Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাক্কার পতন আরো বৃদ্ধি করেছে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে বিপজ্জনক পরিস্থিতি

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট | প্রকাশের সময় : ১ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

 

মার্কিন সমর্থিত মিলিশিয়ারা রাক্কাকে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) নিকট থেকে মুক্ত করেছে। রাক্কা ছিল কার্যত আইএসের রাজধানী। রাজধানী রাক্কার পতনে উৎসব হওয়ার কথা, কিন্তু অধিকাংশের মনেই উৎসবের ব্যাপারটি জায়গা পাচ্ছে না। কেন, তা বোঝা কঠিন নয়। রাক্কার পতন মানে উগ্রপন্থী মুসলিম গ্রুপ আইএসের প্রতীকী বিনাশ হলেও বিশ^ব্যাপী তাদের হামলার সক্ষমতা বিলুপ্ত হয়নি। খারাপ বিষয় হচ্ছে, রাজনৈতিক বিজয়ের বদলে সামরিক বিজয় অর্জিত হওয়ার ফলে সৃষ্ট শূন্যতা। এর ফলে যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে তা খুব সহজেই বেসামরিক লোকদের বিরুদ্ধে অধিকতর বা বৃহত্তর বর্বরতার জন্ম দিতে পারে।
এটা হল বিজয়োত্তর কৌশলের বিষয়ে ত্রæটি। সমস্ত মনোযোগ নিবদ্ধ ছিল আইএসের সামরিক পরাজয়ের দিকে। তাই তাদের হাত থেকে পুনরুদ্ধার করা এলাকা বা যুদ্ধের ফলে স্থানচ্যুত হাজার হাজার মানুষের ব্যাপারে কি করা হবে তা বিবেচনা করা হয়নি। মসুল বিজয়ের পর তা ইরাকে সরকারী কর্তপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু রাক্কার ক্ষেত্রে অবস্থা ভিন্ন। রাক্কার দখল চাইছে সরকার বিরোধী মার্কিন সমর্থিত বাহিনী এবং সিরিয়ার সরকারী বাহিনী। যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের অপসারণের জন্য তার বিরোধী বিদ্রোহী ও কুর্দিদের প্রশিক্ষণ ও তাদের অস্ত্র দিয়েছে। তারাই রাক্কা দখল করেছে। এখন রাশিয়া ও ইরানের সমর্থনপুষ্ট আসাদ রাক্কা ফিরে পেতে চান।
এখন এক বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এটা যে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে নতুন পর্যায় সৃষ্টি করবে তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র বাহিনীর সাথে আসাদের বাহিনীর সরাসরি যুদ্ধও শুরু হতে পারে। এদিকে আরেকটি সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। তা হচ্ছে ইরাকের উত্তরাঞ্চলে কুর্দি স্বায়ত্তশাসিত এলাকায় সম্প্রতি স্বাধীনতা বিষয়ে গণভোট অনুষ্ঠান ও স্বাধীনতার দিকে পদক্ষেপ। বাগদাদের প্রেরিত সেনাবাহিনী কুর্দিদের হটিয়ে দিয়ে তেলসমৃদ্ধ কিরকুক দখল করে নিয়েছে। পরবর্তীতে পদত্যাগ করেছেন কুর্দি প্রেসিডেন্ট মাসুদ বারজানি। উল্লেখ্য, এ চারটি দেশে ছড়িয়ে আছে কুর্দিরা। কুর্দিরা স্বাধীন রাষ্ট্র চায়, কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে শুধু ইরাক নয়- ইরান, সিরিয়া ও তুরস্ক। তুরস্ক আইএস বিরোধী লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত কাগুজে সহযোগী। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ ব্যাপারে কোনো অবস্থান না নিলেও তিনি তার আসাদ ও ইরান বিরোধিতায় সুস্পষ্ট।
আইএসের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা সংকুচিত হয়েছে। কিন্তু আইএস এবং তার যোদ্ধা ও নেতাদের অনেকেই চড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছেন। তারা এখনো তাদের উগ্রপন্থী ধ্যান-ধারণাকে পরিত্যাগ করেনি। বিশ^ব্যাপী এখনো আইএসের অনুসারীরা রয়েছে যাদের হামলা চালানোর ক্ষতা রয়েছে। আইএস খিলাফত তিন বছর তিন মাস স্থায়ী হয়েছিল। তাদের ক্ষমতার শীর্ষ মুহূর্তে সিরিয়া ও ইরাকের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলে জর্দানের সমপরিমাণ আয়তনের এলাকার জনসংখ্যা ছিল ৮০ লাখ। আইএস তাদের লক্ষ্য ও আদর্শের প্রতি হাজার হাজার বিদেশী মুসলিম তরুণ-তরুণীকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়। তবে এখন তাদের আইএসের প্রতি সে মোহের ইতি ঘটেছে।
তারপরও আইএস এখনো সক্রিয় এবং সর্বত্র সকল সরকারে প্রতি তারা হুমকি। তাদের বোমা হামলা ও একক ব্যক্তির হামলা অব্যাহত রয়েছে। আইএস ও এ ধরনের গ্রুপগুলোর অভ্যুদয়ের পিছনে যে সব কারণ ছিল সেগুলোর আজো নিরসন হয়নি। রাক্কার পতন এক্ষেত্রে আরো জটিলতা সৃষ্টি করল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আইএস


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ