পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বৌদ্ধ গ্রামে নিষিদ্ধ হয়েছে মুসলিমদের প্রবেশাধিকার, নিষিদ্ধ ব্যবসা ও বাণিজ্য, তাদের হামলার শিকার হয়েছে মুসলিম অধ্যুষিত গ্রামগুলো, উল্টো দিকে প্রতিশোধমূলক হামলার আশঙ্কায় বৌদ্ধ স¤প্রদায়, সা¤প্রদায়িক দাঙ্গার আশঙ্কা
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাখাইন জাতিগোষ্ঠীর লোকেরা রাখাইনের মধ্যাঞ্চলে বাস করে। বেশ কয়েকটি জেলায় রোহিঙ্গা মুসলিমদের কাছ থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির কাজ হচ্ছে, মুসলিমদের সঙ্গে লেনদেন বা যোগাযোগ করার কারণে গ্রামের বৌদ্ধদের প্রকাশ্যে মারধোর ও সমাজচ্যুত করার শাস্তি দেওয়া।
মধ্যাঞ্চলে প্রায় আড়াই লাখ মুসলমানের বাস। আগস্ট মাসে শুরু হওয়া রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সামরিক নির্যাতন নিপীড়নের প্রভাব সরাসরি এই এলাকায় পড়েনি। সেনাবাহিনী নির্মম নির্যাতন ও হত্যাকান্ড রক্ষা পেতে ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘ এই অভিযানকে জাতিগত নিধন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। রাখাইনের মধ্যাঞ্চলীয় বৌদ্ধ অধ্যুষিত একটি শহর মায়িবন। গত ২৫ আগস্ট আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) হামলার চারদিন পর এই শহরে রোহিঙ্গা বিরোধী একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই শহরের এক বৌদ্ধ ভিক্ষু অশিন সারোমানি বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে ভিন্ন স¤প্রদায়ের লোকদের এক সঙ্গে বাস করা সম্ভব নয়।’ সারোমানি আরও বলেন, ‘সরকার তাদের একীভূত করতে পারবে না। এজন্যই আমরা মুসলিমদের সঙ্গে যোগাযোগ নিষিদ্ধ করেছি, যাতে করে সংঘাত এড়ানো যায়।’ রাখাইন রাজ্য সরকারের মুখপাত্র মিন অং জানান, মুসলিমদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে বৌদ্ধদের শাস্তি দেওয়ার পদক্ষেপ সম্পর্কে তিনি অবগত নন। তার মতে, আন্তঃস¤প্রদায় কমিটির মাধ্যমেই উত্তেজনা দূর করা সম্ভব।
মুখপাত্র বলেন, ‘অন্যান্য রাজ্য ও অঞ্চলে আন্তঃস¤প্রদায় কমিটি শান্তির জন্য কাজ করছে। রাখাইনে এখনও এ ধরনের কোনও কমিটি গঠন করা হয়নি।’
মুসলমান ও রাখাইন গোষ্ঠীর মধ্যে উত্তেজনা কয়েক বছর ধরেই চলছে। সর্বশেষ ২০১২ সালে সা¤প্রদায়িক দাঙ্গায় দুই শতাধিক নিহত ও প্রায় ১৪ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন।
এদিকে, জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্থনিও গুতেরেজ সতর্ক করে বলেছেন, রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে যে সহিংসতা বিরাজ করছে তা রাজ্যটির অন্যত্র ছড়াতে পারে সহজেই। এক ভাষণে তিনি বলেছেন, ‘পরিকল্পিত সহিংসতা বন্ধ না করার ফলে তা রাখাইনের মধ্যাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে। যেখানে প্রায় আড়াই লাখ মুসলমান সম্ভাব্য বাস্তুচ্যুতির শঙ্কার মধ্যে রয়েছে। সেখানে রাখাইন স¤প্রদায়ের তুলনায় মুসলমানদের সংখ্যা অনেক কম। অনেক রাখাইন মুসলিম প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে সহিংস কর্মকান্ড চালাচ্ছে।’ মায়িবন শহরেপ্রায় ৩ হাজার মুসলিম একটি ক্যাম্পে প্রায় অবরুদ্ধ জীবনযাপন করছে। ২০১২ সালের সহিংসতার পর তারা কয়েক লাখ রাখাইন বৌদ্ধদের মাঝে আটকা পড়ে। আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থার সহযোগিতা ও মাছ ধরার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ এবং শহরের একটি ক্ষুদ্র অঞ্চলে কেনাকাটার সুযোগ পায় তারা।
আগস্টের শেষ সপ্তাহ থেকে রিকশায় মাইক লাগিয়ে শহরজুড়ে মুসলিমদের সঙ্গে কোনও ধরনের যোগাযোগ করার আহŸান জানাচ্ছে রাখাইন বৌদ্ধ স¤প্রদায়ের নেতারা। সয়ে চায় নামে ৩৫ বছরের এক রাখাইন নারী এই ঘোষণা অমান্য করেছিলেন। এরপর ১২ সেপ্টেম্বর মুসলিমদের কাছে পণ্য বিক্রির অভিযোগে স্থানীয় একদল বৌদ্ধ তাকে নির্যাতন করে। তারা ওই নারীকে মারধর ও চুল কেটে পুরো শহর প্রদক্ষিণ করায়। এ সময় ওই নারীর গলায় একটি প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয়, তাতে লেখা ছিল, ‘জাতীয় বিশ্বাসঘাতক’।
রাখাইনের স্থানীয় প্রশাসনের বিষয়টি দেখাশোনা করে জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ডিপার্টমেন্ট (জিএডি)। এই বিভাগের উপ-পরিচালক কিয়াউ সয়ার তুন জানান, বৌদ্ধ নারীকে নির্যাতনের এই ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন। স্থানীয় আদালতে বিষয়টির মীমাংসা হয়ে গেছে। দুই নারী ও এক ব্যক্তি ওই নারীর উপর হামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন। অভিযুক্ত দুই নারী মায়িবন শহরে আরাকান উইম্যান্স নেটওয়ার্কের সদস্য ছিলেন। হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন তারা। এই সংগঠনটির নেতা খিন থেইন ঘটনাটির বিবরণ দিয়ে জানান, মানুষ ক্ষুব্ধ হয়েছে কারণ তার (নির্যাতিত নারী) মধ্যে জাতীয়তাবোধ নেই। যেখানে মংডুতে ৩০টি পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা হয়েছে ও স্থানীয়দের গলাকেটে হত্যা করা হয়েছে। মায়িবন শহরের বৌদ্ধ স¤প্রদায়ের নেতারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থারপ্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে। তাদের দাবি, শুধু সরকারই ত্রাণ দিতে পারবে এবং যা অবশ্যই বৌদ্ধরা যাচাই করবে। এ বিষয়ে অশিন সারোমানি বলেন, ‘আমাদের আশঙ্কা যদি যাচাই না করি তাহলে ত্রাণের বহরে এনজিওগুলো বাঙালিদের অস্ত্র সরবরাহ করতে পারে।’
ত্রাণকর্মীদের মতে, রাখাইনের অন্যান্য অঞ্চলেও একই ধরনের বাধা নিষেধ কার্যকর রয়েছে।
আগস্টে রাখাইনে সহিংসতা শুরু হওয়ার পর থেকেই বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের অনেক স্থানেই মুসলিমবিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১০ সেপ্টেম্বর মাগউই বিভাগে মুসলিমদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা হলে পুলিশ দুর্বৃত্তদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পূর্বাঞ্চলের কায়িন এলাকায় গত মাসে মুসলমানদের বলা হয়েছে, নিরাপত্তার কারণে গ্রামের বাইরে যাওয়ার সময় অবশ্যই অনুমতি নিতে হবে।
সহিংসতা কবলিত অঞ্চলের কাছাকাছি রাথেউডাউং শহরের মুসলমানরা জানিয়েছেন, রাখাইন স¤প্রদায়ের লোকেরা বাড়িঘর ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে।
মুসলিমদের কাছ থেকে দখলকৃত একটি গ্রামের পাশে কু থাউং গ্রামে ৪৬ জন বয়স্ক বৌদ্ধদের একটি শৃঙ্খলা কমিটি গঠন করা হয়েছে। কৃষক তুন থার সেইন জানান, এই কমিটি মুসলিমদের কাছে পান-সুপারি বিক্রি করায় ৫ লাখ কিয়াত (৩৭০ ডলার) জরিমানা করেছে। কয়েকটি রাখাইন গ্রামে মুসলিমদের হামলা থেকে নিজেদের রক্ষায় নিরাপত্তা কমিটি গঠন করা হয়েছে। মাউক-ইউ ও মিনবিয়া এলাকায় গত মাসে বেশ কয়েকটি অজ্ঞাত বিস্ফোরণ ঘটেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছে, রাখাইন গ্রামে মুসলিমরা এখন প্রবেশ করতে পারে না।
স্থানীয় প্রশাসক কিয়াউ সয়ার থুন জানান, আইন অনুসারে যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে প্রশাসন। রাখাইনের মধ্যাঞ্চলে এ ধরনের কোনও সমস্যা সম্পর্কে তিনি অবগত নন।
এদিকে, মিয়াবন ক্যাম্পের মুসলিমরা জানিয়েছেন, তারা ক্যাম্প থেকে পালাতে চান। এক মুসলিম বাসিন্দা চো চো জানায়,‘আমাদের পক্ষে মিয়াবন শহরে ফিরে গিয়ে একত্রে বাস করা কঠিন। যেসব রাখাইন আমাদের ঘরবাড়ি ভেঙেছে তারা ভয়ে আছে। তাদের আশঙ্কা মুসলিমরা তাদের ওপরপ্রতিশোধ নিতে পারে।’ সূত্র : রয়টার্স
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।