Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নোয়াখালীতে বিচারপ্রার্থী যুবতীকে রাতভর ধর্ষণ ও মারধর করেছে সেই চেয়ারম্যান

| প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নোয়াখালী ব্যুরো
সুবর্ণচর উপজেলার চরবাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেনের বিরুদ্ধে এবার বিচারপ্রার্থী এক যুবতীকে ইউপি পরিষদে আটক রেখে রাতভর ধর্ষণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ধর্ষণের অভিযোগ ফাঁস করার কথা বলায় তাকে বেদম মারধর করে পাষন্ড চেয়ারম্যান। গত বুধবার রাত ১১টার পর থেকে এ তান্ডব চালায় ইউপি চেয়ারম্যান। ধর্ষিতা নারী (২৭) একই ইউনিয়নের মধ্যম চরবাটা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি মৃত আলী আহমদের মেয়ে। ধর্ষণের শিকার ওই নারী অভিযোগ করেন যে, প্রতারণার বিচার চাইতে গেলে উল্টো চেয়ারম্যান দ্বারা ধর্ষিত হয়েছেন তিনি। রাতের ঘটনা বাহিরে ফাঁস করার কথা বলায় তাঁকে রাতভর ইউপি পরিষদের একটি কক্ষে আটক রেখে লাঠি দিয়ে বেদম মারধর করা হয়। এতে তার পুরো শরীরে রক্তাক্ত জখম হয়েছে। নির্যাতনের পর শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে গতকাল (বৃহস্পতিবার) সকাল ৯টার দিকে তাঁকে ছেড়ে দেয়া হয়। পরে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি স্থানীয় সংবাদকর্মী ও গণ্যমান্যদের অবহিত করলে তারা আইনের আশ্রয় নিতে বলেন। এক পর্যায়ে গতকাল দুপুরের দিকে চরজব্বার থানায় অভিযোগ করতে গেলে প্রথমে পুলিশ মামলা নিতে রাজি হয়নি। পরে বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মি ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের চাপের মুখে পুলিশ অভিযোগ গ্রহণ করে। ওই নারী জানান, তিনি বিবাহিতা। তাঁর একটি পুত্র সন্তানও রয়েছে। কিন্তু স্বামী ভরণ-পোষণ দেয়া তো দুরের কথা দীর্ঘদিন ধরে কোনো যোগাযোগও করছে না। এরই মধ্যে হাতিয়া উপজেলার নঙ্গলিয়া গ্রামের ভ‚মিহীন বাজার সংলগ্ন রবিউল হোসেন নামে এক ছেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার। শুরুতে ছেলেটি নিজেকে অবিবাহিত বললেও সম্প্রতি ছেলেটি বিবাহিত বলে জানতে পারেন তিনি। পরে তার সঙ্গে বিয়ে তো দুরের কথা কোনো সম্পর্ক রাখতেও রাজি হয়নি ওই নারী। বেশ কিছুদিন যোগাযোগ না করায় ছেলেটি বুধবার রাতে তাদের বাড়িতে আসলে বিষয়টি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে অবহিত করা হয়। পরে রাত ১০টার দিকে চেয়ারম্যান গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে ওই ছেলে, অভিযোগকারী নারী, তার তিন ভাই ও বোনকে পরিষদে ডেকে আনে। একপর্যায়ে নারীর অভিযোগ শোনার পর চেয়ারম্যান উল্টো তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন এবং ছেলেকেও মারধর করেন। পরে আগত সবাইকে বের করে দিয়ে ওই নারীকে একটি কক্ষে আটক রেখে জোর করে বিবস্ত্র করে ধর্ষণ করে। বিষয়টি তিনি বাহিরে গিয়ে আত্মীয়সজনসহ সকলকে জানাবে বলায় একটি লাঠি দিয়ে বিবস্ত্র অবস্থায় ওই নারীকে বেদম মারধর করে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, চেয়ারম্যান পরিষদে তার কক্ষে বসে প্রায় রাতেই মদ্যপান ও ইয়াবা সেবন করেন। নিজের কক্ষে রাতেও শালিসি বাণিজ্য করেন। এমনকি একই কক্ষে তিনি অসামাজিক কর্মেও লিপ্ত রয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালের দিকে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও চেয়ারম্যানকে পাওয়া যায়নি। অবশ্য এর আগে দুপুরের দিকে চেয়ারম্যান অভিযোগ অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, ওই নারী দুশ্চরিত্রা। এর বেশি কিছু না বলে তিনি অনেকের ফোন কেটে দেন। জানতে চাইলে চরজব্বার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইকবাল হোসেন বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরের পরে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে থানায় ধর্ষণের অভিযোগে এক নারী লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগটি নারী ও শিশু নির্যাতন ধমন আইনে মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ধর্ষণের বিষয়টি মেডিকেল হলে বলা যাবে। তবে ওই নারীর শরীরে বিভিন্ন অংশে আঘাতের বেশকিছু চিহ্ন রয়েছে বলে নিশ্চিত করেন পুলিশের এ কর্মকর্তা।
প্রসঙ্গত: এর আগে গত বছরের আগস্ট মাসে এক স্কুল ছাত্রীকে বাড়ি থেকে ডেকে এনে রাতে পরিষদে আটক করে নির্যাতনের অভিযোগে আদালতে মামলা চলছে। স্কুল ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জেলা শহরসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ ও আন্দোলন হলে বেশ কিছুদিন চেয়ারম্যান গাঢাকা দেয়। সম্প্রতি একই পরিষদের সাবেক এক নারী সদস্যকে বেদম মারধর করে। ওই ঘটনায়ও থানায় মামলা হয়। পরবর্তীতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করা হয়। কয়েকদিন পূর্বে এক ইলিশ মাছ ব্যবসায়ীকে রাতভর পরিষদে আটক রাখে। এক পর্যায়ে জেলা পুলিশসহ বিভিন্ন মহলের চাপে তাকে ছেড়ে দেয়। এভাবে চেয়ারম্যান বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটিছে। তবে শুধুমাত্র ক্ষমতাশীন দলের ছত্রছায়ায় থাকার কারণে তার বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা হচ্ছে না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। এছাড়া দীর্ঘ কয়েক বছর পর্যন্ত অবৈধভাবে খাল থেকে বালি উত্তোলনের ঘটনাকে কেন্দ্র করেও তিনি সমালোচিত হয়েছেন। গত মাসে বালি উত্তোলনের বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। পরে জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বালি উত্তোলন বন্ধ হয়।

 

 



 

Show all comments
  • S. Anwar ৬ অক্টোবর, ২০১৭, ৭:১১ এএম says : 0
    দেখতে হবেনা কোন্ দলের চেয়ারম্যান.!! একেতো বিনা ভোটের অপ্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান। দেশটাতো তাদেরই খরিদকৃত। আর আমরা জন-সাধারণেরা তাদের রাজ্যে আশ্রিত রোহিঙ্গা। সর্বপ্রকার গর্হিত কাজ একমাত্র BAL এর লোক ছাড়া আর কে করার ক্ষমতা রাখে.???
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নোয়াখালী

১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
৫ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ