পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আট বছরে ১০ হাজার ভবন নির্মাণ : টেন্ডারবাজি বন্ধে প্রযুক্তির ছোঁয়া : প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় স্থাপনায় নান্দনিকতা : শিক্ষার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় ভবন নির্মাণ করতে বললেন শিক্ষামন্ত্রী
সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করা আর শিক্ষায় নারী-পুরুষের সমতা অর্জনে বর্তমান সরকারের সাফল্য বিশ্বের বহু দেশের কাছে অনুকরণীয়। সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি, বিদ্যালয়ে ভর্তির হার শতভাগ, ছাত্রছাত্রীর সমতা, নারী শিক্ষায় অগ্রগতি, ঝরে পড়ার হার দ্রæত কমে যাওয়াসহ শিক্ষার অধিকাংশ ক্ষেত্রই রোল মডেল এখন বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে গেলেও শিক্ষার অগ্রগতিতে গত এক দশকই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। সরকারি ভাষ্য নয় বরং বিশ্বব্যাংক, ইউনেস্কো, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামসহ আন্তর্জাতিক দাতা ও গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশের শিক্ষার অগ্রগতিকে অন্যদের জন্য উদাহরণ অভিহিত করে বলছে, শিক্ষায় প্রতিটি পর্যায়ে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। শিক্ষার অন্যান্য সূচকের চেয়ে কোন অংশেই পিছিয়ে নেই শিক্ষা অবকাঠামো উন্নয়নে। বরং গত আট বছরে নান্দনিক ভবন নির্মাণ, আধুনিক ক্লাসরুমসহ অন্যান্য ভৌত অবকাঠামোন নির্মাণে বিপ্লব সৃষ্টি করেছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্মাণ করা হচ্ছে নতুন নতুন ভবন। অগ্রাধিকার পাচ্ছে পিছিয়ে থাকা ও অনগ্রসর অঞ্চলও। এসব ভবনে থাকছে পরিবেশ বান্ধব ও নান্দনিকতার ছোয়া। গত সাড়ে আট বছরে সারাদেশে স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার ১০ হাজার ১১টি নতুন ভবন নির্মাণ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। আরও চলমান রয়েছে দুই হাজার ৪৮৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণের কাজ। একসময় টেন্ডার নিয়ে শিক্ষাভবনে সংঘর্ষ যেখানে ছিল চিরাচরিত দৃশ্য, প্রযুক্তির ছোয়ায় সেখানেও এসেছে পরিবর্তন। টেন্ডারের বিকেন্দ্রীকরণ আর অনলাইনের মাধ্যমে এসেছে স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলা। বন্ধ হয়েছে মধ্যসত্ত¡ভোগীদের সুবিধা আদায় ও টেন্ডার নিয়ে কাড়াকারি, মারামারি। শিক্ষা অবকাঠামো নির্মাণে খুশী হলেও এই সুনামকে অক্ষুণœ রাখার কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ৮ বছর ধরে প্রতি বছর শতকরা ৯৯ ভাগ উন্নয়ন কর্মকান্ড যথাসময়ে বাস্তবায়ন করেছে। এ সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে হবে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য সর্বাত্বক চেষ্টা চালাতে হবে। শিক্ষার মানসম্মত পরিবেশের জন্য মানসম্মত ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় হয়, সেভাবে স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার টেকসই ভবন নির্মাণ করতে হবে।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছর জুন পর্যন্ত ১২ হাজার ৪৯৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মানের প্রকল্প গ্রহণ করে। এর মধ্যে ইতোমধ্যে প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে ১০ হাজার ১১টি ভবনের। প্রকল্প চলমান রয়েছে ২ হাজার ৪৮৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। এর মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুলের প্রকল্প গ্রহণ করা হয় ৮ হাজার ৯০২টি। যার মধ্যে সমাপ্ত হয়েছে ৭ হাজার ৮৫১টি এবং চলমান রয়েছে এক হাজার ৫১টি। সরকারি ও বেসরকারি কলেজের ভবন নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয় ২ হাজার ১২৬টির। এর মধ্যে ইতোমধ্যে সমাপ্ত হয়েছে ৯৭৭টি এবং চলমান আছে এক হাজার ১৪৯টি। সরকারি ও বেসরকারি মাদরাসায় ভবন নির্মানের প্রকল্প হাতে নেয়া হয় এক হাজার ৪৭১টি। এর মধ্যে ইতোমধ্যে প্রকল্প সমাপ্ত হয়ে গেছে এক হাজার ১৮৩টির এবং চলমান রয়েছে ২৮৮টি মাদরাসার ভবন নির্মান কাজ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয় ২০০১-০৬ সাল পর্যন্ত সময়ে তেমন কোন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি। এই সময়ে কেবল ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত গৃহীত প্রকল্পের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করা হয়।
অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত দেশে ৫টি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় ও ৩টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপন করা হয়েছে। ১০০টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের নির্মাণ কাজ চলছে এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ৩৮৯টি টেকনিক্যাল কলেজ স্থাপন করা হবে। ঢাকা শহরে ১১টি সরকারি স্কুল ও ৬টি সরকারি কলেজ স্থাপন করা হয়েছে। ঢাকা, খুলনা ও সিলেটে ৭টি নতুন সরকারি স্কুল স্থাপন কাজও ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। রাজস্ব বাজেটে মেরামত মঞ্জুরি খাতের আওতায় ৪ হাজার ৬৯৭টি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মেরামত ও সংস্কার কাজ করা হয়েছে। আগের সময়ের মতো এখনো চলমান রয়েছে ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ। বর্তমান অর্থ বছরে ২০০টি সরকারি কলেজ ও ৩২৩টি সরকারি স্কুলের উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছে। এই কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৮০৫ কোটি ও ৪ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা। এছাড়া তিন হাজার বিদ্যালয়ের নতুন ভবন ও তিন হাজার ২৫০টি বিদ্যালয়ের ভবন সম্প্রসারণ প্রকল্প এর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির কাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। অচিরেই একনেক সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। এছাড়াও দুই হাজার টি মাদরাসার ভবন নির্মাণ প্রকল্প একনেক সভায় উপস্থাপনের প্রক্রিয়াধীন আছে। বর্তমান অর্থবছরে ৮ হাজার ৭৭৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একযোগে ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করার ব্যপারে আশাবাদী শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভৌত কাঠামো নির্মাণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের অগ্রগতি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত তিন বছরে সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসায় ৬ হাজার ১০৪টি, সরকারি-বেসরকারি কলেজ ২ হাজার ৪১৪টি, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটে ১২টি এবং অন্যান্য বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২০৪টিস মোট ৮ হাজার ৭৩৪টি শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ করা হয়েছে। এই সময়ে আন্ডারসার্ভড এরিয়ায় ২৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন, ১০৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, ছাত্রীদের আবাসনের জন্য মহিলা কলেজে ও সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২৪টি হোস্টেল নির্মাণ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ১০ হাজার ৫১৪টি সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মেরামত ও সংস্কার এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় স্কুল-কলেজ ও মাদরাসার ভবন নির্মাণ, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট, পলিটেকনিক ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এর ভবন নির্মাণ এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর খলনায় পাইকগাছা কৃষি কলেজ স্থাপন, সখীপুরে মহিলা কলেজের জন্য ৫০০ আসন বিশিষ্ট ছাত্রীনিবাস নির্মাণ করা হয়েছে। সদর দপ্তর ও জেলা কার্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর শক্তিশালী করা, নির্বাচিত বেসরকারি মাদরাসা সমূহে একাডেমিক ভবন নির্মাণ, নির্বাচিত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, এ্যানহান্সম্যান্ট দি লার্নিং এনভায়রনমেন্ট অব সিলেকটেড মাদরাসা ইন বাংলাদেশ, শেখ হাসিনা একাডেমি এন্ড উইমেন্স কলেজের অবকাঠামো উন্নয়ন, মাদারীপুরের কালকিনিতে ডি.কে আইডিয়াল সৈয়দ আতাহার আলী একাডেমি এন্ড কলেজের অবকাঠামো উন্নয়ন, মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজ, লালমাটিয়া মহিলা কলেজ ও আগারগাঁও তালতলা সরকারি কলোনী এন্ড কলেজের উন্নয়ন করা হয়েছে।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মাধ্যমিক পর্যায়ে আরও ৬২৫টি নতুন ভবন নির্মাণ, ৫ হাজার ভবন মেরামত ও সংস্কার, ৭০৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্প্রসারণ কাজ করা হবে। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ৩৪টি কলেজের ভবন নির্মাণ, ৬৬৬টি কলেজ ভবনের সম্প্রসারণ কাজও হবে একই সময়ে। এছাড়া অনগ্রসর এলাকায় ৩৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন ভবন নির্মাণ, ছাত্রীদের জন্য দুই হাজার ৩৩টি টয়লেট নির্মাণ এবং প্রতিবন্ধিদের জন্য ৬৫৯টি র্যাম্প নির্মাণ করা হবে।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মোঃ হানযালা বলেন, ছাত্রছাত্রীদের পাঠদানের উপযোগী আধুনিক, বিজ্ঞানসম্মত ও পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো নির্মাণ, সম্প্রসারণ ও সংস্কার কাজ করে যাচ্ছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। এছাড়াও টেন্ডার বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে। এখন জেলা থেকে বিভিন্ন কাজের টেন্ডার দেয়া হয়। ফলে শিক্ষা ভবনে আগের মতো টেন্ডার নিয়ে মারামারি, কাড়াকাড়ি হয়না। মধ্যসত্ত¡ভোগীরা আর নাই। এই কাজকে এমপি, মন্ত্রীরা ভালো বলছে। পেনশন, গ্রাচুইটি, টেন্ডার সবকিছুই এখন অনলাইনের মাধ্যমে হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন দুর্ভোগ কমছে। মধ্যসত্ত¡ভোগীদের/স্বচ্ছতা থাকছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় এগুলো করা হয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় স্থাপনায় নান্দনিকতা নিয়ে আসা হয়েছে। এখন ভবনগুলো গড়ে তোলা হচ্ছে নান্দনিক ও পরিবেশবান্ধব। ছেলেমেয়েদের জন্য পৃথক টয়লেটের ব্যবস্থা, সুপেয় পানির ব্যবস্থা। আধুনিক পয়নিষ্কাশন, প্রতিবন্ধীদের জন্য র্যাম্পের ব্যবস্থা থাকছে। ছাদগুলো করা হচ্ছে ঢালু ও টাইলস দিয়ে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।