পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ছাব্বিশ বছরেরও বেশি সময় আগে কাশ্মীরের কুনান ও পোশপোরা গ্রামে ৩০ জনেরও বেশি নারীকে ভারতীয় সৈন্যরা গণধর্ষণ করে। সেই সম্ভ্রম হারানো নারীরা আজও ন্যায়বিচার পাবার জন্য লড়ে যাচ্ছেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯১। ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের কুপওয়ারা জেলার একটি ছোট্ট গ্রাম কুনান। শীতের সেই ঠান্ডা রাতে গ্রামের অন্য লোকদের মতোই জুনি ও জারিনা (আসল নাম নয়) ঘুমোতে যাবার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন। ঠিক সেই সময় তারা শুনলেন, দরজায় কে যেন জোরে জোরে কড়া নাড়ছে।
তখন কাশ্মীরে ভারতের নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে চলমান এক সশস্ত্র বিদ্রোহ দমনের জন্য ভারতীয় সামরিক বাহিনীর বড় আকারের সেনা অভিযান চলছে। কোন এলাকা ঘেরাও করে সেনা-তল্লাশি চালানো নিয়মিত ঘটনা হয়ে গেছে, যা এখনো চলছে। এ রকম সেনা অভিযানের সময় যেটা হয় - কোন একটি এলাকা নিরাপত্তা বাহিনী ঘিরে ফেলে । সব বাড়ির পুরুষদের বের করে আনা হয়, আর তার পর চলে তল্লাশি। পুরুষদের লাইন করে দাঁড় করানো হয় একজন গুপ্তচরের সামনে। তার পর যাদের সন্দেহভাজন জঙ্গী বা তাদের সমর্থক বলে মনে করা হয় তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়।
জুনি আর জরিনা যখন তাদের দরজা খুলে সৈন্যদের দেখতে পেলেন, তখন তারা ভাবলেন আজও এরকম কিছুই হবে। প্রথম দিকে তাই হলো, পুরুষদের বের করে নেয়া হল। কিন্তু তাদের আসল উদ্দেশ্য ছিল অন্য। তার পর যা ঘটলো তা মনে করলে এখনো তাদের চোখে পানি আসে।
জুনি বলছিলেন, ্রসৈন্যদের কেউ কেউ মদ খাচ্ছিল। আমার দু›বছরের মেয়ে আমার কোলে। এ অবস্থায়ই একজন সৈন্য আমাকে ধরার চেষ্টা করলো।
আমি বাধা দিলাম। ধ্বস্তাধস্তির মধ্যে মেয়েটা আমার হাত থেকে পড়ে গেল। তাকে জানালা দিয়ে বাইরে ছুঁড়ে মারা হলো । সে সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেছে। এর পর তিন জন সৈন্য আমাকে ধরে ফেললো, আমার জামা-কাপড় ছিঁড়ে ফেললো। এর পর কি হলো আমি জানি না। তারা সংখ্যায় ছিল পাঁচজন। তাদের সবার চেহারা আমার মনে আছে।
সেদিন ওই একই বাড়িতে ছিলেন জারিনা। মাত্র ১১ দিন আগে তার বিয়ে হয়েছিল, তার পর সেদিনই তিনি বাবা-মার বাড়ি থেকে ফিরেছিলেন।
জারিনা বলছিলেন, কয়েকজন সৈন্য তার শাশুড়িকে জিজ্ঞেস করলো - এই যে ঘরে নতুন কাপড় ঝুলছে, এগুলো কার।
্রশাশুড়ি বললেন, এই যে আমাদের নতুন পুত্রবধূ - তার। আর তারপই যে কি হলো তা আমি বর্ণনা করতে পারবো না। শুধু যে আমাদের ওপর অত্যাচার করা হয়েছে তাই নয়, আমরা আজও ন্যায়বিচার পাই নি। আজও সৈন্য দেখলে আমি ভয়ে কাঁপতে থাকি।
কুনান আর পোশপোরার বাসিন্দারা অভিযোগ করছেন, ভারতীয় সৈন্যরা এ দুটি গ্রামের মেয়েদের ওপর পরিকল্পিতভাবে গণধর্ষণ চালিয়েছে। নারীদের গণধর্ষণ ছাড়াও পুরুষদের ওপর চালানো হয়েছে ভয়াবহ নির্যাতন। গত ২৬ বছর ধরে তারা ন্যায় বিচারের জন্য লড়ে যাচ্ছেন।
বিবিসির সংবাদদাতা আলিয়া নাজকি জানাচ্ছেন, শ্রীনগরে রাজ্য সরকারের একজন মন্ত্রী নাইম আখতারের সাথে তার এসব অভিযোগ নিয়ে কথা হলে তিনি জানান, ্রকাশ্মীরে সংঘাতের মধ্যে সত্য অনেক সময় ধুলোর স্তর জমে ঝাপসা হয়ে যায়।
এখন দেখা যাচ্ছে একদল কাশ্মীরী নারী সেই ধুলো পরিষ্কার করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তারা ২০১৩ সালে রাজ্য হাইকোর্টে এক পিটিশন করেন। এতে যাদের নাম আছে তার একজন নাতাশা রাখার। তিনি এ ঘটনা নিয়ে একটি বইও লিখেছেন।
তিনি বলেন,এটা একটা বড় ঘটনা যেখানে ধর্ষণের শিকাররা এগিয়ে এসেছেন। এর অনেক সাক্ষ্যপ্রমাণও আছে।
এর পর আইনী প্রক্রিয়া শুরু হয়। দীর্ঘ ও কঠিন প্রক্রিয়ার পর জম্মু ও কাশ্মীর হাইকোর্ট রাজ্য সরকারকে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেবার নির্দেশ দেয়।
রাজ্য সরকার প্রথমে রাজী হয়েও পরে আবার অবস্থান পরিবর্তন করে, হাইকোর্টে রায় চ্যালেঞ্জ করে। সেই থেকে মামলা এখনো চলছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনী বরাবরই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তারা সাক্ষাৎকার চাইলে একটি বিবৃতি পাঠায়। তাদের একজন মুখপাত্র বলেন, এসব অভিযোগ তিন বার স্বাধীনভাবে তদন্ত করা হয়েছে, এবং পরস্পর বিরোধী বিবরণ পাওয়ায় মামলাটি ‹ক্লোজ› করে দেয়া হয়েছে।
কাশ্মীরের কর্মকর্তারা এ নিয়ে খুব সতর্ক ভাষায় কথা বলেন।
তবে রাজ্যের মহিলা অধিকার বিষয়ক কমিশনের প্রধান নাইমা আহমেদ মাহজুর বলেন, তিনি মনে করেন কুনান ও পোশপোরা জেলায় অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, এবং তা আদালতে প্রমাণ হওয়া দরকার। তিনি বলেন, রাজ্য সরকার আইনি প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে পারে না।
কুনান ও পোশপোরায় সেই বিভীষিকাময় শীতের রাতে প্রকৃতই কি ঘটেছিল যা কখনোই জানা যাবে না। কিন্তু এখন একটি নতুন প্রজন্ম আসছে। কুনান গ্রাম ও তার বাড়িঘরগুলোর পরিবর্তন হচ্ছে। কিন্তু সেই পাশবিক ঘটনার স্মৃতি আজো গ্রামবাসীদের তাড়িয়ে ফেরে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।