পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এ সময় সউদী আরবে কিছু একটা ঘটছে। বহু দশক ধরে সউদী শাসক পরিবার অঙ্গীকারের নীতি অনুসরণ করেছে, তবে বাস্তবায়ন করেনি। তারা বহুল ক্ষীয়মান তাদের বৈশ্বিক ভাবমর্যাদা উজ্জ্বল করার চেষ্টায় সত্যি কথা বলেছে, তবে তাতে ভালো ফল হয়েছে খুব কম। তবে এবার ব্যাপারটি সম্ভবত অন্যরকম। গার্ডিয়ানের সাথে এক সাক্ষাতকারে সউদী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান যা বলেছেন তা তার কট্টর ছিদ্রান্বেষীরও দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। যা ঘটেছে তিনি তার সরাসরি উল্লেখ করে বলেছেন যে, ইরানি বিপ্লব এ অঞ্চলে ধর্মীয় শাসনের সূচনা করেছে এবং সউদী আরবের এখন তা থেকে মুক্ত হওয়ার সময় এসেছে।
মোহাম্মদ বিন সালমান বলেন, আমরা সেদিকে ফিরে যাচ্ছি যা এক সময় আমরা অনুসরণ করতাম। তা হচ্ছে মধ্যপন্থার ইসলাম যা বিশ্ব ও সকল ধর্মের কাছে উন্মুক্ত। তিনি বলেন, ৭০ শতাংশ সউদীর বয়স ৩০ বছরের কম। সত্যি বলতে কি, আমরা উগ্রপন্থী চিন্তাভাবনার মোকাবেলা করে আমাদের জীবনের ৩০টি বছর অপচয় করব না। আমরা এখনি এবং অবিলম্বে তা ধ্বংস করব।
সউদী যুবরাজ মোহাম্মদ একজন দক্ষ বিপণনকারী, পশ্চিমা মিডিয়ার প্রিয়। তার কাছের সাংবাদিকরা তাকে প্রায়ই এমবিএস নামে উল্লেখ করেন। তিনি তার দেশের বহুকাক্সিক্ষত রূপান্তরের প্রধান রূপকার হিসেবে নিজেকে উপস্থাপিত করেছেন। চকিতের জন্য মনে হয়েছিল তিনি যা বলছেন তা প্রত্যাশা, সউদী আরব যেমন ছিল তেমনি থাকবে, তার বেশি কিছু হবে না।
তবে তার সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ, তার সাথে মহিলাদের গাড়ি চালনার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার বলছে যে, প্রিন্স মোহাম্মদ ও রাজ পরিবারের যাদের তিনি পক্ষে আনতে পেরেছেন তারা সবাই সিরিয়াস। তার প্রকাশ্য অবস্থানকে জ্যেষ্ঠরাও সমর্থন করেছেন, তার মানে এ সব তার একার উদ্যোগ নয়।
তেলের নিম্নমূল্য এবং বহুমুখিতাহীন অর্থনীতি শাসক রাজপরিবারকে শিখিয়েছে যে রাষ্ট্র তাদের পৃষ্ঠপোষকতা চালিয়ে যেতে পারবে না।
তরুণ প্রিন্সের আন্তরিকতাই শুধু চালকশক্তি বলে মনে হয় না। এর পিছনে একটি অর্থনৈতিক দৃঢ়ভিত্তিও ক্রিয়াশীল রয়েছে। বহুমুখিতাহীন অর্থনীতিতে তেলের নিম্নমূল্য ক্ষমতাসীন রাজপরিবারকে শিখিয়েছে যে রাষ্ট্রের সার্বিক অর্থভান্ডার আর বেশিদিন রাজপরিবারের পৃষ্ঠপোষকতার বর্তমান ধারা বহাল রাখতে পারবে না। পুরনো অভ্যাসকে বিসর্জন দেয়া ছাড়া আর ভালো কিছু হতে পারে না। অতীতে ক্ষমতাসীনদের সার্বক্ষণিক ভুল ছিল যে তারা স্বল্প মেয়াদে ক্ষমতা ধরে রাখার চিন্তা করেছেন, নাগরিকদের জন্য উদার ভর্তুকি প্রদান করেছেন এবং আলেম সমাজের বিরাগভাজন হওয়ার ভয়ে তাদের ব্যাপক স্বাধীনতা দিয়েছেন।
১৯৯০ ও ২০০০ -এর দশকে আমি সউদী আরবে বাস করার সময় সউদী ভ‚খন্ডে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে। ধর্মীয় পুলিশ লোকজনকে হয়রানি ও ভীতি প্রদর্শন করছে, শরিয়া আইন বলবত করছে অন্যদিকে সরকার উগ্রবাদের উত্থান মোকাবেলা করছে, কিন্তু দুইয়ের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন বা মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হচ্ছে- এটা দেখা ছিল এক হতাশাজনক বিষয়। তবে তখন থেকে মানুষকে টেনে হিঁচড়ে নামাজে নিয়ে যাওয়া ও মহিলাদের মুখ ঢাকার জন্য হম্বিতম্বি করার বিষয়টির দায়িত্বে নিয়োজিত ধর্মীয় পুলিশের হাত শিথিল হয়ে আসে।
হাউস অব সউদের সর্বশেষ বিবৃতির সর্বাপেক্ষা বিস্ময়কর দিক হল সউদী তরুণদের একঘেয়েমি ও নিষ্ক্রিয় অবস্থার প্রসঙ্গ তুলে উল্লেখ করা যে দেশের পরিচালকশক্তি তাদের এ শ^াসরোধকর অবস্থা উপলব্ধি করতে পারছে না। প্রিন্স মোহাম্মদ সামাজিক রূপান্তরের ক্ষেত্রে উদার। তিনি জোর দিয়ে বলেন, নাগরিক ও রাষ্ট্রের মধ্যে একটি এক নতুন চুক্তি ছাড়া অর্থনৈতিক পুনর্বাসন ব্যর্থ হবে।
সউদী রাজপরিবারের এক জ্যেষ্ঠ সদস্য বলেন, এটা একটি শিশুকে সামাজিক জীবন দেয়ার মত। তাদের জন্য বিনোদনের একটি সুযোগ থাকা উচিত। তারা একঘেয়েমিতে আক্রান্ত ও অসন্তুষ্ট। একজন মহিলার নিজে গাড়ি চালিয়ে কাজে যাওয়া প্রয়োজন। তাছাড়া আমরা সবাই ব্যর্থ। ছোট শহরগুলোর মানুষজন ছাড়া সবাই তা জানে। তবে তারা শিখবে।
সউদী আরবে উগ্রবাদের ইতিহাস ইরানি বিপ্লব থেকে শুরু হয়নি। এ হচ্ছে ধর্মের রূঢ় প্রয়োগের ফল যা হয়েছে কট্টরপন্থী আলেম সমাজকে স্কুল পাঠক্রম থেকে সরকারী আদেশ আইন পর্যন্ত সর্বত্র অবাধ স্বাধীনতা প্রদানের ফলে। রাজপরিবারের জন্য তা বালো হয়েছে এ জন্য যে এটা একটি ধর্মীয় গোষ্ঠিকে তুষ্ট রেখেছে যারা দূরে সরে থাকলে গুরুতর অঘটন ঘটতে পারত (১৯৭৯ সালে ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের মক্কা অবরোধের মত)। এবং তা এক ধরনের স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেছে যা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায় না।
সউদী অস্থিরতার কেন্দ্রে কি আছে তার প্রকৃত কোনো হিসেব নেই। এটি গণতন্ত্রের অভাবের মত মামুলি ব্যাপার নয়, এটা হচ্ছে সেই সত্যের সম্মুখীন হওয়ার ব্যর্থতা যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের ব্যবহার সব সময়ই পাল্টা আঘাত হানে। বিষয়গুলো আশাব্যঞ্জক বলে দেখা যায়, কিন্তু যদি তা থেকে শিক্ষা নেয়া যায তখনি প্রকৃত আশা সৃষ্টি হয়।
*নিবন্ধ লেখিকা নাসরিন মালিক সউদী আরবে বাস ও কাজ করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।