Inqilab Logo

রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

আফগানিস্তানের সঙ্গিন শহরে বিমান হামলা চালিয়ে ১৯ শিশুকে হত্যা করেছে যুক্তরাষ্ট্র

দি ডেইলি বিস্ট | প্রকাশের সময় : ৩ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

হামিদ গুল তার পরিবারের নিরাপত্তা চেয়েছিল।
১৮ বছর বয়সী দোকানি হামিদের বাস লশকরগাহে যা আফগানিস্তানের সবচেয়ে বেশি লড়াই হয় যে প্রদেশে সেই হেলমন্দের রাজধানী। ২০১৩ সালে উন্নয়নকৃত বিস্ফোরক বোমায় (আইইডি) তারা পিতা নিহত হন। তারপর হামিদ ও তার বড় ভাই মিরওয়াইস মা ও ছোট ভাইবোনদের প্রতিপালনের দায়িত্ব নেয়। ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের নিরাপত্তার দায়িত্ব প্রধানত কাবুল সরকারের উপর ছেড়ে দেয়ার পর লশকরগাহ তালিবান হামলার কারণে ভীষণ সহিংসতার কেন্দ্রে পরিণত হয়। খুব বেশি দিন নয়, উত্তর হেলমন্দের জেলাগুলোর পতন শুরু হয়, লশকরগাহের অবস্থা শোচনীয় হয়ে ওঠে।
২০১৬ সালে হামিদ তার মা ও ভাইবোনদের সঙ্গিন জেলায় তাদের পারিবারিক বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। এ বছরের গোড়ার দিকে বিদ্রোহীরা জেলার প্রায় সবটাই দখল করে নেয় যার অর্থ হামিদের পারিবারিক বাড়ি ছিল তালিবান নিয়ন্ত্রিত এলাকায়। হামিদ সংসার খরচের অর্থ আয়ের জন্য লশকরগাহে থাকছিল, অন্যদিকে মিরওয়াইস শহরের কলেজে পড়ছিল।
২০১৭ সালের শুরু থেকে তালিবান সঙ্গিন শহরের জেলা কেন্দ্র কম্পাউন্ড দখলের জন্য চেষ্টা করছিল। সেখানে রয়েছে স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রশাসন কর্মকর্তাদের বাসস্থান। হামিদের বাড়ি থেকে জেলা কেন্দ্রের দূরত্ব ছিল কয়েক মাইল। শুধু এ কম্পাউন্ডটি ছাড়া গোটা জেলাই তালিবান দখলে। যুক্তরাষ্ট্র গত কয়েক বছর ধরে সঙ্গিনকে তালিবানদের হাতে পড়তে না দেয়ার লড়াইয়ে নিজেদের ৭০ জন সৈন্য হারায়।
হামিদ মনে করেছিল , তালিবান অবস্থানের পিছনে তার বাড়ির অবস্থান হওয়ায় পরিবারের সবাই নিরাপদ। কিন্তু ২০১৭ সালের ১০ ফেব্রæয়ারিতে এক প্রতিবেশির ফোনে সে জানতে পারে তাদের বাড়িটি মাটির সাথে মিশে গেছে। না, কেউই বেঁচে নেই তার। সে রাতে হামিদ গুল তার ৫০ বছর বয়স্কা মা বিবি বখতওয়ারা, ৬ ভাই ও এক বোনকে হারায়। এ ৭টি ছেলেমেয়ের সবারই বয়স ছিল ১৬ বছরের নীচে। বিবি রহমানিয়া নামে ২ বছরের এক ভ্রাতুষ্পুত্রীও মারা যায় তার। মার্কিনিদের ৩ দফা হামলার শেষে মোট ৫ মহিলা ও ১৯টি শিশুসহ ২৬ জন নিহত হয়। সে রাতে হামিদের বাড়িতে হামলার কয়েক ঘন্টা পর কয়েক মাইল দূরে আরেকটি বাড়িতে হামলা ঘটে। পরের রাতে আরেক বাড়িতে।
আজও জানা যায় নি, এ তিনটি বাড়িতে কি হয়েছিল ও কেন হামলা করা হল। যা পরিষ্কার তা হল ফেব্রæয়ারির তিন দফা হামলায় নিহত ২৬ জনের মধ্যে ২৪ জনই ছিল নারী ও শিশু। ব্যুরোর সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে ঘটনা তদন্ত করা হয়। তাদের প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় কর্মকর্তারা বলেন, মার্কিন হামলায় বাড়িগুলো ধ্বংস হয়েছে ও সবাই নিহত হয়েছে। ২০১৭ সালের জুলাইতে প্রকাশিত জাতিসংঘ রিপোর্টেও সে কথাই বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, ঐ সময় ঐ এলাকায় কোনো যুদ্ধ চলার কথা জানা যায়নি। তার অর্থ এ হামলা ছিল পরিকল্পিত।
আফগানিস্তানে ন্যাটো মিশনের রেজোলিউট সাপোর্ট-এর এক মুখপাত্র ব্যুরোকে বলেন, ন্যাটোর পক্ষ থেকে ৪টি তদন্তের পর সংস্থা বেসামরিক লোকদের হত্যার দায়িত্ব স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটিই করতে পারছে না যদিও তিনি সেখানে কোনো লড়াই না চলার জাতিসংঘের দাবির তীব্র বিরোধিতা করেন।
এই ৪ জন নারী ও শিশুকে হত্যার ঘটনায় কারো দায় স্বীকার না করা আমেরিকার সবচেয়ে দীর্ঘযুদ্ধে জবাবদিহিতার অভাবের কথা বলে।
আফগানিস্তানে সৈন্য বৃদ্ধি
২০১১ সালে আফগানিস্তানে মার্কিন সৈন্য সংখ্যা দাঁড়ায় ১ লাখ। ২০১৫ সালে তা কমিয়ে ৯ হাজার ৮শ’ করা হয়। সে সাথে ন্যাটো ও অ-ন্যাটো মিত্রের সৈন্য ছিল আরো ৬ হাজার ৩শ’। এ পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র ও অংশীদাররা তালিবানের সাথে লড়াই বন্ধ করে দেয়। এ দায়িত্ব মূলত বর্তায় আফগান সেনাবাহিনীর উপর। রেজোলিউট সাপোর্ট সৈন্যরা আফগান সৈন্যদের প্রশিক্ষণ ও নন কমব্যাট ভূমিকা বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করে।
যুক্তরাষ্ট্রকে তালিবানদের সাথে মুখোমুখি লড়াই করতে অনুমতি দেয়া হয়নি। বিদ্রোহীরা রেজোলিউট সাপোর্ট সৈন্যদের প্রতি হুমকি সৃষ্টি করলে তখনি শুধু তাদের উপর হামলা চালানো যাবে বলা হয়। তারা তখনি শুধু আফগান সৈন্যদের বিমান সমর্থন দিত যখন তারা বিপর্যয়ের সম্মুখীন হত। ২০১৬ সালের জুন নাগাদ আফগান ন্যাশনাল সিকিউরিটি ফোর্স (এএনএসএফ) তালিবানদের ঠেকাতে লড়াই করছিল। হোয়াইট হাউস ২০১৭ সালে আফগানিস্তানে মার্কিন সৈন্য হ্রাস করে ৮ হাজার ৪শ’ করার ঘোষণা দেয়া সত্তে¡ও আঘাতের সুযোগ বৃদ্ধি করার জন্য মার্কিন সামরিক বাহিনীকে অনুমতি দেয়। নতুন লক্ষ্য নির্ধারিত আইনে বলা হল যে তালিবান ও অন্যান্য বিদ্রোহী গ্রæপের বিরুদ্ধে মার্কিন সৈন্যরা কাবুলের সৈন্য ও পুলিশদের সাহায্য করতে হামলা চালাতে পারবে ।
দুর্বল আফগান গোয়েন্দা বিশ্লেষণের কারণে আফগানিস্তানে হামলার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়েছে। এ বছর প্রথম ছয় মাসে ২০১৫ ও ২০১৬ সালের মিলিত হামলার চেয়েও বেশি হামলা হয়েছে। কিন্তু স্থল সৈন্যের সংখ্যা কম হওয়ায় গোয়েন্দা তথ্য কম সংগৃহীত হয়েছে। পেন্টাগনের রিপোর্টে বলা হয়, আফগান সৈন্যরা যখন স্থলে বেশির ভাগ লড়াই করছে , বিশেষ করে আফগান কমান্ডো সৈন্যরা তখন মার্কিন বিশেষ বাহিনীর উপদেষ্টাদের সাথে সহযোগিতা করে চলেছে।
সম্প্রতি জানা যায়, ওয়াশিংটনের নির্ধারিত সংখ্যা না ভেঙ্গে মার্কিন জেনারেলরা তাদের কাজ-কর্ম চালানোর মত উপযুক্ত সৈন্য রেখেই কর্তৃপক্ষকে হিসাব দিয়েছেন। তারা ১২০ দিনের সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য মোতায়েন সৈন্যদের হিসাব অন্তর্ভুক্ত করতেন না। এভাবে তারা অতিরিক্ত সাড়ে তিন হাজার সৈন্য রাখতেন। (অসমাপ্ত)



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যুক্তরাষ্ট্র


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ