Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বয়স বাড়িয়ে পদ নিলেন সাবেক ডিসি

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কনসালট্যান্ট নিয়োগে অনিয়ম

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ৪ নভেম্বর, ২০২২, ১:২২ এএম

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কনসালট্যান্ট নিয়োগের সরকারি বিধি ও শর্ত কোনোটিই মানছেন না সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) আলমগীর মুহাম্মদ মনসুরুল আলম। বয়স বাড়িয়ে নিজেই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পিইডিপি-৪ এর প্রোগ্রাম সাপোর্ট টিম (পিএসটি) কনসালট্যান্ট পদে নিয়োগ নিয়েছেন।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পিইডিপি-৪ এর প্রোগ্রাম সাপোর্ট টিম (পিএসটি) কনসালট্যান্ট নিয়োগে অনয়িম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় সাবেক ডিজির কনসালট্যান্ট পদে নিয়োগ স্থগিত চেয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও সচিবকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এ বিষয়ে বর্তমান প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিজি) শাহ রেজওয়ান হায়াত ইনকিলাবকে বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে এখনো এর বেশি বলতে পারছি না। আমি নতুন যোগদান করেছি। জানার পর ভালো বলতে পারব।
মন্ত্রণালয়ের লিখিত অভিযোগে বলা হয়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পিইডিপি-৪ এর প্রোগ্রাম সাপোর্ট টিম (পিএসটি)-এর জন্য তিনজন কনসালট্যান্ট নিয়োগের লক্ষ্যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট। এ পদে নিয়োগের জন্য একটি টার্মস অব রেফারেন্স (টিওআর) প্রস্তুত করা হয়েছে। টিওআরটি সাবেক মহাপরিচালক আলমগীর মুহাম্মদ মনসুরুল আলম যাওয়ার কয়েক দিন পূর্বে একপ্রকার একক সিদ্ধান্তে জোর তদবির করে মন্ত্রণালয় থেকে কৌশলে অনুমোদন করিয়ে নিয়েছেন। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো উক্ত পদে নিয়োগের জন্য টিওআর-এ দুইটি শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। তার একটি হলো এ পদে আবেদনের জন্য অবশ্যই আবেদনকারীকে প্রোগ্রাম ডিরেক্টর অর্থাৎ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক থেকে হবে এবং অপর শর্তটি হলো আবেদনকারীর বয়স ৬১ বছরের বেশি হওয়া যাবে না। এ শর্ত দুইটির কারণে প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট পদে আলমগীর মুহাম্মদ মনসুরুল আলম ব্যতীত অন্য কেউ আবেদন করতে পারবেন না।
কিন্তু পিইডিপি-৪ এর প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট হওয়ার জন্য কেবল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হতে হবে তা নয়, প্রাথমিক শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত যে কোনো অভিজ্ঞ ব্যক্তি হতে পারেন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক, মহাপরিচালক এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপকসহ যে কোনো শিক্ষাবিদ নিদানপক্ষে আবেদন করার সুযোগ পেতে পারতেন। অতীতে কনসালট্যান্ট হিসেবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অভিজ্ঞ ও দক্ষ পরিচালক, মহাপরিচালক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাবিদ প্রভৃতি ব্যক্তিবর্গ দায়িত্ব পালন করেছেন।
অন্যদিকে, আবেনকারীর বয়স ৬১ বছরের বেশি না হওয়ার শর্তটি একেবারেই অযৌক্তিক ও পরিষ্কার দূরভিসন্ধিমূলক মর্মে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সংশ্লিষ্টদের মাঝে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। কেবল নিজেকে এ পদে বসানোর জন্য আলমগীর মুহাম্মদ মনসুরুল আলম এই টিওআর নিজে বানিয়েছেন বলে অভিযোগ। তারা এমনও বলছেন, এ ধরনের দূরভিসন্ধিমূলকভাবে তিনি নিয়োগ পেলেও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী তাকে কোনো প্রকার সহযোগিতা করবেন না।
আলমগীর মুহাম্মদ মনসুরুল আলম অবসরে যাওয়ার পর তার ফেয়ারওয়েলে হাতেগোনা কয়েকজন কর্মকর্তা চক্ষুলজ্জার কারণে উপস্থিত থাকলেও অধিকাংশ কর্মকর্তা উপস্থিত হননি। আর সর্বস্তরের কর্মচারীরা তার ফেয়ারওয়েল বর্জন করেন।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক থাকাকালীন তিনি অধিদপ্তরের টাকায় কেনা এসি, কম্পিউটার, প্রিন্টার, দামি ল্যাপটপ ইত্যাদি নিয়ে গেছেন মর্মে জানা যায়। অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইনকিলাবকে জানান, তিনি অবসরে যাওয়ার পরও দুই মাস অধিদপ্তরের গাড়ি পারিবারিকভাবে ব্যবহার করেছেন। তিনি সরকারিভাবে বিভিন্ন প্রশিক্ষণে/কর্মশালায় পরিবারের সদস্যসহ এমনকি বৃদ্ধ শাশুড়ি, শালিকাসহ গিয়েছেন। এ সদস্যদের খেদমতের জন্য মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়োজিত রাখতেন। তাদের আপ্যায়নের জন্য মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিল পরিশোধ করতে হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের সাধারণ রেস্ট হাউজ রেখে তার বৃদ্ধ শাশুড়ি, শালিকা, স্ত্রী-সন্তানদের মৌলভীবাজারের গ্র্যান্ড সুলতান হোটেলে রেখেছেন। আর পরিবারের সকলের ব্যয় নির্বাহের জন্য সকল অংশগ্রহণকারীর নামে গ্র্যান্ড সুলতানের বিল করেছেন। এ বিল নিয়ে মন্ত্রণালয়ের অডিট আপত্তি দিয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
আলমগীর মুহাম্মদ মনসুরুল আলম প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে এক বছরের মতো সময় মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, যার বেশির ভাগ সময়ই করোনাকালীন ছিল। অথচ তিনি নিজেকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরামর্শক হওয়ার জন্য পাকাপোক্ত ব্যবস্থা করে রেখেছেন। সংশ্লিষ্ট সকলেই এই টিওআর-এর মাধ্যমে এ পদের নিয়োগ স্থগিত করার জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।
এ বিষয়ে সাবেক ডিজি আলমগীর মুহাম্মদ মনসুরুল আলম ইনকিলাবকে বলেন, সাবেক সকল ডিজি এ কাজগুলো করেছে। আমার ক্ষেত্রে কি বাধা আমি জানি না।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ