Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ক্রীতদাসের জীবন ভারতীয় ইট শ্রমিকদের

ইনকিলাব ডেস্ক: | প্রকাশের সময় : ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : দেড়শ’ কোটি মানুষের দেশ ভারত। সভ্যতা ও অর্থনীতির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে অবকাঠামো নির্মাণ। এসব অবকাঠামো নির্মাণে ব্যবহৃত ইট তৈরিতে জড়িত রয়েছে দেশটির এক কোটি শ্রমিক; যাদের অধিকাংশই ঋণ-দাসত্ব শ্রমের শৃঙ্খলে বাঁধা পড়ে আছে। নিয়মিতই মজুরি নিয়ে প্রতারিত হতে হচ্ছে এসব ইট শ্রমিককে। স¤প্রতি একটি দাসত্ববিরোধী সংস্থা ভারতীয় ইট শ্রমিকদের সমস্যা তুলে ধরার পাশাপাশি এ বিষয়ে সরকারকে পদক্ষেপ গ্রহণের আহŸান জানিয়েছে। অ্যান্টি-সেøভারি ইন্টারন্যাশনালের করা পাঞ্জাবের ওপর এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের প্রায় এক কোটি শ্রমিক দুঃসহ গরম আর প্রাণঘাতী দূষণের মধ্যে কয়েক লাখ ছোট ছোট ইটভাটায় প্রাণান্ত শ্রম দিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা এ শ্রমিকদের উদ্ধার করে থাকে ঠিকই কিন্তু বকেয়া বেতন উদ্ধার বা অন্যান্য সুবিধার অভাবে তারা আবার ইটভাটাতেই ফিরে যায়। দেখা যায়, দেশটির হতদরিদ্র পরিবারগুলো প্রায়ই বাধ্য হয়ে তাদের সন্তানদের কঠোর শ্রমে ঠেলে দিচ্ছে। এসব ভাটায় তৈরি ইটের সংখ্যা অনুযায়ী মজুরি দেয়া হয়। সংস্থাটির ইনভিজিবল চেইনস শীর্ষক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ১৪ বছরের কম বয়সী ৬৫ থেকে ৮০ শতাংশ শিশু উত্তপ্ত গ্রীষ্মের মাসগুলোতে দিনে গড়ে ৯ ঘণ্টা কাজ করে থাকে। অ্যান্টি-সেøাভারি ইন্টারন্যাশনালের এশিয়া প্রোগ্রাম ম্যানেজার সারা মাউন্ট বলেন, আমরা ব্যাপক সংখ্যক বন্দি ও শিশু শ্রমিকের দেখা পেয়েছি। এসব শিশু স্কুলে যাওয়ার পরিবর্তে ধুলা আর রাসায়নিক ভর্তি বাতাসে দিনে ৯ ঘণ্টা কাজ করে যাচ্ছে। সারা আরো জানান, এনজিওগুলো এক মৌসুমে ইটভাটার শ্রমিকদের হয়তো ঋণ-দাসত্ব ছাড়িয়ে আনছে, কিন্তু কাজ বাছাইয়ের খুব সামান্য সুযোগ থাকায় পরবর্তী মৌসুমগুলোতে তারা আবার ইটভাটাতেই ফিরে যাচ্ছে। দারিদ্র্যের কারণে ইটভাটার কাজে যুক্ত পরিবারগুলোর বক্তব্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। ইটভাটার শ্রমিক ৩৫ বছর বয়সী নহর বাই বলেন, আমরা পাঁচ মাস দিনরাত কাজ করে যাই। কিন্তু বদলে খুব সামান্য মজুরিই পাওয়া যায়। নহর জানান, তিনি ও তার স্বামী মিলে দিনে প্রায় ১ হাজার ৪০০টির মতো ইট তৈরি করতে পারেন। তাদের ২৩ জনের একটি দল রয়েছে। দিনের কাজ শেষে রাতের বেলা তাদের সবাইকে ছোট একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। তাদের সঙ্গে ক্রীতদাসের চেয়েও খারাপ আচরণ করা হয় বলে জানান নহর। অন্যদিকে এক সন্তানের জননী ২৬ বছর বয়সী রিংকির পরিবার মালিকের কাছে ৩২ হাজার রুপি (৪৯৮ ডলার) পাবে। কিন্তু ইটভাটার অমানবিক অবস্থার কথা চিন্তা করে নিজেদের ন্যায্য পাওনা ভুলে যেতে রাজি রিংকি। তবু আর ইটভাটায় ফিরতে চান না তিনি। ভারতের অর্থনৈতিক ভিত্তির অংশে পরিণত হয়েছে এই ইটভাটাগুলো। ভারতজুড়ে নির্মিত জমকালো অফিস, কারখানা আর কলসেন্টারগুলোর জন্য ভবন নির্মাণের উপকরণ তৈরি করে যাচ্ছে এ ইটভাটাগুলো। রোদে-ধুলায় কাদামাটি নিয়ে ঘর্মাক্ত শ্রমিকের কঠোর শ্রম ভারতের দ্রæতবর্ধনশীল অর্থনীতির সফলতা তুলে ধরছে ঠিকই, কিন্তু সমাজের প্রান্তিক শ্রেণী এর আওতার বাইরে থাকছে। এএফপি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ক্রীতদাস
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ