Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভাতের বদলে পায়েস খাব!

স্টালিন সরকার : | প্রকাশের সময় : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশের মানুষ সেদ্ধ চালের ভাত খেতে অভ্যস্ত। শর্না-নাজিরশাইল-পায়জাম-ইরি যে নামে ডাকা হোক না কেন চাল হতে হবে সেদ্ধ। পৌঁষ পার্বণে মূলত আতব চালের ব্যবহার হয় বেশি। শখ করে আতব বা সুগন্ধি চালের পিঠে পায়েস খায় মানুষ। সিলেট অঞ্চলের কিছু এলাকায় আতব চালের ভাত খাওয়া হলেও প্রতিবছর দেশে ভাতের জন্য যে পরিমান সেদ্ধ চালের প্রয়োজন পড়ে; তার ১০ ভাগের এক ভাগ আতব-সুগন্ধি চালের চাহিদা আছে কিনা সন্দেহ। অতএব বর্তমান দেশে যে চালের সংকট চলছে তা পূরণে সেদ্ধ চাল আমদানী অত্যাবশ্যক। সরকার দু’দফায় চাল আমদানীর ওপর শুল্কহার কমিয়ে বর্তমানে মাত্র ২ শতাংশ করেছে। শুল্ক হার কমায় চালের মূল্য কেজিতে ৬ টাকা কমার কথা। কিন্তু ভারত থেকে যে চাল আমদানী করা হয়েছে তার বেশির ভাগই আতব চাল। আবার গতকাল খাদ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন রোহিঙ্গা মুসলিম নিধনযজ্ঞের দেশ মিয়ানমার থেকে এক লাখ টন আতব চাল আমদানীর চুক্তি করা হয়েছে। যেখানে ভাতের চালের প্রয়োজন সেখানে পিঠে পায়েসের চাল আমদানী?
দেশে চাউল নিয়ে চালবাজি চলছে অনেকদিন থেকে। দেশের চালকল মালিক ও চাল ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চালের মূল্য বাড়িয়ে দেয়ায় ধানের দেশে চালের আকাল পড়েছে। ভাতের চাল কিনতেই মানুষের নাভিশ্বাস। এরই মধ্যে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম জানিয়েছেন মিয়ানমার থেকে এক লাখ টন আতপ চাল আমদানির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে। সে অনুযায়ি দুই দেশের মধ্যে একটি প্রাথমিক চুক্তি সই হয় ১৭ সেপ্টেম্বর হোটেল সোনারগাঁওয়ে। চুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষে সই করেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কায়কোবাদ এবং মিয়ানমারের পক্ষে দেশটির রাইস ফেডারেশনের (এমআরএফ) ভাইস প্রেসিডেন্ট অং থান উ। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী যখন রোহিঙ্গা মুসলিম হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে; তখন স্ত্রীকে নিয়ে সে দেশে চাল কিনতে যান খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। যদিও বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে মিয়ানমারের পণ্য বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। গণজাগরণ মঞ্চ এবং দেশের ইসলামী দলগুলো দেশবাসীর প্রতি মিয়ানমারের পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। খাদ্যমন্ত্রী জানান, প্রতি বছর ১০ লাখ টন চাল আমদানির জন্য মিয়ানমার সরকারের কাছে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। দেশটি রাজি হয়েছে মাত্র ৩ লাখ টন চাল দিতে। তার মধ্যে এক লাখ টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রশ্ন হলো ভাতের জন্য সেদ্ধ চালের যখন প্রয়োজন যখন পিঠা পায়েসের চাল আমদানীর মাজেজা কি?
ভাতের জন্য সেদ্ধ চালের যখন প্রয়োজন তখন বিদেশ থেকে আতব চাল আমদানীর ঘটনা ফরাসি বিপ্লবের রানীর ঐতিহাসিক উক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ফরাসি বিপ্লবের সময় সে দেশে প্রচন্ড দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। খাবারের দাবিতে নিত্যদিন মানুষ শহরে মিছিল-মিটিং করে। একদিন রানী বের হন দেশের জনগণের অবস্থা স্বচক্ষে দেখতে। পথে হঠাৎ রানীর চোখে পড়ে বিক্ষুব্ধ কিছু মানুষ বিক্ষোভ করছে। হাড্ডিসার উৎশৃংখল লোকজন একটি অট্টালিকা ঘেড়াও করে রেখেছে। খাদ্যের দাবিতে ভুখা-মিছিলের দৃশ্য দেখে রাণী জানতে চান ‘এরা মিছিল করছে কেন?’ তাকে বলা হলো যে ‘খাওয়ার জন্য রুটি না পাওয়ায় তারা মিছিল করছে।’ রুটির জন্য মিছিল শুনে রাণী অবাক! বিষ্ময় প্রকাশ করে রানী বলেন ‘রুটি নেই তাতে সমস্যা কি? ওরা তো কেক খেলেই পারে।’ এখনো কি একইরূপ নিষ্ঠুর রসিকতা আমাদের সঙ্গে করা হচ্ছে? ভাতের জন্য সেদ্ধ চাল আমদানী করার বদলে বিদেশ থেকে আনা হচ্ছে পিঠা-পায়েসের আতব-সুগন্ধি চাল। মানুষ আতপ চাল নিচ্ছে না। আমরা কি তাহলে ভাতের বদলে পিঠে-পায়েস খেতে অভ্যস্ত হবো?



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভাত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ