Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও সেনা মোতায়েন প্রয়োজন

গোলটেবিল আলোচনায় বিশিষ্টজনদের অভিমত

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৫ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে অন্তবর্তীকালিন সরকার গঠন এবং সেনা মোতায়েনের আহবান জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্টজনরা। এতে নির্বাচনে সব দল অংশ নেয়ার সুযোগ পাবে এবং আর্ন্তজাতিকভাবেও গ্রহণযোগ্য হবে বলে মনে করেন তারা। গণতন্ত্র ও দেশের অর্থনীতির স্বার্থে এটা অতি জরুরি মন্তব্য করে বিশিষ্টজনরা বলেন, এজন্য সরকারের স্বদিচ্ছা, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
গতকাল শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে দি ঢাকা ফোরাম আয়োজিত ‘বাংলাদেশের নির্বাচন ও গণতন্ত্র’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এ কথা বলেন। এতে ফোরামের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে আলোচনা করেন, সাবেক মন্ত্রী ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. মিজানুর রহমান শেলী, তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন, তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদা, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হোসেন চৌধুরী, বিএনপির আর্ন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, সাবেক জেলা জজ ইকতেদার আহমেদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. দিলারা চৌধুরী, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক মহাপরিচালক প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক, ঢাকা ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, সাবেক রাষ্ট্রদূত শহীদ আখতার, সাবেক রাষ্ট্রদূত এফ এ শামীম আহমেদ, আহমাদ মাহমুদুর রেজা চৌধুরী, ইফতেখারুল করিম, মাসুদ আজীজ প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, সাবেক রাষ্ট্রদূত ও ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সিরাজুল ইসলাম।
মিজানুর রহমান শেলী বলেন, সরকার যদি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মত আবার একইভাবে নির্বাচন করে তাহলে তাতে সরকারেরই ক্ষতি হবে। দেশে প্রতিহিংসা, প্রতিরোধের সৃষ্টি হতে পারে। এজন্য সরকারকে উপলব্দি করতে হবে তারা কি ধরনের সংকটে আছে। রোহিঙ্গাদের নিয়ে সৃষ্ট সমস্যার সাথে দেশের ভবিষ্যত অনেক কিছু জড়িয়ে রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের কারণে বোঝা গেছে সরকারের কোন বন্ধু নেই।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সব দলের অংশগ্রহণে সরকার গঠন না করলে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হবে। এজন্য সুষ্ঠু নির্বাচন প্রয়োজন। নির্বাচন কমিশন একা নির্বাচন সুষ্ঠু করতে পারবে না। সেজন্য পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। পরিবেশ তৈরি হলে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাঝে এমনিই মেসেজ (বার্তা) চলে যাবে, তখন তাদের বেশিরভাগই নিরপেক্ষ হয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন, একতরফা নির্বাচন করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। দেশের সুশাসন বাধাগ্রস্থ হবে, অর্থনীতি আবার পিছনের দিকে চলে যাবে।
ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন বলেন, দেশের নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। তাদেরকেই দায়িত্ব নিতে হবে সুষ্ঠু নির্বাচনের। এজন্য তাদেরকেই নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার আহবান জানাতে হবে। কিন্তু তারা যদি অসহায় হয় তাহলে জনগনকে দায়িত্ব নিতে হবে।
এম হাফিজ উদ্দিন বলেন, আমি একবার তত্ত¡াবধায়ক সরকারে ছিলাম, আর থাকার সুযোগ নেই। কোন লোভও নেই। আমরা গণতন্ত্রের উন্নয়নের জন্য কথা বলছি। যাতে সুষ্ঠূ নির্বাচন হয় সে পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করছি। কিন্তু সরকার না চাইলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তিনি আরো বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হতে হলে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে অর্ন্তবর্তী সরকার প্রয়োজন, যারা চলতি সরকারের প্রভাবমুক্ত থাকবে। আর নির্বাচনে বিদেশী পর্যবেক্ষক ও সেনাবাহিনী রাখতে হবে। তিনি ওয়ার্কার্স পার্টির সমালোচনা করে বলেন, আগে তাদেরকে বিপ্লবী দল হিসেবে জানতাম। কিন্তু তারা এখন ক্ষমতালোভী হয়ে গেছে।
শামসুল হুদা বলেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বে গণতন্ত্রের জন্য চরম দু:সময় যাচ্ছে। ১৫৩ জন বিনাপ্রতিদ্ব›দ্বীতায় এমপি হলেও কোন প্রতিবাদ করা হয়নি। তিনি আরো বলেন, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচনে যেতেই হবে। প্রথমবার বিজয়ী না হলে দ্বিতীয়বার হবে। একটি দাবি জানালে সেটা না পেলে ব্যাকআপ রাখতে হবে। তখন অন্য আইডিয়া প্রয়োগ করতে হবে। ভারতের বিজেপি এক নির্বাচনে মাত্র দুটি আসন পেয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, কিন্তু তারা ধর্য ধরেছে, এবার তারা বিপুল ভোট পেয়ে ক্ষমতায়।
আবুল হোসেন চৌধুরী বলেন, নির্বাচন কমিশনকে একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তারা যাতে নির্বাচনে সেনাবাহিনী ব্যবহার করতে পারে এবং নির্ভয়ে কর্মকর্তাদের বদলি করতে পারে সে নিশ্চয়তা থাকতে হবে। কিন্তু বর্তমান নির্বাচন কমিশন তা কতটা করতে পারবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, দেশে নির্বাচনেরকোন সুষ্ঠূ পরিবেশ নেই। গত নির্বাচনে এরশাদকে যেভাবে জোর করে অসুস্থ করা হয়েছিল, এখন প্রধান বিচারপতিকে সেভাবে জোর করে অসুস্থ বানানো হয়েছে। ফলে এখনো সে রকম পরিবেশই বিরাজ করছে। তিনি বলেন, বিএনপি যাতে নির্বাচনে না যায়, সংলাপে না যায় সেজন্য বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা দিয়ে উস্কানি দিচ্ছে। জামায়াত নেতাদের আটক করে নেগোসিয়েশন করার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা সরকারের ফাঁদে পা দিচ্ছিনা। ৫ জানুয়ারির মত নির্বাচন আর সরকার করতে পারবেনা। যে নামেই হোক ভোট পাহারা দেয়ার সরকার গঠন করতে হবে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে।
আলী ইমাম মজুমদার বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ অর্ন্তবর্তী সরকারের কথা বলেছেন। কিন্তু তিনি বর্তমান সংসদে থাকা দলগুলো নিয়ে এ সরকার গঠনের কথা বলেছেন। এটা হলে আগের মত অবস্থাই হবে। সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার পরিবেশ থাকবে না। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সরকার থাকতে হবে। কিন্তু সে জাতীয় সরকার গঠন করা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
ইকতেদার আহমেদ বলেন, স্বাধীনতার পর দেশে এ পর্যন্ত ১০টি নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে ৬টি দলীয় সরকারের অধীনে এবং ৪টি অর্ন্তবর্তী সরকারের অধীনে। দলীয় সরকারের অধীনের নির্বাচনে ক্ষমতাসীনরাই বিজয়ী হয়েছে। আর অর্ন্তবর্র্তী সরকারের অধীনের নির্বাচনে বিরোধী দল জয় লাভ করেছে। এজন্য দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ফলাফল কী হবে তা আমাদের কাছে স্পষ্ট। তিনি বলেন, বর্তমান কমিশন রকিব কমিশন থেকেও নিকৃষ্ট, তাদের দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
দিলারা চৌধুরী বলেন, দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো একে একে ধ্বংস করা হচ্ছে। সর্বশেষ বিচার বিভাগ দুর্বল করা হয়েছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ছাড়া এ সংকট থেকে বের হওয়া সম্ভব নয়। এজন্য আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে। সরকারের স্বদিচ্ছা ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।



 

Show all comments
  • ১৫ অক্টোবর, ২০১৭, ২:০২ এএম says : 0
    apnader uchit sarker ke bujano je, jodi desher valo chaw ta hole khomota chere nirbachon deya......
    Total Reply(0) Reply
  • তানিয়া ১৫ অক্টোবর, ২০১৭, ৩:২১ এএম says : 0
    সরকারের এই বিষয়টা বুঝা উচিত।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

১৬ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ