Inqilab Logo

শনিবার, ০৮ জুন ২০২৪, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

নামাযের ফজীলত এবং উদাসীনতার শাস্তি

মুফতি ইবরাহীম আনোয়ারী | প্রকাশের সময় : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

\ শেষ কিস্তি \

দুনিয়াতে পাঁচ শাস্তি- ১. তার বয়স এবং হায়াতের বরকত কমে যায়। ২. তার চেহারা থেকে ভাল মানুষের ছাপ উঠে যায়। ৩. সে যতই ভাল কাজ করুক না কেন, আল্লাহর কাছে কোন সওয়াব পাবে না। ৪. তার কোন দোয়া কবুল হয়না। ৫. আল্লাহর কোন প্রিয় বান্দাও যদি তার জন্য দোয়া করে, তাও কবুল হয় না।
মৃত্যুর সময় তিন শাস্তি- ১. অত্যন্ত বে-ইজ্জত অবস্থায় তার মৃত্যু হবে। ২. ক্ষুধার্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে। ৩. মৃত্যুর সময় সমুদ্রের সব পানিও যদি তাকে পান করানো হয়, তবুও তৃষ্ণার্ত অবস্থায় তার মৃত্যু হবে।
কবরে তিন শাস্তি- ১. তার কবর এতটাই সংকীর্ণ হবে যে, তার এক দিকের পাঁজর অন্যদিকে চলে যাবে। ২. তার কবরে অগ্নি প্রজ্বলিত করা হবে, সে তাতে জ্বলতে থাকবে। ৩. তাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য কবরে, ‘সুজাউ আকরা’ নামের একটি সাপ নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। সাপটির চোখ হবে আগুনের এবং নখ হবে লোহার। একেকটা নখ একদিনের দূরত্বসম অর্থাৎ বার মাইল হবে। সে তার সাথে কথা বলবে এবং নিজের নাম বলবে। বলবে, আমি ‘সুজাউ আকরা’। তার কথার শব্দ মেঘের গর্জনের চেয়ে ভয়ঙ্কর হবে। সে বলবে, আমাকে নির্ধারণ করা হয়েছে তোকে শাস্তি দেয়ার জন্য।
ফজরের নামায ত্যাগ করার কারণে, তোকে ফজর থেকে যোহর পর্যন্ত দংশন করতে থাকবো। এভাবে যোহর থেকে আছর পর্যন্ত, আছর থেকে মাগরিব পর্যন্ত, মাগরিব থেকে এশা পর্যন্ত, এবং এশা থেকে ফজর পর্যন্ত দংশন করতে থাকবো, যোহর, আছর, মাগরিব এবং এশার নামায না পড়ার কারণে দংশন করবে।
বর্ণিত আছে, সাপটির আঘাত এতই শক্তিশালী হবে যে, যখন একবার সে বে-নামাযী ব্যক্তির ওপর আঘাত হানবে, তখন সে আঘাতের চোটে সত্তর গজ জমির ভিতর ধ্বসে যাবে। এভাবে বে-নামাযীর কবরে কেয়ামত পর্যন্ত আযাব চলতে থাকবে। (ফাজায়েলে নামায)
কেয়ামতের দিন তিন শাস্তি- ১. তার হিসাব খুব কঠিনভাবে নেওয়া হবে। ২. তার ওপর আল্লাহর ক্রোধের আযাব হবে। ৩. লাঞ্ছিত অবস্থায় তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (শাওয়াহিদুন নবুুয়্যত)
আল্লাহর দরবারে বে-নামাযীর বাহানা : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কেয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে বেনামাযীরা নামায ত্যাগ করার ওপর কিছু বাহানা দাঁড় করাতে চাইবে।
১. রাজত্বের বাহানা: কোন ব্যক্তি বলবে, হে আল্লাহ! আপনি আমাকেও বাদশাহী এবং রাজত্বের গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন। এর কাজ এত বেশি ছিল যে, আমি মাথা চুলকানো এবং দাঁত খিলাল করার সময়টুক পর্যন্ত পেতাম না, নামায কীভাবে পড়তাম? আল্লাহ ফেরেস্তাদের বলবেন, দাউদ আ. এবং সোলাইমান আ. কে ডাকো! যখন তাঁরা দরবারে উপস্থিত হবেন, তখন আল্লাহ বলবেন, এরাও তো বাদশা ছিল, এদের রাজত্বের পরিধিও তোমাদের চেয়ে বেশি ছিল।
তা সত্তে¡ও তারা কোনদিন নামায ছাড়েনি। সুতরাং তুমি রাজত্বের যে অজুহাত পেশ করছ, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। যদি বাদশাহি নামাযের অন্তরায় হত, তাহলে এদের রাজত্বও নামাযের বাধা হত। তুমি বরং অলসতার কারণেই নামায ত্যাগ করেছো। তারপর ফেরেশতাগণকে আদেশ প্রদান করবেন, তাকে টেনে টেনে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার জন্যে ।
২. অসুস্থতার বাহানা: আরেক ব্যক্তি অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে বলবে, হে প্রভু, আমি অসুস্থ ছিলাম, অসুখের যাতনায় নামায পড়তে পারতাম না। আল্লাহ বলবেন, আইয়ুব আ. কে ডাকো। তিনি উপস্থিত হবেন। তখন আল্লাহ তায়ালা বলবেন, হে অসুস্থ ব্যক্তি তোমার চেয়ে তো আমার আইয়ুবের অসুখ বেশি ছিল। বছর বছর ধরে তার শরীরে পোকা-মাকড় ঘর করেছিল। তা সত্তে¡ও সে এক নিঃশ্বাসের জন্যেও আমার স্মরণ থেকে গাফেল হয়ে বসে থাকেনি। যদি অসুস্থতা নামাযের বাধা হতো তাহলে আইয়ুবেরও বাধা হতো! সুতরাং তুমি মিথ্যাবাদী। তুমি গাফেল এবং অলসতার কারণেই নামায পড়নি। তাকেও জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার আদেশ দেয়া হবে।
৩. পরিবারের বাহানা: একজন বে-নামাযীকে উপস্থিত করে তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, তুমি নামায ত্যাগ করেছো কেন? সে বলবে, প্রভু, আমার বাচ্চা-কাচ্চা বেশী ছিল। তাদের লালন-পালন এবং খোরপোষের ব্যবস্থা করতে গিয়েই আমার পুরো দিন চলে যেত। নামায পড়ার সময় পেতাম না। আল্লাহ ইয়াকুব আ. কে ডেকে আনবেন। আল্লাহপাক ইয়াকুব আ. কে দেখিয়ে বে-নামাযী ব্যক্তিকে বলবেন, দেখো, তোমার সন্তানাদী বেশি ছিল, নাকি ইয়াকুবের? ইয়াকুবের (আ.) এগার সন্তান ছিল। ইউসুফের বিরহে ইয়াকুব বছর বছর ধরে কেঁদেছিল? ইয়াকুব সন্তানের চিন্তায় দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে, তার কোমর বাঁকা হয়েছে, বুড়ো হয়েছে, তারপরও নামায থেকে এক মুহুর্তের জন্যেও সে গাফেল হয়নি। এই বে-নামাযীকেও সরাসরি জাহান্নামে নিক্ষেপের আদেশ দেওয়া হবে।
আল্লাহ তায়ালা সবাইকে নামায পড়ার তাওফিক দান করুন, আমিন।
লেখক : খতিব, বায়তুল করিম জামে মসজিদ, হালিশহর, চট্টগ্রাম



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ