পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশে এখন ১০ শতাংশ শীর্ষ ধনীর কাছে ৩৮ শতাংশ আয় কুক্ষীগত- বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এই হিসাব বলে দিচ্ছে দেশে আয় বৈষম্য কতটা প্রকট আকার ধারণ করেছে। এর আগে ২০১০ সালের খানা আয় ব্যয় জরিপে দশ শতাংশ শীর্ষ ধনীর কাছে আয় কুক্ষীগত ছিল ৩৫ শতাংশ। ছয় বছরের ব্যবধানে সেটি তিন শতাংশ বেড়েছে।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সংস্থা অক্সফামের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বিশ্বে যত সম্পদ আছে, তার প্রায় অর্ধেক সম্পদ এখন ধনকুবের এক শতাংশ মানুষের হাতে। বাকি প্রায় অর্ধেক সম্পদ ৯৯ শতাংশ মানুষের হাতে। অক্সফাম বলেছিল, বিশ্বের ৬২ জনের সম্পদ হচ্ছে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের সম্পদের সমান। অর্থাৎ ৬২ জনের মোট সম্পদ = ৩৬০ কোটি মানুষের সম্পদ। বিশ্বের মোট জনসংখ্যা এখন ৭০০ কোটির ওপরে। বাংলাদেশেও দেখা মিলল একই চিত্র।
খানা আয় ব্যয় জরিপে দেখা গেছে, গত ছয় বছরে দেশে দারিদ্র্যের হার কমেছে। তবে একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আয় বৈষম্যও বেড়েছে। ভোগব্যয়ও স্থিতিশীল আছে। দেশের আর্থ সামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নতি হলেও বিবিএস বলছে, দেশের রংপুর বিভাগে এখনো ৪৭ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে কম মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। এই হার ১৬ শতাংশ। দেশে ভাত খাওয়ার প্রবণতা কমছে বলেও দাবি করেছে বিবিএস।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবন মিলনায়তনে খানা আয় ব্যয় ‘এইচআইইএস ২০১৬’ জরিপের প্রাথমিক ফলাফল তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এসময় অন্যদের মধ্যে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মোজাম্মেল হক, ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক প্রতিনিধি রাজশ্রী পালাকার, বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন, বিবিএস মহাপরিচালক আমির হোসেন বক্তব্য দেন। আর জরিপের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন প্রকল্প পরিচালক দীপঙ্কর রায়।
আয় বৈষম্য বেড়েছে
২০১০ থেকে ২০১৬ এই ছয় বছরে দেশে আয় বৈষম্য বেড়েছে উল্লেখ করে দীপঙ্কর রায় তার প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, আয় বৈষম্য পরিমাপক গিনি কো ইফিসিয়েন্ট মানদন্ডে আয় বৈষম্য বেড়ে শূণ্য দশমিক ৪৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০১০ সালে এটি ছিল শূণ্য দশমিক ৪৫। গিনি কো ইফিসিয়েন্ট ১% হলে সেটিকে বলা হয় সর্বোচ্চ আয় বৈষম্য। আর শুন্য শতাংশ হলে সেটিকে বলা হয় সবার মধ্যে সাম্য। যেটি বিশ্বের কোথাও নেই। সে হিসেবে বাংলাদেশে এখনো আয়বৈষম্য চরম অবস্থায় যায়নি ঠিকই, কিন্তু প্রতিবছর বাড়ছে। জরিপে দেখা গেছে, গ্রামাঞ্চলে আয় বৈষম্য কিছুটা সহনশীল থাকলেও শহরে তা আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে। বিবিএস বলছে, গত ছয় বছরে মানুষের ভোগব্যয় স্থিতিশীল রয়েছে। ২০১০ সালে ভোগব্যয় ছিল শূণ্য দশমিক ৩২। ছয় বছর সেটি এখনো একই অবস্থানে রয়েছে। এ প্রসঙ্গে দীপঙ্কর রায় বলেন, ধনী গরীব দুজনেই ২০১০ সালে ভোগব্যয়ে যা খরচ করতো, এখনো তাই করছে। কোনো পরিবর্তন আসেনি। খানা আয় ব্যয় জরিপে উঠে এসেছে, দেশে এখন গড় দারিদ্র্যে হার ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। সংখ্যায় হিসাব করলে তা তিন কোটি ৮৮ লাখ মানুষ। যারা দৈনিক দুই হাজার ১২২ কিলো ক্যালরির কম খান। একই সঙ্গে খাদ্য বহির্ভূত পণ্য কম কেনেন। আর অতি দরিদ্র্যের হার ১২ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০১০ সালে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ। সে হিসাবে গত ছয় বছরে দারিদ্র্যের হার কমেছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ।
প্রকল্প পরিচালক দীপঙ্কর রায় বলেন, ১৯৭৩-৭৪ সালে প্রথমবারের মতো দেশে খানা আয় ব্যয় জরিপের কাজ শুরু হয়। ওইসময় দুই বছর পর পর এই জরিপ করা হতো। কিন্তু ১৯৯৫ সাল থেকে খানা আয় ব্যয় জরিপটি ৫ বছর পর পর করা হয়। ২০১০ সালের খানা আয় ব্যয় জরিপে ১২ হাজার ২৪০টি খানা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে জরিপ করা হয়েছিল। এবারের অর্থ্যাৎ ২০১৬ সালের জরিপে নমুনা এলাকার খানা নেওয়া হয়েছে ৪৬ হাজার ৮০টি। তাই এই জরিপের ফলাফল আরো স্বচ্ছ ও সমৃদ্ধ।
ভাত খাওয়ার প্রবণতা কমছে
খানা আয় ব্যয় জরিপে দেখা গেছে, ২০১০ সালে একজন ব্যক্তি দৈনিক ৪১৬ গ্রাম ভাত গ্রহণ করতেন। ২০১৬ সালে সেটি কমে ৩৬৭ গ্রামে নেমে এসেছে। এসময়ে সবজি খাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। একই সঙ্গে পেঁয়াজেরও। ২০১০ সালে একজন ব্যক্তি দৈনিক ২২ গ্রাম পেঁয়াজ গ্রহণ করতো। এখন সেটি বেড়ে ৩১ গ্রামে উন্নীত হয়েছে। আর গরুর মাংস খাবারের প্রবণতা বেড়েছে। মাছ এবং ডিম খাওয়ার হারও বেড়েছে। একজন ব্যক্তি এখন ১৪ গ্রাম ডিম গ্রহণ করে দৈনিক। আগে যেখানে করতো ৭ গ্রাম। আর মাছ আগে গ্রহণ করতো ৫০ গ্রাম। এখন করে ৬৩ গ্রাম।
খানায় আয় বেড়েছে
২০১৬ সালের খানা আয় ব্যয় জরিপ অনুযায়ী, জাতীয় পর্যায়ে খানার মাসিক আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৯৪৫টাকা। ২০১০ সালে তা ছিল ১১ হাজার ৪৭৯ টাকা। শহরে প্রতি খানায় মাসিক আয় এখন ২২ হাজার ৫৬৫ টাকা। ২০১০ সালে ছিল ১৬ হাজার ৪৭৫ টাকা। আর গ্রামে এখন মাসিক আয় ১৩ হাজার ৩৫৩; ২০১০ সালে যা ছিল ৯ হাজার ৬৪৮ টাকা।
জীবনমানের সূচকে উন্নতি
বিবিএসের জরিপ বলছে, গত ছয় বছরে দেশের আর্থসামাজিক অনেক সূচকের উন্নতি হয়েছে। একটি খানার বাসস্থানের রড, ইট, বালি, সিমেন্টের উপকরণ ২০১০ সালে ছিল ২৫ শতাংশ। ২০১৬ সালে সেটি বেড়ে ৩০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। টিন ও কাঠের দেওয়ালের হার এখন বেড়ে ৪৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০১০ সালে তা ছিল ৩৮ শতাংশ। বিবিএস বলছে,গত ছয় বছরে দেশে পানির প্রাপ্যতা, পয়ঃনিষ্কাশন, বিদ্যুত সংযোগ সাক্ষরতার হার বেড়েছে। তবে সাক্ষরতার হার নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিবিসের তথ্যের বেশ ফারাক লক্ষ্য করা গেছে। বিবিএসের খানা আয় ব্যয় জরিপে দেখা গেছে, দেশে এখন সাক্ষরতার হার ৬৫ দশমিক ৬ শতাংশ। কিন্তু সরকার বলছে, এই হার ৭২ শতাংশ।
বিভাগওয়ারি দরিদ্র
দেশে এখন দরিদ্রের হার সবচেয়ে বেশি রংপুর বিভাগে ৪৭ শতাংশ। এরপরে রয়েছে ময়মনসিংহ ৩৩ শতাংশ। রাজশাহীতে ২৯ শতাংশ। সবচেয়ে কম ঢাকা ১৬ শতাংশ। সিলেট ১৬ দশমিক ২ শতাংশ এবং চট্টগ্রাম ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ। বিবিএস বলছে, গত ছয় বছরে দেশে ঋণ গ্রহণের হার কমেছে। দুর্যোগে আক্রান্ত হওয়ার হার বেড়েছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আয়বৈষম্য বাড়ছে; সেটিকে আমরা কমানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আমরা ধনীক শ্রেণির আয়কর বাড়াচ্ছি। তাদের কাছ থেকে কর নেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। গত ছয় বছরে দারিদ্র্যের হার কমা প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে আমরা অনেক ভালো করেছি। সারা বিশ্বে যেখানে গড় হত দরিদ্রের হার ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ; সেখানে আমাদের হত দরিদ্র্যের হার ১২ দশমিক ৯ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের সমালোচনা করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বহুজাতিক সংস্থাটি সবসময় আমাদের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধি কম করে দেখানোর চেষ্টা করে। কিন্তু আমরা আমাদের শক্তি সম্পর্কে জানি। সীমাবদ্ধতা সম্পর্কেও অবগত। কোথায় সম্ভাবনা আছে সেটিও অজানা নয়। অন্য অনেক দেশের চেয়ে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে যে কোনো সূচকে। মন্ত্রী উদাহরণ দিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে এখন অতি দারিদ্র্যের হার ১৬ শতাংশ। সেখান থেকে আমরা কম। পরিসংখ্যান কর্মকর্তাদের উদ্দেশে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আপনাদের তথ্য নিয়ে আপনাদের বিশ্বাস নেই। আপনাদের বলে যাচ্ছি, বাংলাদেশ আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়াকে অতিক্রম করবে অর্থনৈতিকভাবে। এটা আপনাদের বিশ্বাস করতে হবে। ড. জাহিদ হোসেন বলেন, দারিদ্র্যের হার কমেছে। এটা সুখবর। কিন্তু কমার হারে শ্লথগতি। এটা কেন দেখা উচিত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।