নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
স্বপ্নভঙ্গের আতঙ্ক জেঁকে বসেছিল আর্জেন্টাইন ভক্তদের মনে। বিশ্বকাপ নিশ্চিত করতে বাছাই পর্বের শেষ ম্যাচে জিততেই হবে। এমন দশায় ম্যাচ শুরু না হতেই গোল! ঘড়িতে মিনিটের কাটা একবার ঘুরে আসার আগেই বল আর্জেন্টিনার জালে! ইকুডের ১, আর্জেন্টিনা ০!
একে তো কিটোর ৯ হাজার ফুট উচ্চতা জয়ের চ্যালেঞ্জ, যে চ্যালেঞ্জে ১৬ বছর জেতনি আর্জেন্টিনা। এরপর আবার শুরুতেই পিছিয়ে পড়া। পাহাড়সম চাপ যেন হঠাৎ করেই হয়ে উঠে হিমালয়সম। ১৯৭০ সালের পর আবারো কি তবে আর্জেন্টিনাকে ছাড়াই অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকাপ!
এমনি শঙ্কার আড়ালে লুকিয়ে ছিল প্রিয় তারকার প্রতি ভক্তদের বিশ্বাস। করুণ মুহূর্তে জ্বলে ওঠাই যে কিংবদন্তিদের কাজ। বিশ্বের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লক্ষ-কোটি ভক্তদের প্রত্যাশার হিমালয় বইবার চ্যালেঞ্জ দারুণভাবে একার কাধে নিয়ে নিলেন মেসি। দুর্দান্ত হ্যাটট্রিকে দুর করলেন ভক্তের মনে জমে থাকা শঙ্কার কালো মেঘ। বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপ পাচ্ছে লিওনেল মেসিকে।
কিন্তু যত সহজে বলা গেল কাজটা কি এতটাই সহজ ছিল? ম্যাচের শুরুতেই এগিয়ে যাওয়ার পর গোছালো ফুটবলে আতঙ্ক ছড়াচ্ছিল ইকুয়েডর। দলকে উজ্জিবিত করতে পাল্টা জবাব দিতে হবে আর্জেন্টিনাকে। কিন্তু আর্জেন্টিনা ফুটবল খেলবে কি, তাদের আসল লড়াইটাই যে বৈরী আবহাওয়ার বিরুদ্ধে। কম ঘনত্বের বায়ুতে নিশ্বাসের কষ্ঠ সাথে বল আর শরীরের ভারসম্য রক্ষার চ্যালেঞ্জ। পুরো ম্যাচেই তাই খুব গোছোলো ফুটবল খেলতে পারেনি আর্জেন্টিনা। তাতে কি, দলে যে আছেন একজন মেসি। ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণের জন্যে তো একটা মুহূর্তই যথেষ্ঠ। ৩০ বছর বয়সীর তেমনি ক্ষণিক জাদুই হয়ে থাকল ম্যাচে প্রাণ। বল দখলের লড়াইয়ে পিছিয়ে থেকেও তাই শেষ হাসি নিয়ে মাঠ ছাড়ে আর্জেন্টিনা। পয়েন্ট তালিকায় তিনে থেকে নিশ্চিত করে ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের মূল পর্ব।
দল অগোছালো ফুটল খেললেও ম্যাচের ১২তম মিনিটে দুর্দান্ত এক আক্রমণে নেতৃত্ব দিলেন মেসি। অপ্রতিরোধ্য গতিতে বক্সের দিকে এগিয়ে বল বাড়ান বাঁ প্রান্তে সতীর্থ ডি মারিয়ার দিকে। ডি মারিয়াও জানতেন বল বাড়িয়ে সেখানে থেমে নেই রেকর্ড ৫বারের বর্ষসেরা। পিএসজি তারকার বাড়ানো বল বিশ্বস্ত বাঁ পায়ের টোকায় জালে পাঠিয়ে দেন বার্সা তারকা। কিন্তু উদযাপনের সময় নেই। তখনো যে অনেক কাজ বাকি। জাল থেকে নিজেই বল কুড়িয়ে এনে তাই বসালেন মাঝমাঠে।
আট মিনিট বাদেই আসে স্বস্তির সেই এগিয়ে যাওয়া গোল। এবারেরটি মেসির একক প্রচেষ্টায়। প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারের কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে দুজনকে এক ঝাটকায় ফেলে দিয়ে একাই তা জালে পৌঁছে দেন পোস্টের দূরহ কোন দিয়ে। স্বস্তি ফেরে আর্জেন্টিনা শিবিরে। বিরতির আগেই লিডটা আরো বাড়িয়ে নিতে পারত আর্জেন্টিনা। অরক্ষিত যায়গায় থাকা ডি মারিয়াকে বলও দিয়েছিলেন মেসি। কিন্তু গোলরক্ষককে একা পেয়েও লক্ষ্যভেদ করতে ব্যর্থ হন ডি মারিয়া।
দ্বিতীয়ার্ধে আরো গোছালো ফুটবলে আতঙ্ক ছড়াচ্ছিল স্বাগতিকরা। যে কোন সময় স্কোরবোর্ডে আসতে পারে সমতা! আর্জেন্টাইন আর মেসি ভক্তদের মনে যখন এই শঙ্কা ঠিক তখন আসল বিষ্ময়টা দেখিয়ে দেন ফুটবল জাদুকর। ডি বক্সের অনেক আগে সতীর্থের পা থেকে ভেসে আসা বল বুকে টেনে নামান মাটিতে। এরপর এঁকেবেঁকে তিন ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে চলে আসেন ডি বক্সের বিপজ্জনক জায়গায়। উপায় না দেখে গোলরক্ষকও তখন এগিয়ে আসছেন বাধা দিতে। সেই সুযোগে মাপা ‘লোব’ শটে গোলরক্ষকের মাথার উপর দিয়ে বল ভাসিয়ে দেন লক্ষ্যে। ডাইভ দিয়েও বলের নাগাল পাননি উকুয়েডর গোলরক্ষক। ৩-১ ব্যবধানে নিভু নিভু স্বপ্নটা তখন আরো উজ্জ্বল। আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে এটি ছিল মেসির পঞ্চম ও ক্যারিয়ারের ৪৪তম হ্যাটট্রিক।একই সাথে দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতাও বনে যান তিনি (৪৫ ম্যাচে ২১টি)। বাকি সময়ে গোলের আরো একটি সুযোগ পেয়েছিল অলবিসেলেস্তেরা। কিন্তু গোররক্ষকে একা পেয়েও ব্যর্থ হন মাউরো ইকার্দি।
আর্জেন্টিনা আতঙ্কে ফুটবল বিশ্ব এদিন এতটাই বুদ হয়ে ছিল যে ব্রাজিল-চিলির মত হাইভোল্টেজ ম্যাচও পড়ে যায় আড়ালে। অথচ বিশ্বকাপের টিকিট পেতে এই ম্যাচে জিততেই হত টানা দুবারের কোপা চ্যাম্পিয়ন চিলিকে। ২-০ গোলে হারলেও প্লে-অফের সুযোগ বেঁচে থাকত। কিন্তু আরো এক গোলে বেশি খাওয়ায় নেমে যেতে হয়েছে পয়েন্ট তালিকার ছয়ে। তার মানে বিশ্বকাপে খেলা হচ্ছে না অ্যালিক্সেস সানসেচ-অ্যালেক্স ভিদাল-ডিয়াগো গদিনদের। সেই সুযোগে কলম্বিয়ার সাথে ১-১ গোলে ড্র করে প্লে-অফ খেলার সুযোগ পাচ্ছে পেরু। চারে থেকে বিশ্বকাপ নিশ্চিত হয়েছে কলম্বিয়ার। দুয়ে থাকা উরুগুয়েও বলিভিয়াকে ৪-২ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করে। আর ব্রাজিল তো এই টিকিট হাতে পেয়েছিল সবার আগে, গত মার্চে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।