Inqilab Logo

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

বৃষ্টি ও যানজটের দুর্ভোগে রাজধানীবাসী

সায়ীদ আবদুল মালিক | প্রকাশের সময় : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ভাদ্রের শেষে ঝুম বৃষ্টি স্বাভাবিক। তবে গতকালের স্বাভাবিক বর্ষণেও রাজধানীবাসীকে নাকাল হতে হয়েছে। ঈদ পরবর্তী ছুটি শেষে রাজধানী যখন কেবল স্বরূপে ফিরেছে তখনই সকাল ও দুপুরে থেমে থেমে নামা বৃষ্টিতে স্বাভাবিক জীবন যেমন ব্যাহত হয়েছে তেমন অফিস ফেরত যাত্রীরা পড়েছে চরম দুর্ভোগে।
এদিকে আবহাওয়া অফিস বলছে, এ মুহূর্তে কোনও নিম্নচাপ নেই। এ বৃষ্টি স্বাভাবিক। আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান বলেন, ভাদ্রের শেষে ভারী বর্ষণ হয়। রোববার সকাল থেকে বিকাল তিনটা পর্যন্ত ৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি বলেন, তিনটার পর আরও ভারী বর্ষণ হয়েছে।
বৃষ্টির কারণে কোন কোন এলাকায় কাদা আর পানি মিলে একাকার হয়ে সৃষ্টি হচ্ছে বাড়তি ভোগান্তির। সকাল থেকেই নানা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হয়ে নগরবাসীকে পড়তে হয়েছে চরম দুর্ভোগে। ঈদের ছুটির পর রাজধনী পুরোপুরি না জমলেও গতকালের বৃষ্টির কারণে রাজধানীর কোন কোন সড়কে দেখা দেয় দীর্ঘ যানজট। গাড়ি চলেছে খুব ধীর ঘতিতে। বিশেষ করে বিকেলে অফিস থেকে ঘরে ফেরা মানুষ পড়েছিল চরম দূর্ভোগে।
ভাদ্র মাস শেষ হতে আরও দুয়েকদিন বাকি। এখনও রাজধানীতে কখনও হঠাৎ মুষলধারে আবার কখনও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। মেঘ আর বৃষ্টির এ যেন এক খামখেয়ালি। গত কয়েকদিন ধরে রাজধানী শহর ঢাকাসহ দেশের নানা স্থানে এভাবেই থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। যথারিতি গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার দুপুর থেকে শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি। এদিকে, রাজধানী ঘুরে দেখা গেছে দুই ঘণ্টার বৃষ্টিতে প্রধান সড়কসহ অলিগলিগুলো ডুবে গেছে। মিরপুর রোড, খামারবাড়ির বেশ কিছু জায়গায় পানি জমে যাওয়ায় অফিস সময় শেষ হওয়ার মুহুর্তে শুরু হয় তীব্র যানজট। পান্থপথ থেকে ফার্মগেটগামী রাস্তাটির বেশ কিছু জায়গায় জমে যায় হাঁটুপানি। ফলে রিকশার জটও লেগে যায় কোথাও কোথাও। বৃষ্টির কারণে রিকশা ও সিএনজি যাত্রীদের বাড়তি ভাড়াও গুনতে হয়েছে। পানিবদ্ধতার কারণে রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে বেশ কিছু সিএনজি অটোরিকশা পানি ঢুকে আটকা পড়ে যায়।
এছাড়াও পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধারের নামে বেশ কিছু জায়গায় রিকশা ও ভ্যানে করে পানি পারাপার করতে দেখা গেছে। তবে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, সামান্য দুরত্বের রাস্তা পানি পারাপারের নামে ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত হাঁকছে রিকশা ও ভ্যানচালকরা। তবে সকালে বৃষ্টির পর রোদ ওঠায় প্রস্তুতি ছাড়া বের হয়ে দুপুরের ভারীবর্ষণের কবলে অপ্রস্তুত হতে দেখা গেছে অনেককে।
ঈদে ছুটির পর গতকার রোববার প্রথম অফিসে করেছেন সালাম। তিনি বলেন, ড্রাইভারের ছুটি শেষ হয়নি। রিকশায় যাতায়াত করতে গিয়ে কত ধরনের দুর্ভাগে পড়তে হয় তার সাক্ষী আমি। ভাঙাচোড়া সড়কগুলোতে বৃষ্টির সময় ওঠা যে কী বিড়ম্বনা, হঠাৎ কোন গর্তে পড়ে যাই সেই ভয় নিয়েই আত্মা হাতে নিয়েই রিকশায় উঠা। রোববার বিকেলের ভারি বর্ষণে ধানমন্ডি ২৭ নম্বর মোড়ে রাস্তার ওপর হাঁটু পরিমাণ পানি জমে রয়েছে। আর এতে সৃষ্টি হয়েছে প্রচন্ড যানজট। আড়ং মোড় থেকে ধানমন্ডি ৩২ সড়কে যান চলাচল একেবারে থেমে না থাকলেও চলছে ধীর গতিতে। তবে ধানমন্ডি ৩২ থেকে আড়ং মোড় পর্যন্ত সড়কটিতে যান চলাচল প্রায় থেমে আছে। এই পানিবদ্ধতায় সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়েছেন পায়ে হেঁটে চলাচল করা মানুষগুলো। একই সঙ্গে বেকায়দায় পড়েছেন এই সড়কে আসা সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকরা। ইঞ্জিনের ভেতর পানি ঢুকে পড়ায় এগুলো বিকল হয়ে পড়ে আছে রাস্তার ধারে।
এদিকে পানিবদ্ধতার কারণে পাবলিক পরিবহনেও উঠতে পারছেন না অফিস শেষে ঘর ফেরত মানুষেরা। এদের মধ্যে কেউ কেউ পানিবদ্ধ স্থান থেকে অনেক দূরে দাঁড়িয়ে পানি কমার অপেক্ষা করলেও অনেকে জুতা হাতে ময়লা পানিতে হেঁটে রওনা দেন যার যার গন্তব্যে। এই পানিবদ্ধতা দুর্ভোগের সৃষ্টি করলেও অনেককে আবার দাঁড়িয়ে সেটা উপভোগ করতেও দেখা গেছে। ধানমন্ডি-২৭ কোন নদীর তীরে? রসিকতা করে এমন প্রশ্ন করতেও শোনা গেছে কয়েকজনের মুখে। আবার কেউ কেউ ছবি তুলছেন আর বলছেন, বিনা পয়সায় সমুদ্র সৈকত দর্শন। অফিসের কাজ সেরে ফেরার পথে খামারবাড়িতে আটকে যান রায়হান রশিদ। তিনি বলেন, ভরা পানির মধ্যে সিএনজি অটোরিকশা আটকে গেল। নোংরা ময়লা পানিতে কতক্ষণ বসে থাকা যায়। ল্যাপটপের ব্যাগ মাথায় নিয়ে প্যান্ট গুটিয়ে সিএনজি থেকে হাঁটু পানিতে নেমে আবারও যানবাহনের অপেক্ষা করতে থাকলাম। এভাবেই বর্ষার পর বর্ষা পার হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এই দুর্ভোগের যেন শেষ নাই।
গতকাল রোববার সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানীর শান্তিনগর, মালিবাগ, আগারগাঁও, মিরপুর, যাত্রাবাড়িসহ বেশকিছু এলাকা ও মহাসড়কে বৃষ্টির কারণে তৈরি হয়েছে পানিবদ্ধতা। অপরিকল্পিত নগরায়নে পানি জমার সমস্যাটা দিন দিন প্রকট হচ্ছে বলছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।
বর্তমানে ঢাকা শহরের প্রাণ কেন্দ্র মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ চলায় এ এলাকার বেশ কয়েকটি রাস্তার অবস্থা বেহাল। তাই এ এলাকার রাস্তাগুলোতে যানজট সকাল-দুপুর, রাত-দিন সবসময় লেগেই থাকে। এ থেকেই সারা শহর জুড়ে যানজট ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণেই রাজধানীর যানজট এখন সাপ্তাহের সাত দিনই থাকে। বিশেষ করে কর্মদিবসের শুরুর দিন রোববার, প্রথানমন্ত্রী সচিবালয়ে অফিস করেন সোমবার আর কর্মদিবসের শেষ দিন বৃহস্পতিবার এ তিনদিন রাজধানীর রাস্তায় ভয়াবহ যানজটে সৃষ্টি হয়। এ সময় নগরবাসীকে রাস্তায় নেমেই চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
প্রায় দুই কোটি মানুষের নগরী এই ঢাকাতে যানজট প্রতিদিনের চিরচেনা ঘটনা। যানজট নিরসনে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে অতীতে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। গতকাল দুপুরে দুই ঘণ্টার বৃষ্টিতে পানি জমে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে দেখা দিয়েছে পানিবদ্ধতা। মোহাম্মপুর, মালিবাগ, শান্তিনগর, মিরপুরসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায় প্রধান সড়কসহ পাড়া মহল্লার অলিগলির রাস্তাগুলোতে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিতে বিভিন্ন সড়কের বেহাল দশা, কোথাও কোথাও সড়কগুলোতে বড় আকারের গর্তেরও সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বৃষ্টি

১৯ আগস্ট, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ