Inqilab Logo

সোমবার, ১০ জুন ২০২৪, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৩ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

খুলনায় ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর ঠিকাদারি প্রকল্পে হামলায় আহত ৪ : কাজ বন্ধ

খুলনা ব্যুরো : | প্রকাশের সময় : ৮ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

খুলনার রূপসা উপজেলায় প্রধানমন্ত্রী’র প্রতিশ্রুত অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্পের আঠারোবেকি নদী খনন প্রকল্পে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে হামলার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার বেলা ১১টার দিকে স্থানীয় শেয়ালি বাজার ও পুলিশ ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় এ হামলা চালানো হয়। এতে প্রকল্পের সাব-ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাইমান ট্রেডার্সের ম্যানেজারসহ চারজন আহত হয়। এ সময় মোবাইল ও টাকা লুট করা হয় বলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।
এদিকে, ঘটনার পর থেকে খনন প্রকল্পের অর্ধশতাধিক ড্রেজার বন্ধ রয়েছে। এতে পুরো উন্নয়ন প্রকল্পের কাজও বন্ধ হয়ে গেছে। শ্রমিকরা ভয়ে কাজে নামতে পারছে না বলে জানা গেছে। তবে, এলাকা প্লাবিত হওয়ায় ড্রেজার বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করলেও হামলা ও লুটপাটের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান সাধন অধিকারী ।
প্রকল্পটি সেনাবাহিনী পরিচালিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডিজেল প্লান্ট লিমিটেড বাস্তবায়ন করছে। তাদের সহযোগি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে অপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এআরকে গ্রæপ। ২০১৫ সালের নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া ‘আঠারোবেকি নদী খনন ও ব্যারেজ নির্মাণ’ প্রকল্পের কাজ আগামী বছরের জুন নাগাদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
সাব-ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাইমান ট্রেডার্সের স্বত্তাধিকারী স.ম. আব্দুল গণি অভিযোগ করেন, রূপসা উপজেলার ঘাটভোগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাধন অধিকারী গতকাল শনিবার সকাল ৯টার দিকে ৮/১০জন লোক নিয়ে শেয়ালি বাজার ও পুলিশ ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় গিয়ে ড্রেজার বন্ধ রাখতে ম্যানেজারকে চাপ প্রয়োগ করেন। চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমার অনুমতি ছাড়া আমার এলাকায় কোন কাজ করা যাবেনা, কাজ করতে হলে ভাগা দিতে হবে’। এ কথা বলার পর ড্রেজার বন্ধ করে তারা বিষয়টি সেনাবাহিনীর ঠিকাদারি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানান। এ সময় তারা কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলে তারা পূণরায় ড্রেজার চালু করেন। এ খবর পেয়ে বেলা ১১টার দিকে চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ১০/১৫টি মোটর সাইকেলে ২৫/৩০জন লোক এসে অতর্কিত হামলা চালায়। হামলায় তার প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার জাহিদুল ইসলাম (৩২) এবং সুপারভাইজার ইকরামুল ইসলাম (২৪), মহিদুল ইসলাম (৩৩) ও মুছা ফকির (১৯) আহত হয়। তাদের স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হামলার সময় তারা ৪টি মোবাইল এবং তাদের কাছে থাকা নগদ অর্থও লুটপাট করেন।
তিনি জানান, হামলার সময় তার সাইডে কর্মরত ৩০/৩২ জন শ্রমিক ভয়ে কাজ ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেয়। এমনকি ঘটনার পর থেকে তাদের ১৫/২০টি অর্ধশতাধিক ড্রেজার বন্ধ হয়ে গেছে। এতে পুরো কাজই বন্ধ রয়েছে।
সেনাবাহিনীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও এআরকে গ্রুপের প্রকৌশলী মোঃ মাহমুদ আলী এ প্রতিবেদককে বলেন, চেয়ারম্যান ও মেম্বররা এ ধরণের হামলার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী’র প্রতিশ্রুত প্রকল্পের কাজে বাঁধা সৃস্টি করেছে। বিষয়টি সেনাবাহিনীর উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। তাদের নির্দেশনা অনুযায়ি এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে শেয়ালী পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এস আই মোঃ ফিরোজ ফকির বলেন, তিনি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান। সেখানে গিয়ে চেয়ারম্যান এবং কয়েকজন মেম্বরসহ তাদের লোকজনকে দেখতে পান। এ সময় তিনি বিষয়টি জানতে চাইলে চেয়ারম্যান উল্টো তার সঙ্গেই বাক-বিতন্ডায় লিপ্ত হন। পরে ফিরে আসেন।
তবে, ইউপি চেয়ারম্যান সাধন অধিকারী বলেন, তিনি সকালে শিয়ালি এলাকায় একটি ¯øুইচগেট দেখতে যান। এ সময় এলাকার লোকজন তাকে জানান, ড্রেজারে মাটি কাটার কারণে ওঠা পানিতে এলাকা প্লাবিত হয়ে গেছে, তারা রান্না-বান্না করতে পারছেন না। এ কারণে তিনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজারকে ডেকে শুধুমাত্র শনিবারের জন্য ড্রেজার বন্ধ রাখতে বলেন। ওই সময় তারা ড্রেজার বন্ধ রাখলেও তিনি ফিরে আসার পর পুনরায় চালু করে। এ খবর পেয়ে তিনি ইউপি সদস্য সোহাদেব বৈরাগী, সেকেন্দার মোল্লা, মনির ফকির ও সজীব মোল্লাকে সেখানে পাঠান। তাদের সঙ্গে এলাকাবাসীও যোগ দিলে ঠিকাদারের লোকজন ভয়ে পালিয়ে যায়। তবে তাদের ওপর কোন হামলা, মারধর এবং লুটপাট করা হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুলনা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ