পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মিয়ানমারের ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্য বর্বরতা হত্যাযজ্ঞ ও নারী-শিশু নির্যাতন বন্ধসহ মিয়ানমারে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রেরণের দাবিতে ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত আন্দোলন, খেলাফত মজলিসসহ বিভিন্ন সংগঠন পৃথক পৃথক মিছিল ও সমাবেশ করেছে এবং বিবৃতি দিয়েছে। বিভিন্ন কর্মসূচিতে নেতৃবিন্দু বলেছেন, রোহিঙ্গাদের নাগরিক সুবিধা প্রতিষ্ঠার জন্য জাতিসংঘের নেতৃত্বে শান্তি রক্ষীবাহিনী প্রেরণ করতে হবে। রোহিঙ্গা অঞ্চলে অশান্তি সৃষ্টিকারী ঘাতক অং সান সুচির আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার করতে হবে। রোহিঙ্গারা যদি বাঙালি হয়, তাহলে আরাকান বাংলাদেশের অংশ। সুতরাং আরাকানকে বাংলাদেশের নিকট ফেরত দিতে হবে। অন্যথায় নাফ নদী পাড়ি দিয়ে মুসলমানরা আরাকানকে উদ্ধার করে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বুঝিয়ে দেবে। রোহিঙ্গা মুসলমানদের রক্ষায় এ সন্ত্রাসী গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ^মুসলিম ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। ৩৪ জাতির মুসলিম সৈন্যবাহিনীকে আরাকানে অবস্থান নিতে হবে।
ইসলামী আন্দোলনের সমাবেশ
ইসলামী আন্দোলনের উদ্যোগে গতকাল আয়োজিত সমাবেশে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল, ১২ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গা উদ্ধাস্ত শিবিরে ত্রাণ তৎপরতা ও লঙ্ঘরখানার কার্যক্রম শুরু এবং ১৩ সেপ্টেম্বর মিয়ানমার দূতাবাস ঘেরাও কর্মসুচী ঘোষণা করা হয়। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম প্রধান অতিথির বক্তবে তিনি এই ঘোষণা দেন। তিনি বলেন অং সান সু চির সামরিক জান্তাদের বর্বরতা ইতিহাসের সকল বর্বরতাকে হার মানিয়েছে। মুসলমানদের রক্তে রঞ্জিত অং সান সু চি নোবেল পুরস্কারের সাথে গাদ্দারী করেছে। তার নোবেল পুরস্কার বাতিল করতে হবে। জাতিসংঘ দিয়ে মুসলমানদের কোন স্বার্থ রক্ষা হবে না। মুসলিম রাষ্ট্রগুলো সমন্বয়ে পৃথক মুসলিম জাতিসংঘ জরুরি।
গতকাল বাদ জুম্মা বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে মিয়ানমারে মুসলিম গণহত্যা বন্ধের দাবিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর আয়োজিত বিশাল বিক্ষোভ পূর্ব সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা ইমতিয়াজ আলম। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, রাজনৈতিক উপদেষ্টা অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক হাফেজ মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দিন ও অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, উত্তর সভাপতি অধ্যক্ষ শেখ ফজলে বারী মাসউদ, মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, দক্ষিণ সেক্রেটারী মাওলানা এবিএম জাকারিয়া, হাফেজ সিদ্দিকুর রহমান, নুরুজ্জামান সরকার, ক্বারী সাইদুল ইসলাম আসাদ প্রমুখ।
মুফতি ফয়জুল করীম রোহিঙ্গাদের স্থায়ী সমস্যা সমাধনে কফি আনান কমিশন বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে বলেন, রোহিঙ্গাদের নাগরিক সুবিধা প্রতিষ্ঠার জন্য জাতিসংঘের নেতৃত্বে শান্তি রক্ষীবাহিনী প্রেরণ করতে হবে। রোহিঙ্গা অঞ্চলে অশান্তি সৃষ্টিকারী ঘাতক অং সান সুচির আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার করতে হবে। রোহিঙ্গারা যদি বাঙালি হয়, তাহলে আরাকান বাংলাদেশের অংশ। সুতরাং আরাকানকে বাংলাদেশের নিকট ফেরত দিতে হবে। অন্যথায় নাফ নদী পাড়ি দিয়ে মুসলমানরা আরাকানকে উদ্ধার করে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বুঝিয়ে দেবে।
মাওলানা মাদানী বলেন, মুসলিম গণহত্যা বন্ধে বিশ্বমুসলিমকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারলে ওদের হিংস্রতা আরো বেড়ে যাবে। তিনি বলেন, মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের স্টিমরোলার বন্ধ না করলে প্রয়োজনে বাংলাদেশের ঈমানদার জনতা মিয়ানমার দূতাবাস ঘেরাও করতে বাধ্য হবে।
অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, মিয়ানমারে সেনাবাহিনী-পুলিশ ও রাখাইন বৌদ্ধদের দ্বারা বর্বরোচিত রোহিঙ্গা মুসলিম গণহত্যা, ধর্ষণ, বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ ও নির্যাতন চালিয়ে বার বার মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে।
খেলাফত আন্দোলনের বিক্ষোভ
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমীর মাওলানা শাহ আতাউল্লাহ বলেন, মিয়নমারে মুসলিম গণহত্যা কোন বিবেকবান মানুষ এ বর্বরতাকে সমর্থন করতে পারে না। যারা এ গণহত্যা ও সন্ত্রাসবাদের সমর্থন করে তারাও মানবতার দুশমন। রোহিঙ্গা মুসলমানদের রক্ষায় এ সন্ত্রাসী গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ^মুসলিম ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।
গতকাল বাদজুমা বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের উদ্যোগে রোহিঙ্গা মুসলিম গণহত্যা বন্ধের দাবিতে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর নূরিয়া মাদরাসা থেকে বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশে সভাপতির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। বিক্ষোভে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দলের নায়েবে আমীর মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, প্রচার সম্পাদক মুফতি সুলতান মহিউদ্দীন, মাওলানা সাইফুল ইসলাম সুনামগঞ্জী ও মাওলানা আব্দুস সালাম প্রমূখ।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, রোহিঙ্গা মুসলিম রক্ষা এবং মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বন্ধে বাধ্য করতে মিয়ানমার সরকারের সাথে কুটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন এবং অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করার জন্য জাতিসংঘ, ওআইসিসহ সকল মুসলিম রাষ্ট্র প্রধানদের প্রতি আহবান জানান। বাংলাদেশসহ সকল মুসলিম দেশ থেকে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদুতকে বহিস্কার করতে হবে। রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কর্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
খেলাফত মজলিস
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেছেন, মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা মুসলমানদের নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্ত হয়েছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এ জুলুম নির্যাতনে সায় দিচ্ছেন অং সান সুচি। রোহিঙ্গা মুসলিম গণহত্যা অবিলম্বে বন্ধ করুন। তিনি বলেন, আজকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমানরা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গাদের রক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসতে হবে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম গণহত্যার প্রতিবাদে গতকাল বাদ জুমা বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেইটে খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগরী আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ঢাকা মহানগরী সভাপতি শেখ গোলাম আসগরের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আজীজুল হকের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য পেশ করেন মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, এড. মো. মিজানুর রহমান, অধ্যাপক মো. আবদুল জলিল, মুহাম্মদ আজীজুল হক, ডা. রিফাত বিন মালিক, মোঃ জহিরুল ইসলাম, আমীর আলী হাওলাদার, প্রকৌশলী আবদুল হাসিজ খসরু, ইলিয়াস আহমদ, হাজী নূর হোসেন, মুন্সী মোস্তাফিজুর রহমান, হুমায়ুন কবীর আজাদ, মাওলানা ফারুক আহমদ, আলহাজ্ব হারুনূর রশীদ, ডা. আবুল কামাল, এডভোকেট সৈয়দ মুহাম্মদ সানাউল্লাহ, মোঃ আবুল কালাম প্রমুখ।
ইসলামী বুদ্ধিজীবি ফ্রন্ট
রোহিঙ্গা মুসলিমদের রক্ষার জন্য জাতিসঙ্ঘের সৈন্য বাহিনী মোতায়েন এই মুহুর্তে জরুার কিন্তু চীনের ভেটোর কারণে জাতিসঙ্ঘ এ সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। কাজেই এই মুহূর্তে সউদী নেতৃত্বে গঠিত ৩৪ জাতির মুসলিম সৈন্য বাহিনীকে অবিলম্বে আরাকান রাজ্যে ঘিরে ফেলতে হবে এবং রোহিঙ্গাদের দাবি অনুযায়ী তাদের নাগরিকত্ব, ভোটাধিকার না দেয়া পর্যন্ত সৈন্যবাহিনী সরানো হবে না বলে ঘোষনা দিতে হবে। গতকাল এক বিবৃতিতে ফ্রন্টের আহŸায়ক শাহ সূফী আব্দুল হান্নান আল হাদী তিনি বলেন, বিশ লাখ রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করে তাদের নাগরিকত্ব এবং চাকরি ও ব্যবসার সুযোগ না দিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে বার্মার জান্তা ও সু চি সরকার। মাত্র কয়েকজন নিরাপত্তাররক্ষীকে হত্যার অভিযোগে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করতে তাদেরকে নির্বিচারে হত্যা ধর্ষণ ঘরবাড়ি জালানো ও বসবাসের বাড়ি ঘর থেকে বিতাড়ন সম্পূর্ণ মানবতা বিরোধী। তাদের ভাষায় মুষ্টিমেয় কয়েকজন অপরাধীকে ধরতে না পারার ব্যর্থতায় দায় মেটাতে সম্পূর্ণ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করা কোন সভ্য সমাজের কাজ নয়। এ জন্য বার্মা সরকারকে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন, বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের স্থান দেওয়ার ক্ষেত্রে বর্ডার গার্ডের ডিজির ভূমিকা দুঃখজনক। তিনি আরো বলেন, তুরস্কের এরদোগান সরকার বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের থাকা খাওয়া চিকিৎসার ব্যয় ভার বহনে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাই এখন রোহিঙ্গাদের নিরাপদে নিজেদের বাড়ি ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে পূর্ণ নিরাপত্তা না দেয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের উচিৎ রোহিঙ্গা আশ্রয়প্রার্থীদের পরিপূর্ণ আশ্রয় দেয়া।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।