Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অবিলম্বে রাখাইনে গণহত্যা বন্ধ করতে হবে

সুজনের মানববন্ধনে বক্তারা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর মানববন্ধনে বক্তারা বলেছেন, অবিলম্বে রাখাইনে গণহত্যা বন্ধ করা হোক। রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক মহলসহ জাতিসংঘকে যুক্ত করার জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক কুটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করার দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে জাতিসংঘ কর্তৃক মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে রাখাইনে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন।
গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ মানববন্ধনে এসব দাবি জানানো হয। রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা ও নির্যাতন বন্ধের দাবিতে নাগরিক সংগঠন সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক- এ মানববন্ধন আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসনাত। আরো উপস্থিত ছিলেন সুজন মহানগর কমিটির জুবায়েরুল হক নাহিদ, ক্যামেলিয়া চৌধুরী ও মো: নাজিমউদ্দিন, এডভোকেট রাশিদা আক্তার শেলী প্রমুখ।
এসময় বক্তারা বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা ও নির্যাতন চলছে। দেশটির রাখাইন রাজ্যে দীর্ঘদিন থেকে নিপীড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নতুন করে গত ২৫ আগস্ট থেকে শুরু হয়েছে এই নির্মম নির্যাতন ও গণহত্যা। মূলত রাষ্ট্রীয় উদ্যোগেই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সেনা অভিযানের নামে চলছে এই হত্যা-নির্যাতনের ঘটনা। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী ইতোমধ্যেই নিহতের সংখ্যা সহস্র ছাড়িয়েছে। সেনাবাহিনীর অত্যাচার থেকে রক্ষা ও প্রাণ বাঁচানো জন্য লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। পালিয়ে আসার সময়ও পলায়নপর মানুষের ওপর গুলি চালানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত নৌকাডুবির ঘটনায় ৯১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
মানববন্ধনে জানানো হয়, ২৫ আগস্ট থেকে শুরু করে প্রায় তিন লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। এরা মূলত মুসলিম হলেও কিছু সংখ্যক হিন্দু ধর্মাবলম্বী হলেও রয়েছে এদের মধ্যে। রোহিঙ্গা নির্যাতনের এই ঘটনা নতুন নয়, এ সমস্যা দীর্ঘদিনের। প্রথম ১৯৭৭ সালে তাঁদের ওপর হামলা চালিয়ে স্বদেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়। তখন ২ লক্ষ ৮০ হাজার বাংলাদেশে আসলেও এদের মধ্য থেকে ১৯৭৮ সালে কিছু ফেরত নেয়া হয়। ১৯৯২ সালেও একই ধরনের ঘটনা ঘটানো হয় এবং ১৯৯২ ও ১৯৯৭ সালে কিছু সংখ্যক শরনার্থীকে স্বদেশে ফেরত নেয়া হয়।
২০১২ সাল থেকে উপর্যুপরি রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা-নির্যাতন ও দেশ থেকে বিতাড়িত করার ঘটনা ঘটেতে থাকে। ২০১৩, ২০১৪ সালেও ২০১৬ একই ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়। ২০১৬-এর অক্টোবর থেকে পরিচালিত সেনা অভিযানে ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসে। ১৯৭৭ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত চার লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল বলে জানা যায়। সেই হিসেবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রায় ৭ লক্ষ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। শুধু তাই নয়, ভারত, থাইল্যান্ড, পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যেও রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিয়েছে।
বর্তমানে রাখাইনে যে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে, তা থেকে পরিত্রাণের জন্য বিশ্বের সচেতন ও মানবতাবাদীদের এগিয়ে আসাসহ বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক মহলের কাছে জোরালো দাবি জানানো হয়। বিশেস করে বাংলাদেশে আশ্রিত শরনার্থীদের দ্রুত স্বদেশে ফেরত নেয়াসহ তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও যথাযথ পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা। যতদিন পর্যন্ত রোহিঙ্গা শরনার্থীরা বাংলাদেশে অবস্থান করবে, ততদিন পর্যন্ত তাদের ব্যয়ভার অন্যান্য রাষ্ট্র তথা দাতাগোষ্ঠী কর্তৃক বহন করা হোক। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে মিয়ানমার সরকার কর্তৃক নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা এবং জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত ‘রাখাইন রাজ্য বিষয়ক আন্তর্জাতিক পরামর্শক কমিশন’-এর প্রতিবেদনে উল্লেখিত সুপারিশসমূহ অবিলম্বে বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করার দাবি জানানো হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাখাইন

১৮ অক্টোবর, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ