Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চট্টগ্রামে অভিযানে চালের মূল্যহ্রাসের পূর্বাভাস

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:১৫ এএম, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

চট্টগ্রামে চালের বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে মূল্যহ্রাসের আলামত দেখা যাচ্ছে। গত ৪৮ ঘন্টায় পাইকারী বাজারে বস্তাপ্রতি চালের দাম একশ থেকে দেড়শ’ টাকা পর্যন্ত কমেছে। এখানে হঠাৎ অস্থির হয়ে উঠে চালের বাজার। গরীবের মোটা চালসহ সব রকমের চালের দাম উর্ধ্বমুখী। অতীতের সকল রের্কড ছাড়িয়ে গেছে চালের দামে। বিশেষ করে মোটা চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের লোকজন। নিম্ন-মধ্যবিত্তের অবস্থাও এখন দুর্বিসহ। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারি উদ্যোগে ওএমএস চালু হলেও চালের বাজারে এখনও ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি। অবশেষে মজুতদারির বিরুদ্ধে শুরু হয় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান। অভিযানে কয়েকজন ব্যবসায়ীকে জেল-জরিমানাও করা হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এদিকে গুদাম আড়তে অভিযানসহ সরকারি নানা উদ্যোগে পাইকারি বাজারে চালের দাম কিছুটা কমলেও খুচরা বাজারে এখনও এর কোন প্রভাব পড়েনি। অভিযানের নামে ব্যবসায়ীদের যাতে হয়রানি করা না হয় সে ব্যাপারে প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে বলেছেন ব্যবসায়ী নেতারা। গত এক সপ্তাহে চালের দাম কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১২ টাকা বেড়েছে। চালের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা বড় কঠিন হয়ে পড়েছে। স্বল্প আয়ের লোকজন এখন দিশেহারা। তাদের আয়ের বিরাট অংশ চলে যাচ্ছে চাল কিনতে। বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৪৫ টাকার নীচে কোন চালই নেই। বাজারের সবচেয়ে নিম্ন মানের চাল হিসেবে পরিচিত ভারত ও মিয়ানমারের বেতি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা কেজি দরে। নুড়িপাথর আর তুষে ভর্তি এ মোটা চাল পারতপক্ষে কেউ কেনে না। বাধ্য হয়ে অনেকে এখন তা কিনছেন। ভালমানের আতপ চাল ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সিদ্ধ চালের দাম আরও বেশি। মাঝারি মানের দেশি বেতি, বিআর-২৮, মিনিকেট এসব চালের দাম এখন ৬০ টাকার উপরে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে খাদ্য বিভাগের উদ্যোগে নগরীতে ৩০ জন ডিলারের মাধ্যমে খোলা বাজারে চাল বিক্রি শুরু হয়। সেখানে প্রতিকেজি মোটা আতপ চাল বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা, আগে দাম ছিল ১৫ টাকা। সরকারিভাবেই চালের দাম দ্বিগুণ করা হলো। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৩০ টাকা দামে যে চাল দেয়া হচ্ছে তা অনেকটাই খাওয়ার অযোগ্য। মিয়ানমার ও ভিয়েতনাম থেকে আসা মোটা আতপ চালে ভুষির সাথে পাথরও মিলছে বলে জানান ক্রেতারা। আর এ কারণে অনেকে এ চাল কিনছেন না। তাছাড়া ট্রাকের বদলে ডিলারদের দোকানে চাল বিক্রি হওয়ায় ক্রেতাদের অনেকে জানেও না কোথায় চাল পাওয়া যায়। চট্টগ্রামের স্থানীয় বাসিন্দারা আতপ চাল পছন্দ করলেও অন্যরা আতপ চালের ভাত খান না। ফলে অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে খাদ্য বিভাগের এসব চাল। মহানগরীর পাশাপাশি গতকাল থেকে বৃহত্তর চট্টগ্রামের উপজেলা সদরে ৩ জন করে ডিলারের মাধ্যমে চাল বিক্রি শুরু করেছে খাদ্য বিভাগ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানেও সরকারি চালের প্রতি মানুষের আগ্রহ কম। খাদ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল চট্টগ্রামের বাজারে নিম্নমানের মোটা আতপ চালের দাম ছিল ৩৯ টাকা।
অন্যদিকে মোটা সিদ্ধ চালের দাম ছিল ৪২ টাকা। চাল ব্যবসায়ীরা জানান, বাংলাদেশে কখনোই মোটা চালের কেজি প্রতি দর ৪৫ টাকা হয়নি। বিগত তত্ত¡াবধায়ক সরকারের আমলে যখন বিশ্ব বাজারে চালের দাম রেকর্ড ছাড়িয়ে যায় তখনো বাজারে মোটা চালের দাম ৪০ টাকার কাছাকাছি ছিল। ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত এক সপ্তাহে মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা, পারিজা, ভারত-মিয়ানমার-ভিয়েতনামের বেতি আতপ ও সিদ্ধ উভয় চালের কেজিপ্রতি দাম ৭-১০ টাকা বেড়েছে। মাঝারি এবং সরু চালের দাম ১০ টাকা থেকে ১২ টাকা বেড়েছে।
চালের দরের লাগাম টেনে ধরতে গত রোববার থেকে মাঠে নামে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। ইতোমধ্যে নগরীর পাহাড়তলী, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও সদরঘাটের চালের আড়ত, গুদাম ও দোকানে অভিযান চালায় আদালত। অভিযানে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়। গ্রেফতার করা হয় কয়েকজনকে। একইসাথে চালের আড়ত হিসেবে খ্যাত কুষ্টিয়াসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন চালের মোকামে অভিযান শুরু হয়। আর এ কারণে চট্টগ্রামে চালের সরবরাহ ৪৮ ঘণ্টায় কিছুটা বেড়েছে। এতে করে পাইকারি বাজারে দামও কিছুটা কমেছে।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগির আহমদ ইনকিলাবকে বলেন, সরকারের কিছু উদ্যোগের ফলে বাজারে চালের দাম কমতে শুরু করেছে। গত ৪৮ ঘণ্টায় চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, আসাদগঞ্জসহ বিভিন্ন পাইকারি বাজারে বস্তাপ্রতি একশ থেকে দেড়শ টাকা পর্যন্ত দাম কমেছে। তিনি বলেন, চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় উত্তরবঙ্গের ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রামে চাল সরবরাহ কমিয়ে দেন। এতে করে চট্টগ্রামের বাজারে চালের সংকট দেখা দেয়, দামও বেড়ে যায়। তবে গত কয়েক ঘণ্টায় উত্তরবঙ্গ থেকে চট্টগ্রামে চাল সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে। এর প্রভাব পড়ছে এখানকার বাজারে। পাইকারি বাজারে দাম কমায় দু’একদিনের মধ্যে খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়বে। তিনি বলেন, সংকট নিরসনে সরকার এখন যেসব উদ্যোগ নিয়েছে তা আরও আগে নিলে পরিস্থিতির এতটা অবনতি হতো না। দু’তিন মাস আগেও বিশ্ববাজারে চালের দাম কম ছিল। কিন্তু এখন বিভিন্ন দেশেও চালের দাম বেড়ে গেছে। ফলে সরকারকে বেশি দামে চাল আনতে হচ্ছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মজুতদারির বিরুদ্ধে অভিযান চলতেই পারে। তবে অভিযানের নামে ব্যবসায়ীদের যাতে হয়রানি করা না হয় সে ব্যাপারে প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে হবে। আতঙ্ক সৃষ্টি করে পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।
চট্টগ্রাম চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম বলেন, যেসব এলাকা থেকে চট্টগ্রামে চাল সরবরাহ দেয়া হয় সেখান থেকে চাল আসা কমে যাওয়ায় বাজারে দাম বেড়ে গেছে। তবে গত দু’একদিন ধরে বাজারে চালের সরবরাহ বেড়েছে। দামও ধীরে ধীরে কমে আসবে। পাইকারি বাজারে দাম কমতে শুরু করেছে, খুব শিগগির খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়বে। চাকতাই চাল পট্টির ব্যবসায়ীরা জানান, গতকাল ৫০ কেজি ওজনের বস্তাপ্রতি বিভিন্ন মোটা চালের দাম কমেছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা, মাঝারি ও সররু মানের বস্তাপ্রতি চালের দাম কমেছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চাল

১১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ