Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আকাশসীমা লঙ্ঘন করায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করতে হবে -ইসলামী নেতৃবৃন্দ

রোহিঙ্গাদের মানবিক বিপর্যয় রোধ করুন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রোহিঙ্গা হত্যা নির্যাতন ও মিয়ানমার জান্তার বার বার বাংলাদেশের আকাশ সীমা লঙ্গনের প্রতিবাদে এবং আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মানবিক বিপর্যয় রোধে সেনাবাহিনী মোতায়নের দাবিতে বিভিন্ন ইসলামি দল গতকাল পৃথক পৃথক মানববন্ধন ও অন্যন্য কর্মসূচি পালন করেন। নেতৃবৃন্দ আকাশ সীমা লঙ্গন করায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে বহিস্কার দাবি করেন।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস মহানগর
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক বলেছেন, মিয়ানমারের বিমান বাংলাদেশে আকাশ সিমানায় প্রবেশের মাধ্যমে সীমান্ত আইন লঙ্গন করেছে। সুতরাং মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে বহিস্কার করতে হবে। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ চললেও এখনো মিয়ানমারে মুসলিম হত্যা, নির্যাতন ও তাদের ঘর-বাড়ি জালানো বন্ধ হয়নি। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সৈন্য পাঠিয়ে আরাকানকে স্বাধীন করে রোহিঙ্গা মুসলমানদের অধিকার প্রতিষ্ঠায়ই এর একমাত্র সমাধান। তিনি আরো বলেন, মিয়ানমার মুসলমানদের রক্ত নিয়ে খেলছে আর বাংলাদেশ সরকার তাদের থেকে চাউল ক্রয় করছে, এটা কোনোভাবেই মানা যায় না। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মানবিক বিপর্যয়ের বিষয়টি সরকারকে গুরুত্বসহকারে নিতে হবে। সরকারী আশ্রয় কেন্দ্রে মাত্র কয়েক হাজার রোহিঙ্গা স্থান পেয়েছে, অবশিষ্ট লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী পাহাড়ে, জঙ্গলে, পথে-প্রান্তরে আশ্রয় নিয়েছে। খাদ্য নেই, পানি নেই, ওষুধ নেই এমন ভয়ানক পরিস্থিতিতে একশ্রেণীর দালাল, সুবিধাবাদী, সরকারী দলের লোক এ সুযোগে রোহিঙ্গাদের প্রতারিত করছে। এমতবস্থায় সরকারের উচিৎ সেনাবাহিনী নিয়োগ করে এসব শরণার্থীদের শৃঙ্খলায় এনে মানবিক বিপর্যয় রোধ করা। এটাই এখন সরকারের গুরু দায়িত্ব। তিনি দেশবাসী ও বিশ্ববাসী সকলকে সামর্থ্যের আলোকে মজলুম রোহিঙ্গাদের সাহায্য সহযোগিতায় এগিয়ে আসার আহবান জানান। তিনি হেফাজতে ইসলামের আজ মিয়ানমার দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচী সফল করার জন্য দলের নেতা-কর্মী ও ইসলাম প্রিয় তাওহিদী জনতার প্রতি উদাত্ত আহবান জানান।
তিনি গতকাল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগরীর বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। মহানগর সভাপতি মাওলানা এনামুল হক মূসার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাওলনা রুহুল আমীন খানের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন যুগ্ন-মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, কেন্দ্রীয় অফিস ও বায়তুলমাল সম্পাদক মাওলানা আজিজুর রহমান হেলাল, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাওলানা মুহসিনুল হাসান, সহ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাওলানা হারুনুর রশীদ, মহানগর সহ-সভাপতি মাওলানা আবু ইউসুফ মুহাম্মদ নাসির, সহ-সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ছানাউল্লাহ, মাওলানা আতিক উল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা কামালুদ্দীন ফারুকী, বায়তুলমাল সম্পাদক মাওলানা শামসুল আলম,সহ-বায়তুলমাল সম্পাদক মাওলানা আমানুল্লাহ, সহ-প্রশিক্ষণ সম্পাদক রিজওয়ান হোসাইন, মাওলানা মিজানুর রহমান, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাওলানা এহসানুল হক প্রমূখ।
ইসলামি সমাজের মানববন্ধন
‘ইসলামি সমাজ’ এর আমীর হযরত সৈয়দ হুমায়ূন কবীর বলেছেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও পুলিশ সে দেশের সরকারের নির্দেশে রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যা করছে, জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারছে এবং রোহিঙ্গা অধিবাসীদের বাড়ী-ঘর জ্বালিয়ে দেশ থেকে তাদের বেড় করে দি”েছ, লুটপাট করছে, নারীদেরকে ধর্ষণ করছে, এসব জঘন্যতম মানবতা বিরোধী অপরাধ দ্রæত বন্ধ হওয়া জরুরী। তিনি বলেন, এসব অপরাধ বন্ধে জাতিসংঘের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন নেতাদের দ্রæত কর্যকরী যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করে রোহিঙ্গাদেরকে তাদের নিজ দেশে স্থায়ীভাবে তাদের নাগরিক অধিকারসহ শান্তিপূর্ন বসবাসের সু ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এলক্ষ্যে তিনি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ)র চলমান ৭২তম অধিবেশনে বিভিন্ন রাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন নেতাদেরকে সম্মিলিতভাবে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহনের আহŸান জানান।
গতকাল সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তায় অনুষ্ঠিত মানব বন্ধনে ইসলামি সমাজের আমীর বলেন, ইতিমধ্যে বাংলাদেশে শরনার্থী হিসাবে আশ্রয়গ্রহনকারী রোহিঙ্গা মুসলমানদের প্রয়োজন ও কল্যাণে প্রয়োজনীয় সকল সহযোগীতা দল-মত ও জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকলেরই করতে হবে। তিনি বলেন এলক্ষ্যে ইসলামি সমাজ আগামী ২০ সেপ্টেম্বর রোজ বুধবার ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে নগদ টাকার একটি অনুদান প্রতিনিধি টিমের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণতহবিলে প্রদান করবে ইনশাআল্লাহ। রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে এবং বাংলাদেশ থেকে শরনার্থী রোহিঙ্গাদেরকে তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য জাতিসংঘের মাধ্যমে ব্যবস্থা করার প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি তিনি আহŸান জানান।
মানব বন্ধনে ইসলামি সমাজের সদস্য ও নেতা মুহাম্মাদ ইয়াছিনের পরিচালনায় আরো বক্তব্য রাখেন আবু জাফর মুহাম্মাদ ইকবাল, মুহাম্মাদ ইউসুফ আলী ও সোলায়মান কবীর প্রমুখ।
ইসলামি আন্দোলন দক্ষিণ
মিয়ানমারের ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্য বর্বরতা, হত্যাযজ্ঞ ও নারী-শিশু নির্যাতন বন্ধের দাবিতে আগামী ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকাস্থ জাতিসংঘ কার্যালয় অভিমুখে গণমিছিল সফলের লক্ষ্যে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিভিন্ন কর্মসুচি গ্রহণ করেছে। সে লক্ষ্যে গতকাল সংগঠনের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে সকল সহযোগি সংগঠনসমূহের যৌথ সভা আলহাজ্ব মাওলানা ইমতিয়াজ আলমের সভাপতিত্বে পুরানা পল্টনস্থ আএবি মিলনায়নে অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংগঠনের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাঁচাতে হবে। হিংস্র হায়েনাদের কঠোরহস্তে জবাব দিতে হবে। তাই আরাকান স্বাধীন করাই মুসলমানদের এখন একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত। এ লক্ষ্যে বিশ্বমুসলিম নেতৃবন্দকে স্ব স্ব সামরিক শক্তি ব্যবহার করে আরাকানে স্বাধীনতা সংগ্রামের সুচনা করতে হবে। মাওলানা ইউনুছ আহমাদ আগামী ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকাস্থ জাতিসংঘ কার্যালয় অভিমুখে গণমিছিল সফলের আহŸান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা ইমতিয়াজ আলম বলেন, আরাকানের মুসলমানদের বাঁচতে দিতে হবে এবং বাঁচাতে হবে। তাদের তেল ও খনিজ সম্পদকে রক্ষা করতে হবে। আরাকান স্বাধীনে সকলকে কাজ করতে হবে।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আলহাজ্ব আব্দুর রহমান, আলহাজ্ব আলতাফ হোসেন, মাওলানা এবিএম জাকারিয়া, ডা. শহিদুল ইসলাম, মাওলানা ফখরুল ইসলাম, যুবনেতা মুফতি মানসুর আহমদ সাকী, মাওলানা আব্দুল আহাদ, ছাত্রনেতা বায়েজিদ হোসাইন, শ্রমিকনেতা শাব্বির আহমদ সাব্বির, শাহাদাত হোসেন প্রমুখ।
নির্যাতনে তাদের হৃদয় কাঁদে না। তিনি বাংলাদেশ সরকারকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক আদালতে অং সান সুচির বিরুদ্ধে মামলা করার আহŸান জানান।
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমীর ও হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মাওলানা শাহ আতাউল্লাহ হাফেজ্জী মিয়ানমার রোহিঙ্গা মুসলমানদের গণহত্যা ও জুলুম-নির্যাতন এবং মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের অপরাধে মিয়ানমার সরকারের সাথে বাংলাদেশসহ সকল মুসলিম রাষ্ট্রের কুটনৈতিক, অর্থনৈতিকসহ সকল প্রকার সম্পর্ক ছিন্ন করার আহবান জানিয়েছেন। তিনি অবিলম্বে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের দূতাবাস বন্ধ এবং রাষ্ট্রদূুতকে বহিস্কার করার আহবান জানান।
গতকাল রোববার বাদ আছর রাজধানী ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে হেফাজতে ইসলাম কামরাঙ্গীরচর জোনের উদ্যোগে আয়েজিত বিক্ষোভ মিছিল শেষে সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। হেফাজত ইসলাম কামরাঙ্গীরচর জোনের সভাপতি ও খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা হাবীবুল্লাহ মিয়াজীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরো বক্তব্য রাখেন -হেফাজত ইসলাম ঢাকা মহানগর যুগ্ন সম্পাদক মাওলানা মুজীবুর রহমান হামিদী, মুফতি ফখরুল ইসলাম, মাওলানা সুলতান মহিউদ্দীন, মাওলানা হাফেজ মুহিব্বুল্লাহ ফরাজী ও মাওলানা কামাল হোসাইন প্রমুখ।
সভায় বক্তাগণ মজলুম রোহিঙ্গা মুসলমানদের গণহত্যা ও নিপীড়ন-নির্যাতনের প্রতিবাদে হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ ঘোষিত ১৮ সেপ্টেম্বর সোমবার মিয়ানমার দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচি সফল করতে ১১ টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেটে দলমত নির্বিশেষে জমায়েত হওয়ার আহবান জানান ।
খেলাফত মজলিস
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেছেন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিশ্ববাসীকে সোচ্চার ভূমিকা পালন করতে হবে। সামর্থবান সবাইকে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা প্রদানে এগিয়ে আসতে হবে। গতকাল কক্সবাজারের টেকনাফে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণকালে তিনি এ কথা বলেন।
খেলাফত মজলিসের মহাসচিবের নেতৃেত্ব টেকনাফ, হোয়াইক্যং, বালুখালী, কুতুপালংয়ে রোহিংগা শরনার্থীদের মাঝে ত্রাণ বিতরণকালে অন্যান্যের সাথে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রিয় নেতা অধ্যাপক আব্দুল জলিল, মাওলানা নূরুল আলম আল মামুন, কক্সবাজার জেলা সভাপতি মাওলানা আবু মুসা, সেক্রেটারি মাওলানা জুনায়েদ মাহমুদ সাহেদ, মাওলানা মুফতি আব্দুল হক, শহর সভাপতি মাওলানা ওমর ফারূক, মাওলানা শাহাদত হোসেন, হাফেজ রফিকুল ইসলাম। একই সাথে বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্র মজলিস কেন্দ্রিয় সভাপতি মুহাম্মদ আজিজুল হকের নেতৃত্বে আজ টেকনাফ, শাহ পরীর দ্বীপ ও আশপাশের এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মিয়ানমার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ