Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৪শ’ কোটি টাকা ফেরত চায় চীন

৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু : লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পিছিয়ে প্রকল্পের কাজ

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৪ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নির্দ্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শুরু না করায় অষ্টম বাংলাদেশ-চীনমৈত্রী সেতুর জন্য বরাদ্দকৃত ৪০০ কোটি টাকা ফেরত নিতে চায় চীন। স¤প্রতি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবকে পাঠানো এক চিঠিতে এ তথ্য জানায় ঢাকাস্থ চীন দূতাবাস। দেশটির অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কনস্যুলার স্বাক্ষরিত চিঠিতে চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। অন্যথায় চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রকল্পটির অর্থ প্রত্যাহার করবে বলে জানানো হয়। বরিশাল-খুলনার মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তুলতে চীনের অনুদানে বেকুটিয়ার কচা নদীর উপর অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুটি নির্মাণ করার কথা রয়েছে। তবে সেতুটি নির্মাণে এখনও জমি অধিগ্রহণ শুরু করতে পারেনি সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর। তাই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক পিছিয়ে গেছে প্রকল্পের কাজ। এ কারনেই চীন তাদের অনুদানের টাকা ফেরত নিতে চিঠি দিয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবকে লেখা চীন দূতাবাসের চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর বিষয়ে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। প্রকল্পটির বিষয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। শুনে আনন্দিত হলাম অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) গত ১৭ অক্টোবর অনুমোদন হয়েছে। যদিও প্রকল্পটির কার্যক্রম শুরু লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে। অক্টোবরের মধ্যে এর প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ করার কথা ছিল। তবে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে জমি অধিগ্রহণ ও সে জমিতে থাকা ঘরবাড়ি অপসারণ করতে হবে। অন্যথায় অষ্টম মৈত্রী সেতুর জন্য বরাদ্দ করা অর্থ অন্য কোনো খাতে স্থানান্তর করবে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, যা প্রকল্পটি বাস্তবায়নে করুণ পরিণতি হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশের সেতুর উন্নয়নে বিশেষ সহযোগিতা করতে আগ্রহী চীন। এজন্য গত বছর ১৪ অক্টোবর দুই দেশের শীর্ষ নেতার উপস্থিতিতে একটি সমঝোতা চুক্তি সই হয়। এর আওতায় বিদ্যমান সাতটি বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর সংস্কারে সহায়তা দিবে চীন সরকার। অষ্টম মৈত্রী সেতুর প্রস্তুতি শেষে চলতি নভেম্বরের শেষ নাগাদ সাতটি সেতুর বিষয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে চিঠিতে।
সূত্র জানায়, এ বিষয়ে সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রওশন আরা খানকেও একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। এতে জানানো হয়েছে, ধারাবাহিকভাবে মৈত্রী সেতু নির্মাণ করতে চায় চীন। শিগগিরই নবম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করা হবে। এর আগে অষ্টম মৈত্রী সেতুর কাজ শুরু করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রত্যাশা করা হয়।
সূত্র জানায়, বরিশাল-খুলনা মহাসড়কের রাজাপুর-নৈকাঠি-বেকুটিয়া-পিরোজপুর অংশের কচা নদীতে ফেরিতে করে যাত্রী পারাপার করা হয়। প্রধান এই মহাসড়কে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে প্রতিদিনই ফেরিঘাটে যানজট লেগে থাকে। এছাড়া সেতুটি না থাকায় চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে সহজ সড়ক যোগাযোগ চালু করা যাচ্ছে না। আবার পায়রা বন্দরের সুবিধাও কাজে লাগানো যাচ্ছে না। এসব বিবেচনা করে সরকার কচা নদীতে রাজাপুর-নৈকাঠি-বেকুটিয়া-পিরোজপুর সড়কের ১২তম কিলোমিটারে বেকুটিয়ায় কচা নদীর ওপর অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। তবে শুরুতেই সেতুটি নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় জটিলতার সৃষ্টি হয়। গত জানুয়ারির মধ্যে জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন করার থাকলেও প্রকল্প অনুমোদন হয় অক্টোবরে। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মাঠপর্যায়ে খুব দ্রæত এ কাজ সম্পন্ন হলেও ছয় মাস লাগবে জমি অধিগ্রহণ করতে। জেলা প্রশাসন জমি অধিগ্রহণের পর তা সওজকে বুঝিয়ে দিবে। তবে তার আগে অবশ্যই ক্ষতিপূরণের অর্থ জেলা প্রশাসনকে বুঝিয়ে দিতে হবে কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু এ লক্ষ্যে সড়ক বিভাগ সঠিকভাবে সময়োচিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে না পারায় পুরো প্রকল্পের কাজ শুরু করা নিয়েই দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে নির্ধারিত সময়ে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু করা অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পাঠানো হয় পরিকল্পনা কমিশনে। তাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮২১ কোটি টাকা। এর মধ্যে চীন সরকার ৬৫৪ কোটি টাকা দেয়ার কথা ছিল। চীন শেষ পর্যন্ত ৪০০ কোটি টাকা দিতে সম্মত হয়। বাকি ৪২১ কোটি টাকা সরকারি কোষাগার থেকে ব্যয় করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার কথা ছিল ২০১৭ সালের অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারির মধ্যে। চীনের এ অর্থ পেতে গত বছরের ১৬ জুন সওজ অধিদফতর এবং চীন সরকারের মধ্যে ৫২৮ মিলিয়ন (৫২ কোটি ৮০ লাখ) আরএমবি অনুদান সহায়তা প্রদানে মিনিটস অব মিটিং সই হয়।
প্রকল্পের প্রধান প্রধান কাজ হচ্ছে- নদী শাসনসহ মেইন ব্রিজ ও ভায়াডাক্ট নির্মাণ হবে ১ হাজার ৪৯৩ মিটার। ছোট ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ হবে সাড়ে ১৬ মিটার। ভূমি অধিগ্রহণ হবে ১৩ দশমিক ৩২ হেক্টর এবং ভূমি উন্নয়ন করা হবে ৩৭ হাজার ২৪ বর্গমিটার। এ ছাড়া টোল প্লাজা নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য কাজও করা হবে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রকল্পটি গ্রহণ প্রক্রিয়াতেও জটিলতা ছিল। কচা সেতুটি নির্মাণের লক্ষ্যে সেতু বিভাগ সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা পরিচালনা করে। তবে হঠাৎ করেই সড়ক বিভাগ চীনের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে। পরে প্রকল্পটি হস্তান্তরের জন্য নানা রকম চাপ দিতে থাকে সড়ক বিভাগ। বাধ্য হয়ে প্রকল্পটি ছেড়ে দেয় সেতু বিভাগ।



 

Show all comments
  • বুলবুল আহমেদ ৪ নভেম্বর, ২০১৭, ২:৪৮ এএম says : 1
    নির্দ্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শুরু না করায় পিছনে কারা দায়ি তাদের খুঁজে বের করে শাস্তি দিতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • sharif khan ৬ নভেম্বর, ২০১৭, ১:৩০ পিএম says : 0
    ho , jo , bo, ro, lo desh amader , kono basic system nei bidhai , amon howata normal . that is why no solution , high quality and proper educated people are now out of the administration , 99% ...... now control the country , so what we are expecting from them ..? sorry to say that but it is true .
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চীন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ