Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইইউ ত্যাগ করা না করা নিয়ে সংশয়ে ব্রিটেন

প্রকাশের সময় : ১৭ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বের হয়ে যাওয়ার পক্ষে দেশটিতে জনসমর্থন বেড়ে ৪৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এই জোটে দেশটির রয়ে যাওয়ার পক্ষের সমর্থনের চেয়ে এটা ২ শতাংশ পয়েন্ট বেশি। ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকা পরিচালিত ওআরবি জনমত জরিপে গত মঙ্গলবার এ ইঙ্গিত মেলে। ১১ থেকে ১৪ মার্চ পর্যন্ত ৮২৩ জনের টেলিফোন সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে করা এ জরিপে ৪ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বলেন, ইইউ ত্যাগ করা না-করা বিষয়ে গণভোটে অংশ নেওয়া নিয়ে তারা এখনো সিদ্ধান্তহীন।
এদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) থাকা না থাকা নিয়ে ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলে ফাটল ধরেছে। ইইউর পক্ষে-বিপক্ষে নানা বিশ্লেষণ তুলে ধরে সরকারের মন্ত্রীরা একে অপরের দিকে যুক্তির তীর ছুটছেন। ইইউর সাথে যুক্তরাজ্যের সম্পাদিত চুক্তির আইনী ভিত্তি নিয়ে বিচারবিষয়ক মন্ত্রী মাইকেল গোভের সাথে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের ইতোমধ্যে এক চোট পালটাপালটি হয়ে গেছে। ঘটছে ব্যক্তিগত আক্রমণের ঘটনাও।
এদিকে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি সরকারের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ইইউ ত্যাগের সুবিধা-অসুবিধা তুলে ধরে বলা হয়েছে. ইইউ ত্যাগ করলে ব্রিটেনের অর্থনীতি অন্তত ১০ বছরের জন্য অনিশ্চিত অবস্থায় পতিত হবে। যার ফলে ব্রিটেনের শেয়ার বাজার, বিনিয়োগ ও পাউন্ডের বিনিময় হার মারাত্মকভাবে হ্রাস পাবে। ইইউর বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী প্রায় ২০ লাখ ব্রিটিশ নাগরিকদের ভাগ্য নিয়েও সংশয় প্রকাশ করা হয় ওই প্রতিবেদনে। গত নির্বাচনের আগে ক্যামেরন ইইউ প্রশ্নে গণভোট আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, তার আগে তিনি ইইউর সাথে সদস্য চুক্তি সংশোধনের চেষ্টা করবেন এবং তাতে সফল হলে ইইউতে থেকে যাওয়ার পক্ষে প্রচার চালাবেন। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সেই প্রতিশ্রুত চুক্তি সংশোধনে নিজেকে সফল দাবি করে ক্যামেরন বলেন, তিনি চান ব্রিটেন ইইউর সাথেই থাকুক। ইইউ প্রশ্নে আগামী ২৩ জুন গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
সরকারী আমলাদের তৈরি করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইইউ ত্যাগ করা ব্রিটেনের জন্য সহনীয় হবে না। গণভোটে ইইউ ছাড়ার পক্ষ জয়ী হলে কোনো সমস্যার সমাপ্তি ঘটবে না, বরং সমস্যার শুরু হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইইউ ছাড়ার পক্ষ বিজয়ী হলে, ওই ফলাফল বাস্তবায়নে আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করতে দুই বছর পর্যন্ত সময় লাগবে বলে যুক্তি দেখানো হলেও বাস্তবে তা ১০ বছর পর্যন্ত গড়াতে পারে। বর্তমানে ইইউর মাধ্যমে বিশ্বের অন্তত ৫০টি দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে ব্রিটেনের। ইইউ ত্যাগ করলে এই ৫০টি দেশের সাথে নতুন করে ব্রিটেনকে চুক্তি সম্পাদক করতে হবে। আবার ব্রিটেন ইইউ ত্যাগ করলেও ইইউর অবসান হচ্ছে না। ফলে দোড়গড়ার এই বিশাল রাষ্ট্র জোটের সাথে ব্রিটেনের বাণিজ্য কিংবা রাজনৈতিক কর্মসূচি ইস্যুতে একযোগে কাজ করার জন্য নতুন করে চুক্তি সম্পাদন করতে হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে ইইউকে সাথে নিয়ে ব্রিটেন যেভাবে আন্তর্জাতিক সন্তাসবাদ দমনসহ বিভিন্ন ইস্যু মোকাবেলা করছে এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদান করছে ইইউ ত্যাগ করছে বিচ্ছিন্ন ব্রিটেনের পক্ষে সেই প্রভাব ধরে রাখা সম্ভব হবে না। বিশেষ করে ইইউর সাথে যুক্তরাষ্টের সম্পর্ক স্থাপনে ব্রিটেনের মতামত গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে।
ইইউ বিরোধী মন্ত্রী ক্রিস গেইলিং এই প্রতিবেদনের সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন। তিনি বলেন, এই সম্পর্ক নবায়নে যে দীর্ঘ সময়ের কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে তা যুক্তিহীন।
এদিকে সরকারের আমলারা ইইউর পক্ষে যুক্তি তুলে প্রতিবেদন তৈরি করা নিয়েও চলছে বিতর্ক। ইইউ বিরোধী মন্ত্রীরা বলছেন, আমলারা হয় নিরপেক্ষ থাকবেন। অন্যথায় ইইউর পক্ষে-বিপক্ষে সকলের চাহিদামত তথ্য প্রদান করবেন। ইইউ বিরোধী মন্ত্রীরা অভিযোগ করেছেন, কীসের ভিত্তিতে ইইউ সংক্রান্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছেন সে বিষয়ে কোনো তথ্য দিচ্ছেন না আমলারা। এ প্রসঙ্গে সরকারের বক্তব্য হলো- সরকারের অবস্থান হলো ব্রিটেন ইইউর সাথেই থাকুক। আমলারা সরকারের কর্মী হিসেবে সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কাজ করবে এমনটাই স্বাভাবিক।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন সতর্ক করে দিয়ে বলেন যে, ইইউ ছাড়লে ব্রিটেনের অর্থনীতি অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। ক্যামেরন তার দলের যেসব মন্ত্রী ইইউ ছাড়ার পক্ষে প্রচার চালাচ্ছে তাঁরা দেশের ভবিষ্যত নিয়ে খেলছেন বলে মন্তব্য করেন।
প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরনের এমন সতর্কবাণীর কড়া সমালোচনা করে সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তি ওয়ার্ক এন্ড পেনশন মিনিস্টার ইয়ান ডানকান স্মিথ বলেছেন, ইইউ ছেড়ে না আসতে ক্যামেরন মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, ইইউ ছাড়লে ব্রিটেনের অর্থনীতি অন্ধকারে নয় বরং আলোর দিকে ধাবিত হবে। ইইউ বিরোধী মন্ত্রীদের আক্রমণ করা থেকে দূরে থাকতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহবান জানিয়ে ইয়ান ডানকান বলেন, প্লেয়ারকে লাথি না মেরে বলকে লাথি মারুন।
ক্যামেরেনর ঘনিষ্ঠ বন্ধু বলে পরিচিত বিচারবিষয়ক মন্ত্রী মাইকেল গোভ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি অভিযোগ তুলেন যে, ক্যামেরনের সম্পাদিত চুক্তির আইনী কোনো ভিত্তি নেই। এটি ইইউ ট্রিয়েটিতে যুক্ত হয়নি। বিবিসি ও ওয়েবসাইট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইইউ ত্যাগ করা না করা নিয়ে সংশয়ে ব্রিটেন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ