পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সেনা অভিযান অবশ্যই বন্ধ করতে হবে -অ্যান্থোনীয় গুতেরেস : মিয়ানমারে সেফ জোন তৈরি করতে হবে -বাংলাদেশ : কোনো গণহত্যাও চালানো হয়নি -নেপিদ ‘সন্ত্রাসীরাই’ গ্রামের পর গ্রাম জ¦ালিয়ে দিচ্ছে -রাশিয়া : অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা রক্ষায় মিয়ানমারকে সমর্থন করি -চীন : সব দেশকে অস্ত্র বিক্রি বন্ধের আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের
চীন ও রাশিয়ার বিরোধিতার কারণে কোনও সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত বা প্রস্তাব ছাড়াই রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের উন্মুক্ত বিতর্ক শেষ হয়েছে। বাংলাদেশে সময় বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে নিরাপত্তা পরিষদের এই উন্মুক্ত বিতর্ক শুরু হয়। বিতর্কে অংশ নিয়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী দুই সদস্যদেশ চীন ও রাশিয়া।
সা¤প্রতিক সহিংসতার জন্য দেশ দু’টি কথিত ‘রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী’দের দায়ী করে। তবে আমেরিকা ও ব্রিটেনসহ বেশিরভাগ সদস্য দেশ রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর চলমান নির্যাতন বন্ধের দাবি জানিয়েছে। তারা দেশ ছেড়ে আসা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়ারও দাবি জানান।
বিতর্কের শুরুতে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা সমস্যার সর্বশেষ চিত্র তুলে ধরেন। তিনি অবিলম্বে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধের জন্য মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহŸান জানান। উন্মুক্ত বিতর্কে মিয়ানমারও অংশ নেয়। দেশটি সা¤প্রতিক সময়ে নিজের অবস্থানে অটল থেকে জাতিগত নিধনের অভিযোগ অস্বীকার করে। বাংলাদেশও রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে। রোহিঙ্গাদের ওপর ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের চিত্র সদস্য দেশগুলোর সামনে তুলে ধরে।
রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধানে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের উন্মুক্ত আলোচনায় মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস বলেন, সেনাবাহিনীর অভিযান অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। সংঘাতপূর্ণ এ অঞ্চলে মানবাধিকার কর্মী প্রবেশ নিশ্চিত করারও আহŸান জানান। তিনি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সঙ্কটকে একটি মানবিক দুঃস্বপ্ন হিসেবে বর্ণনা করেন। গুতেরেস নিরাপত্তা পরিষদের উন্মুক্ত অধিবেশনে গত বৃহস্পতিবার বলেন, জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো নির্যাতন, ধর্ষণ, ব্যাপক সহিংসতা এবং ধারাবাহিকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের হৃদয়বিদারক বর্ণনা পেয়েছে। তিনি আরো বলেন, এটা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এটা অবশ্যই দ্রæত বন্ধ করতে হবে। জাতিসংঘ মহাসচিব রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংসতাকে হিউম্যানিটারিয়ান নাইটমেয়ার বা মানবতার বিকট আতঙ্ক হিসেবে অভিহিত করেছেন। সতর্কবার্তা দিয়েছেন এই অভিযান বন্ধ না হলে সহিংসতা আরো ছড়িয়ে পড়বে। আরো বেশি রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হবে। তিনি বলেন, রাখাইন থেকে শিশু, নারী, পুরুষ, বয়স্ক মানুষ এরই মধ্যে পালিয়ে এসেছেন বাংলাদেশে। তারা সেখানে সংঘটিত অপরাধের যে বর্ণনা দিয়েছেন তাতে গা-শিউরে ওঠে। তাদের দেয়া সাক্ষ্যে প্রমাণ করে সেখানে মানবাধিকারের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত সহিংসতা, শক্তি প্রয়োগ ও আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বৈষম্যহীনভাবে অস্ত্রের ব্যবহার। সাধারণ মানুসের বিরুদ্ধে স্থলবোমার ব্যবহার করা হয়েছে। যৌন সন্ত্রাস চালানো হয়েছে। সুইডেন, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, মিশর, সেনেগাল ও কাজাখস্তানের আহŸানে শুরু হয় নিরাপত্তা পরিষদের এ বৈঠক।
ওদিকে মিয়ানমারের কাছে সব দেশকে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করার আহŸান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে জাতি নিধনে যেসব নেতা, বিশেষ করে সামরিক নেতা জড়িত তাদের শাস্তিও দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি নিরাপত্তা পরিষদের ওই অধিবেশনে এসব দাবি উত্থাপন করেন। এই প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের রাখাইনে মুসলিম রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে চলমান সহিংসতাকে ‘জাতিগত নিধন’ বলে অভিহিত করলো। পাশাপাশি শাস্তি দাবি করলো সেনা কর্মকর্তাদের। নিকি হ্যালি বলেন, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ নৃশংসতা চালাচ্ছে। তারা জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নিধন অভিযান চালাচ্ছে। এ অবস্থায় মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহŸান জানাতে আমাদের ভীত হওয়া চলবে না। তবে রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা ও ব্যাপক সংখ্যক মানুষের বাংলাদেশে চলে যাওয়ার কারণে মিয়ানমার সরকারের ওপর অতিরিক্ত চাপ দেয়া হলে তাতে মিয়ানমার ও এর আশপাশের পরিস্থিতিকে আরো উত্তেজিত করবে বলে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেজিয়া। এক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত এই সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক উপায় ও আলোচনার কোনো বিকল্প নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন। বলেন, আলোচনা হতে হবে মিয়ানমারের সব জাতি ও ধর্মের প্রতিনিধিদের মধ্যে। একই সঙ্গে তিনি সব পক্ষের তরফ থেকে সহিংসতা বন্ধের ওপর গুরুত্ব দেন। এ সময় তিনি মিয়ানমার সরকারের সুরে সুর মিলান। বলেন, রাশিয়া যেসব তথ্য পাচ্ছে তাতে দেখা যাচ্ছে, রোহিঙ্গা উগ্রপন্থীরা সীমান্ত এলাকার গ্রামগুলো থেকে হিন্দু স¤প্রদায়ের মানুষদের পালিয়ে বাংলাদেশে যেতে বাধ্য করছে। তিনি মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলেন, ‘সন্ত্রাসীরাই’ গ্রামের পর গ্রাম জ¦ালিয়ে দিচ্ছে। ওদিকে জাতিসংঘে নিযুক্ত চীনের উপ রাষ্ট্রদূত উয়াউ হাইতাও মিয়ানমারের সা¤প্রতিক সহিংসতার নিন্দা জানান। তিনি বলেন, যেসব রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে বাংলাদেশে চলে গিয়েছেন তাদের সমস্যা দ্রæততম সময়ে সমাধান হওয়ার মতো নয়। এ সময় তিনি মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন। বলেন, অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা রক্ষায় মিয়ানমার সরকারকে সমর্থন করে চীন। তাই তিনি বলেন, এই সঙ্কট সমাধানে সব পক্ষকেই গঠনমূলকভাবে কাজ করতে হবে, উত্তেজনা নিরসন করতে হবে, ধাপে ধাপে মানবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে হবে। তিনি আশা করেন, শিগগিরই সেখানে শৃংখলা ফিরবে। সাধারণ মানুষের ওপর আর সম্ভবত কোনো ক্ষতিকর কোনো কিছু ঘটবে না। সমাজে ফিরবে স্থিতিশীলতা।
অন্যদিকে রাখাইন সহিংসতায় নিজেদের দায় বেমালুম এড়িয়ে গেছেন মিয়ানমারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ইউ থাউং তুন। তিনি নিরাপত্তা পরিষদে বলেছেন, রাখাইন সঙ্কট ধর্মের ভিত্তিতে নয়। এ সঙ্কটের মূলে রয়েছে সন্ত্রাস। তাই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ তার দেশের বিরুদ্ধে যেন কোনো পদক্ষেপ না নেয় এমন আহŸান জানান তিনি। তিনি আবারও বলেন, জাতিগত নিধন হয়নি মিয়ানমারে। কোনো গণহত্যাও চালানো হয়নি। তিনি দাবি করেন, বর্তমান সঙ্কটের জন্য দায়ী রোহিঙ্গা মুসলিম উগ্রপন্থীরা। তাদের সহিংসতার জন্যই মানুষ পালিয়ে বাংলাদেশে যেতে বাধ্য হয়েছে।
জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, মিয়ানমার সরকার অভিযান বন্ধের কথা বললেও এখনও রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ হয়নি। এর ফলে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন কমপক্ষে ৫ লাখ রোহিঙ্গা। সব মিলিয়ে বিশে^র সবচেয়ে নির্যাতিত এই জনগোষ্ঠীর কমপক্ষে ৯ লাখ সদস্য এখন বাংলাদেশে। তিনি এই পরিস্থিতিকে সমর্থন অযোগ্য বলে আখ্যায়িত করেন। আবারও জাতিসংঘের কাছে আহŸান জানান মিয়ানমারের ভিতরে একটি সেফ জোন সৃষ্টি করতে। মাসুদ বিন মোমেন বলেন, শরণার্থীরা বলছেন তাদের কীভাবে গণধর্ষণ করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদেরকে মিয়ানমার ছাড়া করতে ধর্ষণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে মিয়ানমার। পাশাপাশি গ্রাম জ¦ালিয়ে দিচ্ছে। লোকজনের সব কিছু কেড়ে নেয়া হচ্ছে। তাদেরকে নির্যাতন করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, এইসব নৃশংসতা প্রমাণ করে যে, মিয়ানমার সরকার রাখাইনকে জনশূন্য করে দেয়ার জন্য অস্ত্র হিসেবে অগ্নিসংযোগ ব্যবহার করছে। ওদিকে নিকি হ্যালি জাতি নিধনের এই খেলায় জড়িত নেতাদের অবিলম্বে তাদের কমান্ডের দায়িত্ব থেকে অবিলম্বে অব্যাহতি দাবি করে এই অপরাধের জন্য বিচার দাবি করেছেন। জাতিসংঘের একটি প্যানেল যে এলাকায় রোহিঙ্গাদের নিধন করা হয়েছে বা হচ্ছে সেখানে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু মিয়ানমার সরকার সেই অনুমতি দেয়নি। এরই প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে এমন ঝাঁঝালো প্রতিক্রিয়া এলো। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী কমপক্ষে ৫ লাখ এক হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে নির্বিচারে চলছে গণধর্ষণ, গণহত্যা, গ্রামের পর গ্রাম জ¦ালিয়ে দেয়া হচ্ছে। ওদিকে বৃহস্পতিবার শতাধিক রোহিঙ্গা বোঝাই করে বাংলাদেশের উদ্দেশে যাত্রা করার পর একটি নৌকা বঙ্গোপসাগরে ডুবে গেছে। এতে কমপক্ষে ২৭ জন মারা গেছে। এর মধ্যে ১১টি শিশু রয়েছে। আরো ৪০ জনের মতো নিখোঁজ থাকায় মৃতের সংখ্যা ৬০ ছাড়াতে পারে।
মিয়ানমারে জাতিসংঘের কর্মকর্তাই কি রোহিঙ্গা নিপীড়নকে ধামাচাপা দিচ্ছেন?
মিয়ানমারে নিয়োজিত জাতিসংঘের কর্মকর্তারা সেদেশে রোহিঙ্গা নিপীড়নের ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। খোদ জাতিসংঘের অভ্যন্তরীণ সূত্র ও মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংগঠনগুলোর বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে সেই অভিযোগ সামনে উঠে এসেছে। প্রশ্ন উঠেছে- জাতিসংঘের ব্যর্থতার কারণেই কি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষের আজ এই পরিণতি? অবশ্য, জাতিসংঘের মিয়ানমার কার্যালয় বিবিসিতে প্রকাশিত সেই অভিযোগ ‘দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান’ করেছে।
বিবিসির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের জাতিসংঘ কার্যালয়ের প্রধান রেনেটা লক ডেসালিয়েন চাননি মানবাধিকার সংগঠনগুলো সঙ্কটপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করুক। স্পর্শকাতর রোহিঙ্গা এলাকায় মানবাধিকার কর্মীদের প্রবেশ প্রতিহত করেছেন তিনি।
বিবিসির জোনাহ ফিশারের তৈরি করা ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারে স¤প্রতি রোহিঙ্গাদের ওপর দমন-পীড়নের শুরু থেকেই এর বিরুদ্ধে সরব রয়েছে জাতিসংঘ। রোহিঙ্গাদের জন্য সংস্থাটি সহায়তা পাঠিয়েছে, কঠোরভাবে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের নিন্দা জানিয়েছে। তবে জাতিসংঘের অভ্যন্তরীণ সূত্র এবং মিয়ানমারের ভেতরের ও বাইরের মানবাধিকারকর্মীদের দাবি, বর্তমান সঙ্কট শুরু হওয়ার চার বছর আগে থেকেই কানাডীয় নাগরিক রেনেটা লক ডেসালিয়েন বিভিন্নভাবে রোহিঙ্গা এলাকা পরিদর্শনে বাধা দিয়েছেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে সোচ্চারমূলক প্রচারণা কাজে বাধা দিয়েছেন। তাছাড়া যেসব কর্মকর্তা সতর্ক করতে চেয়েছেন যে, এভাবে চলতে থাকলে জাতিগত নিধন অনিবার্য, তাদেরকেও তিনি বিচ্ছিন্ন করে রেখেছেন। এ ব্যাপারে ডেসালিয়েনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি রাজি হননি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ক্যারোলিন ভ্যান্ডিনাবিলি নামের এক ত্রাণ কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, মিয়ানমারে ভয়াবহ পরিস্থিতি আসন্ন বলে তিনি আগেই টের পেয়েছিলেন। ১৯৯৩ সালের শেষ থেকে ১৯৯৪ সালের শুরুর দিক পর্যন্ত তিনি রুয়ান্ডায় থেকেছেন এবং গণহত্যার নজির দেখেছেন। মিয়ানমারে দায়িত্ব পালন করতে আসার পর দুই দেশের পরিস্থিতির মধ্যে মিল খুঁজে পেয়েছিলেন তিনি।
“কয়েকজন বিদেশি ও বার্মিজ ব্যবসায়ীদের একটি দলের সঙ্গে রাখাইন ও রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কথা বলছিলাম। তখন এক বার্মিজ ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমাদের উচিত ওদেরকে মেরে ফেলা, কারণ ওরা কুকুরের মতো’।’ মানবতার প্রতি এমন অমানবিকতা দেখে আমার মনে একটি আশঙ্কাই তৈরি হলো যে এ সমাজ এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে একে স্বাভাবিক বলে মেনে নিয়েছে।”
বিবিসির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাখাইনে ২০১২ সালের সহিংসতার পর সেখানকার বৌদ্ধরা এতটাই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে যে, কোনও ধরনের ত্রাণ বা মানবিক সহায়তা পৌঁছাতেও বাধা দেয়া হয়। এমনকি ত্রাণবাহী যানবাহনে হামলাও চালানো হয়। আর রোহিঙ্গা ইস্যুতে কথা বললে বৌদ্ধরা ক্ষেপে যাবেন এমন আশঙ্কায় জাতিসংঘের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা এ নিয়ে কথা বলতেন না। এমন অবস্থায় জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক স¤প্রদায় রাখাইনে দীর্ঘমেয়াদি নীতি গ্রহণ করে। তারা মনে করেন, রাখাইনকে যদি সমৃদ্ধি আনা যায় তাহলে সেখানকার রোহিঙ্গা ও বৌদ্ধদের মধ্যে উত্তেজনা কমতে পারে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, জাতিসংঘ এমন অনেক প্রেস রিলিজ দিয়েছে যেখানে রোহিঙ্গাদের মূল সমস্যার কথা উল্লেখই করা হয়নি। আর মিয়ানমার সরকার তো তাদের রোহিঙ্গা কিংবা স্বতন্ত্র গোষ্ঠী হিসেবে স্বীকারই করে না। এর পরিবর্তে সরকার তাদের ‘বাঙালি’ বলে চিহ্নিত করে।
বিবিসির প্রতিবেদক জানান, মিয়ানমারে তিনি দীর্ঘদিন কাজ করেছেন, কিন্তু জাতিসংঘের কোনও প্রতিনিধিকে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে মুখ খুলতে দেখেননি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের অনেক সমস্যার কথাই ফাইলবন্দি করে রাখা হতো।
মিয়ানমারে ত্রাণ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত এমন একাধিক সূত্র বিবিসিকে বলেছেন, দেশটিতে জাতিসংঘের শীর্ষ পর্যায়ের যে বৈঠক হতো সেখানে দেশটির কর্তৃপক্ষের কাছে রোহিঙ্গাদের অধিকার দেওয়ার প্রস্তাব উত্থাপনও একপ্রকার অসম্ভব ছিল। এদিকে বিবিসির প্রতিবেদনে উঠে আসা এইসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের ইয়াঙ্গুন (সাবেক রাজধানী) ভিত্তিক অফিসের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা শক্তভাবে এইসব অভিযোগের বিরোধিতা করছি।’
একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে বিবিসি জানায়, জাতিসংঘ রোহিঙ্গা ইস্যুতে কী ভূমিকা রেখেছে তা জানার জন্য সংস্থাটি একটি তদন্ত শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধের অবসানের পর জাতিসংঘ যে তদন্ত করেছিল এটিও তার চেয়ে বেশি কিছু হবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ওই প্রতিবেদনে সংস্থাটি শ্রীরঙ্কায় নিজেদের ভূমিকাকে ত্রুটিপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করেছিল। সূত্র : বিবিসি, এএফপি ও রয়টার্স।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।