পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণের জন্য ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার পথে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গাড়ি বহর বিভিন্ন স্থানে হামলার শিকার হয়েছে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর মোতাবেক, কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জ, ফেনীর ফতেপুর, দেবীপুর ও মহিপাল এবং চট্টগ্রামের মিরেরসরাই এলাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটে। এসব হামলায় সাতটি টিভি চ্যানেলসহ ৩০/৩৫টি গাড়ী ভাংচুর করা হয়। হামলাকারীরা লাঠিসোঁটা ও ইটপাটল দিয়ে হামলা চালায়। এতে কয়েকজন সাংবাদিকসহ আহত হয়েছেন বিএনপির ৩০/৩৫ জন নেতাকর্মী। বিএনপি এই হামলার জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে দায়ী করেছে। আওয়ামী লীগ হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে হামলাকারীদের সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য দেয়া হয়নি। হামলার শিকার সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা এ হামলায় সঙ্গে জড়িত। বেগম খালেদা জিয়া দেশের অন্যতম বৃহত্তম দল বিএনপির চেয়ারপারসনই নন, তিনি তিন তিনবার দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। বিরোধীদলের নেতাও ছিলেন। তাঁর গাড়ি বহরে এ ধরনের ন্যাকারজনক হামলার ঘটনা একই সঙ্গে অনভিপ্রেত ও দু:খজনক। রাজনৈতিক সহনশীলতা, সহাবস্থান ও সৌজন্যের এটা চূড়ান্ত খেলাপ। খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, বেগম জিয়ার গাড়িবহরের যাত্রাপথে নানাভাবে বাধা প্রদানের চেষ্টা করা হয়েছে। মুন্সীগঞ্জ-কুমিল্লার পথে দু’দলের কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ছাড়াও ফেনীর-মাইজদী সড়কে দুধমুখা, তুলাতুলি, রেকেরবাজার এবং রাজাপুর-সিন্দুরপুর সড়কে গাছের গুড়ি ফেলে রাস্তা অবরোধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। বিভিন্নমুখী বাধা এবং হামলার পরও বেগম জিয়ার গাড়িবহর ফেনীতে যাত্রা বিরতিসহ রাতে চট্টগ্রাম পৌঁছেছে এবং পরদিন অর্থাৎ গতকাল কক্সবাজার গেছে। দেখা যাচ্ছে, বাধা ও হামলা গাড়িবহরকে রুখতে পারেনি। প্রশ্ন ওঠে, তাহলে এই বাধা ও হামলা কেন? যে যাই বলুক, এতে সরকারী দল ও সরকারের ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কেন্দ্রীয় বা শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত অনুসারে এসব করা হয়েছে, এমন দাবি বিশ্বাসযোগ্য নয়। সম্ভবত স্থানীয় পর্যায় থেকে অতি উদ্যোগী হয়ে বা সিদ্ধান্ত নিয়ে এই গর্হিত কর্ম করা হয়েছে। তাদের অপকর্মের দায় গিয়ে পড়েছে দল ও সরকারের ওপর।
কোনো রকম বাধা ও হামলা ছাড়াই যদি বেগম জিয়ার গাড়িবহর গন্তব্যে পৌঁছাতে পারতো, তাহলে রাজনৈতিক শিষ্টাচার ও সহিষ্ণুতার এক উজ্জ্বল নজির স্থাপিত হতে পারতো। বেগম জিয়ার ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়া কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচীর অংশ ছিলনা। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের অবস্থা সচক্ষে দেখা ও ত্রাণ বিতরণের এক মানবিক লক্ষ্য নিয়ে ছিল তার এই সড়কযাত্রা। খবরে জানানো হয়েছে, এই দীর্ঘ সড়কযাত্রায় সড়কের দু’পাশে বিএনপির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থক দাঁড়িয়ে তাকে স্বাগত জানান। কিন্তু কোথাও তিনি পথসভা বা বক্তৃতা দেননি। যদি দিতেন, তাহলে তার সড়কযাত্রা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত বলে পরিচিহ্নিত হতো। এ ব্যাপারে বেগম জিয়া ও বিএনপির সতর্কতা বিশেষভাবে প্রনিধানযোগ্য। ঢাকা থেকে এ গাড়িবহরের যাত্রাকালে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের তথা প্রশাসন ও পুলিশের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেছিলেন। সরকার যথাসাধ্য সেই সহযোগিতা দিয়েছে বলেই প্রতীয়মান হয়। কারণ, স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের তরফে বাধা বা প্রতিকূলতা সৃষ্টির ঘটনা ঘটতে দেখা যায়নি। পুলিশের আইজিপি
এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, বেগম জিয়ার নিরাপত্তার ব্যাপারে বিএনপির পক্ষ থেকে যে ধরনের ব্যবস্থা চাওয়া হয়েছে সে ধরনের ব্যবস্থাই নেয়া হয়েছে। ঢাকা থেকে টেকনাফ পর্যন্ত নিরাপত্তার জন্য পুলিশ যা যা করণীয় সে ব্যবস্থাই গ্রহণ করেছে। বাস্তবেরও এ কথার প্রতিফলন প্রত্যক্ষ করা গেছে। স্মরণ করা যেতে পারে, বেগম জিয়া চিকিৎসা শেষে লন্ডন থেকে যেদিন ঢাকা আসেন সেদিনও পুলিশ তার নিরাপত্তা সুরক্ষায় যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়। আইনশৃংখলার কোনোরকম ব্যত্যয় যাতে না ঘটে সে বিষয়ে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করে। পুলিশের এই আচরণ ও ভূমিকা সেদিন উপযুক্ত প্রশংসা লাভ করে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আমরা প্রশাসন ও পুলিশকে এ উপলক্ষে অকুণ্ঠ সাধুবাদ জানাই।
সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আগামীতে দেশের রাজনীতি অনিবার্যভাবেই সরগরম হয়ে উঠবে। ইতোমধ্যে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন মহল থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতি ফের সংঘাতপ্রবণ ও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। এ আশঙ্কা সত্য হোক, দেশের মানুষ তা একেবারেই কামনা করে না। রাজনীতি সংঘাতময় ও অস্থিতিশীল হয়ে পড়লে জনজীবন কীভাবে বিপর্যস্ত হয়, অর্থনীতি কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, উন্নয়ন কীভাবে ব্যহত হয়, তার দু:খজনক অভিজ্ঞতা রয়েছে এদেশের মানুষের। তারা সঙ্গতকারণেই রাজনৈতিক সহনশীলতা, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও স্থিতিশীলতা চায়। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর ধৈর্যশীল, সহিষ্ণু পারস্পরিক শ্রদ্ধাপূর্ণ আচরণ ও ভূমিকার কোনো বিকল্প নেই। কোনো রকম উস্কানি, অসৌজন্য, অশিষ্ঠতা, হঠকারিতা ও সহিংসতা যাতে প্রশ্রয় না পায় সে জন্য প্রতিটি দলকে সর্তক ও সাবধান হতে এবং থাকতে হবে। বেগম জিয়ার গাড়িবহরে বাধা ও হামলার ঘটনা নি:সন্দেহে উস্কানিমূলক। এই রকম উস্কানিমূলক তৎপরতা পরিহার করতে হবে। এবং উস্কানির পাতা-ফাঁদে পা দেয়াও পরিহার করতে হবে। উপসংহারে আমরা বলতে চাই, বাধাদান ও হামলার ঘটনা নিয়ে পরস্পরকে দোষারোপ করার পুরানো ‘সংস্কৃতির’ যে চর্চা আমরা লক্ষ্য করছি, তা দু:খজনক। বাধাদান ও হামলার ঘটনা ঘটেনি, একথা বলা যাবে না। প্রমাণ তো হাতেনাতেই বিদ্যমান। যারাই এ অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। তাদের দায় মুক্তির কোনো সুযোগ নেই। এখানে প্রশাসন ও পুলিশের দায়িত্ব হলো তাদের খুঁজে বের করা এবং আইনের হাতে সোপর্দ করা। ইতোপূর্বে বিএনপির মহাসচিবের গাড়িবহরে হামলার যে ঘটনা ঘটে তার কোনো কিনারা হয়নি সরকারের আশ্বাস সত্তে¡ও। এর পুনরাবৃত্তি দেশের মানুষ দেখতে চায় না। ‘রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরা’অধরা থেকে গেলে রাজনৈতিক পরিবেশ কখনই সুস্থির ও স্থিতিশীল হবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।