Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উদ্বোধনের অপেক্ষায় মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার

নূরুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ৫ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নির্মাণ কাজ শেষ। প্রস্তুত মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার। চলতি মাসেই সম্পূর্ণভাবে চালু হচ্ছে বহুল আকাঙ্খিত এই ফ্লাইওভার। তিন অংশে বিভক্ত এ ফ্লাইওভারের রমনা থেকে তেজগাঁও থেকে সাতরাস্তা পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এবং ইস্কাটন থেকে ওয়্যারলেস পর্যন্ত এক কিলোমিটার অংশ আগেই খুলে দেওয়া হয়েছিল। রং, বিদ্যুতের খুঁটি ও বাতি লাগানোসহ বাকি অংশের কাজ শেষ। চলছে ধোয়া মোছার কাজ। এলজিইডি’র তত্ত¡াবধানে নির্মিত ৮ দশমিক ২৫ কিলোমিটারের এই ফ্লাইওভার চালু হলে রাজধানীর সাতরাস্তা, এফডিসি, মগবাজার, মৌচাক, শান্তিনগর, মালিবাগ ও মগবাজার রেলক্রসিং এলাকায় নির্বিঘেœ যানবাহন চলাচল করতে পারবে। এর ফলে রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে এবং এসব এলাকায় যানজট নিয়ন্ত্রণে আসবে। এ প্রসঙ্গে এলজিইডি’র প্রধান প্রকৌশলী শ্যামা প্রসাদ অধিকারী বলেন, ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ শেষ। এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিলেই উদ্বোধনের তারিখ ঠিক করা হবে। ফ্লাইওভারের প্রকল্প পরিচালক সুশান্ত কুমার পাল বলেন, ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ শেষে কিছু পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে। নীচের রাস্তাগুলোও সংস্কার করা হচ্ছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, ঢাকা আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট ১৯৯৯ সালে যান চলাচল ব্যবস্থা নিয়ে একটি সমীক্ষা করে। সেই সমীক্ষায় ঢাকা মহানগরীর ২০টি স্থানে ফ্লাইওভার, ইন্টারসেকশন, আন্ডারপাস, বাসস্ট্যান্ড, বাস টার্মিনাল, পার্কিং এরিয়া নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়। পরে ২০০০ সালে ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে যৌথ বিনিয়োগে ফ্লাইওভার নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ করা হয়। তখনই মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ জন্য কুয়েত সরকার দুই লাখ কুয়েতি দিনার অনুদানের প্রতিশ্রæতি দেয়। কিন্তু ২০০৭ সালে কুয়েত সরকার ফ্লাইওভার নির্মাণের পরিবর্তে শিকলবাহায় ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এতে করে ফ্লাইওভারের নির্মাণ প্রকল্পে ভাটা পড়ে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে আবার এ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১১ সালের ৮ মার্চ একনেক সভায় এ প্রকল্প অনুমোদন পায়। ওই বছরই এর নির্মাণ কাজ শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু ২০১০-১১ অর্থবছরের এডিপিতে প্রকল্পটি অন্তর্ভুক্ত ছিল না। পরে তা সংশোধিত এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু সে বছরও কাজ শুরু করতে পারেনি সরকার। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে কাজ শুরু করে সময়সীমা বাড়ানো হয় ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু এই সময়েও কাজ শেষ করতে না পারায় সময়সীমা বাড়িয়ে এ বছরের জুন পর্যন্ত করা হয়। জুনে আবার সময় বাড়ানো হয়। রাজধানীর সবচেয়ে ব্যস্ততম এলাকাজুড়ে নির্মিত এই ফ্লাইওভার নির্মাণে এলজিইডি’র কোনো গাফিলতি ছিল না। তবে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে গাফিলতিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ছিল। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এলজিইডি’র প্রধান প্রকৌশলী শ্যামা প্রসাদ অধিকারী ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজে সার্বক্ষণিক তত্ত¡াবধান করতেন। তাঁর তত্ত¡াবধানের ফসল দেরিতে হলেও আলোর মুখ দেখছে। ফ্লাইওভারটি চালু হলে যানবাহন চলাচরের বাধা যেমন কাটবে, তেমনি যানজটের ভোগান্তিও কমবে। একই সাথে ফ্লাইওভার এলাকার কয়েক লাখ মানুষের দুর্ভোগ ঘুচবে। তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে যারা ঘর থেকে বেরুতে বা ঘরে ফিরতে গিয়ে সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া ফ্লাইওভার নির্মাণের কারনে সংশ্লিষ্ট এলাকার ব্যবসা বাণিজ্যেও ধ্বস নেমেছিল। সেই সব প্রতিষ্ঠান আবার প্রাণ ফিরে পাবে। জমে উঠবে মার্কেট-বিপণী বিতান। মালিবাগ এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী আলিফ হোসেন বলেন, ফ্লাইওভার নির্মাণ শুরুর পর থেকে প্রথম দিকে ধূলা-বালুতে দোকান খোলা যেতো না। এরপর খোঁড়াখুড়িতে পুরো দোকানই বন্ধ রাখতে হয়েছে। দীর্ঘদিন রাস্তা সংস্কার না করায় অনেক দোকান সেই ২/৩ বছর ধরেই বন্ধ। যেগুলো খোলা যেতো সেগুলোতে কোনো কাস্টামার আসতো না। অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন। অনেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নিয়েছেন। তবে ফ্লাইওভার পুরোপুরিভাবে চালু হওয়ার খবরে অনেকের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে জানিয়ে ওই ব্যবসায়ী বলেন, মালিবাগ- মৌচাক এলাকার মার্কেটগুলো আবার জমে উঠবে। যানজট না থাকলে এই এলাকা আবার গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। এজন্য তিনি ফ্লাইওভারের নীচের রাস্তা সংস্কারের দাবি জানান। এ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক সুশান্ত কুমার পাল বলেন, ফ্লাইওভারের নীচে মৌচাক থেকে মালিবাগের রাস্তা ও ফুটপাত নির্মাণ করবে সিটি কর্পোরেশন। আবার কিছু অংশে রাস্তা করবে এলজিইডি ফুটপাত করবে ডিসিসি। উদ্বোধনের আগেই সব রাস্তার কাজ শেষ হবে বলে জানান তিনি।
স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে ফ্লাইওভারের উদ্বোধনের তারিখ ১৫ অক্টোবর নির্ধারণ করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে এ বিষয়ে সম্মতি দিলেই উদ্বোধনের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হবে। বহুল প্রত্যাশিত হওয়ায় উদ্বোধনের সময় ফ্লাইওভারের উপরে-নীচে আলোকসজ্জাও করা হবে।
এদিকে, গতকাল বুধবার ফ্লাইওভার প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার খবরে অনেকেই আসছেন বিশাল এই ফ্লাইওভার দেখতে। আশপাশের বাসা বাড়ীর ছাদে উৎসুক মানুষের ভিড় লেগেই আছে। যদিও চার লেনের ফ্লাইওভারটি এক স্থান থেকে পুরোপুরি দেখা সম্ভব নয়। বিশাল এই ফ্লাইওভার ছয়টি মোড় অতিক্রম করেছে। এগুলো হলো সাতরাস্তা, বিএফডিসি, মগবাজার, মৌচাক, শান্তিনগর ও মালিবাগ মোড়। এর মধ্যে মগবাজার, মালিবাগ ও কারওয়ান বাজারে রেললাইন অতিক্রম করেছে এই ফ্লাইওভার। তিন ভাগে বিভক্ত এই ফ্লাইওভারের একটি অংশ সাতরাস্তা-মগবাজার-হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল। এটি নির্মাণ করেছে নাভানা কনস্ট্রাকশন। গত বছরের মার্চ মাসে এ অংশ যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। একই বছর ১৫ সেপ্টেম্বর নিউ ইস্কাটন থেকে মৌচাক পর্যন্ত এক দিকের অংশ খুলে দেয়া হয়। এই অংশ নির্মাণ করেছে তমা কনস্ট্রাকশন। তৃতীয় অংশ এফডিসি মোড় থেকে কারওয়ান বাজার অংশ যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয় চলতি বছরের ১৭ মে। এই অংশও তৈরি করেছে নাভানা কনস্ট্রাকশন। সর্বশেষ মৌচাক-মালিবাগ-শান্তিনগর-রাজারবাগ-মগবাজার অংশ খুলে দেয়ার মাধ্যমে পুরো ফ্লাইওভারটি চালু হয়ে যাবে। শেষাংশ নির্মাণ করেছে তমা কনস্ট্রাকশন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, প্রথমে এই প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। পরে নকশায় পরিবর্তন আনা হয়। শেষ পর্যন্ত ব্যয় বাড়তে বাড়তে ১ হাজার ২১৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকায় গিয়ে ঠেকে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার অর্থায়ন করেছে ৪৪২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ৭৭৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা দিয়েছে সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ওএফআইডি)। দেশে এখন পর্যন্ত যে কটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে, তার মধ্যে মৌচাক-মালিবাগ ফ্লাইওভারটি দৈর্ঘ্যে দ্বিতীয়। প্রথম স্থানে আছে ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ীর মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: উদ্বোধন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ