পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আরাকানে শতাব্দীর পর শতাব্দী বসবাসকারী রোহিঙ্গা মুসলিমদের নিধনে সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে এখন বন্ধুহীন হয়ে পড়েছে মিয়ানমার। আর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে ক্রমেই একাট্টা হচ্ছে বিশ্ব। একে একে সরে পড়ছে মিয়ানমারের পাশে থাকার দাবিদার বিভিন্ন দেশ। জাতিসঙ্ঘসহ বিশ্বের অনেক সংস্থা ও মানবাধিকার গ্রুপ রোহিঙ্গা নির্মূলের জন্য মিয়ানমারের নিন্দা জানিয়ে অবলম্বে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া রোহিঙ্গা মুসলিমদের ফেরৎ নিতে দেশটির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল প্রমাণসহ হাজির করেছে গত ২৫ আগস্ট থেকে পর্যায়ক্রমে জ্বালিয়ে দেয়া বিভিন্ন গ্রামের নকশা। বিভিন্ন খবরে বা ছবির দৃশ্যে যে আগুন লাগিয়ে নৃশংসতার কথা বলা হচ্ছে তা মুসলিম এলাকার ৪০ শতাংশ বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। দেশটির প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র স্বীকারও করেছেন যে, ১৭৭টি গ্রাম এখন পুরোপুরি মানবশূন্য এবং ৩৪টি গ্রাম আংশিক পরিত্যক্ত। এর অর্থ এসব গ্রামে আগুন দিয়ে সেখানকার রোহিঙ্গা মুসলিম বাসিন্দাদের হয় হত্যা, নয়তো তাড়িয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া হয়েছে। আগামী মঙ্গলবার দেশটির নেত্রী অং সান সু চি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন এবং সেই ভাষণে ‘ক্লিনজিং অপারেশন’ সম্পন্ন হবার দাবি করতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে মিয়ানমারের ক্লিনজিং অপারেশন অব্যাহত থাকার মধ্যে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশটির বিরুদ্ধে সব মহল সোচ্চার হয়ে প্রতিবাদ করছে। জাতিসঙ্ঘ, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে রোহিঙ্গাদের সাথে সহমর্মিতা প্রকাশ, ক্লিনজিং অপারেশন বন্ধ এবং বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া রোহিঙ্গাদের অবিলম্বে ফিরিয়ে নেবার দাবি জানানো হয়েছে। ইউনিসেফ বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৪ লক্ষাধিক উল্লেখ করে জানিয়েছে, এদের মধ্যে রয়েছে দুই লক্ষাধিক শিশু এবং তারা রয়েছে ঝুঁকির মধ্যে। এরা নানাভাবে অপুষ্টির শিকার এবং মাতৃ-পিতৃহীন অবস্থায় বেড়ে উঠলে এদের মধ্যে সুস্থ মানসিকতার বিকাশ না ঘটার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়েছেন। রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীও। গতকাল বিকেলে এক টুইটে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন তিনি। গত কয়েকমাস ধরেই মিয়ানমারের বাংলাদেশ লাগোয়া রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে বিতর্ক চলছে। মিয়ানমার সরকারের অত্যাচারে ঘর ছাড়তে হয়েছে বলে দাবি রোহিঙ্গাদের। একই সঙ্গে ইতিমধ্যে ভারতে বসবাসকারী ৪০ হাজার রোহিঙ্গাকে দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে ভারত সরকার। এই পরিস্থিতিতে মমতা ব্যানার্জীর টুইট বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
এদিন মমতা টুইটারে লেখেন, রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে জাতিসংঘ যে আবেদন জানিয়েছে, তাতে আমরা রোহিঙ্গাদের সমর্থন করি। সমস্ত মানুষ সন্ত্রাসবাদী নয়। আমরা বিষয়টিতে সত্যিই ভাবিত।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন ও ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন লন্ডনে এক সংবাদ সম্মেলনে রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চিকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। লন্ডন সফররত টিলারসন বলেছেন, রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর মিয়ানমারের বাহিনীর সহিংসতা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং অবিলম্বে এটা বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, ‘অং সান সুচি যে কঠিন এবং জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন, সেটা আমরা বুঝতে পারছি। জাতিগত পরিচয়ে বাইরে গিয়ে মানুষের সাথে আচরণ কী হবে আমরা সবাই সেটা জানি। আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ও তাই সমর্থন করে। কিন্তু এই সহিংসতা অবশ্যই থামাতে হবে, মানুষের ওপর এই নির্যাতন থামাতেই হবে।’
এর আগে জাতিসংঘ মহাসচিব এই অভিযানকে ‘জাতিগত নিধন’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তার বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে টিলারসন বলেন, এটাও বন্ধ করতে হবে।
ওই সংবাদ সম্মেলনে টিলারসনের পাশে থাকা ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনও বলেছেন রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বন্ধে মিয়ানমারের প্রকৃত ক্ষমতাধর নেতা অং সান সু চিকেই তার নৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অং সান সুচি যেসব মূল্যবোধে বিশ্বাস করেন, যেভাবে তিনি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন, সেই জন্য তার প্রতি আমার প্রশংসা কারো কথায় কমে যাবে না। আমি জানি বিশ্বব্যাপী বহু মানুষও একইভাবে তার গুণমুগ্ধ।’ তবে রাখাইনের মানুষের দুর্দশা বন্ধে সু চিকে এখন তার নৈতিক কর্তৃত্ব ব্যবহার করতে হবে বলে জানান ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
জেনেভায় সংবাদ সম্মেলন করে বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের (ইউএনএইচসিআর) মুখপাত্র ভিভিয়ান জানান, মিয়ানমারের রাখাইনে কমপক্ষে এক হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। জাতিগত নিধনের মুখে প্রায় ৩ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে।
সু চি’র অবস্থান পুনর্বিবেচনার আহŸান মিয়ানমারের নির্বাসিত ৮ নাগরিকের
রোহিঙ্গা ইস্যুতে অং সান সু চিকে তার অবস্থান পুনর্বিবেচনার আহŸান জানিয়ে এক আবেগঘন খোলা চিঠি লিখেছেন দেশটির নির্বাসিত আটজন নাগরিক। বার্মিজ সমাজ ‘জাতিগত ঘৃণা ও ধর্মীয় গোঁড়ামির’ অতল গহŸরে পতিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তারা। চিঠির লেখকেরা বলেছেন, জন্মস্থান মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতিতে দুঃখ ভাগাভাগি করতে তারা এই চিঠি লিখছেন। চিঠিতে সু চির ব্যক্তিগত উত্তরাধিকার, জনগণের দুর্দশা এবং জাতি হিসেবে মিয়ানমারের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। চিঠির লেখকেরা উল্লেখ করেছেন, তাদের পরিবারের কিছু সদস্য ও বাবারা সু চির প্রয়াত বাবা জেনারেল অং সানের সমকালীন ছিলেন। ছিলেন সহকর্মী। সু চির বাবার মতো তারাও দেশের কল্যাণে অবদান রেখেছেন।
১৯৮৮ সালে সু চির দেয়া প্রথম বক্তৃতার প্রসঙ্গ টেনে লেখকেরা বলেন, জনগণ যত দিন নিপীড়নের শিকার হতে থাকবে, তত দিন কথা বলবেন বলেছিলেন। তার এই সঙ্কল্প ও সাহসিকতায় তারা (লেখকেরা) দারুণভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।
লেখকেরা বলেছেন, তাদের বাবা-মা ও প্রজন্মের কাছ থেকে সু চির জীবন উৎসর্গকারী বাবা যে ভালোবাসা, সম্মান ও বিশ্বাস অর্জন করেছিলেন; লাখো বার্মিজের মতো তারাও তা তাকে (সু চি) দিয়েছেন।
সু চির দীর্ঘ গৃহবন্দীর কথা উল্লেখ করে লেখকেরা বলেছেন, ওই সময় তারা তার (সু চি) পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। সু চির স্বাধীনতা এবং নেতৃত্বের সমর্থনে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আন্দোলন গড়তে তারা ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে যথাসাধ্য সবকিছুই করেছিলেন।
সামরিক জান্তার নিপীড়ন বন্ধে সু চির ডাকে রোহিঙ্গাসহ জাতি-ধর্মনির্বিশেষে সবাই সাড়া দিয়েছিল বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন লেখকেরা। তারা বলেছেন, সু চি যখন মুক্তি পান, তখন তারা উৎফুল্ল হয়েছিলেন। গণতন্ত্রের লক্ষ্যে সু চি কীভাবে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেন, তার অপেক্ষায় ছিলেন তারা। কিন্তু তিনি তার দক্ষ সমর্থক ও সহযোগী ভিন্নমতাবলম্বীদের সঙ্গে কোনো আলোচনাই করেননি। বুদ্ধিবৃত্তিক ও পেশাদারি পরামর্শের জন্য অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের ব্যাপারে কোনো আগ্রহই দেখাননি তিনি।
মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনীতিবিদ সু চির বিবৃতিতে লেখকেরা মর্মাহত বলে জানিয়েছেন।
লেখকেরা সু চির সরকারের গঠন-প্রকৃতিতে উদ্বিগ্ন। তাদের মতে, সরকারে এনএলডির সর্বজন শ্রদ্ধেয় ও অভিজ্ঞ জ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নেই। অভিজ্ঞ যারা আছেন, তারা সাবেক সেনা কর্মকর্তা। তারা সেই গোষ্ঠীর লোক, যারা সু চিকে বন্দী করেছিলেন, যারা গত ৫০ বছর জাতিকে নিপীড়ন করেছেন। সু চির কাছে লেখকেরা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘আমরা কোন দিকে যাচ্ছি?’
মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক রূপান্তর কি পুরোপুরি ঘুরে গেছে? মিয়ানমার কি স্বৈরতন্ত্রে ফিরে গেছে?-এমন প্রশ্নও তুলেছেন লেখকেরা।
সু চিকে উদ্দেশ করে লেখকেরা বলেছেন, মিয়ানমারে মুক্ত গণমাধ্যম উৎসাহিত করা উচিত। ভিন্ন মতাবলম্বীদের পদ দেওয়া উচিত। নীতি নিয়ে বিতর্ক হওয়া উচিত। জেনারেলদের সঙ্গে বিশ্বাস স্থাপনের পাশাপাশি দেশের সব জাতি-ধর্মের মধ্য থেকে পরবর্তী প্রজন্মের নেতা গড়া উচিত।
সু চিকে তার বাবার স্মৃতি স্মরণ এবং সরকারে তার অবস্থান উল্লেখ করে লেখকেরা এই নেত্রীকে গণতান্ত্রিক নীতি ও মানবিক দিক বিবেচনায় একটি শক্ত অবস্থান গ্রহণের আবেদন জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতার অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে। এ বিষয়ে কাজ করতে সু চির নৈতিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
চিঠির শেষের দিকে সু চিকে উদ্দেশ করে লেখকেরা বলেছেন, তিনি এখনো ক্ষত নিরাময় করতে পারেন। ঐক্যের প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে পারেন। মিয়ানমারের নির্বাচিত নেতা হিসেবে এ বিষয়ে সু চির উদ্যোগ আশা করছেন তারা।
সু চির মঙ্গল কামনা করে এবং তিনি শান্তির পথে হাঁটবেন- এই প্রত্যাশা জানিয়ে লেখকেরা চিঠি শেষ করেছেন। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন: ১। কো অং (যুক্তরাজ্য), ২। তুন অং (যুক্তরাষ্ট্র), ৩। কিন ওয়ং (অস্ট্রেলিয়া), ৪। বিলাল রাসিচিড (যুক্তরাষ্ট্র), ৫। ইউ কেয়া উইন (যুক্তরাষ্ট্র), ৬। হারান ইয়ানগি (কানাডা), ৭। মুং জার্নি (যুক্তরাজ্য), ৮। মোয়েথি জুন (যুক্তরাষ্ট্র)।
রোহিঙ্গাদের ওপর আরও তাÐব চালাবে মিয়ানমার : এইচআরডবিøউ
রোহিঙ্গা মুসলমিদের ওপর মিয়ানমার আরও তাÐব চালাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডবিøউ)। আন্তর্জাতিক এই মানবাধিকার সংস্থাটির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘মংডু শহরের নতুন এলাকার গ্রামগুলোকে তাÐবের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হচ্ছে। ১১ থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর স্যাটেলাইটে ধরা পড়া সক্রিয় আগুনের চিত্র এমনটাই নির্দেশ করছে।’ গতকাল এক বিবৃতিতে এই আশঙ্কার কথা জানিয়েছে এইচআরডবিøউ। সংগঠনটি এর আগেও রোহিঙ্গা মুসলিম নিধনের নিন্দা, নির্যাতন বন্ধ এবং তাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেবার আহŸান জানিয়েছিল।
এর আগে আরেক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল রোহিঙ্গাদের বাড়িতে আগুন দেওয়ার স্যাটেলাইট ছবি প্রকাশ করে। ওই ছবি প্রকাশের পরই এ বিবৃতি দিলো এইচআরডবিøউ। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর ছেড়ে যেতে বাধ্য করার পর বর্মী সেনাবাহিনীর জাতিগত নিধনের প্রধান কাজ হয়ে উঠেছে নির্বিচারে অগ্নিসংযোগ। এইচআরডবিøউ-এর এশিয়া অঞ্চলের উপ-পরিচালক ফিল রবার্টসন। তিনি বলেন, স্যাটেলাইটের ছবি আর আমাদের মাঠ পর্যায়ের সমীক্ষা একই রকম কথা বলছে। নির্বিচারে রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনায় সরাসরি দায়ী মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।
মিয়ানমারের সরকারি হিসাবে, এরইমধ্যে দেশটির ৪০ শতাংশ রোহিঙ্গা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। ফলে বাদবাকি রোহিঙ্গাদের দেশছাড়া করতেই সেনাবাহিনী নতুন করে নির্বিচারে অগ্নিসংযোগের পরিকল্পনা করছে বলে মনে করা হচ্ছে।
রোহিঙ্গা বিষয়ে বাংলাদেশের প্রশংসা করে ইইউ পার্লামেন্টে প্রস্তাব
ইউরোপীয় পার্লামেন্ট মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা বিশাল রোহিঙ্গা জনস্রোত সামলানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানবিক পদক্ষপের প্রশংসা করে বৃহস্পতিবার একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে এবং ইইউভুক্ত দেশগুলোর প্রতি মিয়ানমারের ওপর অবরোধ আরোপের বিষয় বিবেচনার আহŸান জানিয়েছে। ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত ইইউ পার্লামেন্ট অধিবেশনের প্রস্তাবে বলা হয়, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এই মানবিক বিপর্যয়ের মুখে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সুরক্ষা সুগমে বাংলাদেশের প্রচেষ্টার স্বীকৃতি দিচ্ছে।
ইউরোপীয় পার্লামেন্ট প্রতিবেশী অন্যান্য দেশের প্রতি রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার কারণে পালিয়ে আসা সকল রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ঢুকতে দেয়ার আহŸান জানিয়েছে। তারা এসব শরণার্থীর জন্য আর্থিক ও বস্তুগত সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে (ইউরোপীয়) কমিশন ও ইইউভুক্ত দেশগুলোর প্রতিও আহŸান জানিয়েছে। একই সাথে প্রস্তাবে এটাও বলা হয় যে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোকে এটি পরিষ্কার করতে হবে যে, আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন অব্যাহত থাকলে তারা ব্যক্তিবর্গ ও প্রতিষ্ঠানসমূহের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক অবরোধ আরোপের বিষয় বিবেচনা করতে প্রস্তুত রয়েছে।
এদিকে ব্রাসেলস থেকে গণমাধ্যম জানায়, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জঁ-ক্লদ জাঙ্কার বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের এই মানবিক সঙ্কটকে ‘মর্মান্তিক বিপর্যয়’ অভিহিত করে এর কঠোর নিন্দা জানিয়েছেন। এছাড়া ইউরোপীয় পার্লামেন্ট অবিলম্বে রোহিঙ্গা মুসলমানের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধের দাবি জানিয়েছে।
এই সঙ্কটের কারণে প্রায় চার লাখ লোক মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এ সঙ্কটের কারছে বিশেষ করে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচির ওপর আন্তর্জাতিক চাপ আরো জোরদার হয়েছে।
ইউটিউবে এক প্রশ্নোত্তর অধিবেশনে জাঙ্কার বলেন, ‘মিয়ানমারে যা ঘটছে তা প্রকৃতপক্ষেই এক মর্মান্তিক মানবিক বিপর্যয়। কারণ সেখানে আবারো জাতিগত গোষ্ঠীগুলোকে নির্মূলের চেষ্টা চলছে।’ ফ্রান্সের স্ট্রসবার্গে ইউরো-এমপিদের এক বৈঠকে মিয়ানমারে সকল সহিংসতা ও ধর্মীয় বিদ্বেষের সরাসরি নিন্দা জানাতে একটি প্রস্তাব পাস করা হয়। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ এবং তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া দ্রæত বন্ধে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রস্তাবে সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি জোরালো আহŸান জানানো হয়েছে। গত ২৫ আগস্ট কথিত রোহিঙ্গা জঙ্গিদের হামলার জবাবে শুরু করা মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর দমনপীড়নের কারণে বহু সংখ্যক রোহিঙ্গা দেশ ছাড়া হয়ে পড়ে। এর ফলে সেখানে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।