Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

কক্সবাজারে সংবাদ সম্মেলনে মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান

আরাকানে রোহিঙ্গা নির্যাতন গণহত্যার শামিল

কক্সবাজার ব্যুরো : | প্রকাশের সময় : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মিয়ানমারের আরাকান (রাখাইন) রাজ্যে চলমান রোহিঙ্গা নির্যাতনকে গণহত্যার শামিল বলে দাবী করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেছেন, এজন্য মিয়ানমারের বিচার হতে হবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আদালতে। তিনি বলেন, আরাকানে রোহিঙ্গাদের উপর যেভাবে বর্বর নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যা ও অগ্নিসংযোগ চলছে তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল ঘটনা। এ জন্য মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়া উচিত। গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে কাজী রিয়াজুল হক এ কথা বলেন।
এর আগে গতকাল রোববার উখিয়া উপজেলার কুতুপালং, বালুখালী এবং টেকনাফের নয়াপাড়া ও লেদা এলাকার কয়েকটি রোহিঙ্গা শিবির ঘুরে দেখেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে সে অভিজ্ঞতা তুলে ধরে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, মিয়ানমারের বাহিনী রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর যেভাবে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, ঘুমন্ত মানুষের উপর বর্বর নির্যাতন চালিয়েছে, মেয়েদের তুলে নেওয়া হয়েছে তা কোন সভ্য সমাজে হয় না। ক্ষুদ্র রোহিঙ্গা জাতির উপর এ রকম নির্যাতন, হত্যা-ধর্ষণ ও ঘরে ঘরে আগুন গণহত্যার শামিল। এ ব্যাপারে মিয়ানমারের উপর চাপ দিতে মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মহলকে জানানো হয়েছিল। এখন আন্তর্জাতিক মহল রাখাইন রাজ্যে নির্যাতন বন্ধ করতে মিয়ানমারের ওপর চাপ দিচ্ছে। তবুও মিয়ানমার সরকার আরাকানে দমন-পীড়ন ও গণহত্যা বন্ধ করছে না।
তিনি বলেন, এর ফলে ইতিমধ্যে তিন লাখেরও বেশী রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। আরও অনেক রোহিঙ্গা সীমান্তে অনুপ্রবেশের জন্য অপেক্ষা করছে। আগে থেকে কক্সবাজারে বসতি করেছে আরও চার লাখ রোহিঙ্গা। মোট সাত-আট লাখ রোহিঙ্গার ভারে স্থানীয় বাসিন্দারা হিমশিম খাচ্ছে। তাদেরও মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।
কাজী রিয়াজুল হক বলেন, বিপুল রোহিঙ্গার এত বড় বোঝা বহন করার ক্ষমতা বাংলাদেশের নেই। তবুও মানবিক দিক বিবেচনা করে সরকার আট লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছে। এখন মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করে রোহিঙ্গাদের সে দেশে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করতে হবে। জাতিসংঘ, ওআইসি, আশিয়ানসহ আন্তর্জাতিক বিশ্বকে তৎপর করতে হবে।
তার ভাষায়, আশিয়ানের দুই প্রভাবশালী সদস্য দেশ ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া সক্রিয় হয়েছে। ভারত ও চীনকে কাজে লাগাতে হবে। তারা মিয়ানমারকে গণহত্যা বন্ধের ব্যাপারে বোঝাতে পারে। এত কিছুর পরও যদি কোনো কাজ না হয়, তাহলে গণহত্যার দায়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করা যেতে পারে।
মিয়ানমার উন্নত দেশ উল্লেখ করে কাজী রিয়াজুল হক বলেন, মায়নমার অনেক উন্নত দেশ। তাদের উন্নতি আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মিয়ানামারে বিনিয়োগ করছে। মায়নমার রাখাইন (আরাকান) রাজ্যকে বিশেষ অঞ্চল হিসেবে বিদেশীদের দিতে চাচ্ছে। তাই রোহিঙ্গাদের নিধন করে রাখাইন রাজ্য খালী করার চেষ্টা করতে তার। এর মধ্যে রোহিঙ্গা নির্যাতন নিয়ে গঠিত কফি আনান কমিশন গত ২৪ আগষ্ট তাদের প্রতিবেদন মিয়ানমার সরকারের হাতে তোলে দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনটি রোহিঙ্গাদের পক্ষে হয়েছে বলে রোহিঙ্গাদের তাড়াতে পরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গা নিধন করা হচ্ছে বলে দাবি করেন কাজী রিয়াজুল হক।
এছাড়াও রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জঙ্গী গোষ্ঠী গড়ে উঠার কারণ হচ্ছে নির্যাতন। নাগরিকত,¡ শিক্ষা, চিকিৎসাসহ তাদের সব ধরণের অধিকার কেড়ে নিয়েছে মিয়নমার সরকার। তাই দীর্ঘদিনের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে রোহিঙ্গারা প্রতিরোধ গড়তে বিভিন্ন গোষ্ঠী গড়ে তুলেছে মনে করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নুরুন্নাহার ওসমান ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ-পরিচালক আনোয়ারুল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কক্সবাজার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ