পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঢাকায় ৬শ’ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা খারাপ : মেরামতে উত্তরে ১৫০০ কোটি ও দক্ষিণে ১১৩০ কোটি টাকার বাজেট : সবচে’ ভয়াবহ মালিবাগ-রামপুরা সড়ক, তবে চলতি বছর মেরামতের নিশ্চয়তা নেই
রাজধানীজুড়ে বেহাল সড়কে দুর্ভোগ, যন্ত্রণা আর বিড়ম্বনা। টানা বৃষ্টি আর পানিবদ্ধতার কারণে বেশিরভাগ সড়কই এখন চলাচলের অযোগ্য। মূল সড়ক থেকে অলিগলি সর্বত্রই একই হাল। সড়কজুড়ে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। এর বাইরে বছরজুড়ে চলমান খোঁড়াখুঁড়িতো আছেই। দুই সিটি কর্পোরেশনের প্রাথমিক হিসাব মতে, রাজধানীজুড়ে ৬০০ কিলোমিটারের বেশি সড়কের অবস্থা খারাপ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেহাল ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অধীন মালিবাগ থেকে রামপুরা ব্রিজ হয়ে বাড্ডা পর্যন্ত সড়ক। আর দক্ষিণে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী কুদরতুল্লাহ গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, মালিবাগ-মগবাজার ফ্লাইওভারের নীচের সড়কগুলো এলজিইডির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ওগুলো এলজিইডি কর্তৃপক্ষই মেরামত করবে। আগামী মাসের ১৫ তারিখে মালিবাগ থেকে রামপুরা অংশের ফ্লাইওভার উদ্ভোধন হওয়ার কথা। এর মধ্যে মালিবাগ থেকে মৌচাক হয়ে রামপুরা পর্যন্ত সড়ক আদৌ মেরামত করা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে এখনও সন্দেহ রয়েছে। সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে রাজধানীতে যানজট লেগেই থাকছে। ভাঙাচোরা সড়কে চলতে গিয়ে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। চলতে গিয়ে বাস, মিনিবাস, প্রাইভেট কারসহ বিভিন্ন যানবাহন বিকল হওয়াসহ নানাবিধ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। খানাখন্দে বৃষ্টির পানি জমে দুর্ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। ভুক্তভোগিদের প্রশ্ন-কবে মিলবে এ যন্ত্রণা থেকে রেহাই? ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী কুদরতুল্লাহ বলেন, ইতোমধ্যে রামপুরাসহ কয়েকটি এলাকার সড়ক মেরামতের কাজ শুরু হয়ে গেছে। বৃষ্টি কমে গেলে অন্যান্য এলাকার কাজও শুরু হয়ে যাবে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান বলেন, এ বছর বৃষ্টি আগে থেকেই শুরু হয়েছে। অন্য বছরের তুলনায় বৃষ্টি বেশিও হয়েছে। তাই রাস্তাগুলোর অবস্থা খারাপ। তিনি বলেন, আমাদের মেরামতের কাজ অব্যাহত আছে। বৃষ্টি শেষে নতুন করে কাজ শুরু হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন ১২শ’ কিলোমিটার এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রায় ১ হাজার কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। দুই সিটির প্রাথমিক হিসাবে ৬০০ কিলোমিটারের বেশি সড়ক এবারের বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চলতি বছর ডিএনসিসি সড়ক মেরামত ও উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা। অন্যদিকে, ডিএসসিসির বাজেটে এ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ১৩০ কোটি ৫১ লাখ টাকা। গত অর্থবছর দুই সিটি কর্পোরেশন সড়ক মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় করে। অথচ এক বছর যেতে না যেতেই সড়কগুলোর বেহাল অবস্থা। ভুক্তভোগিদের মতে, নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে যেনোতেনোভাবে কাজ করার কারণে সড়কগুলোর এমন হাল হয়েছে। বছর না ঘুরতেই সড়কগুলো থেকে পিচ উঠে একেবারে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। রামপুরা বাজার থেকে উত্তর বাড্ডার রাস্তার বড় বড় গর্ত দেখলে মনেই হবে না এগুলো সঠিকভাবে নির্মাণ বা মেরামত করা হয়েছিল। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজধানীর সড়কগুলো সাধারণত ১০ থেকে ১৫ টন ওজনবাহী গাড়ি চলাচলের জন্য তৈরী করা হয়। কিন্তু চলাচল করে ৩০-৪০ টন ওজনের গাড়ি। এ কারণে সেগুলো তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। রাস্তাগুলো সঠিকভাবে মেরামত করা হলে আরও কয়েক বছর চলতো। কিন্তু ঢাকার অধিকাংশ রাস্তাই নির্মাণ করার পরের বছরই ভেঙ্গে একাকার হয়ে যায়। মেরামতের পর সেগুলো আর তিন মাসও চলে না। রাজধানীর প্রতিটি এলাকার রাস্তার করুণ দশা দেখে অনেকেই এমন মন্তব্য করেন। অনেকের মতে, সারাদেশে যাই থাক, অন্ততঃ রাজধানী শহরের রাস্তাগুলো একটু উন্নত হবে, ভালো হবে তা রাজধানীবাসী আশা করতেই পারে। কিন্তু সে আশায়ও গুঁড়েবালি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন মালিবাগ- মৌচাক থেকে রামপুরা হয়ে বাড্ডা পর্যন্ত রাস্তাটির অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। এ ছাড়া আগারগাঁও, শ্যামলী, মোহাম্মদপুর, গাবতলী, মিরপুর এলাকার রাস্তাগুলোর অবস্থাও বেহাল। রাস্তা খোঁড়ার কারণে মিরপুর ১০ থেকে ১৩, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, শ্যামলী রিং রোড, এলিফ্যান্ট রোড ইত্যাদি এলাকায় বেহাল দশা। মিরপুর রোড ও পান্থপথ সড়কেরও বেহাল অবস্থা অনেক দিন থেকেই। রামপুরার দক্ষিণ বনশ্রীর মূল সড়ক থেকে শুরু করে প্রতিটি সংযোগ রাস্তার খারাপ অবস্থা। একটি রাস্তাও চলাচলের উপযোগী নয়। বাসাবো মাদারটেক থেকে দক্ষিণ বনশ্রীর মূল সড়কে নোংরা কাদায় সয়লাব।
সবচেয়ে খারাপ অবস্থা মালিবাগ থেকে রামপুরার রাস্তাটি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) সূত্রে জানা যায়, রামপুরা ব্রিজ থেকে মালিবাগ ওয়াসা রোড পর্যন্ত সড়ক ও ফুটপাতের উন্নয়নকাজ চলছে। গত জানুয়ারি মাসে শুরু হওয়া এ কাজের শেষ ধরা হয়েছে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু সড়কের কয়েকটি স্থানে খুঁড়ে রাখা হলেও মূল কাজে হাতই দেওয়া হয়নি। এরই মধ্যে সড়কের বিভিন্ন অংশে অপরিকল্পিতভাবে খুঁড়ে মাটি তুলে রাখা হয়েছে। বেশ কয়েকটি স্থানে রয়েছে নির্মাণসামগ্রী। এসব কারণে যানবাহন চলাচলে সড়কটি যথাযথভাবে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ডিএনসিসির এ কাজ ডিসেম্বর পর্যন্ত শেষ না করার কারণ হিসেবে জানা যায়,বর্তমানে ওয়াসার পাইপলাইন বসানোর কাজ চলছে। যদিও চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত রাস্তা কাটার অনুমতি দেয় ডিএনসিসি। কিন্তু ওয়াসা সেই সময় না মেনে এখনো রাস্তা কেটে যাচ্ছে। এ কারণে নির্ধারিত সময়ে ডিএনসিসি রাস্তা ও ফুটপাত উন্নয়নের কাজ করতে পারবে না বলে জানিয়েছেন একজন প্রকৌশলী। এতে করে চলাচলের অনুপযোগী সড়কটি চলতি বছরেও উপযোগি হচ্ছে না বলে ধরে নেয়া যায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কয়েক বছর ধরে রামপুরা ব্রিজ থেকে মালিবাগ রেলগেট পর্যন্ত সড়কটি ভেঙে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। তাই এ সড়কে যান চলাচল অনেকটাই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে ফ্লাইওভার নির্মাণের ধকলে ব্যস্ত এ সড়কের পাশে থাকা দোকান ও মার্কেটগুলো অনেকটা ক্রেতা শূন্য হয়ে পড়েছে। অনেকেই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে গেছে। পথে বসেছে কেউ কেউ। গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী থেকে মালিবাগ-রামপুরা-বাড্ডা হয়ে কুড়িল বিশ্বরোডের সঙ্গে সড়কটিতে শত শত যানবাহন চলাচল করে। গাজীপুর-টঙ্গী থেকে বিমানবন্দর হয়ে গুলিস্তান ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় চলাচলকারী হাজার হাজার মানুষ এ সড়ক ব্যবহার করে। কিন্তু কয়েক বছর ধরে দফায় দফায় সড়কটির দুই পাশে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ করার ফলে প্রতিনিয়ত যানজটের কবলে পড়ে যাত্রীরা। তিন লেনের এ সড়কটি এখন এক লেনও ব্যবহার করা যায় না। সরেজমিনে দেখা গেছে, রামপুরা টেলিভিশন ভবন থেকে মালিবাগ রেলগেট মোড় পর্যন্ত সড়কটির অবস্থা বেহাল। খানাখন্দে ভরা ভাঙাচোরা এই সড়কটিতে চলাচলকারী যাত্রীরা যানবাহনে বসে তীব্র ঝাঁকুনি খেতে থাকে। এ সড়টির সবচেয়ে বেশি ভাঙা হাজিপাড়া পেট্রল পাম্পের সামনের অংশে। সেখানে রাস্তা ভেঙে এক থেকে দেড় ফুট গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। পানি আর কাদামাটি জমে একাকার হয়ে আছে। বড় যানবাহন কোনো রকম পার হতে পারলেও ছোট যানবাহন এসে থেমে যায়। অনেকটা আতঙ্ক নিয়ে রাস্তাটিতে চালকদের চলাচল করতে দেখা যায়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন রাস্তাগুলোর মধ্যে যাত্রাবাড়ীর অবস্থা এখনও বেহাল। যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত রাস্তাটি সেই ৯ মাস আগে থেকে নির্মাণ করা হলেও এখনও তা শেষ হয়নি। এতে করে ফ্লাইওভারের নীচ দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনগুলোর চালকদেরকে ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে। মতিঝিল, পল্টন, কমলাপুর, খিলগাঁও, সবুজবাগ, সুত্রাপুর, ওয়ারী থানা এলাকার রাস্তাগুলোও ভেঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। অন্যদিকে, পুরনো ঢাকার নবাবকাটরা নতুন সড়ক থেকে শুরু করে সাত রওজা পর্যন্ত বেহাল দশা। ওই এলাকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। নবাবকাটরা আনন্দ গরুর ফার্মের সামনের সড়কে ডাস্টবিন আর রাস্তার মাটি একাকার হয়ে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বংশাল পুকুরপাড় থেকে শুরু করে পুরো রাস্তাই ভেঙে একাকার হয়ে আছে। চকবাজার-জেলখানা রাস্তাটির ইট-সুরকি উঠে দীর্ঘ দিন এলাকাবাসীর চলাচলে মারাত্মক ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব ছাড়াও রাজধানীর সবগুলো অলি-গলি, সড়ক, সংযোগ সড়ক ভেঙ্গে একাকার হয়ে আছে বহুদিন ধরে। এগুলো মানুষের দুর্ভোগ যেমন বাড়াচ্ছে তেমনি সময় এবং টাকারও অপচয় ঘটাচ্ছে। কবে এই দুর্ভোগ কাটবে তার নিশ্চয়তা মিলছে না কিছুতেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।