Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পুরনোদের হটিয়ে মনোনয়ন চায় নবীনরা

ময়মনসিংহে বিএনপি’র মনোনয়ন রাজনীতিতে নতুনের আবাহন

মো: শামসুল আলম খান, ময়মনসিংহ থেকে | প্রকাশের সময় : ২৩ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবিতে অনড় অবস্থানে রয়েছে। শেষ পর্যন্ত সরকার এ দাবি মেনে নিয়েই নির্বাচনের পথে হাঁটবে বলেও মনে করেন দলটির নেতা-কর্মীরা। তবে এ নির্বাচনকে ঘিরে ময়মনসিংহে বিএনপি’র মনোনয়ন রাজনীতি জমে উঠেছে। নতুনের আবাহনে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দলটির নেতা-কর্মীরা।
জেলার ১১ টি আসনের মধ্যে কমপক্ষে ৭ টি আসনে পুরনোদের হটিয়ে মনোনয়ন রাজনীতি চাঙ্গা করে তুলেছেন অপেক্ষাকৃত নবীন প্রার্থীরা। তাদের পক্ষে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও একাট্টা। আসনসমূহ পুনরুদ্ধারে তাদের মনোনয়ন দেয়ার বিকল্প নেই বলেও অভিমত তৃণমূলের কর্মীদের। জানা যায়, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া) আসন থেকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন বিচারপতি টিএইচ খানের ছেলে আফজাল এইচ খান। স্থানীয় রাজনীতিতে দীর্ঘদিন যাবত তার কোন সম্পৃক্ততা নেই। এ আসনটিতে ময়মনসিংহ বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স তৎপর রয়েছেন। দলের ভেতরে-বাইরে তার অবস্থান ভাল।
শিল্পায়নের উপজেলা হিসেবে পরিচিত ময়মনসিংহ-১১ (ভালুকা) আসনে ২০০৮ সালের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে আ’লীগ প্রার্থীর কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন সাবেক ছাত্র নেতা ফখরুদ্দিন বাচ্চু। এ আসনটিতে এবার দলীয় মনোনয়ন রাজনীতিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক মহাসচিব ও বিশিষ্ট শিল্পপতি মোর্শেদ আলম। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বাচ্চু’র কুটকৌশলে পরাজিত হয়েছিলেন মোর্শেদ। গত ৯ বছরে দলের প্রতিটি লড়াই-সংগ্রামে এমনকি ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে-পরে মামলা-হামলায় কাবু নেতা-কর্মীদের মামলা মোকদ্দমার খরচ চালানোর পাশাপাশি তাদের আশ্রয়ও দিয়েছেন তিনি। শুধু দলেই নয় গোটা উপজেলাতেই মোর্শেদ আলম দানবীর হিসেবে পরিচিত। তাকে মনোনয়ন দিলে আসনটিতে বিএনপি’র জেতার সম্ভাবনা প্রবল মনে করেন অনেকেই।
ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা) আসনে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পান ‘সংস্কারপন্থী’ হিসেবে পরিচিত শাহ শহীদ সারোয়ার। পরবর্তীতে তাকে চ্যালেঞ্জ করে তারাকান্দা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জিতে আসেন সাবেক ছাত্র নেতা মোতাহার হোসেন তালুকদার। এবার আসনটি ধরে রাখার স্বার্থেই মোতাহারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন তারাকান্দা-ফুলপুরের তৃণমূলের কর্মীরা।
ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে পরাজিত হয়েছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন। গত উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি’র আহাম্মদ তায়েবুর রহমান হিরণ জয়ী হওয়ায় এবারের নির্বাচন তার মনোনয়নের দাবি তুলেছেন তার অনুসারীরা।
ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা) আসনে প্রতিদ্ব›দ্বীতাপূর্ণ ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন সাবেক জ্বালানী প্রতিমন্ত্রী এ.কে.এম.মোশাররফ হোসেনের সৎ ছোট ভাই ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বাবলু ওরফে ক্লাসিক বাবলু। এবার সাবেক প্রতিমন্ত্রী তার পুরনো এ আসন থেকে দলীয় প্রার্থী হতে চান। ইতোমধ্যে তিনি মুক্তাগাছায় ব্যাপক জনসংযোগও শুরু করেছেন। এ নিয়ে দুই ভাইয়ের মাঝে দ্ব›দ্ব চরমে উঠেছে। দলীয় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাকারিয়া হারুনসহ দলটির বেশিরভাগ নেতা-কর্মীরা চান সাবেক প্রতিমন্ত্রী আসনটিতে প্রার্থী হোক।
ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ) আসনে বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের সংগঠিত করে উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি লুৎফুল্লাহেল মাজেদ বাবু দীর্ঘ সময় ধরে ভোটারদের মধ্যে কাজ করে গেলেও বাঁধ সেধেছেন দলীয় সাবেক এমপি শাহ নুরুল কবির শাহীন। ক্ষমতাসীন দলের কারো কারো সঙ্গে তার ‘দহরম মহরম’ সম্পর্ক দলীয় গ্রæপিং-কোন্দলে প্রভাব বিস্তার করছে। আন্দোলন বা সঙ্কটে তার ‘গা ছাড়া’ ভাব দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঝে প্রশ্নবোধক। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হেরে যাওয়া সাবেক এমপি শাহীনকে নয়, সফটওয়্যার প্রকৌশলী মাজেদ বাবুকেই চান দলটির নেতা-কর্মীরা।
ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন মরহুম রাজনীতিক ও সাবেক এমপি ফজলুর রহমান সুলতান। তার মৃত্যুতে এবার আসনটিতে প্রার্থী হতে চান তার ভাই এ.বি.সিদ্দিক। তিনি ছাড়াও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক দপ্তর সম্পাদক আখতারুজ্জামান বাচ্চু দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।
মর্যাদাপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনে এবার দলীয় প্রার্থীতার লড়াইয়ে আলোচনায় রয়েছেন বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান ডা: এ.জেড.এম.জাহিদ হোসেন ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদ।
এ আসন থেকে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী সাবেক প্রতিমন্ত্রী এ.কে.এম.মোশাররফ হোসেন আর লড়তে চান না। সেক্ষেত্রে ডা: জাহিদ কিংবা ওয়াহাব আকন্দের মধ্যে যে কোন একজন দলীয় মনোনয়ন পেতে পারেন বলে মনে করেন দলটির নেতা-কর্মীরা। তবে ওয়াহাব আকন্দ আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় মেয়র প্রার্থী হতে পারেন বলেও দলের অন্দরে-বাহিরে আলোচনা হচ্ছে। জেলায় দলীয় রাজনীতিতে ‘আকন্দ পরিবারের’ প্রভাব থাকায় সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ওয়াহাব আকন্দের মতো শক্তিশালী প্রার্থীকেই বেছে নিতে পারে দলটি। সেই হিসেবে সংসদ নির্বাচনে দলীয় একক প্রার্থী হতে পারেন ডা: জাহিদ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ