Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মিয়ানমারের যুদ্ধের উসকানি এড়িয়েছি

দেশে ফিরে লাখো মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত প্রধানমন্ত্রী বললেন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের ভূমিকার কারণেই মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সঙ্কট বিশ্ববাসীর মনোযোগ পেয়েছে। রোহিঙ্গা সঙ্কটের মধ্যে মিয়ানমারের দিক থেকে যুদ্ধের উসকানিতে সতর্ক থেকে তা এড়িয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের একেবারে প্রতিবেশী, একটা পর্যায়ে এমন একটা ভাব দেখাল; আমাদের সঙ্গে যুদ্ধই বেধে যাবে, এরকম একটা। আমাদের সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড, পুলিশ সকলকে সতর্ক করলাম; যে কোনোমতেই কোনো রকম উসকানির কাছে তারা যেন বিভ্রান্ত না হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত আমি নির্দেশ না দেবো। উসকানিতে সাড়া না দেয়ায় সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে তিন সপ্তাহের সফর শেষে গতকাল শনিবার সকালে দেশে ফিরে বিমানবন্দরে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মিয়ানমারের যুদ্ধের উসকানির মধ্যেও সরকারের শান্ত থেকে পরিস্থিতি মোকাবেলার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে রোহিঙ্গা সঙ্কট অবসানের জন্য পাঁচ প্রস্তাব তুলে ধরে ও নিপীড়িত-নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বিশ্বনেতাদের বিপুল প্রশংসায় ভেসেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। রোহিঙ্গা সঙ্কটে সাহসী সিদ্ধান্ত ও উদার মনের পরিচয় দেয়ায় দেশে ফিরে সংবর্ধনায় সিক্ত হন তিনি। বিমানবন্দরে রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি লেখক, শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী, ক্রীড়াবিদদের সংবর্ধনা নেন প্রধানমন্ত্রী। বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত পথে পথে দলের লাখো নেতাকর্মী-সমর্থকরা উপস্থিত ছিলেন তাদের প্রিয় নেত্রীকে শুভেচ্ছা ও সংবর্ধনা জানাতে। এ সময় নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রীকে ‘বিপন্ন মানবতার বাতিঘর’ বলে অভিহিত করেন।
লাখো নেতাকর্মী ও দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের ভালোবাসায় সিক্ত শেখ হাসিনা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বলেন, জাতীয় কর্তব্য হিসেবে মিয়ানমারের এই মুসলিম জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। শরণার্থী রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও খাবারের ব্যবস্থা করার বিষয়ে সরকারি উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রয়োজনে এক বেলা খাব, আরেক বেলার খাবার তাদের ভাগ করে দেবো।
বিপন্ন রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে প্রথমে নিজের দ্বিধাগ্রস্ততার কথা স্বীকার করে তা কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে ছোট বোন শেখ রেহানার ভূমিকার কথাও বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, প্রথমে আমরা দ্বিধাগ্রস্ত ছিলাম। খোঁজ নিয়ে দেখলাম যে অত্যাচার হয়েছে মেয়েদের ওপর তাদের আশ্রয় দিতে হলো। পৃথিবীথে এরকম বহু ঘটনা ঘটে। অনেকে দরজা বন্ধ করে রাখে। রেহানা বলল, ১৬ কোটি লোককে খাওয়াচ্ছ, আর ৫-৭ লাখ লোককে খাওয়াতে পারবে না? আমি সেখানে গেলাম, সবাইকে ডেকে বললাম, আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে। এ মানুষগুলোকে আশ্রয় দিতে হবে। খাওয়াতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা তাদের আশ্রয় না দিলে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারত না। তিনি বলেন, মানুষ মানুষের জন্য, বিপন্ন মানুষকে আশ্রয় দেয়া মানুষের কর্তব্য। প্রশাসনের সর্বস্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং বাংলাদেশের জনগণের রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের আত্মবিশ্বাস আছে বলেই আমরা এই চ্যালেঞ্জটা নিয়েছি।
মিয়ানমার তাদের দেশের নাগরিক রোহিঙ্গাদের ফেরত না নেয়া পর্যন্ত শরণার্থীদের নোয়াখালীর ভাসানচরে পুনর্বাসনের কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এখন তারা যেভাবে আছে, সেভাবে থাকতে পারে না। আমি যাওয়ার আগেই নেভিকে টাকা দিয়ে গিয়েছিলাম। ভাসান চরে দু’টি সাইক্লোন শেল্টার ও আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। নোয়াখালীর লোকজন বলে ঠেঙ্গারচর, আর চিটাগাংয়ে বলে ভাসানচর। যেহেতু, এরা ভাসমান, তাই আমি বললাম, ভাসানচর নামটাই থাকুক।
রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির সফলতার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। রোহিঙ্গারা যেন স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করতে পারে, সে ব্যবস্থা নিতে হবে।
শরণার্থীদের ফেরতের বিষয়ে মিয়ানমারের ঘোষণা এবং আলোচনার জন্য অং সান সুচির দপ্তরের মন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকে অগ্রগতি হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের একজন এসেছে। এটা একটা বিশেষ দিক।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে রোহিঙ্গা সঙ্কটের মধ্যে মিয়ানমারের উসকানিতে বিভ্রান্ত না হওয়ায় দেশের নিরাপত্তা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানান। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের একেবারে প্রতিবেশী, একটা পর্যায়ে এমন একটা ভাব দেখাল; আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ বেধেই যাবে। আমাদের সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড, পুলিশসহ সকলকে সতর্ক করলাম, যেন কোনোমতেই কোনো রকম উসকানির কাছে তারা যেন বিভ্রান্ত না হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত আমি নির্দেশ না দেই। তিনি বলেন, এরকম একটা ঘটনা ঘটাতে চাইবেই। অনেকেই আছে এখানে নানা রকম উসকানি দেবে বা এমন একটা অবস্থা সৃষ্টি করতে চাইবে। যেটা হয়তো তখন অন্য দিকে দৃষ্টি ফেরাবে। সেদিকে আমরা খুবই সতর্ক ছিলাম।
বিমানবন্দরে আওয়ামী লীগের গণসংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর অগ্রগতি বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এরকম খরস্রোত নদীতে (পদ্মায়) সুপারস্ট্রাকচার করা বিরাট চ্যালেঞ্জ। অনেকেই সন্দিহান ছিল। আল্লাহর রহমতে আমরা করেছি। ওবায়দুল কাদের স্প্যান বসানোর উদ্বোধনে দেরি করতে চেয়েছিল। আমি বলেছি- না। এটা নিয়ে অনেক কিছু হয়েছে। অনেক মানুষকে অপমানিত হতে হয়েছিল। এক সেকেন্ডও দেরি করব না। আমেরিকান সময় ৩টার দিকে মেসেজ পেলাম সুপারস্ট্রাকচার বসেছে। আমি ছবি চাইলাম। ওই ছবি দেখে আমরা দুই বোন কেঁদেছি। অনেক অপমানের জবাব দিতে পারলাম।
তিনি বলেন, মানুষের বিশ্বাস, আস্থা অর্জনের চেয়ে রাজনীতিকের জীবনে বড় প্রাপ্তি আর কিছু হয় না।
দেশে ফিরে লাখো মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হলেন শেখ হাসিনা
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান শেষে দেশে ফিরে লাখো মানুষের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসায় সিক্ত হলেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। গতকাল সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে বিজি-০০২ ভিভিআইপি ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। বিমান থেকে নামার পর ভিভিআইপি টার্মিনালে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের শীর্ষ নেতা এবং বিশিষ্ট নাগরিকদের পাশাপাশি বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত দীর্ঘ ১৪ কিলোমিটার রাস্তায় লাখো নেতাকর্মী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অভ্যর্থনা জানায় বঙ্গবন্ধুকন্যা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।
জাতিসংঘের ৭২তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে গত ১৬ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৭ সেপ্টেম্বর তিনি নিউইয়র্ক পৌঁছেন। ২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বক্তৃতা, গুরুত্বপূর্ণ সভায় অংশগ্রহণ ও কয়েকজন সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও তাদের ফেরত নিতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে পাঁচ দফা প্রস্তাব দেন, যা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। জাতিসংঘের কর্মসূচি শেষে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে গত ২৫ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শেখ হাসিনার পিত্তথলি অপসারণ করা হয়। কয়েক দিন বিশ্রাম নিয়ে ৩ অক্টোবর লন্ডনে যান তিনি। সেখান থেকে শুক্রবার দেশের পথে রওনা হয়ে গতকাল শনিবার দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী।
বিমান থেকে নামার পর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। এরপর প্রধানমন্ত্রী ভিভিআইপি টার্মিনাল লাউঞ্জে আসেন। সেখানে প্রথমে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা শেখ হাসিনাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এরপর ১৪ দল ও বিশিষ্ট নাগরিকদের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। একে একে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান শিক্ষক সমাজ, ক্রীড়াবিদ, গণমাধ্যম, সাংবাদিক, শিল্পী-কবি সাহিত্যিক ও ব্যবসায়ীরা। এরপর ভিভিআইপি টার্মিনালে প্রধানমন্ত্রী শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রীকে ‘বিপন্ন মানবতার বাতিঘর’ অভিহিত করেন।
আওয়ামী লীগের পক্ষে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাহারা খাতুন, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, মাহবুব-উল আলম হানিফ, দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, আহমদ হোসেন, বাহাউদ্দিন নাছিম, এনামুল হক শামীম, মহিবুল হাসান নওফেলসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। ১৪ দলের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানান রাশেদ খান মেনন, শরীফ নুরুল আম্বিয়া, ফজলে হোসেন বাদশা, শিরিন আকতার, দিলীপ বড়–য়া, ওয়াজেদুল ইসলাম খান, ইসমাইল হোসেন প্রমুখ।
বিশিষ্টজনদের পক্ষ ফুলেল শুভেচ্ছা জানান বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, বিএসএমএমইউর সাবেক ভিসি প্রাণ গোপাল দত্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভির্সি অধ্যাপক মো: আখতারুজ্জামান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক হারুন-অর রশীদ ও বিএসএমএমইউর ভিসি অধ্যাপক কামরুল হাসান খান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি ড. মীজানুর রহমান ফুল দিয়ে বরণ করেন প্রধানমন্ত্রীকে। ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজা, নাঈমুর রহমান দুর্জয়কে সঙ্গে নিয়ে ক্রীড়াঙ্গনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। রামেন্দু মজুমদারের নেতৃত্বে সংস্কৃতিকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এ সময় আতাউর রহমান, গোলাম কুদ্দুস, সারা যাকের প্রমুখ সঙ্গে ছিলেন। সাহিত্যিক ও সাংবাদিক রাহাত খান, চিত্রশিল্পী হাশেম খান, কণ্ঠশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাও প্রধানমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। সাংবাদিকদের মধ্যে শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রীর তথ্যবিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, বিএফইউজের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, সিনিয়র সাংবাদিক আবেদ খান, স্বদেশ রায় প্রমুখ। এফবিসিসিআই, বিজিএমইএসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারাও ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রীকে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সরকারের মন্ত্রী, উপদেষ্টা, আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, শিক্ষক, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিজীবীসহ বিভিন্ন সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা। সাড়ে ১০টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর বিমানবন্দর ছেড়ে গণভবনের উদ্দেশে রওনা হয়।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেয়া সংবর্ধনা কর্মসূচিতে যোগ দিতে গতকাল ভোর থেকেই ঢাকা ও এর আশপাশের জেলা থেকে বাস, ট্রাক ও ব্যক্তিগত যানে করে নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীর ফেরার পথে অবস্থান নিতে থাকেন। সাড়ে ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশ লোকারণ্যে পরিণত হয়। বিমানবন্দর থেকে গণভবন। সর্বত্রই এক অন্য রকম পরিবেশ। দীর্ঘ প্রায় ১৪ কিলোমিটার সড়কের দু’পাশ যেন জনারণ্য। উৎসবের আমেজে চার দিকে শুধু মানুষ আর মানুষ। জনতার ঢলে রাজপথ যেন জনসমুদ্র আর এ দীর্ঘ পথের দু’ধারে দাঁড়িয়ে পুষ্পবৃষ্টি ছিটিয়ে, বাদ্য-বাজনার তালে স্লোগানে স্লোগানে লাখো মানুষ বরণ করে নিয়েছেন তাদের প্রিয় নেত্রীকে। গণসংবর্ধনায় আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা, জাতীয় ও দলীয় পতাকা, টমটম, বাদ্যযন্ত্র, অত্যাধুনিক সাউন্ড সিস্টেমের বাস-ট্রাকসহ কোনো কিছুরই কমতি ছিল না। জাহাঙ্গীর গেট থেকে বিজয় সরণি এবং বিজয় সরণি থেকে গণভবন পর্যন্ত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরের হাজারো নেতাকর্মীর গায়ে ও মাথায় সবুজ গেঞ্জি-ক্যাপ, হাতে লাল-সবুজের পতাকা ছিল চোখে পড়ার মতো। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের উদ্যোগে ঘোড়ার গাড়ির ওপর শান্তির প্রতীক পায়রা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়ে বিভিন্ন গান উপস্থিত হাজারো নেতাকর্মীর মধ্যে নতুন মাত্রা যোগ করে। দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট এতে নেতৃত্বে দেন। যুবলীগের উপস্থিতির বিষয়টি সার্বিক মনিটরিং করেন সংগঠনের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ। বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার রাস্তায় দলের নেতাকর্মী ও মনোনয়ন প্রত্যাশীদের শোডাউন ছিল চোখে পড়ার মতো। তারা নিজ নিজ কর্মী-সমর্থক, পোস্টার ও প্লাকার্ড জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি, সম্ভাব্য প্রার্থীর নিজের ছবি সাংগঠনিক সম্পাদক শক্তি প্রদর্শন করেন।
প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর ধীরে ধীরে বিমানবন্দর হয়ে গণভবনের দিকে রওনা দিলে হাজার হাজার নেতাকর্মী জয়বাংলা স্লোগানে ও করতালি দিয়ে চার দিক মুখর করে তোলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীও রাস্তার দুই পাশে অবস্থানকারী নেতাকর্মীদের উদ্দেশে গাড়ির ভেতর থেকেই হাত নাড়েন। শত শত পুলিশ, র‌্যাব, সোয়াতসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা বলয়। আর নিরাপত্তায় ছিল এসএসএফ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই টেকেনি তীব্র জনস্রোতের কাছে। জাতীয় ও দলীয় পতাকা এবং ব্যানার-ফেস্টুন, প্লাকার্ড, পোস্টার ও বেলুনসহ ফুল হাতে সমবেত এসব মানুষ দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থেকেছেন প্রধানমন্ত্রীর জন্য। রাস্তার দু’ধারে প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন সাফল্য তুলে ধরে বড় বড় বিলবোর্ড ও ব্যানার শোভা পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে সমবেত মানুষ গান ও বিভিন্ন ধরনের বাদ্য-বাজনার পাশাপাশি স্লোগানে মুখরিত রেখেছেন গোটা এলাকা। মাইকে বেজেছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণসহ মুক্তিযুদ্ধ ও প্রেরণামূলক দেশাত্মবোধক গান। হাজার হাজার নেতাকর্মীর কণ্ঠে ছিল প্রায় অভিন্ন স্লোগান- ‘শেখ হাসিনার জন্য, বাংলাদেশ ধন্য’, ‘শেখ হাসিনার সরকার, বারবার দরকার’, ‘যোগ্য পিতার যোগ্য কন্যা, জননেত্রী শেখ হাসিনা’, ‘জামায়াত-শিবির-রাজাকার, এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়’ ইত্যাদি। অনেকটাই ‘মানব প্রাচীরের’ আদলে হাতে হাত ধরে বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত দীর্ঘপথে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীকে গণসংবর্ধনা জানানো হয়।
সংবর্ধনায় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের শোডাউন : গতকাল প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনার আয়োজনে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে ঢাকা ও আশপাশের সরকারদলীয় বর্তমান এমপি ও আগামীতে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের শোডাউন। ঢাকা ছাড়াও যেসব নেতারা অধিকাংশ সময়ই ঢাকায় থাকেন, তারাও নিজ নিজ শক্তি দেখাতে গতকাল সুযোগ হাতছাড়া করেননি। জনসমর্থন দেখাতে প্রতিযোগিতাও ছিল চোখে পড়ার মতো। ঢাকা-৮ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট বিজয়ী সরণি থেকে গণভবন পর্যন্ত গায়ে সবুজ গেঞ্জি, মাথায় সবুজ টুপি, যুবলীগের পতাকা হাতে নেতাকর্মী এক আনন্দঘন পরিবেশে প্রাণের নেত্রীকে অভ্যর্থনা জানান। ঢাকা-৫ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী মশিউর রহমান মোল্লা সামরিক জাদুঘরের সামনে, নেত্রকোনা সদর আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী চলচ্চিত্র তারকা রানা হামিদ তারকর্মী-সমর্থকদের নিয়ে ছিলেন ১৪ দলীয় জোট নেতাদের সঙ্গে। সেখানে ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম নেতৃত্ব দেন। ঢাকার এমপি জাহাঙ্গীর কবির নানক, ফজলে নূর তাপস, সাহারা খাতুন, এ কে এম রহমতউল্লাহ, আসাদুজ্জামান খান কামাল, আসলামুল হক আসলাম, ইলিয়াস মোল্লা, হাবিবুর রহমান মোল্লা, নসরুল হামিদ বিপুর লোকজন বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নেন। তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দলীয় এমপির ছবি প্রদর্শন করেন। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জের শামীম ওসমান, গাজীপুরের আজমতউল্লাহ, জাহাঙ্গীর আলম, কেরানীগঞ্জের শাহীন আহমেদ, মুন্সিগঞ্জের গোলাম সরোয়ার কবির, কিশোরগঞ্জ-২ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী ড. জায়েদ মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ আসাদ গেট সংলগ্ন, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী ও সাবেক এমপি কায়সার হাসনাত বিজয় সরণিতে, ঢাকা-১ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক ছাত্রনেতা পনিরুজ্জামান তরুণসহ শতাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী নিজ নিজ নেতাকর্মীদের নিয়ে শোডাউন করেন।



 

Show all comments
  • কাসেম ৮ অক্টোবর, ২০১৭, ১:৩৯ পিএম says : 0
    রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমাদেরকে বুঝে শুনে পা ফেলতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • আল মাহমুদ শামস ৮ অক্টোবর, ২০১৭, ২:১৬ পিএম says : 0
    বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে গেছে। প্রতিরোধ,একটিং, সৈন্য ও সমরাস্ত্র মহরা মানেই যুদ্ধ নয়। অন্তত এ কাজটি আমাদের করা উচিত ছিল।
    Total Reply(0) Reply
  • Fakhrul Islam Forhad ৮ অক্টোবর, ২০১৭, ২:১৭ পিএম says : 0
    যে ন্যায়ের পক্ষে যুদ্ধে ভয় পায় সে ব্যক্তি কখনো সাহসি হতে পারে না,
    Total Reply(0) Reply
  • Babul Ahmed ৮ অক্টোবর, ২০১৭, ২:১৮ পিএম says : 0
    অনেকেই যুদ্ধের পহ্মে, কিন্তু ........গুলো জানেনা মিয়ানমার কেন যুদ্ধ চাচ্ছে, যুদ্ধ বেধে গেলেই রোহিঙ্গা গনহত্যা বিশ্ব মিডিয়ায় ধামাচাপা পড়ে যাবে, আর বাংলাদেশ সিমান্ত এলাকায় প্রায় ৭, ৮ লহ্ম রোহিঙ্গা অবস্তান করছে, বামার্র প্রথম কাজ হবে গনবসতি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বোমা হামলা চালিয়ে তাদের হত্যা করা, যুদ্ধ বেধে গেলে এই ........গুলো ফেসবুকে কান্নাকাটি করবে সরকার যুদ্ধ বাধিয়ে দিয়েয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের হত্যা করার উদেশ্য,
    Total Reply(0) Reply
  • Shariful Islam Sharif ৮ অক্টোবর, ২০১৭, ২:১৯ পিএম says : 0
    ধন্যবাদ প্রধান মন্ত্রী এত ভাল একটা চিন্তা করে অসহায় মানুষের সাহায্য করে আমরা গর্বিত আপনার মত একটা রাষ্ট্র শাসক পেয়ে।
    Total Reply(0) Reply
  • ফিরোজ খান ৮ অক্টোবর, ২০১৭, ২:২১ পিএম says : 0
    আপনার সিদ্ধান্তকে সেলুট যানাই কারন এ অবস্থায় কোন ভাবেই মিয়ানমারের উস্কানিতে মাথা গরম করা যাবেনা এটা একটা সঠিক সিদ্ধান্ত। তবে দুঃখ হয় ভারতের আচারনে । বন্দু কি এমন হওয়া উচিৎ?
    Total Reply(0) Reply
  • Md Shabbir ৮ অক্টোবর, ২০১৭, ২:২৩ পিএম says : 0
    এখনও সে চেষ্টায় অা‌ছে , পরম বন্দু ভারত অাজ দু‌ধের মা‌ছি , মিয়ানমার কে সর্মথন ও অস্ত্র দি‌চ্ছে তারা , অামা‌দের দি‌য়ে‌ছে ঋৃ‌ণের বোঝা
    Total Reply(0) Reply
  • Robiul Robi ৮ অক্টোবর, ২০১৭, ২:২৫ পিএম says : 0
    যুদ্ধ ছাড়াই মায়ানমার সফল আর আপনি যদি সফল হতে চান তাহলে সকল নাগরিক নিশ্চয়তাসহ রোহিংগাদের ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Jakir Hossain ৮ অক্টোবর, ২০১৭, ২:২৬ পিএম says : 0
    আমাদের কোনো দরকার নেই যুদ্ধ করার।কৌশল টা অনেক ভালো হয়েছে প্রধানমন্ত্রী। আপনার জন্য দোয়া করি সারা জীবন আপনি দেশের প্রধানমন্ত্রী থাকেন।দেশবাশী আপনাকে চায়।অসংখ্য ধন্যবাদ।
    Total Reply(0) Reply
  • Minar Chowdhury ৮ অক্টোবর, ২০১৭, ২:২৮ পিএম says : 0
    রোহিঙ্গা ইস্যুতে মায়ানমারকে প্রচন্ড আন্তর্জাতিক চাপে রাখতে আওমীলীগের গহর রিজভীকে কাজে লাগালে দ্রুত ফল আসবে ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মিয়ানমার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ