পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চাহিদার ৪৫ ভাগ ঘাটতি : ট্রানজিট মজুদ ও ডেলিভারি ব্যাহত : বাড়ছে পরিবহন ব্যয়
চট্টগ্রাম বন্দরে দিন দিন তীব্র আকার ধারণ করছে গুদামের সঙ্কট। বন্দরে পণ্য উঠানামার চাপ ও পরিমাণ বাড়ছে। অথচ কমছে গুদাম সুবিধা। যা বিপরীত চিত্র। বন্দর ও আশপাশ এলাকায় গুদামের সংখ্যা কমে গেছে। অতীতে অনেক গুদাম গড়ে উঠেছিল বন্দরের সার্বক্ষণিক কর্মব্যস্ততাকে ঘিরে। ইদানীং কালে সেসব গুদামের জায়গায় তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন স্থাপনা। দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরে গুদাম সুবিধা হ্রাসের ফলে ব্যাহত হচ্ছে হরেক পণ্যসামগ্রীর ট্রানজিট (সাময়িক) মজুদ। আমদানি ও রফতানিমুখী পণ্যের পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। পর্যাপ্ত গুদামের অভাবে বন্দরজট সৃষ্টি হচ্ছে। এর বিরূপ প্রভাবে শিল্পে উৎপাদন খরচও বেড়ে যাচ্ছে। বাড়ছে নিত্য ও ভোগ্যপণ্যের মূল্য। চাল, গম, কৃষিবীজের মজুদে সমস্যা তৈরি হওয়ার কারণে খাদ্য মজুদের ক্ষেত্রেও হিমশিম অবস্থায় পড়তে হচ্ছে। অনেক আমদানিকারক বাধ্য হয়ে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী, নাসিরাবাদ, কালুরঘাট, সীতাকুন্ড এলাকায় শিল্প-কারখানার গোডউনে পণ্যসামগ্রী গুদামজাত করছেন। রুগ্ন ও পরিত্যক্ত কল-কারখানার বেশকিছু গুদাম বন্দরের পণ্যের গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দর অবকাঠামো সুবিধার নাগালে বন্দরের ভেতরে-বাইরে ও কাছাকাছি জায়গায় খাদ্যশস্যসহ আমদানিকৃত বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীর গুদাম খুবই অপ্রতুল। কন্টেইনারের জন্য অবকাঠামো সুবিধা যেভাবে হ্রাস পাচ্ছে, খোলা সাধারণ পণ্যের (ব্রেক বাল্ক কার্গো) জন্য বন্দরের গুদাম সুবিধার আরো কমে এসেছে। বস্তাজাত ও খোলা পণ্যের গুদাম সুবিধা অত্যন্ত সঙ্কুচিত হয়ে এসেছে। এতে করে আপৎকালীন অবস্থায় এবং সাময়িক বা ট্রানজিট ব্যবস্থায় খাদ্য ও অন্যান্য পণ্যসামগ্রীর মজুদ ব্যবস্থাপনা গুরুতর ব্যাহত হচ্ছে। গুদামের অভাবে আমদানিকৃত খাদ্যপণ্য বিনষ্ট হচ্ছে প্রতিনিয়ত। জরুরি খাদ্য নিরাপত্তা সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার বিষয় হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দরে গুদাম সুবিধার প্রশ্নে এর গুরুত্ব উপেক্ষিত হচ্ছে। চাল, গম, চিনি, ভোজ্যতেল, সার, সরিষা, ডাল, কৃষিবীজ, হরেক রকম আমদানিকৃত ফলসহ জরুরি খাদ্য ও নিত্যপণ্যের মজুদ ও ট্রানজিট (সাময়িক) সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত গুদাম সুবিধা প্রসারের ব্যাপারে বন্দর ব্যবহারকারীরা প্রায় সময়ই তাগিদ দিয়ে আসছেন। অথচ এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না।
সংশিষ্ট সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে বার্ষিক প্রায় ২৫ লাখ টিইইউএস কন্টেইনার উঠানামা করা হচ্ছে। তবে এর জন্য অবকাঠামো সুবিধা ও ধারণক্ষমতা সীমিত। আমদানিকৃত খাদ্যশস্য, নিত্যপণ্য, খাদ্যপণ্য, কৃষিবীজ ও কিছু কিছু শিল্প কাঁচামালের জন্য ট্রানজিট গুদাম, শেড বা ওয়্যারহাউস সুবিধা প্রকৃত চাহিদার তুলনায় অন্তত ৪৫ ভাগ ঘাটতি রয়েছে। বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, দেশে খাদ্য মজুদ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে প্রধান এই সমুদ্র বন্দরে খাদ্যশস্য, নিত্যপণ্য তথা খোলা সাধারণ পণ্যের (ব্রেকবাল্ক কার্গো) জন্য পর্যাপ্ত ট্রানজিট গুদাম সুবিধা থাকা অপরিহার্য। চট্টগ্রাম বন্দরে বার্ষিক ৮ কোটি মেট্রিক টনেরও বেশি পরিমাণ আমদানি ও রফতানিমুখী পণ্যসামগ্রী হ্যান্ডলিং করা হয়। এরমধ্যে আংশিক মালামাল লাইটারেজ জাহাজ কার্গোযোগে দেশের বিভিন্ন নৌ বন্দরে অভ্যন্তরীণ নৌপথে পরিবহন করা হয়। বাকি প্রায় অর্ধেক মালামাল দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গন্তব্যে পরিবাহিত হয় সড়ক-মহাসড়কে এবং রেল ওয়াগনে। প্রতিমাসে গড়ে ১৬ লাখ মেট্রিক টন আমদানিকৃত খাদ্যশস্য, নিত্যপণ্য ও ভোগ্যপণ্য, শিল্পের কাঁচামাল হ্যান্ডলিং ও খালাস করা হয়ে থাকে।
বন্দর জেটিসমূহ থেকে হুক পয়েন্ট (সরাসরি) ডেলিভারি পরিবহন সচল রাখতে হলে বন্দরের খুব কাছাকাছি ট্রানজিট গুদামে পর্যাপ্ত পরিমাণ সাময়িক মজুদ সুবিধা থাকা অত্যাবশ্যক। ট্রানজিট গুদাম থেকেই চাহিদামাফিক দেশের বিভিন্ন এলাকায় সড়ক ও রেল ওয়াগনে খাদ্যশস্য, সার, বীজসহ বিভিন্ন পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা সুবিধাজনক। তবে গুদাম অবকাঠামো সুবিধার অপর্যাপ্ততার কারণে এই সরবরাহ চেইন বা প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে।
বন্দর ব্যবহারকারীদের সূত্রে জানা গেছে, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অসম ও অদূরদর্শী নীতির কারণে বন্দরে খাদ্যপণ্যের ট্রানজিট গুদাম অবকাঠামো সুবিধা সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। চাল, গম, চিনি, ভোজ্যতেল, সার, সরিষা, ডাল, কৃষিবীজ, ফলমূলসহ জরুরি খাদ্যশস্য ও নিত্যপণ্যের মতো যাবতীয় খোলা পণ্যসামগ্রী সাময়িক ট্রানজিট মজুদ ও সংরক্ষণের স্থান সংকুলান সমস্যা দিন দিন প্রকট হয়ে উঠেছে। এতে করে খোলা পণ্যবাহী জাহাজের গড় অবস্থানকাল (টার্ন এরাউন্ড টাইম) বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেড়েছে জাহাজের পরিচালন খরচ বা ফিক্সড অপারেটিং কস্ট। সাধারণ বাল্ক কার্গো জাহাজ ছাড়াও কন্টেইনার জাহাজযোগেও ডাল, আদা, ফলমূল, খাদ্যশস্যের বীজ, ফলমূলসহ বিভিন্ন নিত্য ও ভোগ্যপণ্য আমদানি করা হচ্ছে।
বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে জরুরি খাদ্য নিরাপত্তার সাথে বন্দরে খাদ্যশস্য ও নিত্যপণ্যের ট্রানজিট গুদাম, ওয়্যারহাউস অবকাঠামো সুবিধা বাড়ানো অপরিহার্য। চাল, গম, ডাল, চিনি, সরিষা, কৃষিবীজ, ভোজ্যতেলসহ যাবতীয় আমদানি খাদ্যশস্যের ট্রানজিট গুদাম অপর্যাপ্ত হওয়ার কারণে খাদ্যশস্য সময়মতো খালাস, ডেলিভারি পরিবহন করে বন্দর থেকে দেশের প্রত্যন্ত এলাকার গন্তব্যে পৌঁছাতে জটিলতা, সময় ও খরচ বেড়ে যায়। বন্দর থেকে ট্রানজিট শেডে না তুলে ট্রাক, ট্যাংকলরি যোগে দেশের সর্বত্র চাল, গম, ভোজ্যতেল, চিনিসহ খাদ্যশস্য ও নিত্যপণ্য পরিবহন করতে গেলে বর্তমানে যতসংখ্যক ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান রয়েছে সেই তুলনায় ৪-৬ গুণ বেশিসংখ্যক ট্রাক দিয়েও পরিবহন সামাল দেয়া সম্ভব হয়ে উঠছে না। দূরপাল্লায় প্রতিটি ট্রাক গড়ে এক সপ্তাহে দু’তিনটির চেয়ে বেশি ট্রিপ দিতে পারে না। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরমুখী ও বহির্মুখী পণ্যসামগ্রী পরিবহনে গড়ে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ট্রাক, ট্যাংকলরি ও কাভার্ডভ্যান চলাচল করছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বৈরী আবহাওয়া ও খাদ্য সঙ্কটকালে আপৎকালীন প্রয়োজন মেটাতে খুব দ্রæত খাদ্যপণ্য পরিবহন প্রয়োজন। এখন গুদাম সুবিধা কমে আসার ফলে তা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় পর্যাপ্ত সংখ্যক ট্রানজিট গুদাম নির্মাণ করা না হলে জেটি-বার্থে নোঙররত জাহাজ থেকে হুক পয়েন্ট অর্থাৎ সরাসরি ডেলিভারি ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাবে। এ কারণে কার্গোজট ও জাহাজজট সমস্যা বাড়বে। বাড়বে বন্দর ব্যয়। বন্দরের কাছাকাছি পর্যাপ্ত ধারণ ক্ষমতার ট্রানজিট শেড, গোডাউন বা ওয়্যারহাউস সুবিধা নিশ্চিত থাকলে সারাদেশে খাদ্যশস্য ও নিত্যপণ্যের জোগান, বাজারজাত প্রক্রিয়ায় একটি সুষ্ঠু সরবরাহ ব্যবস্থা (সাপ্লাই চেইন) বজায় থাকবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।