পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
দি আটলান্টিক
সোমবার সউদি নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি প্রদানের ঘোষণা সামাজিক ও রাজনৈতিক অর্থে অসাধারণ ঘটনা। এর অর্থনৈতিক দিকটিও গুরুত্বপূর্ণঃ বর্তমানে প্রধানত দক্ষিণ এশিয়া ও ফিলিপাইনের প্রায় ১০ লাখ পুরুষ সউদি পরিবারগুলোতে গাড়ি চালক হিসেবে নিযুক্ত রয়েছে। এখন তাদের অনেকেরই আর প্রয়োজন হবে না। সম্ভবত সোমবারের ঘোষণা আগাম আঁচ করে গত সপ্তাহে এক সউদি আলেম বলেছিলেন যে মহিলাদের গাড়ি চালানোর উপর নিষেধাজ্ঞা বলবত থাকা উচিত। তার যুক্তি যে মহিলাদের মস্তিষ্কের ক্ষমতা পুরুষের মাত্র অর্ধেক। আর তারা যখন শপিং করতে যায় তখন তা কমে এক চতুর্থাংশে দাঁড়ায়। এর প্রতিক্রিয়া হয় তাৎক্ষণিক। ঐ আলেমের ধর্মপ্রচার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে তার সরকারি চাকুরি এখনো আছে। সউদি সমাজ ঐতিহ্যগত ভাবে মুরব্বিদের শ্রদ্ধা এবং প্রকাশ্যে অন্তত ইসলাম প্রচারকারীদের সম্মান করে। কিন্তু এ সবের পরিবর্তন ঘটতে চলেছে। মহিলাদের গাড়ি চালনার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত দৃশ্যত বাদশাহ সালমানের, কিন্তু এটা স্পষ্ট যে এর পিছনে রয়েছেন তার পুত্র যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। ৩২ বছর বয়স্ক এ ক্ষমতাশালী যুবরাজ তার দেশের অর্থনীতির রূপান্তর ঘটাতে চাইছেন। সউদি অর্থনীতি ও সমাজকে একুশ শতকে নিয়ে আসতে ও তেল নির্ভরতা থেকে সউদি অর্থনীতিকে ব্যাপক শিল্পভিত্তিক করতে তিনি গত বছর তার মহাপরিকল্পনা ভিশন ২০৩০ ঘোষণা করেন। সামাজিক চালচলনের ব্যাপারেও তিনি অনেক কম রক্ষণশীল। এ সপ্তাহে সউদি কর্তৃপক্ষ একটি খেলার স্টেডিয়ামে সউদি আরবের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মহিলাদের যোগদানের অনুমতি দেয়। তার অর্থনৈতিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে রয়েছে ডুবসাঁতারে আগ্রহীদের স্বর্গ লোহিত সাগর উপকূলে পর্যটক অবকাশ কেন্দ্রের উন্নয়ন। এ সব স্থাপনা নির্মিত হবে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী যার অর্থ সেখানে নারী-পুরুষ মিশ্র ¯œানই শুধু নয়, সেখানে বিকিনি পরা ও মদও চলবে।
সউদি আরবে পরিবর্তন কথাটি অত্যন্ত সতর্কতার সাথে ব্যবহার করা হয়। অতীতে সংস্কার শব্দ দিয়ে কোনো অগ্রগতি বোঝানো হত। মহিলাদের গাড়ি চালনার অনুমোদন দিয়ে সুস্পষ্টভাবে এ মাপনদন্ড ভেঙ্ েফেলা হয়েছে , প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে যে এ নয়া নীতি সফল হবে কিনা। বাস্তবে মহিলাদের গাড়ি চালনার উপর নিষেধাজ্ঞা কখনোই শতভাগ বাস্তবায়িত হয়নি। সউদি আরবের পল্লী অঞ্চলে বিভিন্ন গোত্রের মহিলারা তাদের পশু-প্রাণি দেখাশোনা ও খামারের অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করতে কয়েক দশক ধরেই গাড়ি চালিয়ে আসছেন। বিভিন্ন শহরে প্রত্যাবাসন কম্পাউন্ডগুলোতে, যেখানে বহু বিদেশী বাস করেন , সে সব স্থানে মহিলাদের গাড়ি চালনার অনুমতি আছে। তারা নিরাপদ থাকেন এ কারণে যে সউদি পুলিশ ও তাদের চেয়েও কঠোর ধর্মীয় পুলিশের সে কম্পাউন্ডের গেটের মধ্যে ঢোকার অধিকার নেই। সউদি আরবের রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি সউদি আরামকো আমেরিকান তেল কোম্পানির মালিকানাধীন থাকার সময় থেকেই তাদের ক্ষুদে আমেরিকা ধরনের শহর- তলীর অভ্যন্তরে মহিলাদের গাড়ি চালাতে দিয়ে আসছে। এ সাফল্যের কৃতিত্ব যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের , কিন্তু এর ভিত্তি ভালোভাবেই প্রণীত। সাহসী সউদি নারীরা গাড়ি চালাতে না দেয়ার বিরুদ্ধে সংগঠিত প্রতিবাদ হিসেবে ’৯০-এর দশক থেকেই গ্রেফতার বরণ করছেন। ২০০৫ সালে বারবারা ওয়ালটার্স বাদশাহ আবদুল্লাহর সাক্ষাতকার নিলে বিষয়টি আবার আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়। বাদশাহ বলেছিলেন, আমার বিশ^াস, সময়ে এটা সম্ভব হবে। আমি মনে করি ধৈর্য সুফল দেবে। তখন এ ক্ষেত্রে বাধা ছিলেন আবদুল্লাহর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও তার প্রতিদ্ব›দ্বী এখন মৃত প্রিন্স নায়েফ । প্রিন্স নায়েফ অভিযোগ করেছিলেন যে ইহুদিরাই যুক্তরাষ্ট্রে ৯-১১র হামলা ঘটিয়েছে। আবদুল্লাহর মেয়ে প্রিন্সেস আদেলা মহিলাদের গাড়ি চালনা সমর্থন করেন। প্রশ্ন হচ্ছে যে রাজপরিবার এ সিদ্ধান্ত মানবে কিনা। মহিলারা আইনগত ভাবে গাড়ি চালনা শুরু করার আগে কয়েকমাস লেগে যাবে। তাদের প্রথমে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে এবং তারপর গাড়ি চালনার প্রশিক্ষণ নিতে হবে। সম্ভবত তাদের জন্য নারী ট্রাফিক পুলিশ লাগবে। অন্যান্য বিষয়ও স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। মহিলাদের লাইসেন্স পেতে হলে কি একজন পুরুষ আত্মীয়ের অনুমতি লাগবে? (ওয়াশিংটনে সউদি রাষ্ট্রদূত প্রিন্স খালেদ বিন সালমান ২৬ সেপ্টেম্বর বলেন, তা লাগবে না।) মহিলাদের কি তার আত্মীয় নয় এমন পুরুষের সাথে একসাথে গাড়ি চালাতে দেয়া হবে? মহিলারা কি অপেক্ষা করার জন্য প্রস্তুত? বৃহত্তর সামাজিক-কাম রাজনৈতিক পরিসরে এ ব্যবস্থা রক্ষণশীল আলেমদের কর্তৃত্বকে আরো খর্ব করবে যাদের প্রাতিষ্ঠানিকীকৃত মর্যাদা ক্রমবর্ধমান হুমকির মুখে। এটা ঐতিহ্যবাহী সামাজিক কাঠামো ভেঙ্গে ফেলছে যেখানে পরিবারের নেতৃত্ব থাকে বৃদ্ধ লোকের হাতে। নারীদের ঘরের মধ্যে পিতা বা পিতামহের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করা এক কথা। কিন্তু বাড়ির বাইরে তার প্রতি পরিবারের পূর্ণ সমর্থনের অভাব হওয়া সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়।মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বের বিকাশমান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে শক্তি, স্পষ্টবাদিতা ও জাঁকজমকের সমন্বিত রূপ। ২০১৫ সালে তিনি নবনিযুক্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে ইয়েমেন যুদ্ধের পরিকল্পনা করেন। কয়েক মাস পর তিনি উপ যুবরাজ পদে উন্নীত হয়ে ভিশন ২০৩০ এবং স্বল্প মেয়াদি জাতীয় রূপান্তর পরিকল্পনা (এনটিপি) ঘোষণা করেন। এ গ্রীষ্মে তিনি কাতারের সাথে কূটনৈতিক বিরোধে লিপ্ত হন এবং সউদি আরব ও তার মিত্র সংযুক্ত আরব আমিরাত উভয়েই কাতারের কূটনৈতিক স্বাতন্ত্রের কারণে ক্রুদ্ধ হয়। এখন ইয়েমেন এক জলাভূমিতে পরিণত হয়েছে ও অতি উচ্চাকাক্সক্ষী হওয়ার কারণে এনটিপির লক্ষ্যমাত্রা সমন্বয় করা হচ্ছে। কাতারের সাথে সংকটও অচলাবস্থায় রয়েছে। এমতাবস্থায় মহিলাদের গাড়ি চালনার সুযোগ দেয়ার উদ্যোগ সফল হওয়ার সুযোগ কতটা?এক সময় সউদি আরবকে সউদ পরিবার ও ওয়াহাবি আলেম সমাজের মধ্যকার একটি জোট হিসেবে আখ্যায়িত করা হত। তাদের এ মৈত্রীর ঘটনা ঘটে ১৭৪৫ সালে যখন এক গোত্র প্রধান মোহাম্মদ বিন সউদ মোহাম্মদ বিন আবদুল ওয়াহাব নামে এক ধর্ম প্রচারকের সাথে মিত্রতার বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং আরব ভূমি জয় ও পবিত্রকরণের লক্ষ্যে যুদ্ধ ক্ষমতা ও ধর্মীয় জজবার সমন্বয় ঘটানোর সিদ্ধান্ত নেন। পরের বছরগুলোতে ধর্মীয় নেতাদের প্রভাব ক্ষীণ হয়ে আসে। কিন্তু সউদি নেতারা জানেন যে আরব বিশ^কে নেতৃত্ব দেয়া বা একটি প্রধান তেল রফতানিকারক দেশ হওয়ার চাইতেও মক্কা ও মদিনার দু’টি পবিত্র স্থানের হেফাজতকারীর ভূমিকা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সে কারণেই মুসলমানদের পবিত্র বার্ষিক হজ সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করার উপর অপরিসীম গুরুত্ব আরোপ করা হয়। ২০ লাখেরও বেশি হজযাত্রীর সমাগম ঘটে তখন। সউদি আলেমরা জানেন যে তারা সরকারের রোষের শিকার হওয়া থেকে মুক্ত নন। কাতার বিরোধী নীতির প্রতি পূর্ণ সমর্থন না দেয়ায় এ মাসের গোড়ার দিকে কয়েকজন আলেমকে গ্রেফতার করা হয়। আলেমদের সংগঠন বাদশাহ সালমান ও মোহাম্মদ বিন সালমানের কোনো সমােেলাচনা করতে দ্বিধাগ্রস্ত। হয়ত তারা কোনো রাজনৈতিক সংকট বা সমস্যার জন্য অপেক্ষা করছেন যা তাদেরকে এ কথা বলার সুযোগ দেবে যে ‘আমরা আগেই তা বলেছিলাম।’ একজন মহিলার গাড়ি চালানোর অধিকারের বিষয় বাকি বিশে^র কাছে মামুলি বিষয় বলে মনে হতে পারে। কিন্তু তেলের নি¤œ মূল্যের কারণে সউদি আরবের অর্থনৈতিক পরিবর্তন , ইয়েমেনের যুদ্ধ ও কাতারের সাথে কূটনৈতিক লড়াই জাতীয় রূপান্তরকে এগিয়ে নিতে পারে। অথবা তা হতে পারে প্রবাদ বাক্যের খড়ের মত যা উটের ঘাড়কে মটকে দিয়েছিল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।