পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন, নিপীড়নের ছবি দেখলে চোখের পানি আটকে রাখতে গোটা বিশ্বকে জানানোর চেষ্টা করেন। তবে প্রবাসে থাকলেও জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত তিনি।
স্নিকার, জিনস, শার্ট এবং জ্যাকেটের সঙ্গে ফ্যাশনেবল চশমাও পরেন তিনি। ফ্রাঙ্কফুর্টের ট্রেন স্টেশনে আরো হাজারো মানুষ থেকে তাঁকে আলাদা করা মুশকিল। জার্মানির অন্যতম ব্যস্ত এই শহরে বসবাসরত অসংখ্য চাকুরিজীবীর ভিড়ে তিনিও হারিয়ে যেতে পারেন অনায়াসে। রোহিঙ্গা বøগার নেয় স্যান লুইনকে সাদা চোখে দেখলে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে তাঁর কোন মিল খুঁজে পাবেন না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে তিনি তাদেরই একজন।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ১৯৭৮ সালে জন্ম নেয়া লুইন›এর ছোটবেলা কেটেছে ইয়াঙ্গুনে। যে সময় তাঁর জন্ম, তখন মিয়ানমার সরকার অনেক রোহিঙ্গাকে নিজের দেশের মানুষ মনে করতো। নেয় সেই দলের একজন। মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে সেদেশের পাসপোর্ট ছিল তাঁর। সুযোগ পেয়েছেন উচ্চশিক্ষা গ্রহণের। তবে ১৯৮২ সালের পর থেকে তাঁর স্বজাতির প্রতি যে বৈষম্য করা হচ্ছে সেটাও উপলব্ধি করেছেন তিনি।
মিয়ানমারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের বসবাস কয়েক শতক ধরে, যদিও সেদেশের সরকার সেটা মানতে রাজি নয়। বৌদ্ধপ্রধান দেশটিতে তাই রোহিঙ্গারা রাষ্ট্রহীন, বাঙালি অভিবাসী হিসেবে বিবেচিত। অথচ ১৯৮২ সালের আগ পর্যন্ত পরিস্থিতি এখনকার মতো ছিল না। লুইন এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘১৯৮২ সালে মিয়ানমার যে নাগরিকত্ব আইন অনুমোদন করে সেখানে নয়টি সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের অস্তিত্ব অস্বীকার করা হয়। সেই স¤প্রদায়গুলোর একটি রোহিঙ্গা। ‹›
ষোল বছর ধরে নির্বাসনে
ইয়াঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয়ে তথ্যপ্রযুক্তি পড়ার সময় থেকেই রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হন লুইন। লেখাপড়া শেষে ২০০১ সালে সেদেশের পাসপোর্ট নিয়েই চাকুরি করতে চলে যান সৌদি আরবে। সেখানে একটি নির্মাণ সংস্থায় ম্যানেজার হিসেবে চাকুরি নেন। পাশাপাশি মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের দাবিতে ইন্টারনেটে লেখালেখিও চালিয়ে যান। এক্ষেত্রে তাঁকে সহায়তা করেছেন তার বাবা। ২০০৫ সালে তিনি চালু করেন রোহিঙ্গাবøগার ডটকম নামের একটি বøগসাইট। রোহিঙ্গাদের উপর মিয়ানমার সরকারের দমনপীড়ন এবং সিস্টেমেটিক নির্যাতনের কথা প্রকাশ করা হয় এই বøগসাইটে। এটি এখন বছরে এক কোটিবারের মতো পড়া হয়।
নেয় স্যান লুইনের বøগার জীবন মিয়ানমারের সরকারের চোখে পড়তে বেশি সময় লাগেনি। ২০০৯ সালে নিজের পাসপোর্ট নবায়ন করতে গিয়ে টের পান, সেদেশের সরকার তাঁর পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করেছে। ফলে অন্যান্য রোহিঙ্গাদের মতো লুইনও পরিণত হন রাষ্ট্রহীন এক মানুষে। এমন অবস্থায় সউদী আরবে বসবাস দুরূহ হয়ে পড়ে তার জন্য। ফলে ২০১১ সালে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন জার্মানিতে।
একটি বøগ, একটি দায়িত্ব
‘একশো’র বেশি বøগারের একটি নেটওয়ার্ক পরিচালনা করি আমি। তারা মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপর হামলার খবর পেলে তা সঙ্গে সঙ্গে যাচাই করেন এবং ছবি, ভিডিও সংগ্রহ করে আমার কাছে পাঠান। এরপর আমি তা ইন্টারেনেট প্রকাশ করি,’ -বলেন লুইন। তার এ নেটওয়ার্কের অনেক সদস্যই বাস করেন মিয়ানমারে, বিশেষ করে রাখাইনে, যেখানে রোহিঙ্গাদের উপর সেদেশের সেনাবাহিনীর সর্বশেষ অভিযান চলছে। এই অভিযান থেকে বাঁচতে প্রায় পাঁচলাখের মতো রোহিঙ্গা গত কয়েক সপ্তাহে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।
বাংলাদেশগামী শরণার্থীদের ছবি দেখলে চোখের জল আটকে রাখতে পারেন না লুইন। তিনি বলেন, ‘রাখাইনে ছোট ছোট শিশুদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে বা জবাই করা হয়েছে, এমন রিপোর্টও প্রকাশ হয়েছে। এমন পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে এক কাপড়েই বাংলাদেশের দিকে ছুটছেন আমার স্বজাতিরা। তারা আশা করেন, সেদেশে বেঁচে থাকতে পারবেন। কিন্তু তাদের ভবিষ্যত কেউ জানে না’।
রোহিঙ্গাদের এই করুণ দশা সত্তে¡ও মিয়ানমারের শান্তির প্রতীক অং সান সু চি›র নীরবতা লুইনকে কষ্ট দেয়। সু চি›র ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা সম্পর্কেও তিনি সচেতন। তা সত্তে¡ও একটি দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে যেটুকু ক্ষমতা সু চি’র প্রয়োগের সুযোগ রয়েছে তাও তিনি রোহিঙ্গাদের বাঁচাতে করছেন না বলে মনে করেন লুইন।
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযান আন্তর্জাতিক সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। জার্মানিসহ নানা দেশে এই ঘটনার প্রতিবাদ হচ্ছে দেখে সন্তুষ্ট লুইন। তিনি মনে করেন, শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক স্তর থেকে চাপ দেয়ার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে পুনর্বাসন সম্ভব হতে পারে। তাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব না দেয়া পর্যন্ত এই সংকটের সমাধান হবে না বলে মনে করেন নির্বাসিত এই বøগার। প্রশ্ন হচ্ছে, মিয়ানমার সরকার আদৌ কি তা করবে? সূত্র : ডয়েচে ভেলে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।