Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মিয়ানমারের সঙ্ঘাত রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা দৃঢ় করেছে

ইনকিলাব ডেস্ক: | প্রকাশের সময় : ১০ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সঙ্ঘাত দেশটির রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর ভূমিকাকে আরো সুদৃঢ় এবং গণতান্ত্রিক সঙ্কটকে আরো গভীর করে তুলছে বলে জানিয়েছেন আমেরিকাভিত্তিক একজন রাজনীতি বিজ্ঞানী। 

জাতিসঙ্ঘের মতে, গত ২৫ আগস্ট থেকে ৫ লাখ ৭ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম বলপূর্বক বাস্তুচ্যূতির শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী, বৌদ্ধ জঙ্গীরা সেখানে পুরুষ, মহিলা ও শিশুদের হত্যা এবং বাড়িঘর লুটপাট ও গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দেয়ায় অন্যরা জীবন নিয়ে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর মতে, মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে ৩ হাজারের মতো রোহিঙ্গা মুসলিমকে হত্যা করা হয়েছে।
ভারতের জিন্দাল স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল এফেয়ার্স-এ দক্ষিণপূর্ব এশিয়ান স্টাডিজ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক, সহকারী অধ্যাপক নেজিনপাও কিপজেন বলেন, মিয়নামারের সহিংসতা কেবল এই বিষয়টি তুলে ধরেছে যে, পূর্ণ গণতন্ত্রের রূপান্তর এখনো কয়েক দশকের ব্যাপার।
‘রাখাইনের সহিংসতা এবং দেশটির জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর সাথে সরকারের শান্তি প্রক্রিয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দৃশ্যত নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয় ও রাজনীতি উভয় ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীর ভূমিকা একই সাথে অব্যাহত থাকবে।
‘অন্য কথায়, পূর্ণ বা সুদৃঢ় গণতন্ত্রের পথে যাত্রায় দশক না লাগলেও সম্ভবত কয়েক বছর লেগে যাবে’ -বলেন তিনি।
তিনি মনে করেন যে, রোহিঙ্গা সমস্যাটি নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক হুমকি হয়ে থাকবে যতক্ষণ না নাগরিকত্ব ও পরিচয়ের বিষয়গুলি অনিষ্পন্ন থাকবে। তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারের জনগণকে বাস্তবতায় আসতে হবে।
‘মিয়ানমারের জনগণের এটা উপলব্ধি করা গুরুত্বপূর্ণ যে, পরিচয় এবং নাগরিকত্বসহ রোহিঙ্গাদের মৌলিক বিষয়গুলি নিষ্পন্ন না করলে রোহিঙ্গা সমস্যাটি নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক হুমকি হয়েই থাকবে’।
ঠিকানা মৌলিক সমস্যা
তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, এই সমস্যাটি জাতির শান্তি প্রক্রিয়া ও উন্নয়নকেও ব্যাহত করবে।
তিনি আরো বলেন, ‘মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করা সেনাবাহিনী ও অত্যাচারী বা উগ্র জাতীয়তাবাদী দলসহ অনেক বার্মিজের জন্য কঠিন, এমনকি অসম্ভবও হতে পারে’।
‘মৌলিক সমস্যা হচ্ছে মিয়ানমার বা বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা মুসলমানদের নিজস্ব নাগরিক হিসাবে গ্রহণ করতে ইচ্ছুক নয়’।
চলমান শরণার্থী সঙ্কট সম্পর্কে তিনি বলেন, জাতিসংঘের পাশাপাশি মিয়ানমার সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের অন্যান্য সদস্যদের অবশ্যই তাদের প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করতে হবে। কোফি আনানের নেতৃত্বাধীন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে কিপজেন রোহিঙ্গা ধাঁধার দীর্ঘমেয়াদি সমাধানটি দেখতে পান।
‘জাতিগত রাখাইন বৌদ্ধদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ কর্মকাÐ বন্ধ এবং রোহিঙ্গাদের স্বাধীনভাবে চলাফেরার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে সরকারের দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচত’।
জাতিসঙ্ঘ রোহিঙ্গাদের বিশ্বের সবচেয়ে নিগৃহীত জাতি হিসেবে উল্লেখ করেছে। ২০১২ সালে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় ডজন খানেক ব্যক্তি নিহত হবার পর থেকে তারা রয়েছে হামলার সর্বোচ্চ ভয়ে। গত বছর অক্টোবরে রাখাইনের মংডুতে সীমান্ত চৌকিতে হামলার পর ৫ মাসের কঠোর অভিযানে রোহিঙ্গা গ্রæপগুলোর তথ্যমতে ৪শ’ মানুষ প্রাণ হারায়। জাতিসঙ্ঘ মিয়ানমার সেনা সদস্যদের হাতে গণধর্ষণ, শিশুকিশোরদের গণহারে হত্যা, নির্মম নির্যাতন এবং গুমের তথ্য প্রকাশ করেছে। এক প্রতিবেদনে তদন্তকারীরা এ ধরনের সহিংসতাকে মিয়ানমারের মানবতা বিরোধী অপরাধ বলে উল্লেখ করেছে। সূত্র : আনাদলু।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মিয়ানমার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ