চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
মুফতি ইবরাহীম আনোয়ারী
\ দুই \
বে-নামাযীর ভয়ানক শাস্তি : পূর্বের আলোচনা থেকে নামায পড়ার সওয়াব প্রমাণ হল, এবার একটু বুঝুন যে, নামায ত্যাগ করা কতটা ক্ষতিকর এবং তা আল্লাহর নিকট কতটা অপছন্দনীয়। এ সম্পর্কে কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করা হল।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মুসলমান এবং কাফেরের মাঝে পার্থক্য সৃষ্টিকারী হল নামায। অন্যত্রে ইরশাদ করেন, যে ইচ্ছাকৃতভাবে নামায ত্যাগ করল, সে কুফরীর কাছাকাছি পৌঁছে গেল। (মিশকাত শরীফ)
একদিন ফজরের নামায পড়ার পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, গত রাতে আমার কাছে দুইজন ফেরেশতা এসে আমাকে তাদের সাথে নিয়ে গেল। পথিমধ্যে আমি দেখলাম, এক ব্যক্তি মাটির ওপর শুয়ে আছে এবং আরেক ব্যক্তি হাতে পাথর নিয়ে তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আর পাথরটিকে শায়িত ব্যক্তির মাথায় খুব জোরে নিক্ষেপ করছে, যার ফলে তার মাথা টুকরো-টুকরো হয়ে যাচ্ছে এবং পাথরটি লাফিয়ে অনেক দূর গিয়ে পড়ছে। তারপর ব্যক্তিটি আবার পাথর আনার জন্য যাচ্ছে, এদিকে শায়িত ব্যক্তির মাথাটা আবার ঠিক হয়ে যাচ্ছে। তারপর ঐ ব্যক্তি দ্বিতীয়বার এভাবে আঘাত করছে, যার ফলে শায়িত ব্যক্তির মাথা আবার টুকরো হয়ে যাচ্ছে, তৃতীয় বারের মতো আবার পাথর উঠিয়ে মাথায় আঘাত করছে। এভাবে বারবার করছিল আর প্রতিবারই শায়িত ব্যক্তির মাথা ভেঙ্গে গিয়ে আবার ভাল হয়ে যাচ্ছিল। আমি ফেরেশতাদ্বয়কে জিজ্ঞেস করলাম ঐ ব্যক্তিটা কে? তার অপরাধই বা কী? তারা জবাব দিলেন, সে ঐ ব্যক্তি যে ফরয নামায না পড়ে ঘুমিয়ে থাকতো। (বুখারী শরীফ)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি নামাযের পাবন্দী করে না, সে কেয়ামতের দিন মুক্তি এবং মুক্তির সার্টিফিকেট কোনটিই পাবে না। তার কাছে কোন আলোও থাকবে না। এ অবস্থাতেই সে কারুণ, হামান, ফেরাউন, অথবা উবাই ইবনে খালফ এর সাথে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (মুসনাদে আহমদ)
মাওলানা ইবরাহীম দেহলভী (রহ) বলেন, পৃথিবীতে সম্পদ অর্জন করার পন্থা চার ধরণের- রাজত্ব, চাকুরি, কৃষি ও ব্যবসা বা হস্তশিল্প । যে ব্যক্তি রাজত্বের কারণে নামায ত্যাগ করে, তার হাশর ফেরাউনের সাথে হবে। চাকুরির কারণে যে নামায পরিত্যাগ করে, তার হাশর হবে হামানের সাথে। কৃষি এবং ব্যবসায়িক কারণে যে নামায পড়ে না, সে উবাই ইবনে খালফের সাথে জাহান্নামে যাবে। কেননা সে কৃষিকাজ এবং ব্যবসা-বাণিজ্য উভয়টাই করত। আর যে ব্যক্তি হস্তশিল্পের কারণে নামায ছেড়ে দেয়, সে কারুনের সাথে দোযখে যাবে। কেননা কারুন হস্তশিল্পের কাজ করতো।
হযরত উবাদাহ ইবনে ছামেত রা. বলেন, আমাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাতটি বিষয়ের উপদেশ দিয়েছেন। তন্মধ্যে দুইটি হল এই-
ক. আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করো না, যদিও তোমাকে কেটে টুকরো-টুকরো করে দেওয়া হয়।
খ. ইচ্ছাকৃতভাবে নামায ত্যাগ করো না, কেননা যে স্বেচ্ছায় নামায ত্যাগ করবে, সে ইসলাম ধর্মের গন্ডি থেকে বের হয়ে যায়। (তাবরানী)
হযরত মুয়াজ বিন জাবাল রা. বলেন, আমার প্রিয়তম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দশ বিষয়ে অসিয়ত করেছেন। তন্মধ্যে দুইটি হল-
ক. আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করো না। যদিও তোমাকে হত্য করা হয় কিংবা আগুনে পোড়ানো হয়।
খ. কোন অবস্থাতেই ফরয নামায ত্যাগ করো না। কারণ, ফরয ত্যাগকারী ব্যক্তির ওপর থেকে আল্লাহ তায়ালা স্বীয় যিম্মাদারী তুলে নেন।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যার এক ওয়াক্ত নামায ছুটে যায়, তার ক্ষতির পরিমাণ হলো, তার সন্তান-সন্তুতি এবং ধন-সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার সম-পরিমাণ। (ইবনে হাব্বান)
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, , যে ব্যক্তি গুরুত্বের সাথে নামায পড়ে, আল্লাহ তায়ালা তাকে পাঁচ ধরণের বিশেষ সম্মান প্রদান করেন- ক. তার আর্থিক অস্বচ্ছলতা দূর করে দেন। খ. কবরের আযাব মাফ করে দেন। গ. কেয়ামতের দিন আমলনামা তার ডান হাতে দিবেন। অর্থাৎ সে নাজাত পাবে। আর এ ধরণের ব্যক্তি অত্যন্ত আরাম-আয়েশে থাকবে। ঘ. সে বিদ্যুৎগতিতে পুলসিরাত অতিক্রম করবে। ঙ. বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (যাওয়াজেরে ইবনে হাজর মক্কী)
বে-নামাযীর ১৪টি ভয়ংকর শাস্তি : যে ব্যক্তি নামাযের ব্যাপারে অলসতা করে, আল্লাহর পক্ষ থেকে তার জন্য ১৪টি শাস্তি রয়েছে- পাঁচটি দুনিয়াতে, তিনটি মৃত্যুর সময়, তিনটি কবরে এবং তিনটি কবর থেকে ওঠার পর হাশরে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।