Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

উত্তর জনপদে ফের বন্যা

বন্যার্ত লাখ লাখ মানুষের দুর্ভোগ না যেতেই আবার দুর্যোগ

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আগের বন্যার ক্ষত না শুকাতেই ফের বন্যার কবলে পড়েছে দেশের উত্তরের জনপদ। উত্তর জনপদের অন্যতম প্রধান নদ যমুনায় হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতকাল (সোমবার) যমুনা দু’টি স্থানে বিপদসীমা অতিক্রম করে। আরও দু’টি স্থানে বিপদসীমা ছুঁইছুঁই করছে। উত্তর জনপদের প্রধান নদ ব্রহ্মপুত্রেও পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে এবং বিপদসীমার কাছাকাছি ধাবিত হচ্ছে। উজানভাগের অববাহিকায় ভারতের ঢল ও দেশের অভ্যন্তরেও অতিবৃষ্টিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি। এতে করে ৬টি নদ-নদী ১০টি পর্যবেক্ষণ পয়েন্টে বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। উত্তরাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে গত জুলাই আগস্টে দুই তিন দফা সর্বনাশা বন্যায় কোটি মানুষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এখনও লাখ লাখ বন্যার্তের দুর্ভোগ ও দুঃখ-কষ্ট না যেতেই আবার নতুন করেই দুর্যোগের মুখোমুখি পড়তে হচ্ছে অনেক এলাকার বিশেষত নদ-নদী সংলগ্ন জনপদের মানুষকে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ছাড়াও উত্তর জনপদের বিভিন্ন নদ-নদীতেও পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরফলে রংপুর বিভাগ এবং রাজশাহী বিভাগের আংশিকসহ উত্তর জনপদ চলতি মওসুমে তৃতীয় দফায় বন্যার কবলে পড়ছে। তাছাড়া দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেটের নদ-নদীসমূহেও পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতির মুখে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন এসব এলাকার অগণিত মানুষ।
আবহাওয়া ও পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ সূত্র জানায়, হিমালয় পাদদেশীয় অঞ্চলসমূহ চীন তিব্বত, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের বিশেষত আসাম, মেঘালয় ও অরুণাচলে হঠাৎ মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হওয়ার কারণে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হচ্ছে। তাছাড়া সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভাদ্রের শেষ দিকে এসেও রংপুরসহ দেশের উত্তরাঞ্চল, সিলেট, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম বিভাগে ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। এ অবস্থায় উজান আর ভাটির অতিবৃষ্টিতে নদ-নদীগুলো পুনরায় ফুলে-ফুঁসে উঠেছে। গতকালও উত্তর-পূর্ব ভারতের একাংশে ভারী বর্ষণের খবর পাওয়া গেছে। আগামী দু’দিনেও বাংলাদেশের অনেক স্থানে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
এদিকে গতকাল পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তে জানা গেছে, যমুনা নদে অব্যাহত অব্যাহত পানিবৃদ্ধির ফলে সিরাজগঞ্জে বিপদসীমার ৪ সেন্টিমিটার এবং কাজীপুরে ৬ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আর সারিয়াকান্দিতে মাত্র তিন সেমি নিচে, বাহাদুরাবাদে মাত্র ১৫ সেমি নিচে দিয়ে প্রবাহিত হয়। ফলে গতকালই যমুনা নদ দু’টি পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম এবং আরও দুই পয়েন্টে বিপদসীমা ছুঁইছুঁই অবস্থানে চলে গেছে।
অন্যদিকে উত্তর জনপদের প্রধান নদ ব্রহ্মপুত্রের পানির সমতল আরো বেড়ে গেছে। রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রামের চিলমারী পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ২৪ সেন্টিমিটার। সর্বশেষ সেখানে বিপদসীমার মাত্র ২৭ সেমি নিচে ছিল। এরফলে ব্রহ্মপুত্র নদ আজ-কালের মধ্যেই বিপদসীমা অতিক্রমের আশঙ্কা করা হচ্ছে। পাউবোর বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাসে জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদের পানি বৃদ্ধি আগামী ৪৮ ঘণ্টায়ও অব্যাহত থাকতে পারে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ ছাড়াও উত্তর জনপদের অন্যান্য নদী যেমন- ধরলা, যমুনেশ্বরী, ঘাগট, করতোয়া, আত্রাই নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদিও এখনো বিপদসীমার নিচে রয়েছে। মধ্যাঞ্চলে ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইলের এলাসিনঘাটে ধলেশ্বরী নদীর পানি বেড়ে গিয়ে বিপদসীমার মাত্র ১১ সেমি নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
অন্যদিকে সিলেটে সুরমা নদীর পানি হ্রাস পাচ্ছে। কিন্তু কুশিয়ারা নদীর পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সুরমা নদী কানাইঘাট পয়েন্টে পানি হ্রাস পেয়ে বিপদসীমার ৩৫ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। কুশিয়ারা নদী অমলশীদ, শেওলা ও শেরপুর-সিলেট এই তিনটি পয়েন্টে বিপদসীমার যথাক্রমে ৪, ২০ ও ২ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢল-বানে হবিগঞ্জের বাল্লাহতে খোয়াই নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় হঠাৎ করে ব্যাপহারে বৃদ্ধি পায়। নদীটি বাল্লাহতে সর্বশেষ বিপদসীমার ১শ’৭০ সেমি উপরে (লাল সঙ্কেত) এবং হবিগঞ্জে ১০ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় তিতাস নদীর পানি বিপদসীমার ১২ সেমি ঊর্ধ্বে রয়েছে। নেত্রকোণায় কংস নদীর পানি বিপদসীমার ২৩ সেমি নিচে অপরিবর্তিত রয়েছে। পূর্বাভাসে জানা গেছে, কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়তে পারে আগামী ২৪ ঘণ্টায়ও। সুরমা নদীর পানি আগামী ২৪ ঘণ্টায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। গঙ্গা নদীর পানির সমতল হ্রাস আগামী ৭২ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে। আর পদ্মা নদীর পানির সমতল আগামী ২৪ ঘণ্টায় স্থিতিশীল থাকতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্র জানায়, দেশের নদ-নদীসমূহের ৯০টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে ৪৫টিতে, অর্থাৎ অর্ধেক স্থানে। হ্রাস পায় ৪২টিতে। বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল ১০টি পয়েন্টে। তবে গত রোববার পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি পায় ৩৯টি পয়েন্টে, হ্রাস পায় ৪৮টিতে। ৬টি স্থানে স্টেশনে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
এদিকে গতকাল দেশের নদ-নদী অববাহিকায় অনেক জায়গায় ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হয়েছে। এরমধ্যে সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় ১৫০ মিলিমিটার, ভৈরববাজার ১৪২ মিমি, পাবনায় ১২২ মিমি, ঢাকায় ১১৪ মিমি, গাইবান্ধায় ৯৯ মিমি, নরসিংদীতে ৬৯ মিমি, টাঙ্গাইলে ৫৫ মিমি, দেওয়ানগঞ্জে ৫০ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যা

১৫ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ