পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভারত পাকিস্তান সহ সারা বিশ্বের কওমী ধারার শিক্ষা এর মূল কেন্দ্র দেওবন্দের আদলে দেড়শ বছর ধরে চলছে। বাংলাদেশেও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী এই একনিষ্ঠ দীনি শিক্ষা চালু আছে। এই পদ্ধতি দেশের লাখো মসজিদ মকতব ও হাজার হাজার কওমী মাদরাসায় অনুসরণ করা হয়। বর্তমান সরকার কওমী শিক্ষাকে স্বীকৃতি ও এর সর্বোচ্চ সনদকে এম,এ এর মান দিয়েছেন। সারা দেশের লাখো আলেম এ শর্তে স্বীকৃতি নিয়েছেন যে, কওমী নীতি কারিকুলাম ও সিলেবাসে কোন হস্তক্ষেপ করা হবে না। যেভাবে এ শিক্ষা চলছে তার উপর অটল থেকে এবং দেওবন্দের আট মূলনীতি অক্ষুন্ন রেখে মান নেওয়া হবে। এ জন্য বেফাক সহ দেশের বড় ছয়টি বোর্ড এক হয়ে গঠিত হয় হাইয়াতুল উলয়া। সর্বশেষ বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রাপ্ত খবরে আমরা জানতে পারলাম, কওমী কারিকুলাম ও সনদের স্বীকৃতি বিষয়ে কাজ করার জন্য সরকার নতুন কমিটি করে দিয়েছে। যা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ছয়জন, সরকারী কর্মকর্তা ও জেনারেল শিক্ষিত তিনজন, এই নয়জনের কমিটি কওমীর ভবিষ্যত বিবেচনা করবে। অথচ কথা ছিল কওমী শিক্ষা নিজ অবস্থায় থাকবে। সরকার শুধু স্বীকৃতি দেবে। কারিকুলাম নিয়ে কাজ করবেন কওমী ওলামাগণ। কমিটিতে কওমী বিশেষজ্ঞ আলেম ও কারিকুলামবিশারদ কেউই নেই। কওমীর ৩২ সদস্যের কাউকেও রাখা হয়নি। যার প্রতিবাদ করেছেন বেফাক ছাড়া বাকী ৫ বোর্ড। বেফাকেরও অনেক সদস্য এ বিষয়ে নিজেদের আশংকার কথা প্রকাশ করেছেন। আমরা খুব উদ্বিগ্ন হয়ে কওমী মুরব্বীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। দ্রুত নজর না দিলে বাংলাদেশে কওমী শিক্ষা পথ হারাবে। গতকাল এক বিবৃতিতে দেশের ৫০ জন কওমী আলেম এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা মাওলানা আব্দুল মালেক হালিম, মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী ছাড়াও শায়খুল হাদীস মাওলানা হানিফ, মুফতি আব্দুর রহমান, মাওলানা গাজী হেমায়েতউল্লাহসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ৫০ জন কওমী আলেম তাদের বিবৃতিতে আরও বলেন, আমরা সিলেটের মাওলানা জিয়াউদ্দীন সাহেব, গওহরডাঙ্গার মুফতি রুহুল আমীন, আফতাব নগরের মুফতি মোহাম্মদ আলী ছাড়াও কওমী আলেমদের মতামত লক্ষ্য করেছি। বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায় এ নিয়ে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকার প্রকাশ হচ্ছে। বিশেষ করে বেফাক সম্পর্কে নানা প্রশ্ন বাজারে ছড়িয়ে পড়েছে। অনিয়ম, নৈতিক অবক্ষয় ও একধরনের সুবিধাবাদ জাতীয় এই প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে। বেফাককে তার সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনীয়তা এর অন্যতম সিনিয়র সহ-সভাপতি আল্লামা আনোয়ার শাহ বহু আগেই বলেছেন। বেফাকের অপর মুরব্বী মাওলানা মাহমুদুল হাসান মিডিয়াকে সাক্ষাৎকার দিয়ে সব বিষয়ে আরও সতর্কতার সাথে অগ্রসর হওয়া ও যথাযথ পরামর্শের মধ্য দিয়ে সিদ্ধান্তের আহ্বান জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে তারা আরও বলেন, বেফাক নিয়েও আমরা উদ্বিগ্ন। বর্তমানে ব্যাপক রাখঢাক ও অনিয়মকে সম্বল করে ভারপ্রাপ্ত দুই প্রধান কর্মকর্তা দায়সারাভাবে বেফাক চালিয়ে যাচ্ছেন। কাউন্সিল করে বেফাকের গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছেনা। পরীক্ষা ও প্রকাশনা বিভাগের অতীত দুর্নীতি জায়েজ করা ও চলমান দুর্নীতি ঢেকে রাখাই যেন বেফাকের কাজ। কমিটির মুরব্বীদের কেবল খাতায় কলমে বুঝ দেওয়া হয় আর সভাপতি আল্লামা আহমদ শফীকে অন্ধকারে রেখে মধ্যবর্তী লোকেদের সহায়তায় ব্যাপক নয় ছয় চলে। সম্প্রতি মিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী হাটহাজারী মাদরাসা, হেফাজত ও বেফাক আল্লামা শফী পুত্র মাওলানা আনাস মাদানীর নিয়ম বহির্ভূত প্রভাব বিস্তারে কীভাবে কলুষিত হচ্ছে সেই বিষয়েও দেশের কওমী আলেমগণ উদ্বিগ্ন। সরকারের সাথে বেফাক ও হেফাযতের অহেতুক ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধির জন্য যার গতিবিধিকে বুযুর্য আলেমরা অপছন্দ করে এসেছেন। গরীব মাদরাসা ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবকদের কষ্টের টাকায় গড়ে উঠা বেফাক থেকে নানা কায়দায় কিছু দুর্নীতিবাজ কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে থাকে। নিরপেক্ষ ও সৎ ব্যক্তিদের দ্বারা অডিট ও তদন্ত না করে অনিয়মে জড়িত লোকেদের সাথে ভালো লোক মিলিয়ে তদন্ত নামের প্রহসন করা হয়। অনেক দুর্নীতি ও অনিয়মের ফিরিস্তি বেফাকের ভেতর থেকেই দেশের কওমী আলেমগণকে জানানো হচ্ছে। যা মিডিয়াসহ সাধারণ মানুষের কাছে চলে যাওয়া কওমী অঙ্গনের জন্য স্থায়ী ক্ষতির কারণ হবে।
আলেমগণ আরও বলেন, বেফাক ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের ইসলমিক ফাউন্ডেশনের ডিজির কাছে যাওয়া এবং তার হাতে হাইয়াতুল উলয়ার গঠনতন্ত্র তুলে দেওয়া। সর্বোপরি মুফতি নুরুল আমিন ও তার ঘন ঘন সরকারের উচ্চ পর্যায়ে যাতায়াত, সরকারের কাছ থেকে কওমী শিক্ষার জন্য অর্থ সাহায্য, ঢাকায় জমি ইত্যাদি গ্রহণের আলোচনা কওমী আলেমসমাজের মনে চরম উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। বেফাকের সিনিয়র সহ-সভাপতি আল্লামা আশরাফ আলী মিডিয়াকে বলেছেন, সরকারের সাহায্য ও জায়গা-জমি নেওয়া সম্পর্কে সকলের মতামত প্রয়োজন। দেওবন্দের নীতি ভংগ করে যেন কিছু না করা হয়। মাওলানা ফরিদউদ্দীন মাসউদ ইফা ডিজি সামীম মোহাম্মদ আফজালকে কমিটিতে রেখে কওমী কারিকুলাম তৈরি ও এর আধুনিকীকরণকে একটি ধ্বংসাত্মক কাজ বলে অভিহিত করেছেন। তার দল জমিয়তুল উলামা এক বিবৃতিতে বলেছে, কওমী আলেমদের কল্যাণ কেবল সব কাজ যদি কওমী আলেমদের হাতেই থাকে তবেই হতে পারে। সরকারের হস্তক্ষেপ ও জেনারেল শিক্ষিতদের দ্বারা কওমীর ভবিষ্যত নির্ধারণ স্বীকৃতির নামে সর্বনাশ ডেকে আনবে। কওমী অঙ্গনের একাধিক শীর্ষ আলেম আমাদের বলেন, আপনারা বিবৃতি দিন। মুরব্বীদের সব জানান। প্রয়োজনে আমরা আপনাদের সাথে কওমী ওলামাদের দ্বারে দ্বারে যাবো। সরকারকে বোঝাবো। জনগনকে সচেতন করে যে কোনো মূল্যে কওমী শিক্ষার ঐতিহ্য ও আকাবিরদের রেখে যাওয়া রীতি-পদ্ধতি অক্ষুণœ রাখবো বলেও তারা বিবৃতিতে উল্লেখ করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।