Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খুচরা বাজারে মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের

গ্রাহক পর্যায়ে মূল্য পুনঃনির্ধারণ করা না হলে স্থবির হয়ে পড়বে পল্লী বিদ্যুতের কার্যক্রম

পঞ্চায়েত হাবিব : | প্রকাশের সময় : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

 পল্লী বিদ্যুতের খুচরা বিদ্যুৎ বিক্রয় মূল্য বৃদ্ধির উপর গণ-শুনানী আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। খুচরা বিদ্যুৎ বিক্রয় মূল্য বৃদ্ধি করা না হলে সরকারের পাওনা পরিশোধ, কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদান এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে মনে করে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে। এ কারণে সংস্থাটি বিদ্যুতের খুচরা বিক্রয়মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে।
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ৩ লক্ষ ৫১ হাজার কিলোমিটার বিতরণ লাইন, ৯ হাজার ১০ এমভিএ ক্ষমতা সম্পন্ন ৭৯৯টি উপকেন্দ্র নির্মাণ করেছে। ২ কোটি গ্রাহককে বিদ্যুৎ সুবিধা প্রদান করেছে। এছাড়া দাসিয়ারছড়াসহ ৫৩টি ছিটমহলে মাত্র তিন মাসের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানে ৭৩ লাখ পরিবারকে সংযোগ দেয়া হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ে সচিবকে দেয়া চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন স্বাক্ষরিত এ চিঠি দেয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০১৮ সালের মধ্যে দেশের সকল মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে দেয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড কাজ করে যাচ্ছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার উদ্যোগ-ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ” এ ¯েøাগান ধারণ করে আলোর পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ৩ লক্ষ ৫১ হাজার কিলোমিটার বিতরণ লাইন, ৯ হাজার ১০ এমভিএ ক্ষমতা সম্পন্ন ৭৯৯টি উপকেন্দ্র নির্মাণ করে ইতোমধ্যে ২ কোটি গ্রাহক/পরিবারকে বিদ্যুৎ সুবিধা প্রদান করেছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ৩০ বছরে মাত্র ৭৪ লক্ষ গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে। অপরদিকে ২০০৯ সাল থেকে আগস্ট ২০১৭ পর্যন্ত মাত্র সাড়ে ৮ বছরে ১ কোটি ২৬ লক্ষ নতুন পরিবারকে সংযোগ দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে ২০১৫-১৬-১৭ সালে দেশে ৭৩ লাখ পরিবারকে সংযোগ দেয়া হয়েছে। বাপবিবোর ভৌগলিক এলাকায় এখন বিদ্যুৎ সুবিধাভোগী জনগণ প্রায় ৭৫%। ইতোমধ্যে ৬১ টি উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়িত হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরে মধ্যে ৪৬০টি উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়নের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ চলছে। ২ কোটি গ্রাহকের মধ্যে ১ কোটি ৮০ লক্ষ (৯০%) আবাসিক, ৩ লক্ষ ২৫ হাজার সেচ (২%) এবং অবশিষ্ট ৮% ক্ষুদ্র শিল্প, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এবং দাতব্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ৯০% আবাসিক গ্রাহকের অর্ধেকেরও বেশি গ্রাহক লাইফ লাইন শ্রেণিভুক্ত; যারা মাসে গড়ে ৩৫ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করে মাত্র ১৬০ টাকার বিল প্রদান করছে। পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমের ইতিবাচক প্রভাব দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সরাসরি ভূমিকা রাখছে। পল্লী অঞ্চলে বিদ্যুতায়নের ফলে কৃষিসেচের মাধ্যমে দেশ আজ খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাপবিবো ইতিমধ্যে ১৬ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক, সাড়ে ৪ হাজার ইউনিয়ন পরিষদ/ডিজিটাল তথ্য কেন্দ্র, ৬৪ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়, ক্ষুদ্র শিল্প/বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বিদ্যুতায়নের আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়া দাসিয়ারছড়ার মত ৫৩টি ছিটমহলে মাত্র তিন মাসের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। একটি বাড়ি - একটি খামার প্রকল্প, আশ্রায়ণ প্রকল্প ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সংযোগের মাধ্যমে ছিন্নমূল মানুষগুলোর মৌলিক চাহিদা পুরণে সরকারের জনবান্ধব কর্মসূচিগুলো প্রশংসিত হচ্ছে। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও কর্মক্ষম হচ্ছে এবং নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কর্মসংস্থানের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হচ্ছে। খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, তথ্য-প্রযুক্তি ইত্যাদি উন্নয়নের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়ন সহজতর হচ্ছে। বর্তমানে বিদ্যমান ৬টি বিতরণ সংস্থার মধ্যে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড অন্যতম। জাতীয়ভাবে উৎপাদিত বিদ্যুতের প্রায় ৫০% এ প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে এবং প্রতি মাসে ১২৫০ কোটি টাকার বিদ্যুৎ ক্রয়-বিক্রয় করে।
জানা গেছে, ২০০৮ সালে বাপবিবো’র সিস্টেম লস ছিল ১৫.৫৬%, যা ৪.১২% হ্রাস পেয়ে বর্তমানে ১১.৪৪%। এছাড়াও বাপবিবো’র বিদ্যুৎ বিল আদায়ের হার ৯৯% এর অধিক এবং বকেয়া মাসের পরিমাণ দেশের সকল বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থার মধ্যে সর্বনি¤œ। কিন্তু আবাসিক, সেচ ও দাতব্য শ্রেণীর ৯২% গ্রাহকের নিকট খরচসহ প্রতি ইউনিটের সরবরাহ ব্যয় ৬.৭৮ টাকার বিপরীতে বিক্রয়মূল্য মাত্র ৪.৬২ টাকা। ফলে উক্ত গ্রাহকদের নিকট প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রয়ে লোকসান হচ্ছে ২.১৬ টাকা। এ কারণে সেপ্টেম্বর’১৫ হতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরী কমিশন (বিইআরসি) কর্তৃক ঘোষিত নতুন ট্যারিফ কার্যকর হওয়ার পর ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে নীট ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৫১১ কোটি টাকা এবং ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে নীট ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮৮০ কোটি টাকা। দুই অর্থ বছরে নীট ঘাটতির পরিমাণ মোট ১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর ২০১৫ সালে সর্বশেষ ট্যারিফ ঘোষণার পূর্বে যেখানে ২২টি সমিতি স্বচ্ছল ছিল, বর্তমানে এ সংখ্যা ১১টিতে নেমে এসেছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে উক্ত ঘাটতির পরিমাণ হতে পারে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে খুচরা বিদ্যুৎ বিক্রয় মূল্য বৃদ্ধির উপর গণ-শুনানী অনুষ্ঠিত হবে। খুচরা বিদ্যুৎ বিক্রয় মূল্য বৃদ্ধি করা না হলে সরকারের পাওনা পরিশোধ, কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদান এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন, আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর পল্লী বিদ্যুতের খুচরা বিদ্যুৎ বিক্রয় মূল্য বৃদ্ধির উপর গণ-শুনানী অনুষ্ঠিত হবে। খুচরা বিদ্যুৎ বিক্রয় মূল্য বৃদ্ধি করা না হলে সরকারের পাওনা পরিশোধ, কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদান এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।তিনি আরো বলেন, বাপবিবো’র শতভাগ বিদ্যুতায়ন কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাবে। বাপবিবো’র শতভাগ বিদ্যুতায়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখার স্বার্থে বিদ্যুতের খুচরা বিক্রয়মূল্য বৃদ্ধি করা অপরিহার্য।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পল্লী বিদ্যুত

২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ