যকে অধিকতর নাড়া দিয়েছে। উল্লেখ্য, ইয়েমেনের শিয়া বিদ্রোহীরা শনিবার রাতে রিয়াদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে।
৩২ বছর বয়সী যুবরাজ মোহাম্মদ তার দেশে বৃহত্তর আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ চাইছেন। তিনি ব্যবসার ক্ষেত্র হিসেবে তার দেশের সুনাম বৃদ্ধি করতে আগ্রহী। এটা হচ্ছে তেলের উপর সউদী অর্থনীতির নির্ভরতা কমিয়ে তা বহুমুখী করার উদ্যোগের অংশ।
রাইস বিশ^বিদ্যালয়ের জেমস এ. বেকার তৃতীয় পাবলিক পলিসি ইনস্টিটিউটের রিসার্চ ফেলো ক্রিস্টিয়ান কোটস উলরিকসেন বলেন, গ্রেফতারের যেসব ঘটনা ঘটেছে তা দুর্নীতির অভিযোগের বাইরে এবং চ‚ড়ান্ত উত্তরাধিকারীকে আরো নিষ্কন্টক করতেই এ পদক্ষেপ। তিনি বলেন, এ গ্রেফতারের ব্যাপকতা ও পর্যায় আধুনিক সউদী আরবের ইতিহাসে নজিরবিহীন। তিনি আরো বলেন, প্রিন্স আল ওয়ালিদ বিন তালালের গ্রেফতারের খবর সত্য হলে সউদী ও আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের জন্যও তা হবে শঙ্কাজনক ঘটনা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যিনি আরো কয়েক দশক ক্ষমতায় থাকতে চাইছেন সেই মোহাম্মদ বিন সালমান তার নিজের ইমেজে দেশকে পুনর্গঠন করছেন। তারা আরো বলেন, আটক ব্যক্তিদের অনেকেই যুবরাজ মোহাম্মদের আগ্রাসী পররাষ্ট্র নীতির বিরোধী ছিলেন যার মধ্যে আছে কাতারকে বয়কট করা।
শনিবার গ্রেফতার ঘটনার কয়েক ঘন্টা আগে রিয়াদ থেকে দেয়া এক টেলিভিশন ভাষণে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি পদত্যাগ করার কথা ঘোষণা করেন। তিনি ইরান ও তাদের ক্রীড়নক হেজবুল্লাহর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, এ অঞ্চলে ইরানের হাত কেটে দেয়া হবে।
এরপর সউদী আরব ইয়েমেনের শিয়া হুথি বিদ্রোহীদের কর্তৃক রিয়াদের আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর লক্ষ্য করে হুথিদের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের কথা জানায়। যুক্তরাষ্ট্র গ্রেফতারের আগে কোনো আগাম মন্তব্য করেছে কিনা জানা যায়নি।
দুই সপ্তাহ আগে প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান কয়েক হাজার আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ীকে নিয়ে রিয়াদে একটি বিনিয়োগ সম্মেলন করেন। সেখানে যুবরাজ বলেন, সউদী আরবের আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে তাঁর পরিকল্পনার মূলমন্ত্র হবে ইসলামের কট্টর অবস্থান থেকে উদারনীতিতে ফিরে আসা। তেলের বাইরে সউদী অর্থনীতির জন্য ভিন্ন এক ধরনের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার খোঁজে এই সম্মেলন করা হয়।
কিন্তু ‘হাই প্রোফাইল’ লোকজনকে আটকের খবরে আর্থিক ব্যবস্থায় ধস নামতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। জানা গেছে, সউদী স্টক এক্সচেঞ্জে দিনের শুরুতে ব্যবসায়িক লেনদেনে ধস নামে। সউদী স্টক এক্সচেঞ্জ আরব বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বড়।
উল্লেখ্য, চলতি বছর জুনে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হওয়ার পর থেকেই নানা ধরনের সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছেন যুবরাজ মোহাম্মদ। বিদেশী ক‚টনীতিকরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান কমপক্ষে অর্ধ শতাব্দী সউদী আরব নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। সূত্র : বিবিসি, ফ্রান্স ২৪ ও সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।