পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জেনারেলরা একজন নির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধানকে নিয়ন্ত্রণ করেন, কোনো গণতন্ত্রে এ কথা শুনে কেউই স্বস্তি বোধ করবেন ন্।া যুক্তরাষ্ট্রে এ রকম কিছু হওয়ার কথা ভাবাই যায় না। এখন তাই হচ্ছে।
বিশ শতকের বিশে^ রাজনীতিতে সামরিক জান্তার দীর্ঘ উপস্থিতি ছিল। সাধারণত কঠোর মুখের তিনজন সামরিক অফিসারের একটি গ্রুপ দেশ নিয়ন্ত্রণ করত। জান্তা তাদের আজ্ঞাবহ হয়ে থাকতে রাজি বেসামরিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আনুকূল্য প্রদর্শন করত, কিন্তু আখেরে তাদের উপর নিজেদের ইচ্ছেই কার্যকর করত। সর্বসাম্প্রতিক কয়েকদশক আগে সামরিক জান্তা চিলি, আর্জেন্টিনা, তুরস্ক ও গ্রীসসহ বিশে^র গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলো শাসন করেছে।
আজকের দিনে ওয়াশিংটনের সব জায়গায় জান্তা পদ্ধতি ফিরে আসছে। আমেরিকার পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতিকে চূড়ান্ত রূপ দেয়া ক্ষমতা তিন ব্যক্তির হাতে পড়ছে। তারা হলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল ম্যাটিস, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চিফ অব স্টাফ জেনারেল জন কেলি এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেনারেল এইচ.আর.ম্যাকমাস্টার। পুরনো আমলের জান্তাদের সদস্যরা যা করতেন তারা সে রকম ভাবে সামরিক কুচকাওয়াজ পরিদর্শনের জন্য রিবন লাগান না কিংবা বিরোধীদের হত্যার জন্য ঘাতক দল পাঠান না। কিন্তু তাদের আগমন আমাদের রাজনৈতিক রীতিনীতির ভাঙ্গনে এক নতুন পর্যায় এবং আমাদের পররাষ্ট্র নীতির সামরিকীকরণকে প্রতিফলিত করছে। পড়ছে আরেকটি পর্দা।
প্রেসিডেন্টের বিশ^ ঘটনাবলী বিষয়ে অজ্ঞতার প্রেক্ষিতে ওয়াশিংটনে একটি সামরিক জান্তার আবির্ভাব স্বাগত স্বস্তির মত মনে হতে পারে। এ জান্তার তিন সদস্য ট্রাম্পের মত বা তিনি যখন হাউসে প্রবেশ করেন তখন তাকে ঘিরে থাকা কিছু খ্যাপাটে রাজনীতিকের মত নন, তারা বৈশি^ক অভিজ্ঞতায় পরিপক্ব। ইতোমধ্যেই তারা একটি স্থিতিশীল প্রভাব বিস্তার করেছেন। ম্যাটিস উত্তর কোরিয়ায় বোমাবর্ষণ করার চাপের সাথে যোগ দিতে অন্বীকার করেছেন, কেলি হোয়াইট হাউসের স্টাফদের উপর শৃঙ্খলা ব্যবস্থা আরোপ করেছেন এবং ম্যাকমাস্টার চার্লোটসভিল সহিংসতার পর ট্রাম্পের শে^তাঙ্গ জাতীয়তাবাদীদের প্রতি প্রশংসা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছেন।
জেনারেলদের শাসন বিকল্পের চেয়ে পছন্দনীয় মনে হয়। তা নয়।
আমাদের সকলের মতই সামরিক অফিসারদেরও তাদের পটভূমি ও পরিবেশ রয়েছে। ট্রাম্পের জান্তার তিনজনের সম্মিলিত চাকুরিকাল ১১৯ বছর। তারা স্বাভাবিক ভাবেই একটি সামরিক প্রেক্ষাপট থেকেই বিশ^কে দেখেছেন এবং তারা এর সমস্যার সামরিক সমাধানের পক্ষপাতী। এটা একগুচ্ছ বিকৃত জাতীয় অগ্রাধিকারের দিকে ঠেলে দেয় যাতে অভ্যন্তরীণ বিষয়ের চেয়ে সামরিক প্রয়োজনকেই অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ বলে নির্ধারণ করা হয়।
ট্রাম্প পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে তিনি যখন পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন তখন জেনারেলদের চেয়ে তার মত ভিন্ন হবে। নয়া জান্তার শক্তমানব ম্যাটিস ছিলেন মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়ায় মার্কিন যুদ্ধ পরিচালনাকারী সেন্ট্রাল কমান্ডের সাবেক প্রধান। কেলি ইরাক যুদ্ধে ছিলেন। ম্যাকমাস্টার ১৯৯১ সালে উপসাগর যুদ্ধে একটি ট্যাংক কোম্পানি নেতৃত্ব দেয়ার সময় থেকে একটানা ভাবে ইরাক ও আফগানিস্তানে সৈন্যদের কমান্ডার ছিলেন।
সামরিক কমান্ডাররা যুদ্ধ করার জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, কোনো লড়াইয়ের কৌশলগত অর্থ কি হবে সে সিদ্ধান্ত তাদের নয়। উদাহরণ স্বরূপ, তারা ট্রাম্পকে এ পর্যন্ত বলতে পারেন যে আফগানিস্তানে আমাদের মিশন চালিয়ে যেতে কি পরিমাণ সৈন্য লাগবে, কিন্তু এ মিশন আমেরিকার দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থ উদ্ধার করবে কি না সে বিরাট বিষয়ে প্রশ্ন করা বা উত্তর দেয়ার জন্য তারা প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত নন। সঠিক অর্থে এটা হচ্ছে কূটনীতিকদের কাজ। সৈন্যদের মত মানুষ হত্যা ও ভাংচুর করা তাদের কাজ নয়, কূটনীতিকরা সমস্যা নিয়ে আলোচনা, বিরোধ নিরসন, ঠান্ডা মাথায় জাতীয় স্বার্থ মূল্যায়ন ও তা এগিয়ে নিতে নীতি প্রণয়নের জন্য তারা প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। উত্তর কোরিয়ার ব্যাপারে তুলনামূলক ভাব ম্যাটিসের সংযত মনোভাব সত্তে¡ও ট্রাম্প জান্তার এ তিন সদস্যের সবাই সংঘাতমূলক মনোভাব পোষণ করেন যা ইউরোপ ও পূর্ব এশিয়ায় উত্তেজনা বৃদ্ধিসহ আফগানিস্তান ও ইরাক এবং তার বাইরেও যুদ্ধ প্রলম্বিত করেছে।
আমাদের নয়া জান্তা কোনো ক্ল্যাসিক জান্তা যেমন থাইল্যান্ডের ‘ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর পিস অ্যান্ড অর্ডার’ েেথকে ভিন্ন যারা এখন সে দেশ শাসন করছে। প্রথমত আমাদের জান্তার আগ্রহ শুধু আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রতি, অভ্যন্তরীণ নীতির প্রতি নয়। দ্বিতীয়ত তারা কোনো অভ্যুত্থান করে ক্ষমতা দখল করেননি, বরং তারা ক্ষমতা লাভ করেছেন একজন নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের আনুকূল্যে। তৃতীয়ত ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল নতুন কোনো শৃঙ্খলা ব্যবস্থা আরোপ তাদের প্রধান লক্ষ্য নয়, বরং পুরনো একটিকে বলবত করাই তাদের লক্ষ্য।
গত মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আফগানিস্তানে আমেরিকার যুদ্ধ বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের সম্মুখীন হন। এটি ছিল একটি সম্ভাব্য ক্রান্তিলগ্ন। চার বছর আগে ট্রাম্প টুইট করেছিলেন, এখন আফগানিস্তান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। যদি তিনি এ আবেগকে মূল্য দিতেন ও ঘোষণা করতেন যে তিনি আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য- দের দেশে ফিরিয়ে আনছেন তাহলে ওয়াশিংটনের রাজনৈতিক ও সামরিক এলিটরা স্তম্ভিত হতেন। কিন্তু জান্তা সদস্যরা কাজে নেমে পড়েন। তারা ট্রাম্পকে ঘোষণা করাতে রাজি করান যে সৈন্য প্রত্যাহারের বদলে তিনি উল্টো করবেনঃ আফগানিস্তান থেকে দ্রুত প্রত্যাহারের বদলে সৈন্য আরো বৃদ্ধি ও সন্ত্রাসী হত্যা অব্যাহত রাখবেন।
এটা বড় কোনো বিস্ময় নয় যে ট্রাম্পকে পররাষ্ট্র নীতির মূলধারায় টেনে আনা হয়েছে , যেমনটি প্রেসিডেন্ট ওবামার ক্ষেত্রেও হয়েছিল হয়েছিল তার মেয়াদের প্রথম দিকে। আরো আশঙ্কাজনক হচ্ছে যে ট্রাম্প তার ক্ষমতার বড় অংশই জেনারেলদেরকে দিয়েছেন। সবচেয়ে খারাপ বিষয় হচ্ছে অনেক আমেরিকানই একে ভরসাজনক মনে করছে। তারা আমাদের রাজনীতিক শ্রেণির দুর্নীতি ও অদূরদর্শিতায় এতই বীতশ্রদ্ধ যে বিকল্প হিসেবে তারা সৈনিকদের দিকে তাকিয়েছে।
এ এক মারাত্মক প্রলোভন।
* স্টিফেন কিনজার-এর এ নিবন্ধটি দি বোস্টন গেøাব-এ প্রকাশিত হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।