পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের ঘরে ঘরে কেপিএম নামটি পরিচিত। কর্ণফুলী পেপার মিলস (কেপিএম)। এশিয়ার বৃহত্তম কাগজ কারখানা। কেপিএেমন কাগজ দিয়ে পড়াশোনা করেননি এমন বিদ্বান লোক এদেশে খুঁজে পাওয়া যাবে না। ৬৪ বছর পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দেশের বৃহদায়তন শিল্প প্রতিষ্ঠান। তবে সুবিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ে আজ সমগ্র কারখানাটি পরিণত হয়েছে ভূতের গ্রামে। এর পেছনে অনেক কারণের ভিড়ে মূলে রয়েছে এই গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক শিল্প প্রতিষ্ঠানে ব্যাপারে বছরের পর বছর অনাদর-অবহেলা, লাগামহীন দুর্নীতি-অনিয়ম, সরকারি নীতি-নির্ধারকদের সিদ্ধান্তহীনতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতার বেড়াজাল এবং দূরদর্শী পরিকল্পনার অভাব। এরফলে দিনে দিনে ধ্বংসের অতল গহŸরের দিকেই ধাবিত হচ্ছে হাজার কোটি টাকা মূল্যের কেপিএম এবং এর সম্পত্তি। রুগ্ন-জীর্ণ-অচলপ্রায় কারখানা ও এর সুবিশাল ‘সংরক্ষিত এলাকা’ দীর্ঘদিন ধরে অরক্ষিত পড়ে আছে। সেই সুবাদে অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের যোগসাজশে কেপিএমের যন্ত্রপাতি, লোহা-লক্করসহ মূল্যবান সামগ্রী প্রতিনিয়তই চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে সংঘবদ্ধ পাচারকারীরা। কারখানা ভবন, আবাসিক এলাকা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের রক্ষণাবেক্ষণ নেই। দেয়াল ও ছাদ খসে খসে পড়ছে। দায়-দেনাভারে জর্জরিত এ কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দীর্ঘদিন বকেয়া পড়ে আছে। চরম দুঃখ-কষ্টে জীবনযাপন করছে হাজারো পরিবার।
বৃহত্তর চট্টগ্রামের শিল্পাঞ্চলে অবস্থিত রাঙ্গামাটির চন্দ্রঘোনায় ১৯৫৩ সালে তদানীন্তন পাকিস্তান শিল্প উন্নয়ন সংস্থা কর্তৃৃক ৬৭ দশমিক ৫৭ মিলিয়ন রুপি ব্যয়ে বার্ষিক ৩০ হাজার মেট্রিক টন কাগজ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কর্ণফুলী পেপার মিলস লিমিটেড স্থাপিত হয়। বিলুপ্তঘোষিত আদমজী জুট মিলস এবং চিটাগাং স্টিল মিলসের তুলনায় বিস্তীর্ণ ভূমি আর স্থাপনা রয়েছে কর্ণফুলী পেপার মিল (কেপিএম) এবং এর সংলগ্ন কর্ণফুলী রেয়ন মিলসের (কেআরসি)। রসায়ন শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন, সেকেলে কেপিএমের আধুনিক যুগোপযোগী আমূল সংস্কার ও কারিগরি প্রযুক্তির পুনর্বিন্যাস করা হলেই মৌলিক এই শিল্প প্রতিষ্ঠানটি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। শুধু তাই নয়; কেপিএম-এর উৎপাদিত কাগজ দেশের চাহিদা সিংহভাগ মিটিয়ে বিদেশে রফতানির সুযোগ রয়েছে। অথচ সেই অপার সম্ভাবনাকে সুষ্ঠু কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেই। মাঝেমধ্যে বিচ্ছিন্ন কিছু উদ্যোগ নিলেও তা বেশিদূর এগোয়নি। বরং ক্রমাগত নির্লিপ্ততায় সমস্যা-সঙ্কটের পাহাড় জমে উঠেছে।
বাধ্যতামূলক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, গণস্বাক্ষরতা কার্যক্রম থেকে শুরু করে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, উচ্চশিক্ষাসহ দেশের সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থা এবং পাঠ্যপুস্তক প্রকাশনা, মুদ্রণশিল্পের সর্বস্তরে সাংবাৎসরিক অপরিহার্য উপকরণ হচ্ছে কাগজ। প্রধানত লেখার সাদা-কাগজের মূল্য যৌক্তিক হারে স্থিতিশীল রাখাই যেখানে জরুরি সেখানে কেপিএম ব্রান্ডের কাগজের উৎপাদনশীলতা বজায় থাকলে বাজারে স্থিতিশীলতা ও সহনীয় মূল্য আশা করা যায়। কিন্তু কেপিএম রুগ্ন হয়ে পড়ার কারণে বেসরকারি খাতে উৎপাদিত কাগজে একচেটিয়া বাজার সয়লাব। মূল্যও যথেচ্ছ। অথচ রাষ্ট্রায়ত্ত খাতে কাগজ শিল্প হচ্ছে বিশ্বে সবসময়ই অভিজাত ও সচল ব্যবসায়। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুগের চাহিদা ও প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কেপিএমের সেকেলে উৎপাদন ক্ষমতা ধাপে ধাপে দ্বিগুণ এমনকি তিনগুণ বাড়ানো সম্ভব। বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতা যেখানে দৈনিক গড়ে ১শ’ মেট্রিক টন সেখানে প্রায়ই বন্ধ থাকছে কারখানা। কেপিএম বিদ্যমান ৩টি ইউনিটের সাহায্যে ১৯টি ক্যাটাগরির কাগজ উৎপাদন করতে সক্ষম। বাস্তবে দুই ধরনের কাগজ উৎপাদিত হচ্ছে তাও আংশিকমাত্র। রাষ্ট্রায়ত্ত কেপিএম-কাগজের মূল্য যেখানে কম থাকারই কথা সেখানে বেসরকারি মাঝারি ও ছোট মিল-কারখানায় উৎপাদিত কাগজের দাম ১৫ থেকে প্রকারভেদে ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি। ১৫ বছর আগেও শিক্ষার্থীদের লেখার কাগজে একচেটিয়া নির্ভরতা ছিল কেপিএম-কাগজে। সেদিন আর নেই। আবার অসাধুচক্র পাহাড়ি সীমান্তপথে ভারতের মিজোরাম, ত্রিপুরা এবং মিয়ানমারের আরাকান (রাখাইন) ও সিন রাজ্যে কেপিএম-এ উৎপাদিত কাগজের একাংশ পাচার করে দিচ্ছে। সবমিলে কেপিএম একটি ভঙ্গুর, বিশৃঙ্খল ও দিক-দিশাহারা রুগ্ন-শিল্প প্রতিষ্ঠান হিসেবে কোনমতে আজ দাঁড়িয়ে আছে। হারিয়েছে তার গর্ব ও অবদান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।