পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ঢাকা আসছেন। তাকে আন্তরিক মোবারকবাদ। ভারতের বর্তমান শাসক দলের অন্যতম স্তম্ভ তিনি। নীতি, বিবেচনা, ঐতিহ্য ও মননে তিনি বিশিষ্ট।
যখন বহুত্ববাদী ও গণতান্ত্রিক একটি ঐতিহাসিক ভূখন্ডের ঐতিহ্য কিছু নেতার বাড়াবাড়ির ফলে মলিন হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে, তখন যেসব ধীমান সহিষ্ণু ও অভিজাত নেতার প্রজ্ঞায় ভারত এগিয়ে যাবে বলে বিশ্লেষক মহল মনে করেন সুষমা স্বরাজ তাদের অন্যতম। বাংলাদেশের মতো একটি প্রধান বন্ধু দেশে তার এ আগমন যেন ভারতের বৃহৎ উদার ও মানবিক অবস্থানের উচ্চতাকে উর্দ্ধে তুলে রাখে, শুভার্থীদের এটাই প্রত্যাশা। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান অনস্বীকার্য। আমাদের স্বাধীন ও সম্মানজনক অগ্রযাত্রায়ও ভারতকে অবদান রাখতে হবে। ভারত সরকারের বর্তমান নীতি “প্রতিবেশী সবার আগে” বাস্তবায়নের জন্য তার গৃহীত নানা পদক্ষেপের ফলাফল বিশ্লেষণ করাও বিজেপি সরকারের দায়িত্ব। সম্প্রতি ভারতের আরেক প্রভাবশালী নেতা অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি ঢাকা সফর করেন। তিনি তখন বলে গেছেন, ভারত ও বাংলাদেশ একই সাথে উন্নয়নের লক্ষ্য পানে এগিয়ে যাচ্ছে এবং বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ভারত বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বর্তমানে অতীতের সব সময়ের চেয়ে অধিক মধুর। এ পর্যায়ে ভারত বাংলাদেশ বিভিন্ন চুক্তি ও সমঝোতার অগ্রগতি বিশ্লেষণের জন্য উভয় দেশের যৌথ বৈঠক উপলক্ষে ঢাকা আসছেন সুষমা স্বরাজ। মূলত তিনি আমাদের পররাষ্টমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সাথে বসবেন। এখানে একটা বিষয় স্পষ্ট হওয়া উচিত যে, দীর্ঘদিনের নানামুখী বহু সমস্যা একদিনে সমাধান হয়ে যাবে এমন ধারনা করা ঠিক নয়। তবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বড় সমস্যা ও গণমুখী সমস্যা দ্রুত মিটে গেলে নাগরিক পর্যায়ে ভালো বার্তা পৌঁছে যায়। যা কূটনীতির বড় অর্জন।
বাংলাদেশের সাথে ভারতের বড় যেসব সমস্যা ছিল এর অনেকগুলোই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে একটি সমাধানের দিকে গিয়েছে। সমুদ্র সীমা, সীমান্ত সমস্যা, ছিটমহল ইত্যাদি। বাকী যা আছে তার মধ্যে অভিন্ন নদী, তিস্তার পানি বন্টন, সীমান্ত হত্যা, অবন্ধু সুলভ কাঁটাতার, মাদক ও মানব পাচার, বিশাল বানিজ্য ঘাটতি ইত্যাদি। মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা তিস্তার পানি বন্টন, বানিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা সহ কিছু সমস্যার আশু সমাধান ছাড়া ভারতের ইতিবাচকতা প্রমাণিত হওয়া কঠিন। বিশেষ করে বর্তমান সরকার ভারতের প্রায় প্রতিটি চাহিদা পরিপূর্ণরূপে পুরণ করা সত্বেও ভারত সমপর্যায়ের আন্তরিকতা দেখায়নি বলে বাংলাদেশে একটি জনমনোভাব গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে জল ও স্থল পথে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতে যাতায়াতের জন্য বাংলাদেশের যা পাওয়ার অধিকার ছিল তা থেকে ভারতের চিন্তা অনেক যোজন দূরে থাকায় দেশবাসী হতাশ। সর্বোপরি সুন্দরবন নষ্ট হতে পারে এমন অঞ্চলে বেশ জোর করেই কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরীতে মনস্থির রাখা থেকেও হতাশা আরো বাড়ে।
ক্ষুদ্র আকারে একটি দেশের সরকার ও সীমিত কিছু নাগরিকের সাথে সুসম্পর্ক রাখা যথেষ্ট মনে হতে পারে। কিন্তু বৃহৎ আঙ্গিকে কোনো দেশের গণমানুষের সাথে বন্ধুসুলভ সম্পর্কই টেকসই ও ফলপ্রসু হয়ে থাকে। যে জন্য ভারতকে বুঝতে হবে যে, বাংলাদেশ ও এর জনগন কোনোদিনই ভারতের শত্রু নয়। তারা ভারত সরকারের কোনো নীতি বা আচরণের জন্য কষ্ট পেলে হয়তো ভারত বিরোধী মনোভাব পোষন করতে পারে। তবুও তা প্রতিবেশী দেশ ভারত কিংবা ভারতের জনগনের সাথে নয়। সেই কষ্টদায়ক ও ক্ষতিকর নীতি বা আচরণের জন্য দায়ী ব্যক্তি বা গোষ্ঠির সাথে। বিগত নয়-দশ বছরে বাংলাদেশে ভারত বিরোধিতা কমেছে না বেড়েছে তা ভারতকেই খুঁজে দেখতে হবে। যদি নেতিবাচক মনোভাব দানা বেঁধে থাকে তাহলে এর কারণও ভারতকেই খুঁজে বের করতে হবে। বিশেষ করে ১/১১ এর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভ‚মিধস বিজয় কী করে এমন অবস্থায় গিয়ে পৌঁছলো যে তাকে ৫ জানুয়ারীর মতো একটি নির্বাচন করতে হলো? বিশাল জনপ্রিয়তা ও মহাজোটের সহায়তা এবং জনগনের উন্নয়নে নজিরবিহীন কর্ম তৎপরতা সত্বেও একটি মুক্ত ও স্বচ্ছ নির্বাচনে যাওয়া কেন সম্ভব হয়নি? সর্বশেষ মিডিয়ার মূল্যায়ন অনুযায়ী সবচেয়ে দীর্ঘসময় ক্ষমতায় থাকা নারী হিসেবে এবং দেশের জন্য অভূতপূর্ব অবদান রাখার পরও কেন একটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে যাওয়ার পরিবেশ তৈরী হয়নি? এসব প্রশ্ন যেখানে থাকে সেখানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে বলে মনে করা যায়; দাবিও করা যায়। তবে অন্তর থেকে বিশ্বাস করা যায় না। এক্ষেত্রে সমস্যা কোথায়, কীভাবে তা দূর করা যাবে এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের ভাবাই সঠিক রাজনীতি। কূটনীতির ক্ষেত্রে যদি দেখা হয়, তাহলে স্মরণ করতে হয় ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের আগে ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়ের ঢাকা আগমনের বিষয়টি। একটি প্রভাবশালী দেশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা হয়ে তিনি তখন যেভাবে বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতি ও নির্বাচনের ক্ষেত্রে নজিরবিহীন খোলামেলা হস্তক্ষেপ করেছিলেন, ভারত বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে এর অর্জন কতটুকু বা কী, তা ইতিহাসই নিরূপন করবে। তবে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, একটি বন্ধুপ্রতিম দেশের এমন রাখঢাকহীন আচরণ দু’দেশের জনগন পর্যায়ের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি বড় আঘাত হয়েই থাকবে। কেননা কূটনৈতিক আভিজাত্য ও উদারতা ভারতের মহান আদর্শ। বাংলাদেশের মানুষের মন জয় করতে হলে ভারতকে তার মানবিকতা এদেশেও প্রদর্শন করতে হবে। বাংলাদেশ থেকে কিছু পেতে হলে, অথবা পেয়ে থাকলে তা নৈতিক রূপ দিতে চাইলে বাংলাদেশকেও তার ন্যায্য পাওনা দিতে হবে। সাধারণ মানুষের মতের বিরুদ্ধে কিছু জোর করে চাপিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। আশা করি এসব কথা ভারতীয় অভিজ্ঞ ও প্রবীণ নেত্রী সুষমা স্বরাজ অনুধাবন করবেন।
প্রসঙ্গত আমাদের চলমান একটি বড় সমস্যা নিয়ে দু’টি কথা বলা প্রয়োজন। প্রায় ষোল লাখ রোহিংগা যাদের মধ্যে ছয় লাখই নবাগত। গত দু’মাসে এদের যে আগমন বাংলাদেশকে টালমাটাল করে দিচ্ছে, নিকট প্রতিবেশী ও বন্ধু দেশ হিসেবে ভারতকেও এ সমস্যা মোকাবেলায় বাংলাদেশের সাথে থাকতে হবে। মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের আর্থ-রাজনৈতিক যত বিষয়ই থাকুক না কেন বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মজলুম মুসলমানের বিষয়ে ভারত যেন তার কর্তব্য ভুলে না যায়। গৌতম বুদ্ধ, খাজা মঈনউদ্দীন চিশতি রাহ., শাহ সূজা, বাহাদুর শাহ জাফর ও মহাত্মা গান্ধীর দেশ হিসেবে ভারতের দায়িত্ব এক্ষেত্রে অনস্বীকার্য। এখানে তার ভ‚মিকা হতে হবে ন্যায়নীতি ও ভারসাম্যপূর্ণ। নিছক ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি ভারতের জন্য শোভনীয় নয়। বাংলাদেশ এখন রাজনৈতিকভাবেও একটি জটিল সময় অতিক্রম করছে। নির্বাহী ও বিচার বিভাগের কিছু বিষয় জাতিকে বিব্রত করছে। কূটনৈতিক ক্ষেত্রে ভারসাম্য ও বাংলাদেশের স্বকীয়তা রক্ষার বেলায়ও নানা জটিলতা আমাদের সরকারকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে বড় প্রতিবেশী হিসেবে ভারতের দায়িত্ব রয়েছে। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের সম্মান ও স্বকীয়তা রক্ষা এবং জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে প্রতিরক্ষা বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহনের পূর্ণ সুযোগ এদেশের সরকারের আছে। এতে সংশ্লিষ্টজন হিসেবে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সুবিধা-অসুবিধা সরকারকে অবশ্যই বুঝতে হবে। পাবলিক পারসেপশনের প্রতি পূর্ণ খেয়াল রাখা এক্ষেত্রে কেবল সরকারের দায়িত্বই নয় বরং স্বাধীন দেশের সৌন্দর্য। বিশেষ করে কোনো চুক্তি বা সমঝোতা যেন অপ্রকাশিত না থাকে। জনগনের তথ্য জানার অধিকারের চেয়ে, দেশ ও জাতির নিয়তি জানার অধিকার হাজার গুণ বেশী। কূটনৈতিক শিষ্টাচার অনুযায়ী যদি অফিসিয়াল মিটিং ছাড়া অন্য কারো সাথে মেহমানের বৈঠক হয় তখন সকলেরই উচিত দেশ ও জাতির স্বার্থে অভিন্ন সত্য উচ্চারণ করা। জাতীয় স্বার্থে গোটা পরিস্থিতির প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা। দু’দেশের সম্পর্ক কী করে আরও ভালো টেকসই ও ফলপ্রসু হয় তা খুঁজে বের করা। ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থে কেউ কারও বদনাম বা দেশের ক্ষতি হয় এমন কথা না বলা। সর্বোপরি বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বাস্তবিকই কী করে মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে। কীভাবে একটি গ্রহণযোগ্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে পারে সে নিয়ে ভারতের অভিজ্ঞতা থেকে উপকৃত হওয়া। চিন্তা করা যে, ভারতকে মডেল ভেবে এমন নির্বাচন করা যাতে সরকার গঠনে বাংলাদেশের মানুষ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারে। দুনিয়ার অন্যতম বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের কাছে এটুকু খুব বেশী চাওয়া নয়। সুপ্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশকে পাওয়ার জন্য এদেশের জনগনের সাথে তাদের সম্পর্ক হতে হবে আস্থা ও বিশ্বাসের। কল্যাণ ও উদারতার। দেওয়া নেওয়া ও সর্বোচ্চ সমতার। সম্পর্কের ভিত্তি যদি বিশ্বাস ও মৈত্রী হয় তাহলে সরকার পরিবর্তনে অবস্থার কোনো হেরফের হয় না। কিন্তু কৃত্রিম অবস্থা তৈরী বা জোর পূর্বক চাপিয়ে দেওয়া পরিস্থিতি যে কোনো মুহূর্তে আমূল পাল্টে যায়। ভারতের বেশ কিছু প্রতিবেশীর ক্ষেত্রে যেমনটি দেখা গেছে। পরিশেষে আমরা ভারতীয় এ মেহমানের সাফল্য কামনা করছি। ঢাকায় তাকে মোবারকবাদ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।