Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাণীনগরে জনপ্রিয় হচ্ছে লাইভ পার্চিং

| প্রকাশের সময় : ১ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নওগাঁ জেলা সংবাদদাতা : নওগাঁর রাণীনগরে দিন দিন লাইভ পার্চিংয়ের ব্যবহার বাড়ছে। ধীরে ধীরে ফসলের মাঠে কৃষকদের মাঝে এই লাইভ পার্চিংয়ের আগ্রহ বাড়ছে। লাইভ পার্চিং ব্যবহার করায় কমছে রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার অপরদিকে রক্ষা পাচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। লাইভ পার্চিংয়ের পাশাপাশি ডেথ পার্চিংও কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ফসলের জমিতে বিশেষ করে ধানক্ষেতে ক্ষতিকারক পোকা দমনের পাশাপাশি মাটির নাইট্রোজেনের ঘাটতিও পূরণ হচ্ছে। এতে ফসলে কীটনাশক স্প্রের বাড়তি খরচের প্রভাব যেমন পড়ছে না, তেমনি বাড়ছে ফসলের উৎপাদনও।
উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে ফসলের ক্ষেতের মাঝে ধৈঞ্চার বড় বড় গাছ। যে গাছগুলোর উপড় বসে আছে বিভিন্ন ধরনের পাখি। এই পাখিগুলো কিছুক্ষন পর পর জমির ক্ষেতের মধ্যে থাকা ক্ষতিকারক পোকাগুলো ধরে ধরে খেয়ে নিচ্ছে। এতে করে ফসল রক্ষা পাচ্ছে পোকা-মাকড়ের হাত থেকে। আর এই পোকা-মাকড় নিধন করার জন্য কম পরিমাণে ব্যবহার করা হচ্ছে রাসায়নিক দ্রব্য। দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে পরিবেশ।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, খরিপ-১ মৌসুমে উপজেলায় ৬ হাজার ৭শত হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের আবাদ করা হচ্ছে। এই জমিগুলোতে আফ্রিকান ধৈঞ্চা দিয়ে লাইভ পার্চিং করা হয়। এই পার্চিং পরিবেশ বান্ধব জৈব প্রযুক্তি। এই ধৈঞ্চা গাছে পাখি বসে ক্ষেতের মাজরা পোকাসহ অন্যান্য ক্ষতিকারক পোকামাকড় খেয়ে ফেলে ফলে কীটনাশক দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। বিঘা প্রতি ৪-৫টি এবং একর প্রতি ১৩-১৪টি ধৈঞ্চা গাছ লাগিয়ে পোকা-মাকড়ের হাত থেকে রক্ষা করা যায় ধান ক্ষেত। আগের বছরের তুলনায় এ বছর মাঠে এই লাইভ পার্চিং চোখে পড়ার মতো। এ বছর এর ব্যবহার ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সুফল পাওয়ায় উপজেলার কৃষকদের অনেকেই এখন এ ব্যবস্থা বেছে নিয়েছে। আর বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলের মাঠ জুড়ে এখন শুধুই চোখে পড়ছে এই ‘লাইভ পার্চিং’। শুধু পোকা নিধনই নয় লাইভ পার্চিংয়ে ব্যবহৃত ধৈঞ্চা গাছে ও শিকড়ে বড় বড় নভিউল থাকে। যেখানে রাইজোরিয়াম ব্যাকটেরিয়া থাকে যা প্রকৃতির বাতাস থেকে নাইট্রোজেন গ্রহণ করে। আবাদের পর জমি চাষের সময় এই ধৈঞ্চাগুলো জমিতে নাইট্রোজেন সরবরাহ করে সমতা রক্ষা করে। তাই আলাদা করে আর জমিতে আবাদের সময় নাইট্রোজেন সার ব্যবহার করতে হয় না।
উপজেলার শিয়ালা গ্রামের কৃষক মো: শফিকুল ইসলাম রবু জানান, এই মওসুমে তিনি ৫ বিঘা জমিতে আবাদ করেছেন রোপা আমন। তিনি ৫ বিঘা জমিতে ৪০টি ধৈঞ্চা গাছ লাগানোর ফলে পোকামাকড় দমন হচ্ছে। এ ছাড়াও জমিতে যোগ হচ্ছে নাইট্রোজেন। শুরুতে একবার কীটনাশক স্প্রে করার পর আর প্রয়োজন হয়নি। দিতে হচ্ছে না ইউরিয়া সারও। উপজেলার ছয়বাড়িয়া গ্রামের কৃষক মো: শাহিন আলম বলেন, ধৈঞ্চা গাছের ডালে পাখিরা বসে ক্ষেতের ক্ষতিকারক পোকামাকড় খেয়ে ফেলছে। গাছটির পাতা জৈব সার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় ক্ষেতে আর ইউরিয়া ব্যবহার করিনি। এতে করে রক্ষা পাচ্ছে আমাদের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র। কমে আসছে রাসায়নিক সারের ব্যবহার।
উপজেলা কৃষি স¤প্রসারণ কর্মকর্তা সবুজ কুমার সাহা জানান, চলতি রোপা আমন মৌসুমে রাণীনগরে পার্চিং পদ্ধতি দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কৃষকদের মধ্যে। তিনি বলেন, বিশেষ করে আফ্রিকান ধৈঞ্চা গাছ দারুণভাবে উপকার করছে জমির ক্ষেতে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ধৈঞ্চার পুরো গাছে নুডুল রয়েছে। যা বায়ুমন্ডল থেকে নাইট্রোজেন গ্রহণ করে, ফলে জমির উরর্বতা বৃদ্ধি পায়।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ এসএম গোলাম সারওয়ার জানান, কৃষি বিভাগ কৃষকদের এই পদ্ধতি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করছে। বরেন্দ্র ভূমিখ্যাত এ উপজেলার পুরো ক্ষেত আগামীতে ধৈঞ্চা পার্চিং পদ্ধতির আওতায় আনার জন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তদারকি এবং পরামর্শ দেয়া হচ্ছে জানিয়ে এই লাইভ পার্চিং ব্যবহারের ফলে ফসল কাটার পর কৃষক পাচ্ছে, বাড়তি জ্বালানির চাহিদা। সেই সাথে বাড়ছে, ফসলের উৎপাদনও। লাইফ পার্চিং এর ব্যবহার বাড়াতে ও কৃষকদের উদ্ভুদ্ধ করতে কাজ করছে রাণীনগর উপজেলা কৃষি অফিসসহ বিএডিসি। ফলে রাণীনগরে লাইভ পার্চিং এর সাড়া পড়েছে।



 

Show all comments
  • ড. এ কে এম আমিনুল হক ১ অক্টোবর, ২০১৭, ৯:৩৪ এএম says : 0
    পার্চিং পদ্ধতি অবশ্যই ভালো। তবে বিঘাপ্রতি মাত্র ৪-৫ টি ধৈঞ্চা গাছসঞ্জাত নাইট্রোজেন কি এক বিঘার ধানি জমির জন্য যথেষ্ট?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ