পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
পথচারীদের অসতর্কতা ও অসচেতনতা সড়ক দুর্ঘটনার একটি বড় কারণ। রাজধানীসহ বড় শহরগুলোতে এ কারণে অনেক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটে। গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে রাস্তা পার হওয়ার সময় মা ও মেয়ে দ্রুতগতির গাড়ির ধাক্কায় আহত হয়। এতে মেয়ে প্রাণে বেঁচে গেলেও মা মারা যায়। এর ১০ দিন আগে মিরপুরে বাস চাপায় মারা যায় এক কিশোরী। সে মায়ের হাত ধরে স্কুল থেকে ফিরছিল। এরকম দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি রাজধানীতে প্রায়ই ঘটতে দেখা যায়। পুলিশের হিসাবে ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ১৬ বছরে রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে পাঁচ হাজার ৬৫৪ জন। এদের অধিকাংশই প্রাণ হারিয়েছে রাস্তা পারাপারের সময়। সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের মতে, রাজধানীতে দুর্ঘটনার জন্য চালক ও পথচারিদের অসতর্কতা এবং যানবাহনের বেপরোয়া গতিই প্রধানত দায়ী। এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের অন্যসব মহানগরে যত পথচারী দুর্ঘটনায় মারা যায় ঢাকায় মারা যায় তার দ্বিগুণ। অবশ্য ঢাকায় মানুষ ও যানবাহন দুই-ই বেশি। ঢাকায় নিহতদের ৭২ শতাংশই পথচারী। শুধু মহানগরগুলোতেই নয়, দেশের তাবৎ সড়ক-মহাসড়কে যত দুর্ঘটনা ঘটে তার একটি বড় সংখ্যাই ঘটে পথচারীদের কারণে। এখানেও পথচারীমৃত্যুর সংখ্যা নেহাত কম নয়। অথচ পথচারীরা যদি সতর্কতা ও সাবধানতার সঙ্গে পথ চলে, রাস্তা পারাপার হয়, তবে এত দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটার কথা নয়। ‘নিরাপদ সড়ক চাই’য়ের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চনের মতে, সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ মানুষের অসচেতনতা তার ধারণা, মানুষ সচেতন হলে, ৮০ শতাংশ দুর্ঘটনা কমতে পারে। বলা বাহুল্য, এখানে কেবল পথচারীদের সচেতনতা নয়, যারা যানবাহনে চলাচল করে, সেই যাত্রীদের সচেনতার কথাও বিবেচনায় নিতে হবে। যানবাহনে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে যাওয়া, ট্রাকে যাত্রী হওয়া, কখনো মালামালের ওপর যাত্রী হওয়া ইত্যাদি কারণে বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। এ ধরনের দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যাও বেশী ।
সড়ক দুর্ঘটনা এদেশে প্রতিদিনের সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এমন কোনো দিন নেই, যেদিন দেশের কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি না ঘটছে। একের অধিক তো বটেই, কোনো কোনোদিন ৮-১০টি দুর্ঘটনাও ঘটতে দেখা গেছে। একটি পরিসংখ্যান মতে, চলতি বছর এ পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘর্টনায় প্রাণ হারিয়েছে। আহত হয়েছে এর কয়েকগুণ। বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় একদিনে ২৫ জনের নিহত হওয়ার খবরও পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় যত মানুষ প্রাণ হারায়, তুলনা করলে দেখা যাবে, কোনো প্রাণঘাতী রোগেও তত মানুষ মারা যায়না। সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণগুলো কারো অজানা নেই। অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, বাঁকসর্বস্ব সড়ক, সড়কে হাটবাজার, দ্রুতগতিতে যানবাহন চালনা, দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের ত্বরিত বিচার ও যথোপযুক্ত শাস্তি না হওয়া এবং এই সঙ্গে পথচারী ও যাত্রীদের অসাবধানতা ও স্বেচ্ছাচারিতার কথা এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দ্রতগতিতে যানবাহন চালানো, চালকের মাদক গ্রহণ, সিটবেল্ট না বাধা, হেলমেট ব্যবহার না করা ইত্যাদি কারণে বাংলাদেশের সড়ক ব্যবহারকারীরা (চালক, যাত্রী ও পথচারী) দুর্ঘটনার সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। এই প্রতিবেদন থেকে স্পষ্টই প্রতিভাত হয়, এই সর্বোচ্চ ঝুঁকি তৈরি হওয়ার পেছনে মূলত চালকরাই দায়ী। এক হিসাবে দেখা যায়, দেশে বৈধ যানবাহনের সংখ্যা ১৩ লাখের ওপর। এর বিপরীতে বৈধ চালকের সংখ্যা মাত্র ৮ লাখ। এতে বুঝা যায়, লাইসেন্স বিহীন, অবৈধ, অদক্ষ কত চালক যানবাহন চালনার সঙ্গে যুক্ত আছে। এদের পক্ষে দুর্ঘটনা ঘটানো মোটেই অস্বাভাবিক বা অসম্ভব নয়। বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালানো তো অতি সাধারণ ঘটনা। তাছাড়া অধিকাংশ চালক সিটবেল্ট বাধতে নারাজ। তাদের একাংশ মাদক সেবন করে যানবাহন চালায়। বলা হয়, মাদকাসক্ত চালকের কারণে ৩০ শতাংশ দুঘর্টনা ঘটে।
সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি কখনোই কমানো সম্ভব হবে না যদি না এর প্রধান কারণগুলো দূর করা যায়। দুর্ঘটনা কমানোর জন্য অনেক পদক্ষেপের ঘোষণা আমরা শুনেছি, ক্ষেত্র বিশেষে কিছু উদ্যোগ নিতেও দেখা গেছে। কিন্তু এসব উদ্যোগ দুর্ঘটনা রোধে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। সঙ্গতকারণেই দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর মিছিল বরদাস্তযোগ্য নয়। কারণ, দুর্ঘটনার প্রতিক্রিয়া হয় ব্যাপক ও সদূরপ্রসারী। দুর্ঘটনায় যখন কেউ মারা যায়, তখন সে-ই চলে যায় না, গোটা পরিবারকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে যায়। সক্ষম ও রোজগারে মানুষ যখন মারা যায় তখন তার পরিবারটিই নিরালম্ব হয়ে পড়ে। যারা আহত হয় তারা অনেকে সারা জীবনের জন্য অক্ষম ও পঙ্গু হয়ে যায়। কাজেই, যে কোনো মূল্যে ও ব্যবস্থায় সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে হবে। এ জন্য সরকার এবং সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে সচেতনতার ওপর। চালক, মালিক, যাত্রী, পথচারী সকলেই যদি সতর্ক ও সচেতন হয়, তবে দুর্ঘটনা বহুলাংশে হ্রাস পাবে। এই সঙ্গে আইনের নির্দেশ কড়াকড়িভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।