Inqilab Logo

সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪, ১০ আষাঢ় ১৪৩১, ১৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

চট্টগ্রামে সুদীপ্ত খুনের জট খুলতে নিপুকে খুঁজছে পুলিশ

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২৫ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রামে আলোচিত ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত বিশ্বাস রুবেল খুনের ঘটনায় জড়িতদের নাম-ঠিকানা জানা গেলেও খুনের রহস্য উদঘাটন করা যায়নি। কার নির্দেশে, কেন তাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হলো তাও এখনও অজানা। চাঞ্চল্যকর এই মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে তারা আইনুল কাদের নিপুকে খুঁজছেন। হত্যা মিশনের নেতৃত্ব দেওয়া সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতাকে ধরা গেলে খুনের রহস্যের জট খুলে যাবে। পর্দার আড়াল থেকে বেরিয়ে আসবে সুদীপ্ত খুনের নির্দেশদাতার চেহারাও।
গত ৬ অক্টোবর সকালে নগরীর সদরঘাট থানার দক্ষিণ নালাপাড়ার বাসা থেকে সুদীপ্তকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। প্রাথমিকভাবে পুলিশ নিশ্চিত হয় সিটি কলেজ কেন্দ্রিক ছাত্রলীগের চলমান বিরোধের জেরে এই খুনের ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রামে সরকারী দল আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগে তোলপাড় সৃষ্টিকারী এই খুনের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে যুবলীগ নেতা মোক্তার হোসেন ও ফয়সাল আহমেদ পাপ্পু আদালতে খুনের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
হত্যাকান্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া মোক্তার তার দীর্ঘ জবানবন্দিতে বলেছেন, সুদীপ্ত হত্যায় মূল কিলিং মিশনে ছিল তিনজন। তাদের সহযোগিতায় ঘটনাস্থলের আশপাশে ছিলো আরও অন্তত ১৫ জন। ১৮ জনের এই গ্রæপের মূল নেতৃত্ব দেয় আইনুল কাদের নিপু। নগরীর লালখান বাজার থেকে মোটর সাইকেল ও অটোরিকশাযোগে তারা দক্ষিণ নালাপাড়ায় যায়। হত্যাকাÐ শেষে তারা আবার লালখান বাজারে ফিরে আসে। মোক্তার হোসেন নিজেও এই মিশনে ছিল। তবে কার নির্দেশে এবং কেন সুদীপ্তকে হত্যা করা হয় তার জবানবন্দিতে তা স্পষ্ট হয়নি।
অপর যুবলীগ নেতা ফয়সাল আহমেদ পাপ্পুও খুনের দায় স্বীকার করেছেন। তবে তার জবানবন্দিতেও খুনি চক্রের সদস্যদের নাম ঠিকানা প্রকাশ পেলেও খুনের নির্দেশদাতার বিষয়ে কোন তথ্য আসেনি। তারা দুজনেই আদালতে বলেছেন, তারা সকলে নিপুর নেতৃত্বে হত্যাকাÐে অংশ নিয়েছেন। কার নির্দেশে কেন সুদীপ্তকে হত্যা করা হয়েছে তা তারা জানেন না। এবিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) সদরঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ রুহুল আমীন ইনকিলাবকে বলেন, সুদীপ্ত খুনের ঘটনায় যারা সরাসরি অংশ নিয়েছিলো তাদের প্রায় সকলের নাম পরিচয় পাওয়া গেছে। ওই দুইজনের দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতেও বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। তবে খুনের মোটিভ বা রহস্য এখনও উদঘাটন করা যায়নি।
তিনি বলেন, হত্যাকাÐে নেতৃত্বে দেওয়া আইনুল কাদের নিপু ও তার সহযোগী হানিফকে ধরা গেলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। কারণ এখনও পর্যন্ত তদন্তে এটা স্পষ্ট তারাই পুরো ঘটনার নেতৃত্বে ছিল। কার নির্দেশে বা কেন সুদীপ্তকে হত্যা করা হয় তা তারাই বলতে পারবে। এই দুজনকে ধরতে অভিযান চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, এপর্যন্ত দুই আসামীর দেওয়া জবানবন্দিতে যাদের নাম এসেছে তাদের সবাইকে ধরা হবে। দুই জনের জবানবন্দিতে ঘুরে ফিরে দশ থেকে এগার জনের নাম এসেছে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, গ্রেফতার ফয়সাল আহমেদ পাপ্পুর দেখানো মতে নগরীর তিনপুলের মাথা থেকে হত্যকাÐে ব্যবহৃত একটি রডও উদ্ধার করা হয়েছে।
এই খুনের ঘটনায় যারা গ্রেফতার হয়েছে এবং যাদের নাম এসেছে তারা সবাই লালখান বাজার এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা দিদারুল আলম মাসুমের অনুসারী। সুদীপ্ত খুনের জন্য ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে তাকে দায়ী করা হলেও পুলিশ বলছে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এবিষয়ে কিছু বলা যাবে না। কারণ আসামীদের কেউ এখনও মাসুমের নাম বলেনি।
মোক্তার হোসেন ও ফয়সাল আহমেদ পাপ্পুর দেওয়া জবানবন্দি থেকে জানা যায়, সুদীপ্তকে খুনের পরিকল্পনা হয় লালখান বাজারে। খুনের আগের দিন সেখানে একটি বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে নিপু মোক্তার হোসেনসহ সবাইকে পরদিন (৬ অক্টোবর) ভোরে লালখান বাজারে আসতে বলেন। তার কথা মতো মোক্তার ও অন্যরা ভোরেই সেখানে এসে জড়ো হন। মোক্তার বলেন, এসে দেখি সেখানে কয়েকটি মোটর সাইকেল ও বেশ কয়েকটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা তৈরী। নিপু ও হানিফের নির্দেশে তারা সবাই অটোরিকশায় উঠেন। কেউ কেউ মোটর সাইকেল উঠেন। সবাই সরাসরি চলে যায় দক্ষিণ নালাপাড়ায় সুদীপ্তের বাসার কাছে। কয়েকজন বাসার আশপাশে এবং বেকআপ ফোর্স হিসেবে বেশ কয়েকজন দূরে অবস্থান নেয়। দুইজন সুদীপ্তের বাসায় গিয়ে তাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে বাসার বাইরে নিয়ে আসে। এসময় তারা বাইরে থেকে তাদের বাসার দরজা বন্ধ করে দেয়। বাসার কিছু দূরে নিয়ে তাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
মোক্তার বলেন, এসময় সুদীপ্তের চিৎকারে লোকজন এগিয়ে আসতে চাইলে বেকআপ ফোর্স হিসাবে থাকাদের একজন ফাঁকা গুলি বর্ষণ করলে লোকজন পিছু হটে। এ অবস্থায় সুদীপ্ত অচেতন হয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়লে তারা অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলযোগে লালখান বাজারের দিকে ফিরে আসে। আসার পথে সিটি কলেজ এলাকায় তারা আরও কয়েক রাউন্ড গুলিছুঁড়ে। পরে লালখান বাজার থেকে তারা নিপুর নির্দেশে যে যার বাড়িতে চলে যায়। মোক্তার বলেন জুম্মার নামাজের পর সে টিভির খবরে জানতে পারে সুদীপ্ত খুন হয়েছে। এরপর সে বাসায় চলে যায়। নিপুর সাথে যোগাযোগ করলে সে তাকে মোবাইল বন্ধ করে আড়ালে চলে যেতে বলে। পরে সে কক্সবাজারে পালিয়ে যায়। সেখান থেকে ফিরে ভোলায় শ্বশুড় বাড়িতে যাওয়ার পথে নগরীর বড়পুলে একটি বাস কাউন্টার থেকে তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পুলিশ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ